আশরাফুলের চড়

প্রদীপ দেব 

ঘটনাটি সামান্য। অনেক রকম ঘটনাকে আমরা আজকাল সামান্য ঘটনা হিসেবে মেনে নিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর সামরিক বাহিনীর অত্যাচার সামান্য ঘটনা হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। বাধ্য হয়ে হোক বা যেভাবেই হোক আমরা তা মেনে নিয়েছি। সম্মানিত শিক্ষকদের কারাগারে আটকে রেখে দিনের পর দিন যে অপমান করা হয়েছে তাও এখন সামান্য ঘটনা। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে  রাজাকার আলবদর সহ অনেক সাদা জামা পরা মানুষ (হোয়াইট কলার পিপল) সামান্য ঘটনা হিসেবে প্রচার করার স্পর্ধা দেখাচ্ছে। আর আমরা এই স্পর্ধাকেও খুব সামান্য ঘটনা বলে মেনে নিতে শুরু করেছি। এসমস্ত সামান্য ঘটনার সাথে তুলনা করলে যে ঘটনার কথা বলতে চাচ্ছি তাকে নগণ্য ঘটনাই বলতে হয়।  

ঘটনাটি এরকমঃ মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের ইনডোরে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। গ্যালারি থেকে কেউ একজন দর্শক বলে উঠলেন-- আশরাফুল ভূয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে যেভাবে হারছিলেন আশরাফুলের দল - আমরা দর্শকরা তো মন্তব্য করতেই পারি, তাই না? ম্যাচ জিতলে আমরা কি আশরাফুলদের মাথায় তুলে নাচি না? কিন্তু এ কথা ভুলে গেলেন আমাদের সোনার ছেলে আশরাফুল। গ্যালারিতে এসে একজন দর্শকের গালে এক এক করে তিনটি চড় মারলেন তিনি। (দেখুনঃ ভোরের কাগজ, ১৭ মার্চ ২০০৮)।  

চড় খেয়ে আমাদের অভ্যাস আছে। প্রত্যক্ষ পরোক্ষ কতভাবেই না চড় খাচ্ছি আমরা। কিন্তু যাদের কাছ থেকে খাচ্ছি - তাদের কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু প্রত্যাশা করা আমরা ছেড়েই দিয়েছি। আমরা প্রত্যাশা করি না যে মতিউর রহমান নিজামীরা তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইবে। আমরা এও প্রত্যাশা করি না যে  আমাদের অস নেতারা রাতারাতি স হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা তো প্রত্যাশা করতে পারি যে আশরাফুলের মত সোনার ছেলেরা ক্রিকেটের মাঠে বাংলাদেশের মুখ যেভাবে উজ্জ্বল করছেন - সেরকম একটু অন্তত সহনশীল হবেন আমাদের প্রতি।  

 

Dr Pradip Deb. Lecturer in Health Physics. School of Human Life Sciences. University of Tasmania, Launceston, TAS 7250, Australia. [email protected].