জয় বাবা পশুনাথে সংযোজন
বাঘে ছুঁইলে আঠার ঘা আর মুক্ত - মনার নেশায় ধরলে ছত্রিশ ঘা। তা ছাড়া এক শিয়ালে হুক্কা হুয়া ডাক দিলে সাত শিয়ালে সাড়া দেয়। সব শিয়ালের যে এক রা। তাই বন্যা আহমেদের ডাকে হুক্কা হুয়া না করে পারলাম না। তবে আমার সাড়া দেয়া কুকুরের ঘেউ ঘেউ এর পর্যায়ে না পরলেই হয়।
অনেকে বলেন দুষ্ট গরুর চেয়ে শুন্য গোয়াল ভাল, কিন্তু আমি বলি দুধ দেয় গাভীর লাথিও ভাল। অর্থাৎ সামরিক বাহিনীর চেয়ে রাজনৈতিক দলের শাসনই কাম্য। কিন্তু আমার মত শকুনের আশীর্বাদে কি আর গরু মরবে? তবে জরুরী আইন বলবৎ থাকা অবস্থায় কিছু সুবিধাবাদী লোক ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মত শুধু শুধুই লাফালাফি করে। নতুন রাজনৈতিক দল বানায়।
সামরিক সরকার তো ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেশ চালায়। এর মধ্যে কিছু সাফল্য আসে পরিকল্পিত কার্যক্রমে আর কিছু আসে কাকতালীয়ভাবে, মানে ঝড়ে বক মরে আর ফকিরের কেরামতি বাড়ে।
বাংলাদেশের মত দেশে প্রতিরক্ষা ব্যয় এত বেশী দেখে অনেকেই বলেন ----- ধান নাই, চাল নাই ঘর ভরা ইঁদুর। অন্যান্য দেশকে অনুসরণ করে এ ব্যয় করা হয়। ময়ূরের নাচ দেখে লেজ নাড়ে ছাতার পাখি।
আমাদের জাতীয় সম্পদ তো সেই কাজীর গরুর মত, কিতাবে আছে; গোয়ালে নেই।
সব সামরিক সরকারেরই প্রথম দিকে সাজ সাজ রব। শুরু হয় লোক দেখানো বুদ্ধদেবের অষ্ট মার্গের সাধনা। সৎ কাজ --- সৎ চিন্তার মহোৎসব। রাজনৈতিক দল সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয় ছাগল দিয়ে ধান মাড়ানো যায় না। ধর পাকড় শুরু হয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঘোষিত হয় জেহাদ। তখন ভয়ে অবশ্য বাঘে মহিষে এক ঘাটে জল খায়। নইলে সামরিক সরকার কার ভিটেয় কখন ঘুঘু চরাবে কে জানে? তাছাড়া জনগণ তখনও সম্মোহনে থাকে বলে পিছন দিয়ে যে হাতি যায় তা দেখে না। কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকারের সময় সামনে দিয়ে মশা মাছি গেলেও প্রতিবাদ করে বা করতে পারে। কিছুদিন পর জলপাই বাহিনীর আসল রূপ প্রকাশ পায়। তবে বাংলাদেশের তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকার নিয়ে জনগণ আশাহত। এখন ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়।
যাক, অনেক কথা বলা হল। নিশ্চয়ই আমার লেখাটি পড়তে পড়তে অনেকে মনে মনে বলছেন ------ পাগলে কি না বলে আর ছাগলে কি না খায়? কিন্তু না বলে কী করি বলুন তো? সাম্রাজ্যবাদীগোষ্ঠি তো সারা বিশ্বে মাকড়সার জাল পেতে বসে আছে। এ সব দেখেও কী কচ্ছপের মত নিজেকে গুটিয়ে রাখা উচিত? বাঘেরও চক্ষু লজ্জা আছে, কিন্তু সাম্রাজ্যবাদীগোষ্ঠির তা ও নেই।
জঙ্গীবাদীদের তো কোন সরকার কিছুই করতে পারল না। এতো বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা। দু’চারজনের ফাঁসি দিলেই কী জঙ্গীবাদ নির্মূল হবে? ঘোড়ার ডিম হবে। সব সরকারের সাথেই তাদের আতাঁত থাকে। কাকের মাংস কাকে খায় না। ভারসাম্য রক্ষা করে চলা। দু’চারজনের ফাঁসি দিয়ে সাপও মরল আর লাঠিও ভাঙ্গল না। অনেকে বলেন --- কয়েকজনকে ফাঁসি তো দেয়নি বাঘের পাছায় ঘা করেছে। এর শোধ তুলবে।
জঙ্গীবাদীরাও মনে করে হাতি মরলেও লাখ টাকা। তারা সাময়িক ভাবে চুপ করে আছে। তারা মনে করে ---- আমরা ঘুঘু দেখলেও এখনো ফাঁদ দেখিনি। দেখাবে। সুযোগ পেলেই দেখাবে। জঙ্গী নেতারা হয়তো বিশ্বাস করে ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হয় না। পয়সা ছড়িয়ে ইসলামী বিপ্লব করবে? জঙ্গীদের শক্ত হাতে ঠেকাতে হবে। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে?
জঙ্গীদের আস্ফালনও কম নয়। তারা মনে করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেই তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না আর বাংলাদেশে! হাতি ঘোড়া গেল তল, ভেড়া বলে কত জল।
আমার কিন্তু দৃঢ় বিশ্বাস ---- তারা পারবে না। বিড়ালের ভাগ্যে শিকা ছিঁড়বে না। চামচিকা একটা পাখি, গামছা একটা কাপড় আর জঙ্গীবাদীরা বিপ্লবী! বাংলাদেশে যে সব জঙ্গী ধরা পরেছিল তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা ও অবস্থান বিশ্লেষণ করলেই বুঝা যায় যে তারা পয়সায় কেনা বিপ্লবী। গোঁফ দেখলেই শিকারী বিড়াল চেনা যায়।
তাদেরকে আর বাড়তে দেয়া যায় না। শক্ত হাতে দমন করতেই হবে। বলিষ্ঠ্য কণ্ঠে তাই তো বলি --- বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান
এইবার তোমার আমি বধিব পরান।
সাপ না মরলে সোজা হয় না। জঙ্গীরাও সহজে ঐ পথ ছাড়বে না। তাদের তো জানের মায়া নেই। মাছের মায়ের পুত্র শোক। ব্যাঙের আবার সর্দি?
চাকরী পেয়ে প্রথমে আমার ছোট ভাই প্রদ্যোত বুঝতে পারেনি যে একটু রয়ে সয়ে চলতে হয়। যে ভাবে খরচ করা শুরু করেছিল তাতে ভবিষ্যৎ ছিল ফকফকা। আমাকেই বুঝাতে হয়েছিল হিসাবের গরু বাঘে খায় না। সে কিন্তু প্রথমে আমার কথা মানতে চায়নি। তার ভাষ্য ছিল ---- ঘোড়া থাকলে কি আর চাবুকের ভাবনা। এখন বুঝে এবং পারলে কানা গরু বামুনকে দান করে।
নিজের জিনিস যেমন ইচ্ছে তেমনভাবে ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ তোমার পাঠা তুমি যে দিক দিয়ে ইচ্ছা সে দিক দিয়ে বলি দাও।
মুরুব্বীরা উপদেশ দিতেন --- বেশী বাড় বেড়ো না ঝড়ে ভেঙ্গে যাবে , আবার বেশী ছোট হইও না ছাগলে মুড়ে খাবে। আরও বলতেন --- ঘোড়া ডিঙ্গিয়ে ঘাস খাওয়া ভাল না। এখন মুরুব্বীদের উপদেশ দেয়ার মত পরিস্থিতি নেই। তাদেরকে শুনতে হবে ---
জুতা মেরে গরু দান করতে আসবেন না।
কোন কিছু কেনা যত সহজ, বেচা তত কঠিন। তাইতো বলা হয় --- কিনতে ছাগল আর বেচতে পাগল।
বাঁশ তলায় বিয়ালো গাই / সেই সুবাদে মামাতো ভাই। লতাপাতা খুঁজে ধনীর সাথে আত্মীয়তা পাতা আর কি।
অনেকে একটু আধটু পান্ডিত্য জাহির করলেই বলি ছাল নাই কুত্তার বাঘা নাম। কিন্তু পান্ডিত্য জাহির অনেক সময় নির্ভর করে বক্তার পারিপার্শ্বিকতার উপর। কারণ পন্ডিত বাড়ির বিলাইও আড়াই অক্ষর জানে।
আমার পরিচিত এক পরিবারের ছেলে পরিবারের অপছন্দ কোন মেয়েকে বিয়ে করতে চাইলে একজন বলেছিল --- যে মেয়েটা দেখতে কেমন? দেখতে শুনতে ভাল হলে বিয়েটি করিয়ে ফেলাই ভাল।
মেয়েটির সৌন্দর্যকে অস্বীকার করে ঐ পরিবারের একজন বলে – আরে দেখতে শুনতে ভাল আর কী? দাঁড় কাককে ও তো যৌবনে সুন্দর লাগে। মিষ্টি পেলে তো মাছি ভন ভন করবেই। ছেলেটিও ভন ভন করছে।
এখন অন্য মেয়ে বিয়ে করানো কী ঠিক হবে?
বিয়ে করিয়ে দেব। ছেলের বউকে বলব প্রথম রাতেই বিড়াল মারতে।
পাঠক, আমি যথেষ্ঠ জেন্ডার সংবেদনশীল। ব্যক্তিগতভাবে আমি বাহ্যিক সৌন্দর্যকে গুরুত্ব দেই না এবং মেয়েদের মিষ্টির সাথে তুলনাকেও ঘৃণা করি। এখানে শুধুই সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরছি। বল্লার চাকে (মৌচাকে) ঢিল ছোঁড়ার ইচ্ছে বা রুচি কোনটাই আমার নেই।
আমার ছোট ঠাকুমা ছোটবেলায় লাল ফিতা দিয়ে মুরগীর মত ঝুঁটি বেঁধে দিতেন।
উচিত কথা অবশ্য কেউ শুনতে চায় না। গরম ভাতে বিড়াল বেজার আর কি।
এত উপদেশ দিয়ে লাভ নেই, বানরের গলায় মুক্তার মালা দেয়া ছাড়া।
নেওটা বাচ্চাদের মা আদর করে গালি দেয় – একটু চোখের আড়াল হলেই বাছুরের মত হাম্বা হাম্বা কর কেন? ছাগলের বাচ্চার মত সারাক্ষণ ম্যা ম্যা না করলে হয় না? সারাদিন পই পই করে ঘুরে আর আমাকে দেখলেই কোলে উঠতে হয়। ঘোড়া দেখলেই খোড়া।
পশু, পাখি ও কীট-পতঙ্গ নিয়ে লেখার জন্য গ্রামে যাওয়া প্রয়োজন ছিল। বয়স্ক ব্যক্তিরা গরুর মত জাবর কাটতে কাটতে এ বিষয়ে অনেক কিছু বলতে পারতেন।
মেঘের জন্য চাতক পাখি যেমন অপেক্ষায় থাকে আমিও তেমনি পশুপাখি নিয়ে অন্যান্যদের কাছ থেকে আরও কিছু শোনার জন্য অপেক্ষায় থাকব। আরও কিছু শোনা মানে খাল কেটে কুমীর আনছি না তো ?
ইষ্টিকুটম পাখি না ডাকলেও বাসায় অতিথি এসেছে। কাজেই লেখায় সাময়িক বিরতি দিতে হল।
গীতা দাস
২০ ভাদ্র, ১৪১৫/ ৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৮