লাল মসজিদে খতিবের বোরখায় তালেবানের মস্তক বিক্রয় কেন?
সোনা কান্তি বড়ুয়া



জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ জুড়ে হিংসা উন্মত্ত পরিবেশে দিনের পর দিন পাকিস্তানের লাল মসজিদে নিত্য নিষ্ঠুর দ্বন্ধে অনেক মুসলমান ভাই বোন হতাহত হয়েছেন। পাকিস্তানের মাটিতে ও মুসলমান মুসলমানকে পবিত্র মসজিদে প্রবেশ করে হত্যা করে কেন? ১৪ই আগষ্ঠ ১৯৪৭ সালে একমাত্র মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্যেই অখন্ড ভারত দ্বিখন্ডিত হয়ে পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল । মানব মনের লোভ দ্বেষ মোহে কোন ধর্মের অস্তিত্ব নেই। ধর্মের ঘৃতে রাজনীতির মধু মিশে বিষক্রিয়া হ’ল এবং সম্প্রতি পাকিস্তানে ইসলামাবাদের পবিত্র লাল মসজিদের খতিব মওলানা আবদুল আজিজ সহ অনেকে বোরকা পরে পালাতে গিয়ে সামরিক বাহিনীর কাছে ধরা পড়ে গেলেন। কারণ ”চিনির বলদ চিনি টানে, চিনে না চিনি।” শান্তিময় ধর্মকে তড়োয়ালের মতো ব্যবহার করে জনগনমনের ধর্মনিরপেক্ষতাকে সমূলে ধংস করে রাজনীতির সিংহাসন অধিকার করতে ধর্মের ঠিকাদারগণ তান্ডবলীলায় পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সহ বিশ্বে মানবতার অনিষ্ঠ সাধন করে চলেছে দিনের পর দিন। মানব সন্তানের রক্তে রাঙানো পরম করুনাময় আল্লাহের ঘর লাল মসজিদে কারবালার বিষাদ সিন্ধু থমকে আছে কেন? প্রত্যেক মানব সন্তানই আল্লাহের আমানত। ধর্মের নামে মনুষ্য হত্যা অমানবিক। লোভের লোলায় কোন ধর্মের অস্তিত্ব নেই। পবিত্র ইসলাম ধর্মের নাম দিয়ে হিংসা উন্মত্ত মন মানসিকতায় লাল মসজিদে রক্তগঙ্গার স্রোত বইছে কেন? বাংলাদেশের ”মসজিদ মিশন” এবং জামাতুল মুজাহিদীনেরা ও পাকিস্তানের লাল মসজিদের খতিবের চেলা।


লালমসজিদ প্রাঙ্গনে ”আশরাফুল মাখলুকাতদের” রক্তপাত ও আদম সস্তানদের হত্যাযজ্ঞ প্রসঙ্গে হুমায়ূন আজাদের মতবাদটি প্রনিধানযোগ্য,

“মানুষ ধর্ম দ্বারা আক্রান্ত, এবং বিশেষ ধর্মের মানুষ আক্রান্ত ঐ ধর্মের মানুষদের দ্বারা, মুসলমান আক্রান্ত মুসলমানের দ্বারা, হিন্দু হিন্দুর দ্বারা, তাই মুসলমনের হাত থেকে মুসলমানকে , হিন্দুর হাত থেকে হিন্দুকে বাঁচানো দরকার। ... এই অন্ধকার থেকে মুক্ত হয়ে মানুষকে হয়ে উঠতে হবে মানুষ।”

কারণ সম্প্রতি বাংলাদেশের” মসজিদ মিশনের সভাপতি প্রিন্সিপ্যাল জয়নাল আবেদীন (ভোরের কাগজ, জুলাই ৬, ২০০৭) সহ জামাত নির্বাচন কমিশনের উপর ভর হচ্ছে। জামাত পাকিস্তান পন্থী এবং বাংলাদেশ অস্তিত্ব বিরোধী। ইসলামাবাদের রক্তাক্ত লাল মসজিদের নীল নকশায় দেশের ”মসজিদ মিশন” প্রতিষ্ঠিত না তো? বাঙ্গালির দুর্ভাগ্যে পায়ের নিচের জমিকে ধর্মান্ধরা লুট করে নিয়ে গেছে। এবং তাদের বিবেকের দংশণ নেই।


এই প্রসঙ্গে ইহাও উল্লেখযোগ্য যে, সেনা প্রধান জেনারেল মইন উ. আহমেদ সহ সশস্ত্র বাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে দুর্নীতি দূর করে ভোটের দিন কবে শুরু করবেন? তাই আমাদের প্রশ্ন, আজকের তত্ত্ববধায়ক সরকার রাজাকার মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার না করলেও দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলসহ আরো অনেক মন্রী, ব্যবসায়ী এবং সন্ত্রাসীকে জেলখানায় আটক করে রেখেছে। এই সরকার কি দুর্নীতির অচীন পাখীর পায়ে বেরি ঁেবধে দিয়ে দুর্নীতির কারখানা বন্ধ করতে পারবেন? লেফটানেন্ট জেনারেল এরশাদ প্রথমে ক্ষমতায় এসে দেশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে ছিলেন। তারপর কি হ’ল আমরা সবাই জানি। এখন আমরা জানিনা, আজকের সেনাপ্রধানগণ কি এরশাদের পদ অনুসরণ করবেন?


ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। পাকিস্থান আমলের আয়ুব খান থেকে দেশের এরশাদ সরকার বারবার অনেকবার বাঙালিকে ধোকা দিয়েছে। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপর রাজনৈতিক সুনামীর ঢেউ দিয়ে পাহাড়ী জনগনের অস্তিত্ব শেষ হবার পথে। শাহেনশা জিয়াউর রহমান রাজনীতির পাপ ও দুর্নীতি ঢাকতে ধর্ম এবং রাজাকারদের নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছিলেন। তারই সুগোয্যাপতœী খালেদা জিয়ার জোটসরকার বাঙালির দুর্ভাগ্যের পরিহাসে আজ পাঁচ বছরে হাওয়া ভবনের রাজপুত্র তারেকের নেতৃত্বে লুটপাট ৪ লক্ষাধিক কোটি টাকা। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীগণ দুর্নীতির সাথে জড়িত এবং এর শেকড় খুব গভীর তলদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত।
বঙ্গবন্ধু পাষাণ কারা ভেঙ্গে আমাদেরকে স্বাধীণতার অমৃত ভান্ড দান করে গেছেন। আমরা কি স্বাধীনতার অমৃতের সাধ ভোগ করতে পেরেছি? ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মৃত্যুর পর বাংলা দেশের এ কি দশা হলো? একটার পর এক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে তার সুরাহা নেই। বিগত পঁয়ত্রিশটি বছর ধরে নানা অত্যাচারে জর্জরিত বাংলাদেশ। বিগত ২০০৫ সালে ১৭ই আগষ্টে আমাদের দেশমাতৃকার বুকে ৬৩টি জেলা জুড়ে একসাথে পাঁচশত বোমা মেরেছিল এবং বাংলাদেশের হবু খলিফা হবার খায়েস হয়েছে জামা’আতুল মুজাহিদীন নামক নারকীয় কীট সদৃশ্য পঙ্গপালদের। নানা কারনে বাংলার মানুষদের পূঞ্জীভূত স্বপ্ন ভঙ্গ হলো কেন? রবিঠাকুরের ভাষায় বাঙ্গালি মন বলে, “আমি ঢালিব করুণা ধারা / আমি ভাঙ্গিব পাষাণ কারা / আমি জগত প্লাবিয়া বেড়াব গাহিয়া / আকূল পাগল পারা। / কেশ হেলাইয়া ফুল কুড়াইয়া / রামধনু আঁকা পাখা উড়াইয়া / রবির কিরণে হাসি ছড়াইয়া দিব রে পরাণ ঢালি। / শিখর হইতে শিখরে ছুটিব/ ভুধর হইতে ভুধরে লুটিব। হেসে খলখল গেয়ে কলকল তালে তালে দিব তালি। / এত কথা আছে এত গান আছে / এত প্রাণ আছে মোর / এত সুখ আছে- এত সাধ আছে- প্রাণ হয়ে আছে ভোর।”


গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে সংবিধান রচিত হয়েছিল তাতে এই নতুন রাষ্ট্রে চারটি স্তম্ভের উল্লেখ আছে যাহা জামাত ও ”মসজিদ মিশন” মানে না। যথা : (১) গণতস্ত্র (২) জাতিয়তাবাদ (৩) সমাজতস্ত্র এবং (৪) ধর্মনিরপেক্ষতা। যদি আগামি নির্বাচনের জন্যে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর জামাতের ভর হলে বাংলাদেশের ”মসজিদ মিশন” ও ভবিষ্যতে বাংলাদেশের লাল মসজিদ হয়ে দেখা দেবে। অদূরদর্শী বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাগণ ধর্ম ব্যবসায়ীদের সাথে হাত মিলিয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক স্বার্থে আবিলতায় পঙ্কিল হয়ে আছে বাংলার ধর্মব্যবসায়ীদের মনমানস-জগত। এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে ২০০১ সালে নির্বাচণের পর সংখ্যালঘু জনতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল জোট সরকারের মদমত্ত রাজনৈতিক টর্নেডো। একদিকে যেমন মানুষের রক্তে হোলিখেলা হলো মাটির উপর তেমনি আরেক দিকে মা বোনের ইজ্জত পর্যন্ত অব্যাহতি পেলোনা ধর্মের ঠিকাদারদের ভোগ লালসা থেকে। মানুষের দরবারে অত্যাচারিতের দুঃখের দহনে করুণ রোদনভরা ফরিয়াদে বাংলার আকাশ বাতাস কেঁদে কেঁদে গুমরে উঠেছিল। আগামী নির্বাচনের পরও কি মৌলবাদী জঙ্গীরা সংখ্যালঘুদেরকে আক্রমণ করবে?