বইমেলায় আমাদের লেখা ক'টি বই

অভিজি রায়

 

 

একটি জনপ্রিয় বাংলা ব্লগে এক লেখকের প্রথম বই প্রকাশের বেক্কল মুহূর্ত নামে একটি লেখা  পড়বার পর থেকেই ভাবছিলাম আমারো এ কিছু লেখা দরকার।  সত্যি বলতে কি এক ধরনের ঈর্ষাই হচ্ছিল তার ব্যাক্কল  হওয়ার বর্ণনা পড়ে। ভাবছিলাম – তাও তো  ভাইজান ‘ব্যাক্কল হওনের’ সুযোগটুকু পাইছিলেন।  আমাদের মত বিদেশ-বিভূইয়ে পড়ে থাকলে বইমেলার স্টলে ‘মোড়ক উন্মোচনের’ পর  শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার অনুভূতি কিংবা বুকের ভেতরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগার স্বাদ আর পাওয়া হত না।  ১৯৯৮ সাল থেকেই পড়ে রয়েছি দেশের বাইরে।  এর মধ্যে বেশ ক’বারই দেশে যাওয়া হয়েছে বটে, কিন্তু কোন বারই বইমেলার সময়টাতে নয়।  শালার - ফেব্রুয়ারী মাস আসলেই কোত্থেকে যেন  অফিসের সব ঝুট ঝামেলা এসে এমনভাবে কাঁধে ভর করে নাওয়া খাওয়া তখন শিকোয় উঠে।  আটটা-পাঁচটা অফিস করতে করতেই শরীরের সমস্ত রস কর্পুরের মত উড়ে যায়। বইমেলার খবর নেওয়া হয় তখন অফিসের কাজ-কাম সামলিয়ে বিরস বদনে পত্র-পত্রিকা পড়ে – দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতই আর কি!   এর মধ্যে সচলায়তনে দেখলাম শুধু মাহবুব লীলেন নন, অমিত আহমেদ,  তীরন্দাজ সহ অনেকেই তাদের প্রকাশিত বইয়ের কথা জানিয়েছেন। ভাবছি,  ভয়ে ভয়ে আমার বইগুলোর কথাও পাঠকদের জানিয়ে যাই এবারে।  যদিও আমার দৃঢ় ধারণা, ভালবাসা দিবসের এই সরস দিনে আমার নিরস লেখা সমৃদ্ধ বইগুলো নিয়ে আলোচনা অনেককেই নিরাশ করে দেবে।

 

২০০৫ সালের বই মেলায় বের হয় আমার প্রথম বই ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ । আসলে বইটাকে আমার দেশ ছারার পরবর্তী বছর গুলোতে বিজ্ঞান বিষয়ক লেখলিখির সংকলন বলা যেতে পারে। ইন্টারনেট আর বর্ণসফটের কল্যাণে আমি তখন একটু আধটু লিখতে টিখতে শুরু করেছি। উসাহ আমার তখন অদম্য।

সীমিত জ্ঞান পুঁজি করে বিজ্ঞান আর দর্শনের উচ্চমার্গীয় বিষয়েও সেঁদিয়ে যেতাম – তা সে মহাবিশ্বের উপত্তিই হোক, আর ঈশ্বরের অস্তিত্ব-এর দার্শনিক দ্বন্দ্বই হোক। একটা সময় মুক্তমনা সহ ইন্টারনেটের কয়েকটা বাংলা সাইটের জন্য ধারাবাহিকভাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর্যায়ক্রমিক ইতিহাস ভিত্তিক একটি সিরিজ লিখতে শুরু করলাম।

  সিরিজটার নাম দিলাম রবি ঠাকুরের  বিখ্যাত গান – ‘তুমি কি কেবই ছবি শুধু পটে লিখা’ থেকে একটি কলি চুরি করে। পাঠকদের থেকে প্রচুর ইমেইল পেয়েছিলাম সেসময়। অনেকেই অনুরোধ করেছিলেন সিরিজটাকে গ্রন্থে রূপ দিতে। আমিও ভাবলাম সিরিজটাকে একটু গুছিয়ে গাছিয়ে হয়ত গ্রন্থাকারে চালিয়ে দেওয়া যেতে পারে।  ভুমিকা লিখতে গিয়ে নিজেকে ‘কার্ল স্যাগান’ –এর মত মনে হচ্ছিল। তাই বইয়ের ভুমিকায় ‘মনের মাধুরী মিশাইয়া’  লিখলাম গালভরা কতগুলো হাবিজাবি কথা –

‘বিজ্ঞানের অবদান কি কেবল বড় বড় যন্ত্রপাতি বানিয়ে মানুষের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য বয়ে আনা? আমাদের স্কুল কলেজে যেভাবে বিজ্ঞান পড়ানো হয় তাতে এমনটিই মনে হওয়া স্বাভাবিকব্যপারটা কিন্তু আসলে ঠিক তেমনটি নয়বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে মানুষ বড় বড় যন্ত্রপাতি বানায় বটে; তবে সেগুলো স্রেফ প্রযুক্তিবিদ্যা আর প্রকৌশলবিদ্যার আওতাধীন; বিজ্ঞানলব্ধ জ্ঞানের অভিযোজন মাত্রআসলে বিজ্ঞানের একটি মহান নজ কাজ হচ্ছে প্রকৃতিকে বোঝা, প্রকৃতিতে ঘটনলীর ব্যখ্যা খঁজে বের করাবিজ্ঞানের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য্য এখানেইহ্যাঁ, জ্যোস্না রাত কিংবা পাখীর কুজনের মত বিজ্ঞানেরও একটি নান্দনিক সৌন্দর্য্য আছে, সৌকর্য্য আছে- যার রসাস্বাদন কেবল বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভববিজ্ঞানসনস্ক বা বিজ্ঞানের অন্তর্নির্হিত মর্ম্মকথা বুঝতে হলে বিজ্ঞানীই হতে হবে এমন কোন কথা নেই, তবে বিজ্ঞান-প্রেমিক হতে হবে বলাই বাহুল্যবিখ্যাত জ্যোতির্বিদ কার্ল স্যাগান তাঁর বিখ্যাত ‘The Demon-Haunted World’ বইয়ের ভূমিকায় এ কারণেই হয়তো বলেছিলেন, ‘সাধারণ মানুষের কাছে বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা না করাকে এক ধরণের বিকৃত মনোভাব বলেই আমার মনে হয়যখন মানুষ প্রেমে পড়ে, তখন সারা পৃথিবীর কাছে সে তার প্রেমের কথা প্রচার করতে চায়এ বইটি আমার প্রেমের একটি ব্যক্তিগত স্বীকারোক্তি, বিজ্ঞানের সাথে আমার সারা জীবনের অন্তরঙ্গ সম্পর্কের ইতিকথা’

 

আমার বইয়ের ভূমিকা লিখতে গিয়ে কার্ল স্যাগানের উপরের লাইনগুলির চাইতে আর মানানসই কোন কথা খুঁজে পেলাম নাএ বইয়ের প্রতিটি লাইন লিখতে গিয়ে আমি নতুন করে খুঁজে পেয়েছি আমার ‘আমি’কে; বিজ্ঞানের সাথে গড়ে ওঠা আমার নিবির সম্পর্ককেআমার এ বইটি আসলে হাটি হাটি পা পা করে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রহস্য সমাধানে নিমগ্ন যাত্রীদের পথ চলার একটি সংক্ষিপ্ত দলিল; শতাব্দী প্রাচীন বিশ্বাসের অঢ়লায়তন ভেঙে যাঁরা বিজ্ঞানমনস্ক সভ্যতা বিনির্মাণে আলোর মশাল জ্বালিয়েছেন নিকষ কালো আঁধারে পথ দেখাতে, এ বই সেই সব যাত্রীদের বর্ণিল জীবনালেখ্য ...’

 

বইটা  বেরুনোর কথা ছিল সে বছরের (২০০৫) বই মেলায়।  ঢাকার এক নামকরা প্রকাশক – অঙ্কুর প্রকাশনী। অঙ্কুরের সত্ত্বাধিকারী মেসবাহ উদ্দিন কথা দিলেন আমার প্রথম বই তার প্রকাশনী থেকে  সেই বছরের বই মেলায় বের করে আমাকে ‘ব্যাক্কল হওনের’ সুযোগ করে দেবেন।  তবে যেহেতু আমি নতুন লেখক- বই চলবে কি চলবে না – তার নাই ঠিক – কাজেই তিনি লেখক হিসবে কোন সম্মানী ফম্মানী দেবেন না। তবে পরে যদি দেখা যায় বই ভাল চলছে  তিনি একটা লাম সাম রয়্যালিটি দেবেন – এমন ধরনের কিছু একটা মৌখিকভাবে ওয়াদা করলেন। অন্ততঃ তখন আমার তাই মনে হয়েছিল।  আমিও ভেবে টেবে দেখলাম মন্দ কি! আমি তো আর হুমায়ুন কিংবা জাফর ইকবাল নই। আমার লেখা ছাই-পাশ আর গিলবে কে!  আর তা ছাড়া বই মেলায় আমার মত অর্বাচীনের একটা বই বেরুবে – এই তো ঢের।   আর তাছাড়া মেসবাহ উদ্দিনের অঙ্কুর তখন আমার কাছে যেন সাক্ষা আসমানের চাঁদ। দাপিয়ে দুপিয়ে তসলিমা নাসরীন,  আকিমুন রহমান, হাসান আজিজুল হকদের বই দেদারসে বের করে চলেছেন।  তিনি যে প্রতিষ্ঠিত লেখকদের পাশাপাশি আমার বইটিও চিপা দিয়ে বইমেলায় বের করবেন, তাতেই আমি যার পর নাই খুশি।  পাক্কা পাঁচ ছ মাস হাতে রেখে পান্ডুলিপি দেওয়া হল। মাঝে খবর নিয়ে জানলাম ছাপা প্রায় কম্পলিট। নির্ঘাত বইমেলার আগে কিংবা প্রথমেই বইটা বেরিয়ে যাবে। তবে আমি শালা এমনই ব্যাক্কল তখন বুঝি নি – প্রকাশকের মূলো কি জিনিস!

 

২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাস এসে গেল। আমি হাত কামড়িয়ে অপেক্ষা করছি। নিশ্চয়ই প্রকাশক সাহেব ফেব্রুয়ারীর প্রথম দিকেই বইটা প্রকাশ করবেন।  ফেব্রুয়ারীর প্রথম সপ্তাহ চলে গেল। বইয়ের দেখা নেই।  প্রকাশককে ইমেইল করলাম। জানলাম খুব শিগগীরই বেরুচ্ছে।  তা খুব শিগগীরটা কত শিগগীর? আমি ব্যাক্কল, তাই ভেবে নিলাম নিশ্চয়ই এর পরের সপ্তাহেই বেরুচ্ছে।  তা সেই পরের সপ্তাহ গেল, এমনকি তার পরের সপ্তাহও। বইয়ের দেখা আর মিলিলো না।  এবারে আমার মেজাজ বিগরেছে। প্রকাশকের ফোন নম্বর যোগার করে ফোন করে দিলাম অঙ্কুরের অফিসে।  বিদেশ বিভুই থেকে ফোন করার নানা হ্যাপো। কার্ড যোগার করো রে,  বাংলাদেশের টাইম আর আমদের টাইম মিলিয়ে ফোন করো রে,  তারপর চোদ্দবার কল করার পর একবার লাইন পাওরে।  তা লাইন পেলে আর কি হবে, কথা বোঝা মুশকিল। ফোনের লাইনে ঘ্যারঘ্যারানি। এ পাশ থেকে আমি চীকার করে গেলাম। ও পাশ থেকে মেসবাহউদ্দিন। কেউ কারো কথা বুঝলাম না।  শুধু মাঝখানে ‘একুশ’ ‘একুশ’ শুনে ধারনা করে নিলাম বোধ হয় সামনের একুশে ফেব্রুয়ারীর দিনই বেরুচ্ছে।  

 

অমর একুশে চলে এল। আমার ঢাকার বন্ধুদের বলে রেখেছি – শহীদ মিনারে যাওয়ার পরে কোন এক সময় একাডেমীতে একবার অঙ্কুরে ঢু মেরে যাস রে। দেখিস আমার বইটা কেমন চলছে।  আমার বাসার লোকজনও তুমুল উচ্ছ্বসিত – বই একখান বেরুচ্ছে। আইজক্যা এস্পার কি ওস্পার।  কবি কবি ভাব নিয়ে চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে উদাস ভঙ্গিতে গোধুলী বেলায় আকাশ পানে চেয়ে পাখিদের নীড়ে ফেরা দেখছি।  বিকালের দিকে এক বন্ধুর এস এম এস পেলাম – কই অঙ্কুরে তো তোর বই দেখা যাচ্ছে না। স্টল তো খালি হ্যারি পটারে সয়লাব। 

 

- কি বলিস? ঠিক মত খুঁজে দেখেছিস তো?

 

- আরে কি বালের কথা কস। খুঁজছি মানে  পারলে টেবিল চেয়ার হাত্রাইয়া, উল্টাইয়া পাল্টাইয়া খুঁজছি। তোর কোন বই নাই।

 

- স্টলে কাউরে জিগাইছস?

 

-হ এক কালা আবুল মত লোক বইয়া আছিল। হেই ব্যাডায় কইছে – বইটা পুরা কম্পলিট হয় নাই। আরো অনেকদিন লাগব।

 

- কি কস এইগুলা? মেসবাহ উদ্দিনে তো কইলো আইজক্যা - একুশ তারিখেই বাইর হইতাছে।

 

-তাইলে তুই তোর মেসবাহউদ্দিনরে জিগা গা। তোর বই স্টলে নাই- হেইডা আমি কইবার পারি।

 

 

আমি ফোন রেখে গোমড়া মুখে  টিভি ছেরে দিয়ে সিএনএন দেখতে বসে গেলাম। 

 

তো আমার সেই বহুল প্রত্যাশিত বই ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ সেই ২০০৫ এর ফেব্রুয়ারীর বইমেলায় আর আলোর মুখ দেখলো না, আঁধারেই থেকে গেল। সে বই বেরুলো বই-মেলা পার করে মার্চ-এর ২৩ তারিখে।  প্রকাশকের একখানা ‘দাঁত ক্যালানো’ ইমেইল পেয়ে জানলাম বই বেরিয়ে গেছে। ভাবলাম, বই মেলাতে হয়নি তো কি হয়েছে, বের তো হয়েছে শেষ পর্যন্ত। এখন থেকে শাহবাগের বইয়ের দোকানের শেলফে আমার বই তো থাকবে - এতেই আমি ব্যাক্কলে খুশি। কী আনন্দ। আমি তাহলে য়াজ থেকে দেশের একজন তালিকাভূক্ত লেখক!  ৩২ পাটি দাঁত কেলিয়ে  মাঝরাতে সেলিব্রেশন করতে ক্লেমেন্টির  ফুড স্টলে চলে গেলাম।  কিন্তু সেই আনন্দ বিষাদে পরিণত হতে তিলমাত্র দেরী হল না, যখন দু’ সপ্তাহ পর বইয়ের একটা কপি আমার হাতে এল। বই খুলে দেখি পাতায় পাতায় শুধু ভুল আর ভুল। বানান ভুলের ছিরি দেখে আক্কেল গুড়ুম । ঢাকার নীলক্ষেতে ‘বেহেস্তী জওহের’ কিংবা ‘মকসদুল মোমেনিন’  মার্কা বই হাতে নিলে যেমন লাইনে লাইনে হোঁচট খেতে হয়, তেমনই দশা হল আমার ।  যদিও আমার বন্ধু বান্ধবেরা বই দেখে বলল,  কই -বই-এর চেহারা সুর আর বাঁধাই তো বেশ হয়েছে। ছাপাও তো ভাল, আর ভিতরে দেখি আবার ‘চাইর-রঙা কালার ছবিও দিছে’। কিন্তু আমার খুঁতখুঁতে মন তাতে মোটেই সন্তুষ্ট হল না।  আমি ঠিক করে ফেললাম  যা থাকুক কপালে - এর পরের বই অঙ্কুরকে দিয়ে বের করা যাবে না।  কোভি নেহি। এই মেসবাহ উদ্দিন এক বছরেই আমার হাড্ডি কালা কালা করে ফেলেছে।

 

এর মধ্যে একটি বছর পার হয়ে গেল। হাড্ডি কালা হয়ে গেলেও মনের জ্বালা ততদিনে একটু কমেছে।  কারণ, ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ বেশ ভাল চলেছে।  এক বছরেই এর প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে পরিবর্তিত এবং পরিবর্ধিত সংস্করণ বের করতে চাচ্ছেন প্রকাশক।  নীলক্ষেতের চটি-বই মার্কা ভুল ভাল বানান গুলোও ভদ্রলোক ঠিক করে দিয়েছেন।  ড. শাব্বির আহমেদ, ড. বিপ্লব পাল,  ড. হিরন্ময় সেনগুপ্ত, ড. শহিদুল ইসলাম, ড.বিনয় মজুমদারের মত বরেন্য লেখক এবং শিক্ষাবিদেরা বইটির রিভিউ করেছেন । সে সব রিভিউ প্রকাশিত হয়েছে এনএফবি, অবজারভার, হলিডে, ইন্ডিপেন্ডেন্ট,  ডেইলি স্টার, মৃদুভাষণ, ভোরের কাগজ সহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়।  প্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল কালি ও কলমের একটি সংখ্যায় গ্যালিলিওকে নিয়ে লিখতে গিয়ে আমার বইয়ের রেফারেন্স দিলেন।  এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বইটির বেশ বড়সড় প্রকাশনা উসব হল।  সে উসবে যোগ দিয়ে বইটির ঢালাও প্রশংসা করেছেন  জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান,  সাহিত্যিক বশীর আল হেলাল, অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম,  সাংবাদিক অরুণ দাশগুপ্ত, লেখক ও সংকলক মীজানুর রহমান (মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা খ্যাত) সহ অনেকেই।  এগুলো খবর  আমি পাই দেশের বাইরে বসে পত্র-পত্রিকা থেকে নয়ত বন্ধুদের মারফ।  মনটাই বিষন্ন হয়ে যায়।  তসলিমার কবিতার দুচরণ মনে  পড়ে তখন – ‘দেশ তুমি কেমন আছো? কেমন আছো দেশ তুমি?’ কিংবা মাহমুদুজ্জামান  বাবুর গানের লাইন – ‘তুমি আসবে এখানে আসবে -এই মানচিত্র তোমাকে ডাকছে’।

 

তা মানচিত্রের টানে মাঝে একবার দেশে যাওয়া হল। ভাবলাম, বিদেশ বিভুঁই থেকে নানা কিসিমের কথাবার্তা শুনি, এবারে আমার বইয়ের হাল সরোজমিনে দেখা যাবে।   আমার মাঝে মধ্যেই সন্দেহ হত, আদৌ আমার বই কি কেউ পড়ে? আমার বদ্ধমূল ধারনা ছিল আমার শ্রদ্ধেয় পিতা এই অধম সন্তানের বই লুকিয়ে লুকিয়ে দোকান থেকে কিনে নেয়, আমাকে খুশি করার জন্য। যদিও যখনই হাল্কা চালে গুতা দিতে বাবাকে যতবারই জিজ্ঞাসা করি -  ততবারই তিনি  কখনোই একটি কপিও কিনেনি বলে জোর দাবি করেন।  আমি আসলেই অবাক হই- আমার বই তাহলে পড়ে কে? একদিন শাহবাগের বইপত্র স্টলে গেছি। স্টলের সেলস্ম্যান আমাকে দেখেই বললেন – আপনি একটা বই লিখেছেন না? আমি আড়ষ্ট ভঙ্গীতে বলি – কই আপনার দোকানে তো তার নমুনা দেখি না। এর মধ্যে আড় চোখে পাশের শেলফগুলোয় দেখে নিয়েছি – আমার কোন বই ওতে নেই।  সেলসম্যান  সাহেব মৃদু হেসে নিজের দেহকে একটু কা করে তার  পেছনের বইগুলো দেখিয়ে বললেন – এই দেখুন। আমি লজ্জিত হই। আমার বই এত সামনে থাকবে আশা করিনি। সেলসম্যান আবারো বললেন, সেদিন অস্ট্রেলিয়ার থেকে এক ভদ্রলোক  এসেছিলেন – আপনার বইটার এমন প্রশংসা শুরু করলেন...। আমার চোয়াল ততক্ষনে বিঘখানেক ঝুলে গেছে।  মাথা ঝিম ঝিম করছে। সেলস্ম্যান-এর কোন কথা আর কানে যাচ্ছে না। হতভম্ভ অবস্থাতেই দোকান থেকে বেরিয়ে এলাম। এখন আবছাভাবে মনে পড়ছে সেলসম্যান নাম ছিল বোধ হয় জয়ন্ত বা এই জাতীয় কিছু। 

 

আরেকদিন অঙ্কুরের অফিসে গেছি। দেখি আকিমুন রহমান। আমি সবেমাত্র উনার ‘বিবি থেকে বেগম’ নামের অসামান্য বইটা পড়ে শেষ করেছি।  উনার বাংলা পড়লে আমার সত্য সত্যই লেখা ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে। একটু এগিয়ে গিয়ে আমার পরিচয় দিয়ে বলতে শুরু করলাম- আপনার বইটা এত চমকার লেগেছে...। উনি তার আগেই হর বর করে বললেন, ‘আরে আপনাকেই খুঁজছি। আপনার বইটা খুবই ভাল লেগেছে। শুধু আমারই না আমার আমেরিকা প্রবাসী দুই ভাই (একজন বোধ হয় পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক) এমন প্রশংসা ...’। আমি ততক্ষণে মাটিতে মিশে যেতে শুরু করেছি।  আকিমুন রহমানের মত লেখিকা যদি ভর দুপুরে আমার লেখার প্রশংসা শুরু করেন, তবে চামচিকার পাখিতে পরিণত হতে দেরী নেই।  

আমার পরের বই ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’, মুক্তমনার ফরিদ ভাইয়ের সাথে যৌথভাবে লেখা।  এবারে আমার বইয়ের প্রকাশক হলেন অবসর প্রকাশনার আলমগীর রহমান।  ঢাকার  এক নামজাদা বণেদী প্রকাশক।  থাকেন ধানমন্ডির এক আলিশান ফ্ল্যাটে।  তার নীচের ফ্ল্যাটেই সপরিবারে থাকেন হূমায়ুন আহমেদ। 

এই আলমগীর সাহেব সাংস্কৃতিক অংগনে ‘খ্যারখ্যারা পাবলিক’ হিসবে জগদ্বিখ্যাত।  দুনিয়ার সবাইকে রাখেন বকার উপরে। কারো সাথে ভাল করে দু-দন্ড কথা বলতে পারেন বলে মনে হয় না। তবে যারা অনেকদিন ধরে আলমগীর ভাইকে চেনেন তারা জানেন আলমগীর ভাইয়ের স্বভাব আসলে নারকেলের মত। উপরটাই কেবল শক্তপোক্ত, ভিতরটা  নাকি নরম শাসে তৈরি। তো এই ‘নারকেল’  আলমগীর ভাই আমার  মহাবিশ্বে প্রাণ আর বন্যার ‘বিবর্তনের পথ ধরে’ বইদুটো বইমেলায় বের করবেন বলে কথা দিলেন।  এর আগের বইমেলায় তার প্রকাশিত বই ‘হাজার বছরের বাঙালী সংস্কৃতি’ (লেখক গোলাম মুর্শিদ) বাংলা একাডেমীর বইমেলায়  শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে।  তিনি যে কেন আমার বইখানা প্রকাশ করার জন্য ছ’ মাস আগে থেকেই  হুড়াহুড়ি শুরু করে দিলেন তিনিই জানেন।

 

তা এই বইটা প্রকাশের সময় এক মজার ব্যাপার হল।  আলমগীর ভাই ওয়াদা করেছিলেন যে তারিখে, বইটা বেরিয়ে গেল তার দু দিন আগে।  ভদ্রলোক আবারো প্রমাণ করলেন, উনিই সত্যই করিকর্মা।  আমাদের এবং আমাদের প্রকাশকের প্রত্যাশাকে পূর্ণ করে বইদুটি পাঠকপ্রিয়তায় ধন্য হয়েছে।  দ্বিজেন শর্মার মত জনপ্রিয় সর্বজনশ্রদ্ধেয় লেখক এবং গবেষক আমাদের বইগুলো পড়ে নিকে থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে বইগুলো পর্যালোচনা করেছেন পত্রিকার  প্রথম আলোর পাতায় (ডারউইন : বিশ্বে ও মহাবিশ্বে দ্রষ্টব্য)। এছাড়া আমাদের বইয়ের রিভিউ বেরিয়েছে সমকাল, সায়েন্স ওয়ার্ল্ড সহ অনেক পত্র-পত্রিকাতেই।  আমাদের বই দুটো নিয়ে ঢাকায় সেমিনারেরও আয়োজন করা হয়।  ‘প্রাণের উন্মেষ ও বিবর্তন’ বিষয়ক এই সেমিনারটির উদ্যোক্তা ছিল শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চ।  সে সেমিনারে প্রাণের উপত্তি এবং বিবর্তনের রহস্যকে প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরেছিলেন আসিফ, ড. ম. আখতারুজ্জামান, ড. অজয় রায়, দ্বিজেন শর্মা, ড. শহিদুল ইসলাম, ড. এইচ কে এস আরেফিনের মত বরেণ্য  ব্যক্তিরা।  সব মিলিয়ে নিরাশ হবার কোন সঙ্গত কারণ নেই।

 

পুরোন কাসুন্দি অনেক ঘাটা হল। এবার এ বই মেলায় কি বেরুচ্ছে সে প্রসঙ্গে আসি।  প্রথমেই বলা দরকার  মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে  আর বিবর্তনের পথ ধরে বইদুটোর নতুন সংস্করণ বেরিয়ে গেছে অবসর প্রকাশনা থেকে। গতবারের পুরোন ভুল-ত্রুটি যা কিছু  ছিল তা শুদ্ধ করে ফেলেছেন আলমগীর ভাই। গতকাল ফোন করেছিলাম তার সেল ফোনে।  একটাই দুঃখ তার – নতুন সংস্করণ ছাপানোর পর  গতবারের মত নাকি বই চলছে না। আমি বললাম – কি আর করবেন – সবই কপাল! মনে মনে ভাবলাম – এইটাই স্বাভাবিক।  ব্যাক্কলের লিখা আবার পড়ে ক্যাডা। গতবার চিপা দিইয়া ক্যামনে ক্যামনে যে বইগুলা ভাল চলছে  কে জানে!

 

অঙ্কুরকে দিয়ে আর বই বের করব না – প্রতিজ্ঞা করেছিলাম।  রাগ কমে যাওয়ায় প্রতীজ্ঞা রাখতে পারলাম না।  অঙ্কুর থেকে আমার আর সাদ কামালীর সম্পাদনায় একটি বই বেরুচ্ছে এ বারের বই মেলায় – স্বতন্ত্র ভাবনা নামে।  ‘স্বতন্ত্র ভাবনা’ বইটি মুক্তমনা-লেখকদের নির্বাচিত প্রবন্ধের একটি সংকলন।  অন্ধ বিশ্বাস, ধর্মীয় মৌলবাদ, কুপমুন্ডুকতা, প্রতিক্রিয়াশিলতা, আলৌকিকতা ও কুসংস্কারকে উসকে দেওয়া নিবর্তনমূলক ধ্যান ধারণার বিপরীতে আমাদের যে আদর্শিক সংগ্রাম শুরু হয়েছিল আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে, এ বইয়ের লেখাগুলো তারই নিদর্শন বহন করছেপ্রচলিত ধ্যান ধারণার গডডালিকা প্রবাহে  গা ভাসানো লেখা নয় এগুলো, নয় প্রচলিত বিশ্বাস এবং সিস্টেমের আনত স্তব।  এ বইটি বিশ্বাস ভাঙ্গার, নির্মোহ দৃষ্টিতে সমাজ ও ব্যক্তিকে দেখারসে হিসেবে এ বইয়ের লেখকদের ভাবনাগুলো স্বতন্ত্র; অনেকটাই আলাদা সমাজে বিদ্যমান পশ্চাপদ ধ্যান ধারণাগুলো থেকে।  তাই এ বইয়ের নাম ‘স্বতন্ত্র ভাবনা’ আমার ধারনা বইটা এই পাথর সময়ে যথেষ্ট পাঠকপ্রিয়তা পাবে। এছাড়া অবসর থেকে 'বিজ্ঞান ও ধর্ম - সংঘাত নাকি সহাবস্থান?' নামেও একটি আমাদের একটি প্রবন্ধ সংকলন বের হওয়ার কথা আছে। 

 

 আমদের মুক্তমনা এবং সমমনা লেখকদের আগে বের হওয়া বেশ কিছু বই মেলায় পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে আমার প্রিয় একজন লেখক প্রদীপ দেবের ‘আইনস্টাইনের কাল’ (মীরা প্রকাশন, ২০০৬) বইটির কথা আলাদা বলতেই হবে। বইটি বেরিয়েছিল ২০০৬ সালের বই মেলায়। প্রদীপ দেবের লেখা নিয়ে আমার আলাদা করে বলবার কিছু নেই। মক্তমনার সদস্যরা এর মধ্যেই প্রদীপের স্বচ্ছ, যৌক্তিক এবং প্রাঞ্জল লেখার সাথে পরিচিত হয়ে গেছেন। আমি মুক্তমনায় যে ক’জন লেখকের লেখা সব সময় মন দিয়ে পড়ি, প্রদীপ রয়েছেন সে তালিকার একদম প্রথম দিকে।

 বাংলাদেশে আমার আরো ক’য়েকজন প্রিয় লেখক আছেন। এরা ইন্টারনেটে বা ফোরামে না লিখলেও মুক্তমনার আন্দোলনের সাথে নিবিড়ভাবে সংহতি প্রকাশ করেন।  তারা পত্র-পত্রিকায় লিখেন, আমাদের মত মুক্তমনাদের কথা, মুক্তবুদ্ধি এবং মুক্তচিন্তার কথা  প্রকাশ করেন বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায়।  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড.শহিদুল ইসলামের ‘বিজ্ঞানের দর্শন’ (শিক্ষাবার্তা, ২০০৬) বইটি আমার অন্যতম প্রিয় বইগুলোর একটি। সম্প্রতি বইটির ২য় খন্ড বের হয়েছে।   

আমার প্রিয় বিজ্ঞান লেখক এবং বিজ্ঞান বক্তা আসিফের ‘মহাজাগতিক আলোয় ফিরে দেখা’ (সময় প্রকাশন) খুব পছন্দের একটি বই। আসিফ নিজে সায়েন্স ওয়ার্ল্ডের সম্পাদক এবং বাংলাদেশে বিজ্ঞান আন্দোলনকে তরুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার একজন অগ্রগামী কান্ডারী।  আমার পছন্দের লেখকের তালিকায় রয়েছে রুশো তাহেরেও বেশ ক’টি বই। এর মধ্যে ‘মানুষের মহাজাগতিক ঠিকানা’ (ঐতিহ্য), বিজ্ঞান, অপবিজ্ঞান এবং বিজ্ঞান সংস্কৃতি’ (স্ট্রেড পাব্লিকেশনস), ‘বিজ্ঞান, সাহিত্য এবং কিছু দার্শনিক প্রসঙ্গ’ (স্ট্রেড পাব্লিকেশনস) প্রভৃতি বইগুলো আমার  বুক শেলফে আছে নিজ মহিমায় ভাস্বর হয়ে।

শিক্ষাবার্তা, অঙ্কুর আর অবসরের স্টলে  আমাদের ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন  ‘মুক্তান্বেষা’ পাওয়া যাচ্ছে। শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চ এবং মুক্তমনার একটি যৌথ প্রয়াস হিসেবে ঢাকার সেগুনবাগিচা থেকে প্রকাশিত পত্রিকাটির লক্ষ্য হচ্ছে সমাজে যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানমনস্কতা এবং মানবকল্যানবোধ প্রতিষ্ঠাপত্রিকাটির মর্মবানী  'শিক্ষা-যুক্তি-বিজ্ঞান-মানবতা হোক আমাদের আলোকবর্তিকা' -  হয়ত অনেককেই বিশের দশকের প্রগতিশীল শিখা গোষ্ঠির কথা স্মরণ করিয়ে দিবে যাদের শ্লোগান ছিল –

 

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ

যুক্তি যেখানে আরষ্ট

মুক্তি সেখানে অসম্ভব

 

 

২০০৭ সালের  জুলাই মাসে  মুক্তান্বেষার প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হওয়ার নিমেষ মধ্যে এর প্রথম সংস্করণ নিঃশেষিত হয়ে যায় (অনলাইনে সম্পূর্ণ প্রথম সংখ্যাটি পড়ুন)।   পাঠকপ্রিয় এ পত্রিকাটিকে অনেকেই চিহ্নিত করেছেন একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রকাশনা  হিসবে, যা নতুন প্রজন্মকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দেবে বলে তারা মনে করছেন এ বই মেলায় ম্যাগাজিনটির ২য় সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে।  মুক্তান্বেষা পত্রিকাটির মত সিলেটের বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের প্রকাশনা যুক্তি ম্যাগাজিনটিরও ২য় সখ্যা বেরিয়ে গেছে।   মুক্তান্বেষার মত যুক্তির প্রথম সংখ্যাটিও যথেষ্ট পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল।

যুক্তিবাদ, সংশয়বাদ, মানবতাবাদ, কিংবা ইহজাগতিকতার মত আধুনিক ধারনাগুলো সমাজ সচেতন মানুষের কাছে ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।   এ ম্যাগাজিন দুটো হয়ত তারই পরিচয় বহন করে।  তারপরও বলতে হয়  এ ধরনের বইপত্র লিখবার বিপদ আছে। সত্য কথা বলবার বিপদ আনেকআজকের বাংলাদেশে তো এটি আরো প্রকটভাবে সত্য

তসলিমা নাসরিন, হূমায়ুন আজাদ কিংবা আহমেদ শরীফদের পরিণতি দেখলেই তা বোঝা যায়হ্যা, প্রতিক্রিয়াশীলদের ভয় পাওয়ার যথেষ্ট করাণ আছেতারপরও  বলতে হয় - জগ জুড়ে চিন্তাশীল ব্যক্তিরা স্বাধীন ভাবে তাদের মত ও বক্তব্য প্রকাশ করতে চান; স্বাধীনভাবে মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতে তারা দ্বিধান্নিত হন নাতাদের সেই বিবেকের তাগিদই প্রকাশ পেয়েছে প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিসের (৪৮০ -৪০৬ খ্রী.পূ) একটি বাণীতে – ‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। চিন্তারাজিকে প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরণের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল’ মুক্তান্বেষা আর যুক্তি ইউরিপিডিসের সেই অবরুদ্ধ বিবেকের তাগিদেরই বাস্তব প্রতিফলন যেন,  সত্যিকারের শিকল ভাঙ্গার ডাক।  সত্যিকারের মুক্তমনারা তাই মনে করে – নিঃশঙ্ক চিত্তের চেয়ে বড় সম্পদ আর কিছু নেই।  

 

সবাইকে ডারউইন ডে এবং ভ্যালেন্টাইন্স ডের শুভেচ্ছা।

১৪, ০০৮

 

 


ড. অভিজি রায়, মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক; ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ ও ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে' গ্রন্থের লেখক ইমেইল : [email protected]