দে ছাইড়া, পোলাডারে!
উ.দ. বেড়াল
[পুরান ঢাকার বংশাল রোডের এক রেস্তোরায় দুই কুট্টি - এক চাচা (জুম্মন সর্দার) আর তার কম বয়সি ভাতিজা (সুমন) ডায়োলোগ মারছিল বিড়াল লইয়া যে কার্টুন একখানা বারইছে হেইটি লইয়া]
চাচা জুম্মন (জু): আবে হালার ভাতিজা, আহো, বহো, এক কাপ চা খাও। তুমারে ত হালার আইজ কাইল দেখাই যায় না, আমাবস্যার চান্দ হইয়া গ্যাছ ক্যান?
ভাতিজা সুমন (সু): তয় চাচা, হালার মিলিটারীর যুগে জান বাচাইয়া চলতে হয় বেবাক মানুষেরে। কওন তো যায় না, সাবধানে থাকি, হের লাইগ্যা আমারে আইজ্-কাইল্ অতটা আর দেখেন না। মগর বাত হইতেছে গিয়া যে দিন কাল বহুত খারাপ হইয়া গ্যাছে। জিনিষ পত্রের চড়া দাম, কিছ্ছু কিনবার পারিনা - এমন কি পরিবারের লাইগ্যা এফতার পর্যন্ত না!
জুঃ মিলিটারীগো উপর খেপছো কেন্ খামাখা? হো, জিনিষ পত্রের দাম থোড়া সা বাড় গিয়া, লেকিন জান-মাল লইয়া তো বাইচ্চা আছি ঢাকার শহরে? এইটা কুনু কম কথা নাকি? তো, তোমারে খুব পেরেসান দেখা যাইতাছে ভাতিজা। ব্যাপারখানা খোলাশা কইরা কও দেহী? লেড়কী-ফাড়কী কো তো চক্কর নেহী হ্যায়, কুই?
সুঃ বিলকুল নাহী চাচা, আওরত আমার কাছ থেইক্কা বহুত তফাত থাকে। বাত হইলো গিয়া - এই মুলুক এক্কেবারে বরবাদ হো চুকী হায়। এইখানে আর থাকন যাইবোনা হালায়। মিডিল ইস্টের পথই ধরন লাগবো দেখতাছি। চাচা, আমার বয়সি এক পোলা যে কিনা বিল্লী-লেকে কার্টুন আইক্যা মুল্লাগোরে লইয়া ফালানা তামাশা করছিল, এখন তার হোগায় বাশ! মুল্লাগো লইয়া মোজাক্ উড়াইলে এর পরিনাম আর ভাল হইবো না এই দ্যাশে। ঠাট্টা মশকরা আর এই দ্যাশে চলবো না, এই বাতটা আমগো হালার সক্কলরে মনে রাখতে হইবো এখন থেইকা।
জুঃ জরুর, জরুর! ইয়ে তুম সহি কাঁহা। মাওলানারা হইতেছে আমাগো ইসলাম ধর্মের গার্জিয়ান - ইয়ানে - রাখনেওয়ালা। হেরা খেপ্লে কুনু রখ্খা আছে। হেগো খেপাইয়া দ্যাশে হালায় লানত আইন্যা কার কি লাভ? দেখো না, আমাগো ফখ্রু সা’ব পর্যন্ত হেগো ডরায় ‘জিয়াদাসে জিয়াদা’। মৌলভীগো ল্যাজে মুচড় দেওয়া আর তুমার গিয়া ভীমরুলের বাসায় ঢিল মারা - এস্মে কোয়ী ফারাখ নাহি হ্যায়। বুঝলা হালার ভাতিজা, মুনসী-মৌলভী গো কুনু সময় খেপাইবা না। জান গেলেও না। হপায় নৌজোয়ান হইছ, বদন মে বহুত তাজা খুন ঘুরতা-ফিরতা হ্যায়, এর লাইগ্যা এইসবে পাত্তা দ্যাও না তুমার জেনারেশনের পুলাপানেরা। হর-হামেশা এই বুজুর্গ চাচার কথা মনে রাখবা। আম্গো ‘পর্থম আলো’র এডিটর ইয়ানে ছম্পাদক মতি ভাইয়া এই চাচার ফিলোসোপিতে ইয়াকিন রাখে। শুধু এর লাইগ্যা হালার ছম্পাদক এই দফা বাইচ্চা গেলো গা!
সুঃ চাচা, এইডারে হালার বাচন কয়? ইস্সে মওত ভী আছ্ছা হায়, বেহতর হ্যায়। মুল্লারা কার্টুন বারইবার পর কয় - ‘‘হালার মতি মিয়ারে দেইখ্যা লইমু কেম্নে থাকে এই দ্যাশে।’’ মুল্লাগো জবান শুইন্যা মতি মিয়ার খানা-খারাব হো গিয়া জরুর। শেষ-মেশ মানিক মিয়ার লাপাট্টু আর বে-জন্মা পোল মাইনুল হুসেনের বুদ্ধি লইয়া বায়তুল মুকার্রমের খাতিবের মজলিশে গিয়া হাজির। আর সেইখানে গিয়া নাকে খত দিল বেবাগ মওলানার সামনে। কেয়া শরম কি বাত হায়? সালাকো দিমাগ বিলকুল খারাপ হো চুকী হ্যায়! ছিঃ ছিঃ! আমাগো ইজ্জত মিট্টিমে মিলা দিয়া হ্যায়!!!
জুঃ হালার ভাতিজা, এতো রক্ত গরম কইরো না। মতি ভাই হালায় ঠিকই করছে। তওবা করণ ছাড়া আর কুনু গতি ছিল না তার। হে জাতে মাতাল হইলে কি হইবো, তালে ঠিক আছে। এইটা তো আম্গো শেখ সাহেবের জমানা না, এইটা হালার হইলো গিয়ে হইলো মিলিটারীর তাও আবার এমারজেন্সী রুলের সময়। হুষ্ বুষ্ কইরা সব্বাইরে চলতে হইবো, ভাইব্বা-চিন্তা কইরা বাৎ চিৎ করতে হইবো, তাই না ভাতিজা?
সুঃ চাচা, কার্টুন যে আখ্ছে সে তো আমার জেনারেশনের পুলা। আপনার কথামতে - রক্ত গরম পোলা। সে তো নবী করিমরে লাইয়া মজাক্ উড়ায় নাই, চাচা? গুস্থাকি মাফ করবেন চাচা, পোলাডা মুল্লাগো বেওকুফী লইয়া কার্টুন বানায়ছিলো।
জুঃ লেকিন ভাতিজা, হেই কার্টুনটা বুম্রারাং হইয়া মতি ভাই, মেহফুজ ভাই, আল্পিনের এডিটর, আর আকুয়াইয়ার ঘাড়ে গিয়া হান্দাইলো।
সুঃ এইদিকে আল্পিনটা যে হুজুরগো পাছার মধ্যে গিয়া বিধ্বো এমন কইরা, এইটাতো কেউ ঠাওর করতে পারে নাই গ্যা?
জুঃ ভাতিজা, তুমারে আগেই কিইছি দিন কাল খুব খারাব এখন। তয়, সাবধানে কথা কইবা। হাসিনার ট্যারা ট্যারা কথার ফল হইলো গিয়ে তার জেলে যাওন। দেইখো, আবার যেন ‘ব্লেশফেমী’ আইনে না পড়। তা হইলে বিপদ বিলক্ষণ! যেটা কইছো সেইটা আর ফের কইরা আর কইও না। রিমান্ডে লইয়া গ্যালে তুমারে আর খুইজ্জা পাওয়া যাইবো না। আগার তুমকো র্যাব ক্রস-ফায়ারমে ডাল দেয়গা তো মওত্ ভি নস্দিক চলা আয়গা।
সুঃ সবই বুঝলাম চাচা, লাকিন মুঝে এয়াকিন দেলাদো, ইয়ে নাদান লাড়কাকো কায়ছে জেল ছে বাহার করে গা।
জুঃ ভাতিজা, হুশ কইরা কথা কইবা। দ্যাশের যে অবস্থা, এখন খোদ আল্লাহ তাঁর আরশ থেইকা লাফাইয়া ঢাকায় আইয়া খাতিবরে বুঝাইলে আল্লাহর কথায় চিড়া আর ভিজবো না এস টাইম-মে। মুল্লারা ওহন তড়পাইতেছে আগের কালের রাজা-বাদশাহ গো মত পোলাডারে শূলে দিবার লাইগ্যা। পরবরদিগার তাঁর রহমত নাজিল করলেও আরিফ মিয়ারে জেল থেইক্কা বাইর ওহন আর করতে পারবা না।
সুঃ তাইলে কি এই গর্মেন্ট খতিব আর তার মতন পাঁড় ইসলামিস্টদের হাতের মুঠোর ভিত্রে?
জুঃ জরুর, জরুর! দেখলা না, কেমন ট্রিক্স কইরা মইনুল হুসেন পর্থম আলোর ছম্পাদক আমাগো মতি ভাইরে হুজুরগো মজলিশে লইয়া গিয়া নাকে খত দেওয়াইলো?
সুঃ চাচা, তয় আমি গাট্টি-গুট্টি বাইন্দন শুরু করি এই বেলা থেইকা। এই সোনার দ্যাশটা হালার তালেবানগো দ্যাশ হইয়া গ্যাছে, ওলরেডী। এই দ্যাশটার ফিউচার সব বরবাদ হাইয়া গ্যালো। হুজুররা এই দ্যাশটারে যে দুজোখের মধ্যে নিয়া গিয়া হান্দাইবো ইসমে কোই বাত নেহী হ্যায়। তয় জাওনের আগেও কইয়া যাই, ‘দে ছাইড়া, পোলাডারে।’’