বাসুনকে, মা
লুনা শীরিন
পর্ব ১

বাবু, তুই যখন অনেক ছোট ছিলি, মানে একতাল নরম মাংস মাত্র তখন তোকে আমি বাসুন(বাবা সোনা) ডাকতাম, সেও প্রায় ৭ বছর আগের কথা বলছি ,এখন তুই ৮ পার হচ্ছিস। খুব ঘটনাবহুল একটা দিনে তোকে লিখছি ,আজ থেকে আগামী দুমাস আমি শুধু তোকে সময় দেবো কোন কাজ করতে পারবো না কারন তোকে বেবীসিটার এর কাছে রেখে আমি অডজব করে যা আর্ন করবো তারচেয়ে ঘরে বসে দুটো বাচ্চা রাখলেও আমি অনেকভালো থাকবো। এইকথা তোকে কেন বলছি জানিস বাসুন, সেই যে তোকে ১১ মাসের কোলে নিয়ে আমি একা একা পথ চলা শুরু করেছিলাম আজ পর্যন্ত একটা দিনও বসে থাকিনি , তাই আজ তোর সাথে কথা বলতে গিয়ে এলোমেলো সব কথা মনে পড়ছে।

আজ থেকে প্রায় তিনবছর আগে যেই আমি এই টরোন্টো শহরে প্রথম পা দিয়েছিলাম, সেই আমি আর আজকের আমি’র ভিতর যুগ যুগান্তরের ফারাক । আসলে কি জানিস সোনা, আমি নিজেকে গড়েই তুললাম যুদ্দ করে , কেবলি মনে হতো এইতো আগামীকাল থেকে ”ভালো থাকবো” এবং এই ভালো থাকতে পারবো, এই স্বপ্নকে বুকে নিয়েই একদিন তোকেও নিজের ভিতরে ধারন করেছিলাম । কি যে সেই দিনগুলো ছিলো , এতবেশী পরিস্কার আর জীবন্ত আমার কাছে যে, মনে হয় প্রতিটি মুহুর্ত, অনুভুতি এবং সময়ের কথা তোকে বলতে পারবো। জানিস বাসুন , আমার সব লিখতে ইচ্ছে করে, ভীষন ইচ্ছে করে --- তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোকেই সব বলে যাবো , আর কাকে বলবো বল? কি একটা বিপদ হলো বলতো বাবু, ইংরেজী ভাষাটা আমি ঠিকমতো জানিনা বলে দেশ ছেড়েছি আর আজকে তুই আমার ছেলে হয়ে বাংলাটাই শিখছিস না তাহলে আমার অনুভুতিগুলো জানবি কি করে বাসুন আমার? আর এটাই যদি তোকে শিখিয়ে যেতে না পারি তাহলে আর কার কাছে যাবো আমি, জান আমার? বাবু আমার,আমার সোনার ছেলে, তুই শুধু একজন সাধারন মানুষ হয়ে উঠ,খুব সাধারন,আর কিছু চাই না বাবু । কোন বিখ্যাত মানুষ না , ঞ্জানী না , পন্ডিত না , কিছুই না শুধু একজন সত্যিকার মানুষ ।

আজকের দিনটার কথা বলে এই চিঠিটা শেষ করবো। তুই আজ গ্রেড টু শেষ করলি বাসুন। টরোন্টো শহরের লরেন্স আর ফার্মেসীর কলোনী রোডের ২ নং বাড়িতে তুই আর আমি প্রথম সংসার শুরু করেছিলাম ২০০৬ সালের অগাষ্ট মাসের ২৮ তারিখে , আজ সেই বাড়ীওয়ালা ভাবী এসছিলো আমাদের বাড়িতে,এই বাড়ির মানুষগুলোর কাছে আমার অনেক দেনা বাবু, ওরা ছিলো বলেই এই শহরে তোকে নিয়ে আমি পড়াটা শেষ করতে পেরেছি । বড় হলে এই খালাকে সন্মান করতে যেন ভুলিস না বুড়া ।

আমার আর তোর হ্যাপি ফ্যামিলি,তুই সব সময় আমাকে বলিস বাবু ” ইউ লাভ মি,আই লাভ ইউ,উই আর ইন এ গ্রেট ফ্যামিলি ” আসলেই বাবু আইওনভিউ রোডের এই বাড়িটা আমাদের কানাডার জীবনে দ্বিতীয় বেসমেন্ট,তোকে নিয়ে শুধু কষ্টই করেছি এটা বললে ভুল বলা হবে, আনন্দও পেয়েছি অনেক । আমার অনেক না পাওয়ার ভিতর তুই আছিস আমার জীবন ও সময় জুড়ে, তাইতো ২০০৭ সালের জুলাই / অগাষ্ট মাসটা তোকে নিয়ে থাকবো, নইলে চেষ্টা করলে কি কাজ আমি পেতাম না বল? নিশ্চয়ই পেতাম বাবু ,তোর মা হাজার প্রতিকুলতার ভিতর সোজা হয়ে দাড়াতে জানে,শুধু এই কথটা মনে রাখবি আজীবন । আজকে আর না বাবু, রাত অনেক হলো, তোকে বুকে নিয়ে এখন ঘুমাবো। আবার লিখবো তোকে বাসুন, অনেক আদর তোর ছোট কপালে ।

তোর মা ( ৫ জুলাই ২০০৭)

টরোন্টো, কানাডা ।
                                                                                            Email:[email protected]

পর্ব