মুক্তমনায় প্রকাশিত লেখা প্রসংগে
মুক্তমনা মানে মুক্তমনা ওয়েব সাইটের সাথে যাদের পরিচয় ও সংশ্লিষ্টতা আছে – তাঁরা জানেন – মুক্তমনা এ ছয় বছরের মধ্যেই একটি বলিষ্ঠ আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। মুক্তমনার সাথে আমার পরিচয় ঘটেছে বছর দেড়েক আগে। তারপর থেকেই যখনই সময় পাই – মুক্তমনার লেখাগুলো পড়ি। এখন নিজে কিছু লিখতে গেলেও মুক্তমনা হয়ে ওঠে অন্যতম রেফারেন্স।
মুক্তমনায় প্রকাশিত কোন লেখার রেফারেন্স উল্লেখ করতে গিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে কিছু সমস্যায় পড়ছি। সমস্যাটা হলো রেফারেন্স নাম্বারের। মুক্তমনা সবার জন্য মুক্ত। এখানে একটা সম্পাদকীয় বোর্ড আছে ঠিকই – তবে প্রকাশিত লেখাগুলো বরাবরই লেখকেরই নিজস্ব মতামত। রেফারিড জার্নালে যেমন লেখা প্রকাশের আগে এক বা একাধিক রেফারিকে সন্তুষ্ট করার প্রশ্ন আসে – মুক্তমনায় সেরকম নেই। এই বাধ্যবাধকতা না থাকাটাই অনেকাংশে সত্যিকারের মুক্তমনার পরিচয়। মুক্তভাবে মনের কথা বলার আয়োজন এখানে। লেখা প্রকাশের আগে সম্পাদকের হাতে লেখার মান যাচাইয়ের পরীক্ষা দিতে হলে অনেকেই হয়তো লেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতেন। যেমন ফিজিক্যাল রিভিউতে কোন লেখা প্রকাশ করেন নি আইনস্টাইন।
পদার্থবিদ্যার সবচেয়ে কুলীন জার্নাল হলো ফিজিক্যাল রিভিউ। আইনস্টাইন যখন জার্মানিতে ছিলেন তখন এ জার্নাল পড়ার বা এ জার্নালে লেখার কোন প্রশ্নই তাঁর ছিলো না – কারণ তিনি ইংরেজি জানতেন না। কিন্তু আমেরিকায় আসার পর স্বাভাবিক ভাবেই লেখা পাঠালেন ফিজিক্যাল রিভিউতে। কিন্তু লেখা প্রকাশের আগেই রেফারি যখন কিছু কিছু পয়েন্টের আরো ব্যাখ্যা চাইলেন – এবং কিছু কিছু পয়েন্টের সাথে দ্বিমত পোষণ করলেন – আইনস্টাইন ক্ষেপে গেলেন। তিনি বললেন – আমার গবেষণা যদি তোমার কথামতো সাজাতে হয় – তাহলে গবেষণাটার মৌলিকত্ব থাকে কীভাবে? আইনস্টাইনের এ যুক্তি তর্ক সাপেক্ষ। তবে আইনস্টাইন আর কখনো ফিজিক্যাল রিভিউতে লেখা পাঠান নি।
মুক্তমনায় লেখা প্রকাশের বৈচিত্র দেখলে সত্যিই ভালো লাগে যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা আর পরমতসহিষ্ণুতার এমন উদাহরণ খুব বেশি চোখে পড়ে না। তারপরও যখন আমাদের সাংস্কৃতিক দুর্বলতার কারণে আমাদের লেখাগুলো মূল প্রসঙ্গ ছেড়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক আক্রমণে উদ্যত হয় – সম্পাদককে রাশ টেনে ধরতে হয়। এটাই স্বাভাবিক। সেকারণেই স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচারীতার মধ্যে পার্থক্য।
মুক্তমনায় প্রকাশিত লেখাগুলোর যদি একটা রেফারেন্স নাম্বারের ব্যবস্থা করা হয় – তাহলে মনে হয় প্রকাশিত লেখাগুলোর একটা স্থায়ী পরিচিতি হয়। লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি থেকে নিউক্লিয়ার থিওরির একটা অনলাইন জার্নাল আছে – যেখানে প্রকাশিত লেখাগুলো রেফারির হাত ঘুরে আসেনা – লেখকই সরাসরি তা অনলাইনে প্রকাশ করতে পারেন। তাদের রেফারেন্স নাম্বার দেয়া হয় প্রথমে সাল – পরে মাস ও তারপর সিরিয়াল নাম্বার। উদাহরণঃ nucl-th:200710001 । এ রেফারেন্স নাম্বার দিয়ে বোঝানো হচ্ছে এটা ২০০৭ সালের দশম মাস মানে অক্টোবরে প্রকাশিত ০০১ নম্বর লেখা। মুক্তমনায় যেহেতু বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা প্রকাশিত হয় – সেক্ষেত্রে মুক্তমনাতে বাংলা ও ইংরেজিতে আলাদা আলাদা রেফারেন্স নাম্বার থাকতে পারে। সম্পাদক মন্ডলী লেখা প্রকাশের ক্রম অনুসারে এমাস থেকেই শুরু করতে পারেন। ২০০৭১০-০০১ হতে পারে বাংলায় প্রকাশিত লেখার নম্বর, আর 200710-001 হতে পারে ইংরেজিতে প্রকাশিত লেখার নম্বর।
লেখাই লেখকের প্রতিনিধিত্ব করে এটা সত্য – কিন্তু তারপরও লেখকের একটা নিজস্ব পরিচয় আছে। মুক্তমনার বেশির ভাগ লেখার শেষেই লেখকের পরিচিতি থাকে। এটাই কাম্য। লেখক পরিচিতিটা লেখা প্রকাশের একটি আবশ্যিক অংগ করে নিলে ভালো হয়। কোন লেখক যদি তাঁর পরিচয় প্রকাশ না করতে চান – সেটাও পাঠককে জানিয়ে দেয়া হোক। মুক্তমনা ফোরামে যেমন অনেকে ছদ্মনামে লেখেন – সেরকম কোন মূল লেখাও যদি ছদ্মনামে প্রকাশ করতে চান – সেটাও জানিয়ে দেয়া যেতে পারে।
মুক্তমনায় প্রকাশের জন্য একটা লেখা লিখতে গিয়ে রেফারেন্স দিতে গিয়ে এ সমস্যার কথা মনে হলো। আশাকরি সম্পাদকমন্ডলী ব্যাপারটা বিবেচনা করে দেখবেন। রেফারেন্স নাম্বার দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে নতুন লেখা প্রকাশের সাথেই মুক্তমনা লোগো সহ নাম্বারটা প্রকাশিত হতে পারে। পরে আগে প্রকাশিত লেখাগুলোর রেফারেন্স নাম্বার যোগ করা যেতে পারে। এখন যেহেতু ইউনিকোড ব্যবহার করা হচ্ছে – রেফারেন্স নাম্বারের ব্যাপারটা খুব কষ্টসাধ্য হবার কথা নয়।
ধন্যবাদ।
Dr Pradip Deb. Lecturer in Health Physics. School of Human Life Sciences. University of Tasmania, Launceston, TAS 7250, Australia. [email protected].