সমকামিতা (সমপ্রেম) কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ? একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনঃস্তাত্বিক আলোচনা (৩য় পর্ব)
গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে :
“সমকামিতা: একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান”
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারী, ২০১০
প্রকাশক: শুদ্ধস্বর
৯১ আজিজ সুপার মার্কেট (৩য় তলা) শাহবাগ, ঢাকা।ফোন: ০১৭১৬৫২৫৯৩৯
ই-মেইল: shuddhashar AT gmail.comবিস্তারিত এখানে।
আমরা আগের পর্বে রূপান্তরকামিতা নিয়ে নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। বলেছিলাম, সমকামিতা, উভকামিতা, উভকামের সমকামিতা, রূপান্তরকামিতার মত যৌনপ্রবৃত্তিগুলোকে ঢালাওভাবে ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ’ অভিধায় অভিহিত করার আগে আমাদের আরেকটিবার চোখ মেলে প্রকৃতির দিকে তাকানো উচিৎ। এরপর সামগ্রিকভাবে বোঝা উচিৎ যৌনতার উদ্ভবকে। প্রানীজগতের একেবারে গোড়ার দিকে কিছু পর্ব হল – প্রটোজোয়া, পরিফেরা, সিলেনটেরেটা, প্লাটিহেলমিনথিস, অ্যানিলিডা, মোলাস্কা ও কর্ডাটা।
এই সমস্ত প্রাণিদের বেশিরভাগই উভলিংগ বা হার্মাফ্রোডাইট (Hermaphrodite)[see footnote: 1], কারণ এদের শরীরে স্ত্রী ও পুরুষজননাঙ্গের সহবস্থান লক্ষ্য করা যায়। এদের জন্য উভলিঙ্গত্ব কোন শারীরিক ত্রুটি নয়, বরং এটি পুরোপুরি ‘প্রাকৃতিক’। এরা এদের উভলিঙ্গত্ব নিয়েই স্বাভাবিক বংশবিস্তারে সক্ষম ৭। অর্থাৎ, যে যৌনতার বিভাজনের জন্য আমরা যৌনপ্রজরা আজ গর্ববোধ করি, অবলীলায় অন্যদের ‘অ্যাবনরমাল’, ‘আননেচারাল’-এর তকমা এঁটে দেই- গোড়ার দিকে কিন্তু প্রকৃতিতে যৌনতার সেরকম কোন সুস্পষ্ট বিভেদ ছিল না।
ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায়, মানব সমাজেও উভলিঙ্গত্ব বিরল নয়। প্রাচীন গ্রীসে সমকামিতা, প্রাচীন রোমে খোজা প্রহরী (eunuch), নেটিভ ইন্ডিয়ানদের মধ্যে ‘দ্বৈত সত্তা’ (two-spirits), আরব ও পার্সিয়ায় ‘বার্দাজ’ এবং ভারতবর্ষে ‘হিজরা’দের অস্তিত্ব সেই সাক্ষ্যই দেয়। পশ্চিমা বিশ্বে শেরিল চেজ, এরিক শেনিগার, জিম সিনক্লায়ারের মত ইন্টারসেক্স –সেলিব্রিটিরা বহাল তবিয়তে বাস করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ ষাঁড়েরা এদের অনেককেই ‘অস্বাভাবিক’ হিসবে চিহ্নিত করবেন। আমরা বরং ‘স্বাভাবিক’ মানুষদের কথা বলি।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিবর্তনের দীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় আমরা গর্বিত ‘স্বাভাবিক’ মানুষেরাও নিজেদের দেহেই উভলিঙ্গত্বের বহু আলামত বহন করে চলেছি – নিজেদের অজান্তেই। যেমন, নারী জননাংগ পুরুষের মত না হলেও, পুরুষের শিশ্নের অনুরূপ একটি ক্ষুদ্র ও অত্যন্ত সংবেদনশীল অঙ্গের অবস্থান লক্ষ্য করা যায়, যাকে ভগাংগুর বা ক্লাইটোরিস বলে। আবার অন্যদিকে পুরুষ শরীরে স্ফীত স্তন না থাকলেও স্তন ও স্তনবৃন্তের সুপ্ত উপস্থিতি সব সময়ই লক্ষ্যনীয়। বলাবাহুল্য, বংশবিস্তারে এসমস্ত অংগের কোন ভূমিকা নেই, তবুও আমরা এসমস্ত ‘এবনরমালিটি’ বহন বহন করে চলেছি ‘প্রাকৃতিক ভাবেই’ – বিবর্তনের পথ ধরে। আরো কিছু উদাহরণ দেই। পুরুয শরীরের থেকে ব্যাপক পরিমানে অ্যান্ড্রোজেন (androgen) যেমন নিঃসৃত হয়, তেমনি অল্প পরিমানে হলেও এস্ট্রোজেন (estrogen) নিঃসৃত হয়ে থাকে। এই এস্ট্রোজেন ‘স্ত্রী হরমোন’ হিসেবে পরিচিত। ঠিক তেমনি, মেয়েরা স্ত্রী হরমোন নিঃসরণের পাশাপাশি সামান্য পরিমানে হলেও পুরুষ হরমোনও নিঃসরণ করে থাকে। এইভাবে বিপরীত লিঙ্গের অনেককিছুই আমরা প্রাণের উত্পত্তির ঊষালগ্ন হতে ধারণ করে চলেছি – এবং তা প্রাকৃতিকভাবেই। শুধু মানুষ কেন অনেক প্রানীর মধ্যেই এমনটি লক্ষ্যনীয়। আফ্রিকার নিশাচর মাংশাসী স্পটেড হায়নাদের কথা বলা যায়, যাদের নারী সম্প্রদায়কে দেখলে পুরুষ বলেই বিভ্রম হবার কথা। সায়েন্টেফিক আমেরিকানের জানুয়ারী ২০০৪ সংখ্যায় লেখা হয়েছে – “The large erectile clitoris of a female spotted Hyena closely resembles a male’s penis. Much like many male animals, female spotted hyenas use their clitorises in greeting displays and dominance interactions”. এ ধরনের ‘পুরুষাংগ সদৃশ’ দীর্ঘ ভগাংগুর শুধু স্পটেড হায়নাদের মধ্যে নয়, আছে কাঠবিড়ালী সদৃশ নিশাচর প্রাইমেট ‘বুশ বেবী’ এবং ‘স্পাইডার মাঙ্কি’ এবং ‘উলি মাঙ্কি’র মধ্যেও ২০। আবার বিপরীতটাও (মেয়েদের মত যৌনাংগ) দুর্লভ নয়। পুরুষ ডলফিন এবং তিমিদের ক্ষেত্রে চোখে পড়ার মত কোন ‘বহিস্থ পুরূষাংগ’ দেখা যায় না। এই জলজ স্তন্যপায়ীদের (Cetaceans) কোন অণ্ডাশয়ও নেই ২০।
চিত্রঃ আফ্রিকার নিশাচর মাংশাসী স্পটেড হায়নাদের নারী সম্প্রদায়ের পুরুষাংগ সদৃশ দীর্ঘ ক্লায়টোরিস দেখে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে যাবেন
এ প্রসংগে অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙ্গারুদের কথাও একটু বলে নেই। মেয়ে ক্যাঙ্গারুরা পেটের বাইরের দিকে লাগানো একটি থলিতে বাচ্চা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে – এ ধরণের ছবি আমরা বই-পত্র, সিনেমায় হর হামেশাই দেখি। পেটের আলগা চামড়া দিয়ে তৈরি থলিটা (ইরেজীতে পাউচ) আসলে ক্যাঙ্গারুদের গর্ভাশয়ের বিকল্প; কারণ মেয়ে ক্যাঙ্গারুদের ওই থলিটা অপরিণত বাচ্চাকে এর মধ্যে রেখে ধীরে ধীরে বড় করে তুলে। অপরিণত বাচ্চাকে মায়েরা নিজেদের ইউটেরাসে যেভাবে বড় করে, ঠিক সেভাবেই ক্যাঙ্গারুরা বাচ্চাকে নিজের থলিতে প্রায় নয় মাস রেখে বড় করে তুলে। কাজেই এটা হয়ত ভেবে নেওয়া অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, শুধু মেয়ে ক্যাঙ্গারুদের পেটে ওইরকম থলি থাকার কথা, ছেলে ক্যাঙ্গারুদের নয়। কিন্তু গোল বাঁধালো ইস্টার্ণ গ্রে ক্যাঙ্গারুরা। এদের মধ্যে পুরুষাঙ্গ এবং থলির সহাবস্থান লক্ষ্য করা যায়। শুধু তাই নয়, ক্রোমোজম বিশ্লেষণ করেও কিন্তু দেখা গেছে এরা স্ত্রী জননকোষ (XX) এবং পুরুষ জননকোষ (XY)-এর সমন্বয়ে আভিনব ধরণের XXY প্যাটার্ণ দিয়ে তৈরি১৭। এধরনের উভলিংগ সত্তা এবং অদ্ভুতুরে ক্রোমজোম প্যাটার্ন আছে ফ্রিমার্টিন নামে এক ধরণের গরুজাতীয় প্রানীর মধ্যেও। এদের ক্রোমজমের প্যাটার্ণ XXY, XXX, XXYY, XO থেকে শুরু করে নানা ধরণের বিন্যাস এবং সজ্জা থাকতে পারে। একেক ধরণের বিন্যাস জন্ম দিতে পারে পুরুষ-মহিলার সমন্বয়ে একেক ধরণের মিশ্রণের। আবার কিছু কিছু প্রাণি আছে যাদের দেহের অর্ধেকটা পুরুষ আর অর্ধেকটা নারী; আরো স্পষ্ট করে বললে- দেহের ডানদিকটা (সাধারণতঃ) থাকে পুরুষের আর বাম দিকটা থাকে মেয়েদের। কিছু প্রজাপতি, কাকড়া, মাকড়শা, পাখি, ভালুক সহ বেশ কিছু স্তন্যপায়ী প্রানীদের মধ্যে বিজ্ঞানীরা এই “অর্ধনারীশ্বর” প্রতিমূর্তির সন্ধান পেয়েছেন। বিজ্ঞানের ভাষায়, যে সমস্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এরকম প্রজাতির জন্ম হতে পারে সেগুলো হল ছিমারিজম (chimerism), মোজাইক (Mosaic) কিংবা গ্যানাড্রোমরফিজম (Gynandromorphism)। এ ব্যাপারটি শুধু পশু-পাখি নয়, বহু মানুষের মধ্যেও লক্ষ্যনীয়। অনেকেই হয়ত লিডিয়া ফেয়ার চাইল্ড এবং ক্যারেন কিগানের কথা মিডিয়ার দৌলতে জেনে ফেলেছেন। নিউসায়েণ্টিস্ট পত্রিকার ২০০৩ সালের একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের মানুষের জন্ম হতে পারে , এবং এখন পর্যন্ত অন্ততঃ ৩০ -৪০টি এ ধরনের ‘ডকুমেন্টেড কেস’ আছে।
চিত্রঃ বিজ্ঞানীরা প্রজাপতি, কাঁকড়া সহ বহু প্রজাতিতে উভলিঙ্গ সত্ত্বার (গ্যানাড্রোমরফিজম) হদিস পেয়েছেন।
আবারো যৌনপ্রজ এবং অযৌনপ্রজদের গল্পে ফিরে যাই। বিবর্তনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে যৌনপ্রজদের যাবতীয় কাজ-কর্ম যে বিধ্বংসী রকমের অপচয়ী তা আগেই উল্লেখ করেছি। বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী প্রফেসর রিচার্ড ডকিন্স এই অপচয়ী প্রক্রিয়ার ‘তান্ডব’ দেখে এক সময় মন্তব্য করেছিলেন, কোন প্রজাতি যদি একবার কোনভাবে যৌনপ্রজ থেকে অযৌনপ্রজয় রূপাতরিত হয়ে যায়, তবে সে প্রজাতিতে আর মনে হয়না সেক্স আবার কখনো ফেরৎ আসবে- ‘স্ট্যাটিস্টিকালি ইম্প্রোবাবেল’। ফরাসী প্যালিওন্টোলজিস্ট লুইস ডোল্লোর অনুকল্প যদি সঠিক হয়ে থাকে (বিবর্তনের কোন ধারা যদি একবার ভেঙ্গে যায়, তা আর নতুন করে কখনো গজাবে না), তবে অপচয়বপ্রবণ সেক্সের আবার সেই প্রজাতিতে ফেরৎ না আসারই কথা। এখন, যৌনপ্রজদের যৌনতার ব্যাপারটা যদি এত নিকৃষ্ট এবং অপচয়প্রবনই হয়ে থাকে তবে তারা এত ঢালাওভাবে প্রকৃতিতে টিকে আছে কি করে? যৌনপ্রজদের নামে এত গীবৎ গাওয়ার আর অযৌনপ্রজদের এত গুণগান করার পরও দেখা যাচ্ছে প্রকৃতির উচ্চশ্রেনীর জীবজগতের শতকরা নিরানব্বই ভাগই ‘অযৌনপ্রজ’ নয়, বরং ‘যৌনপ্রজ’। কেন এমন হল? ব্যাপারটা জীববিজ্ঞানীদের কাছে অনেকটা ধাঁধার মত। ধাঁধার উত্তর বহ গবেষক অনেকভাবে দিতে সচেষ্ট হয়েছেন। কেউ বলেছেন, নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে খারাপ দেখালেও হয়ত যৌনতার ব্যাপারটা দলগতভাবে সেরকম খারাপ নয়, বরং টিকে থাকার ক্ষেত্রে এটি কোন বাড়তি সুবিধা দেয়। কেউ বলছেন, সেক্স জিনিসটা জীবজগতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জেনেটিক ভ্যারিয়েশন বা ভিন্নতা তৈরি করে, যা বিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি। কথাটার মাঝে যে কিছুটা হলেও সত্যতা নেই তা নয়। এটা ঠিক পার্থেনোজেনেসিস নামধারী অযৌনপ্রজদের প্রাকৃতিতিক ক্লোনিং প্রক্রিয়ায় কোন রকম বংশগত ভিন্নতা বা বৈচিত্র থাকে না, কারণ, এরা কেবলমাত্র মায়ের একই জেনেটিক বৈশিষ্ট নিয়েই জন্মায়। যার ফলে জন্মানো সবাই – ছেলে, নাতি, পুতি, জ্ঞাতিগোষ্ঠি- জেনেটিকভাবে একই হয়। বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন, জেনেটিক ভ্যারিয়েশন না থাকায় পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে এরা সাধারণত সহজে খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগে যেমন খাদ্যাভাব বা রোগবালাইয়ের আগমনে এরা নিজেদের সহজে রক্ষা করতে নাও পারতে পারে যা হতে পারে প্রজাতির বিলুপ্তির কারণ। আবার, কখনো কোন কারণে এদের বংশধারার মধ্যে একবার কোন ক্ষতিকর মিউটেশনের জন্ম হলে, (জেনেটিক ভ্যারিয়েশন না থাকায়) তারা এই ক্ষতিকর মিউটেশনটি বহন করে যাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। কিন্তু তারপরও শুধুমাত্র ‘জেনেটিক ভ্যারিয়েশনের’ ধুয়া তুলে নিতান্ত অপচয়ী এই মাধ্যমের টিকে থাকার ব্যাপারটাকে ব্যাখ্যা করাকে আনেক গবেষকই মেনে নিতে পারেন নি। সাসেক্স ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক জন মায়নার্ড স্মিথ , সেই ১৯৭৮ সালে একটি বই লিখেছিলেন –‘ইভল্যুশন অব সেক্স’ নামে ১৫। সেখানে তিনি সেক্স বা যৌনতার ব্যাপারে জীববিজ্ঞানের চিরায়ত ব্যাখ্যাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন এই বলে যে, শুধু জেনেটিক ভ্যারিয়েশন যৌনতার টিকে থাকার জন্য উপযুক্ত ব্যাখ্যা হতে পারে না। মায়নার্ড স্মিথের মত ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার বিবর্তনীয় জীববিদ্যার অধ্যাপক রিচার্ড মিকন্ডও মনে করেন, শুধু জেনিটিক ভ্যারিয়েশন দিয়ে সেক্সকে ব্যাখ্যা করার সনাতন প্রচেষ্টা সঠিক নয় ১৬। তাহলে সেক্সের উদ্দেশ্য কি? হোয়াট ইজ দ্য পারপাস অব সেক্স? ব্যাপারটি এখনো এখনো জীববিজ্ঞানীদের কাছে ধাঁধা হয়েই রয়েছে, কিন্তু সেখানে যাবার আগে সেক্স বা যৌনতার অপচয়ী মনোবৃত্তির নমুনাটা আমরা আরেকবার দেখি, এবার একটু অন্যভাবে।
মানুষের কথাই ধরা যাক। একটি সুস্থ ‘যৌনপ্রজ’ দম্পতি তাদের দীর্ঘ জীবনে গড়ে প্রতি সপ্তাহে একবার করে পঞ্চাশ বছর ধরে সঙ্গম করে থাকে। কিন্তু সে হিসেবে তাদের বাচ্চা কাচ্চার সংখ্যা থাকে নিতান্তই নগন্য – দুইটি কি তিনটি। উন্নত বিশ্বে এখন এমন দম্পতিও আছে যারা বাচ্চা কাচ্চা একেবারেই নেয় না। সে সব দেশে জন্মহার এখন পড়তির দিকে। কাজেই যৌনতার ‘একমাত্র’ উদ্দেশ্য যদি কেবল পরবর্তী প্রজন্মে ‘জিন সঞ্চালন’ হয়ে থাকে, তবে বলতেই হয় এই আনাড়ি পদ্ধতিটি নিসন্দেহে একটি ‘অকর্মার ধাড়ি’। শুধু মানুষ নয়, হাতী, গরিলা, শুয়োর, ঘোড়াদের ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, তারা যৌন সংসর্গে যে পরিমানে সময় ও শক্তি ব্যয় করে সে তুলনায় ভবিষ্যত প্রজন্ম তৈরি করতে পারে একদমই কম। সারা জীবনের নব্বইভাগ যৌনসংসর্গেই কোন ধরনের অযাচিত প্রেগনেন্সির ভয় থাকে না। আর সমকামিতার উদাহরণ হাজির করলে তো সেক্সের মূল উদ্দেশ্যকেই প্রশ্নবিদ্ধ করতে হয়। সেক্সের একমাত্র উদ্দেশ্য যদি কেবল ভবিষ্যত প্রজন্ম টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে ‘জিন সঞ্চালন’ হয়ে থাকে, তবে সমকামিরা নিঃসন্দেহে “বায়োলজিকাল ডেড এন্ড”-এ। আর অনেক বিবর্তনবাদীরাই সেজন্য খুব যান্ত্রিকভাবে ডারউইনবাদকে সমকামিতার বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। আর এমন সমস্ত ‘যুক্তি’ উপস্থাপন করা শুরু করেন যখন মনে হয় তাদের জায়গা ওই ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের সাথে একই বিছানায়! অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওই ‘যান্ত্রিক’ ডারউইনবাদীরা সেক্সুয়াল সিলেকশন বা যৌন-নির্বাচনের ধুঁয়া তুলে সমকামিতাকে অস্বীকার করেন, কিংবা বলার চেষ্টা করেন এরা প্রকৃতির এক ধরনের বিচ্যুতি (aberration)। ভাবখানা যেন, ওই দু’চারটা সমকামিদের নিয়ে অতটা চিন্তা আমাদের না করলেও চলবে!
কিন্তু সত্যই কি তাই? তারা সমকামিদের সংখ্যা ‘দু-চারটি’ বলে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেও বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী আলফ্রেড কিন্সের রপোর্ট অনুযায়ী প্রতি দশ জন ব্যক্তির একজন সমকামী ১২ । অর্থাৎ, জনসংখ্যার শতকরা প্রায় দশভাগই ওই যান্ত্রিক ডারউইনবাদীদের আভিলাসে ছাই দিয়ে অর্থাৎ জীন সঞ্চালনের ‘মহৎ’ প্রবৃত্তিকে অস্বীকার করে টিকে আছে। কিন্সের গবেষণা ছিল সেই চল্লিশের দশকে। সাম্প্রতিক কালে (১৯৯০) ম্যাকহৃটার এবং স্টেফানি স্যান্ডার্স এবং জুন ম্যাকহোভারের গবেষনা থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে শতকরা প্রায় চোদ্দ ভাগের মত সমকামি রয়েছে ১৩। ১৯৯৩ সালে ‘জেনাস রিপোর্ট অন সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার’ থেকে জানা যায়, পুরুষদের মধ্যে প্রায় শতকরা নয় ভাগ এবং মহিলাদের মধ্যে শতকরা ৪ ভাগ সমকামি রয়েছে ১৪। কাজেই সংখ্যা হিসেবে সমকামিদের সংখ্যাটা কিন্তু এ পৃথিবীতে কম নয়। সায়েন্টিফিক আমেরিকান মাইণ্ড-এর ২০০৬ এর একটি ইস্যুতে সমকামীদের সংখ্যা সমগ্র জনসংখ্যার ৩ থেকে ৭ ভাগ উল্লেখ করা হয়েছে ১৯। কিন্তু এ কথা বলতেই হবে, পরিসংখ্যানগুলোর পরিসীমা একে অন্যের খুব কাছাকাছি (মোটামুটি ৫-১৫ ভাগ) হলেও কোনটাই হয়ত প্রকৃত অবস্থা নির্দেশ করছে না। কারণ সামাজিক একটা চাপ সবসময়ই থেকে যায় সমকামিতাকে নিরুৎসাহিত করে বিষমকামিতাকে উৎসাহিত করার। অনগ্রসর সমাজে এই চাপ আরো প্রবল। ফলে অনেক সময়ই দেখা যায় সমাজের চাপে একজন প্রকৃত সমকামি বিষমকামী হয়ে জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। স্বামী কিংবা বঊ বাচ্চা নিয়ে সংসার করছেন। এদের বলা হয় নিভৃত সমকামী (closet gay)। বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত মানবাধিকার কর্মীর কথা জানি যিনি নিভৃত সমকামী হয়ে তার স্ত্রীর সাথে বিবাহিত জীবনযাপন করছেন।
চিত্র : আমাদের সমাজে সবসময়ই একটা চাপ থাকে সমকামীদের নিরুৎসাহিত করে বিষমকামের দিকে ঠেলে দেওয়ার১৯।আরেকজন ‘বিবাহিত সমকামীর’ কথা পড়েছিলাম একটি কেস স্টাডিতে। উনি দিল্লিতে বসবাসরত দন্ত চিকিৎসক। নাম রমেশ মন্ডল। নিজে সমকামি। কিন্তু পারিবারিক চাপে পড়ে তাঁকে একসময় বিয়ে করতে হয়। কিন্তু স্ত্রীর সাথে তার সম্পর্ক স্রেফ যান্ত্রিক। তিনি তার যৌনচাহিদা নিরসন করেন গোপনে তার এ সমকামী বধুর সাথে। কখনো-সখনো জব্বলপুর, কোলাপুরে চলে যান। তার স্ত্রী আজো এ ব্যাপারটি জানেন না। সম্পূর্ন মিথ্যার উপরে দাঁড়িয়ে আছে রমেশের দাম্পত্য জীবন। আরেক সমকামি ভদ্রলোক নীতিন দেশাই স্ত্রীকে ফাঁকি দিয়ে প্রায়ই চলে যান মুম্বই-এর চৌপাট্টির সমুদ্র সৈকতে। কারণ সহজেই অনুমেয়।
চিত্রঃ পাকিস্তানী সমকামি কবি ইফতি নাসিম
অনেক পাঠক হয়ত পাকিস্তানী সমকামি কবি ইফতি নাসিমের ব্যক্তিগত জীবনের সমপ্রেমের মর্মন্তুদ কাহিনী জানেন। কবি নাসিম ছোটবেলা থেকেই তার সমবয়সী একটি ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তারপর দুই কিশোর কৈশোরকাল অতিক্রম করে বড় হলো। পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে তারা তখন প্রতিষ্ঠিত হবার পথে। তখন স্বাভাবিকভাবেই বাসা থেকে এল বিয়ের চাপ। এমন কি ইফতির বন্ধুটির বাসার লোকজন মেয়ে টেয়ে দেখে তার বিয়ে পর্যন্ত ঠিক করে ফেলল। ইফতির বন্ধু সেদিন তার সমকামী মানসিকতার কথা বাসায় খুলে বলতে পারেন নি। আর তাছারা পাকিস্তানী গোড়া মুসলিম সমাজে বড় হবার কারনে সমাকামিদের প্রতি ঘৃণাউদ্রেককারী কোরাণের আয়াতগুলোর কথাও তার ভালই জানা ছিলো। ফলে যা হবার তাই হল।
বেশ ধূম ধাম করে বিয়ে হল ওই বন্ধুর। সে বিয়েতে ইফতিও আমন্ত্রিত হয়েছিলেন এবং হাজিরও ছিলেন। ফুলশয্যার রাতে বন্ধুর বাড়িতে ইফতি ছিলেন। যে মানুষটির সাথে তার এতদিনের প্রেমের সম্পর্ক, সে মানুষটি সমাজের চাপে পড়ে এক অচেনা নারীর বাহুলগ্ন হবেন, এ চিন্তা তাকে ক্ষত বিক্ষত করে ফেলল – ‘আজকে রাতে তুমি অন্যের হবে, ভাবতেই চোখ জলে ভিজে যায়’! সারা রাত তিনি ঘুমাতে পারলেন না। এ পাশ ও পাশ করে কাটালেন। শেষ রাতে হঠাৎ দরজায় ধাক্কা। হুড়মুড় করে বিছানায় উঠে বসলেন ইফতি। দরজা খুলে ইফতি দেখলেন- অসহায়ভাবে বাইরে তার বন্ধু দাঁড়িয়ে আছে। দু’জনেই নির্বাক।
শুধু বাংলাদেশ, ভারত বা পাকিস্তানে কেন, খোদ আমেরিকাতেও একই অবস্থা। জেমস ম্যাকগ্রিভি তাঁর নিভৃত সমকামের কথা স্বীকার করে নিউজার্সির গভর্নর পদ থেকে পদত্যাগ করেন ২০০৪ সাল । সমাজে ইফিতি নাসিম বা ম্যাকগ্রিভির মত লোকদের ‘কামিং আউট অব ক্লোসেট’ হিসবে বিবেচনা করা হয়।
মানুষের কথা বাদ দেই, প্রানীজগতেও কিন্তু সমকামিদের সংখ্যা নেহাৎ মন্দ নয়। গবেষকরা অনেকদিন ধরেই এ নিয়ে গবেষণা করছেন। প্রসঙ্গতঃ লু হুজি, কর্ণেল লক, জিউনার, জুরের, হাবাক, উইলিয়ামস, শের জং, জেন গুডোয়ল প্রমুখ বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমলব্ধ গবেষনার কথা উল্লেখ করা যায় ৭। এদের গবেষণার মধ্য দিয়ে উঠে আসতে থাকে প্রানীজগতের নানা অজানা তথ্য। আবার অন্যদিকে অ্যালেন, প্রেনটিস, অ্যালেন লিস, জেমসন, মারফি প্রমুখ বিজ্ঞানীরা প্রানীজগতের যৌনতা বিষয়ে ব্যাপক গবেষনা চালিয়েছেন। তাদের গবেষনায় প্রানীজগতে সমকামিতার সুস্পষ্ট নিদর্শন ধরা পরে। সে নিদর্শনগুলোর নমুনা জানতে চাইলে পাঠকেরা জীববিজ্ঞানী ব্রুস ব্যাগমিলের লেখা ‘বায়োলজিকাল এক্সুবারেন্স : এনিমেল হোমোসেক্সুয়ালিটি এন্ড ন্যাচারাল ডাইভার্সিটি’ বইটি পড়ে দেখতে পারেন ১৭। বইটিতে ব্রুস ব্যাগমিল প্রকৃতিতে যে সমস্ত প্রজাতিতে সমকামিতা এবং রূপান্তরকামিতার অস্তিত্ব সনাক্ত করেছেন, সেগুলো নীচে দেওয়া হল :
Homosexual / Transgender Species
- Acanthocephalan Worms
- Acorn Woodpecker
- Adelie Penguin
- African Buffalo
- African Elephant
- Agile Wallaby
- Alfalfa Weevil
- Amazon Molly
- Amazon River Dolphin
- American Bison
- Anna's Humminbird
- Anole sp.
- Aoudad
- Aperea
- Appalachian Woodland Salamander
- Asiatic Elephant
- Asiatic Mouflon
- Atlantic Spotted Dolphin
- Australian Parasitic Wasp sp.
- Australian Sea Lion
- Australian Shelduck
- Aztec Parakeet
- Bank Swallow
- Barasingha
- Barbary Sheep
- Barn Owl
- Bean Weevil sp.
- Bedbug and other Bug spp.
- Beluga
- Bangalese Finch (Domestic)
- Bezoar
- Bharal
- Bicolored Antbird
- Bighorn Sheep
- Black Bear
- Black-billed Magpie
- Blackbuck
- Black-crowned Night Heron
- Black-footed Rock Wallaby
- Black-headed Gull
- Black-rumped Flameback
- Black-spotted Frog
- Black Stilt
- Blackstripe Topminnow
- Black Swan
- Black-tailed Deer
- Black-winged Stilt
- Blister Beetle spp.
- Blowfly
- Blue-backed Manakin
- Blue-bellied Roller
- Bluegill Sunfish
- Blue Sheep
- Blue Tit
- Blue-winged Teal
- Bonnet Macaque
- Bonobo
- Boto
- Bottlenose Dolphin
- Bowhead Whale
- Box Crab
- Bridled Dolphin
- Broad-headed Skink
- Broadwinged Damselfly sp.
- Brown Bear
- Brown Capuchin
- Brown-headed Cowbird
- Brown Long-eared Bat
- Brown Rat
- Budgeriger (Domestic)
- Buff-breasted Sandpiper
- Rush Dog
- Cabbage (Small) White
- Calfbird
- California Gull
- Canada Goose
- Canary-winged Parakeet
- Caribou
- Caspian Tern
- Cat (Domestic)
- Cattle (Domestic)
- Cattle Egret
- Chaffinch
- Char
- Checkered Whiptail Lizard
- Checkerspot Butterfly
- Cheetah
- Chicken (Domestic)
- Chihuahuan Spotted Whiptail Lizard
- Chiloe Wigeon
- Cliff Swallow
- Clubtail Dragonfly spp.
- Cockroach spp.
- Collared Peccary
- Cammerson's Dolphin
- Common Ameiva
- Common Brushtail Possum
- Common Chimpanzee
- Common Dolphin
- Common Garter Snake
- Common Gull
- Common Marmoset
- Common Murre
- Common Pipistrelle
- Common Racoon
- Common Shelduck
- Common Skimmer Dragonfly spp.
- Common Tree Shrew
- Cotton-top Tamarin
- Crab-eating Macaque
- Crane spp.
- Creeping Water Bug sp.
- Crested Black Macaque
- Cuban Green Anole
- Cui
- Dall's Sheep
- Daubenton's Bat
- Desert Grassland Whiptail Lizard
- Desert Tortoise
- Digger Bee
- Dog (Domestic)
- Doria's Tree Kangaroo
- Dragonfly spp.
- Dugong
- Dusky Moorhen
- Dwarf Cavy
- Dwarf Mongoose
- Eastern Bluebird
- Eastern Cottontail Rabbit
- Eastern Giant Ichneumon
- Eastern Gray Kangaroo
- Egyptian Goose
- Elegant Parrot
- Elk
- Emu
- Eucalyptus Longhorned Borer
- Euro
- European Bison
- European Bitterling
- European Jay
- European Shag
- Fallow Deer
- False Killer Whale
- Fat-tailed Dunnart
- Fence Lizard
- Field Cricket sp.
- Fin Whale
- Five-lined Skink
- Flamingo
- Fruit Fly spp.
- Galah
- Gelada Baboon
- Gentoo Penguin
- Giraffe
- Glasswing Butterfly
- Goat (Domestic)
- Golden Bishop Bird
- Golden Monkey
- Golden Plover
- Gopher (Pine) Snake
- Gorilla
- Grant's Gazelle
- Grape Berry Moth
- Grape Borer
- Gray-breasted Jay
- Gray-capped Social Weaver
- Gray-headed Flying Fox
- Gray Heron
- Grayling
- Gray Seal
- Gray Squirrel
- Gray Whale
- Great Cormorant
- Greater Bird of Paradise
- Greater Rhea
- Green Anole
- Green Lacewing
- Green Sandpiper
- Greenshank
- Green Swordtail
- Greylag Goose
- Griffon Vulture
- Grizzly Bear
- Guiana Leaffish
- Guianan Cock-of-the-Rock
- Guillemot
- Guinea Pig (Domestic)
- Hamadryas Baboon
- Hammerhead
- Hamster (Domestic)
- Hanuman Lanur
- Harbor Porpoise
- Harbor Seal
- Harvest Spider sp.
- Hawaiin Orb-Weaver
- Hen Flea
- Herring Gull
- Himalayan Tahr
- Hoary-headed Grebe
- Hoary Marmot
- Hooded Warbler
- Horse (Domestic)
- House Fly
- House Sparrow
- Houting Whitefish
- Humboldt Penguin
- Ichneumon Wasp sp.
- Incirrate Octopus spp.
- Inagua Curlytail Lizard
- Indian Fruit Bat
- Indian Mantjac
- Indian Rhinoceros
- Ivory Gull
- Jackdaw
- Jamaican Giant Anole
- Japanese Scarab Beetle
- Japanese Macaque
- Javelina
- Jewel Fish
- Jumping Spider sp.
- Kangaroo Rat
- Kestrel
- Killer Whale
- King Penquin
- Kittiwake
- Koala
- Kob
- Larch Bud Moth
- Laredo Striped Whiptail Lizard
- Larga Seal
- Largehead Anole
- Large Milkweed Bug
- Large White
- Laughing Gull
- Laysan Albatross
- Least Chipmunk
- Least Darter
- Lechwe
- Lesser Bushbaby
- Lesser Flamingo
- Lesser Scaup Duck
- Lion
- Lion-tailed Macaque
- Lion Tamarin
- Little Blue Heron
- Little Brown Bat
- Little Egret
- Livingstone's Fruit Bat
- Long-eared Hedgehog
- Long-footed Tree Shrew
- Long-legged Fly spp.
- Long-tailed Hermit Hummingbird
- Mallard Duck
- Markhor
- Marten
- Masked Lovebird
- Matschie's Tree Kangaroo
- Mazarine Blue
- Mealy Amazon Parrot
- Mediterranean Fruit Fly
- Mew Gull
- Mexican Jay
- Mexican White
- Midge sp.
- Migratory Locust
- Mite sp.
- Moco
- Mohol Galago
- Monarch Butterfly
- Moor Macaque
- Moose
- Mountain Dusky Salamander
- Mountain Goat
- Mountain Tree Shrew
- Mountain Zebra
- Mourning Gecko
- Mouse (Domestic)
- Mouthbreeding Fish sp.
- Mule Deer
- Mustached Tamarin
- Musk Duck
- Musk-ox
- Mute Swan
- Narrow-winged Damselfly spp.
- Natterer's Bat
- New Zealand Sea Lion
- Nilgiri Langur
- Noctule
- North American Porcupine
- Northern Elephant Seal
- Northern Fur Seal
- Northern Quoll
- Ocellated Antbird
- Ocher-bellied Flycatcher
- Olympic Marmot
- Orange Bishop Bird
- Orange-footed Parakeet
- Orangutan
- Orca
- Ornate Lorikeet
- Ostrich
- Oystercatcher
- Pacific Striped Dolphin
- Parsnip Leaf Miner
- Patas Monkey
- Peach-faced Lovebird
- Pere David's Deer
- Pied Flycatcher
- Pied Kingfisher
- Pig (Domestic)
- Pigeon (Domestic)
- Pig-tailed Macaque
- Plains Zebra
- Plateau Striped Whiptail Lizard
- Polar Bear
- Pomace Fly
- Powerful Owl
- Prea
- Pretty-faced Wallaby
- Proboscis Monkey
- Pronghorn
- Przewalski's Horse
- Pukeko
- Puku
- Purple Swamphen
- Pygmy Chimpanzee
- Queen Butterfly
- Quokka
- Rabbit (Domestic)
- Raccoon Dog
- Raggiana's Bird of Paradise
- Rat (Domestic)
- Raven
- Razorbill
- Red Ant sp.
- Red-backed Shrike
- Red Bishop Bird
- Red Deer
- Red Diamond Rattlesnake
- Red-faced Lovebird
- Red Flour Beetle
- Red Fox
- Red Kangaroo
- Red-necked Wallaby
- Redshank
- Red-shouldered Widowbird
- Red Squirrel
- Red-tailed Skink
- Reeve's Muntjac
- Regent Bowerbird
- Reindeer
- Reindeer Warble Fly
- Rhesus Macaque
- Right Whale
- Ring-billed Gull
- Ring Dove
- Rock Cavy
- Rock Dove
- Rodrigues Fruit Bat
- Roe Deer
- Roseate Cockatoo
- Roseate Tern
- Rosechafer
- Rose-ringed Parakeet
- Rove Beetle spp.
- Ruff
- Ruffed Grouse
- Rufous Bettong
- Rufous-naped Tamarin
- Rufous Rat Kangaroo
- Saddle-back Tamarin
- Sage Grouse
- Salmon spp.
- San Blas Jay
- Sand Martin
- Satin Bowerbird
- Savanna Baboon
- Scarab Beetle, Melolonthine
- Scarlet Ibis
- Scottish Crossbill
- Screwworm Fly
- Sea Otter
- Senegal Parrot
- Serotine Bat
- Sharp-tailed Sparrow
- Sheep (Domestic)
- Siamang
- Side-blotched Lizard
- Sika Deer
- Silkworm Moth
- Silver Gull
- Silvery Grebe
- Slender Tree Shrew
- Snow Goose
- Sociable Weaver
- Sooty Mangabey
- Southeastern Blueberry Bee
- Southern Green Stink Bug
- Southern Masked Chafer
- Southern One-Year Canegrub
- Southern Platyfish
- Speckled Rattlesnake
- Sperm Whale
- Spinifex Hopping Mouse
- Spinner Dolphin
- Spotted Hyena
- Spotted Seal
- Spreadwinged Damselfly spp.
- Spruce Budworm Moth
- Squirrel Monkey
- Stable Fly sp.
- Stag Beetle spp.
- Steller's Sea Eagle
- Striped Dolphin
- Stuart's Marsupial Mouse
- Stumptail Macaque
- Superb Lyrebird
- Swallow-tailed Manakin
- Swamp Deer
- Swamp Wallaby
- Takhi
- Talapoin
- Tammar Wallaby
- Tasmanian Devil
- Tasmanian Native Hen
- Tasmanian Rat Kangaroo
- Tengger Desert Toad
- Ten-spined Stickleback
- Thinhorn Sheep
- Thomson's Gazelle
- Three-spined Stickleback
- Tonkean Macaque
- Tree Swallow
- Trumpeter Swan
- Tsetse Fly
- Tucuxi
- Turkey (Domestic)
- Urial
- Vampire Bat
- Verreaux's Sifaka
- Vervet
- Victoria's Riflebird
- Vicuna
- Walrus
- Wapiti
- Warthog
- Water Boatman Bug
- Waterbuck
- Water Buffalo
- Water Moccasin
- Water Strider spp.
- Wattled Starling
- Weeper Capuchin
- Western Gray Kangaroo
- Western Gull
- Western Rattlesnake
- West Indian Manatee
- Western Banded Gecko
- Whiptail Lizard spp.
- Whiptail Wallaby
- White-faced Capuchin
- White-fronted Amazon Parrot
- White-fronted Capuchin
- White-handed Gibbon
- White-lipped Peccary
- White Stork
- White-tailed Deer
- Wild Cavy
- Wild Goat
- Wisent
- Wolf
- Wood Duck
- Wood Turtle
- Yellow-backed (Chattering) Lorikeet
- Yello-footed Rock Wallaby
- Yellow-rumped Cacique
- Yellow-toothed Cavy
- Zebra Finch (Domestic)
আমি বইটি থেকে কিছু উদাহরণ হাজির করি :
প্রাইমেট বর্গের মধ্যে সাধারণ শিম্পাঞ্জিদের প্রজননহীন যৌনতা খুবই প্রকট। মানুষের মতই তারা কেবল ‘জিন সঞ্চালনের’ জন্য সঙ্গম করে না, সম্ভবতঃ করে আনন্দের জন্যও। কাজেই তাদের মধ্যে মুখ-মৈথুন, পায়ু মৈথুন থেকে শুরু করে চুম্বন, দংশন সব কিছুই প্রবলভাবে লক্ষ্যনীয়। তারা খুব সচেতনভাবেই সমকাম, উভকাম এবং বিষমকামে লিপ্ত হয়। শিম্পাঞ্জীদের আরেকটি প্রজাতি বনোবো শিম্পাঞ্জী (প্রচলিত নাম পিগমী শিম্পাঞ্জী)দের মধ্যে সমকামি প্রবণতা এতই বেশি যে, ব্যাগমিল বলেন, এই প্রজাতিটির ক্ষেত্রে ‘Homosexual activity is nearly as heterosexual activity …. ’। একেকটি গোত্রে এমনকি শতকরা ৩০ ভাগ সদস্য উভকামিতার সাথে যুক্ত থাকে। এরকম সমকামি এবং উভকামি প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে গরিলা, ওরাং-ওটান, গিবন, সিয়ামাং, লঙ্গুর হনুমান, নীলগিরি লঙ্গুর, স্বর্ণ হনুমান, প্রবোসিক্স মাঙ্কি ইত্যাদি প্রাইমেটদের মধ্যেও।
চিত্র : বনোবো শিম্পাঞ্জীদের মধ্যে সমকামি প্রবণতা খুবই বেশি। বিজ্ঞানীরা এরকম ৪৫০টিরও বেশি প্রজাতিতে সমকামিতার উপস্থিতি লক্ষ্য করেছেন।
প্রাইমেট ছাড়াও সমকামি আচরণ লক্ষ্য করা গেছে বিভিন্ন স্তন্যপায়ী জীবের ক্ষেত্রেও। এদের মধ্যে হাতি, সিংহ, চিতাবাঘ, হায়না, ক্যাঙ্গারু, হরিণ, জিরাফ, পাহাড়ি ভেড়া, আমেরিকা, ইউরোপ ও আফ্রিকার মোষ, জেব্রা উল্লেখযোগ্য। পাখিদের মধ্যে পেঙ্গুইন, ধুসর পাতিহাঁস, কানাডা পাতিহাঁস, কালো রজহাঁস, বরফী পাতিহাঁস, মিউট রাজহাঁস, শকুন সহ অনেক প্রাণীর মধ্যে সমকামিতার সুস্পষ্ট উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সরীসৃপের মধ্যে সমকামিতার আলামত আছে কমন অ্যামিভা, অ্যানোল, গিরগিটি, স্কিনক, গেকো মাউরিং, কচ্ছপ, রাটেল স্নেক প্রভৃতিতে। সমকামিতার অস্তিত্ব আছে বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙ, স্যালাম্যান্ডারের মত উভচর এবং বিভিন্ন মাছেও। বইটি থেকে কিছু উদ্ধৃতি সরাসরি হাজির করা যাক ১৭ :
Homosexual behavior occurs in more than 450 different animal species worldwide, and is found in every major geographical region and every major animal group.
Homosexual activity is common in Giraffes and in many cases is actually more frequent than heterosexual behavior. In once study area, mounting between males accounted for 95% of all observed sexual activities.
Homosexual couples constitute a significant proportion of pairs in Greylang Geese: about average of 14 percent of pairs in some populations are same sex, and in some population it can be even higher ….
Male gorillas court and couple with each other, grizzly bear families have two mothers.
Male swans form pair-bonds with one another and female long-eared hedgehogs have oral sex.
In [...] a Central American rain forest, jewel-like male hummingbirds flit through the vegetation, pausing briefly to mate now with a male, now with a female.
A whale glides through the dark and icy waters of the Arctic [...] her fins and tail caressing another female.
Drifting off to sleep, two male monkeys lay gently in each other's arms [in] the ancient jungles of Asia.
In a protected New Zealand inlet, a pair of female gulls – mated for life – tends their chicks together.
Tiny midges swarm above a bleak of tundra of Northern Europe, a whirlwind of mating activity, as males' couple with each other in midair.
Circling and prancing around her partner, a female antelope courts another female in an ageless, elegant ritual staged on the African Savanna.
More than 130 different bird species worldwide are literally queer.
Many other types of affectionate and contractual behavior occurs between animals of the same sex. Sometimes animals gently bite, nibble, or chew on each others’ ears (female Hoary Marmots), or wings and chests (Gray-headed Flying foxes), or rumps (male Dwarf Cavies), or necks (male savanna baboons).
A figure of just over 20%: [...] one-fifth of all interactions, on average, are homosexual in mammal and bird species that have [some] form of [sexual same-sex behavior].
এখন তাইলে কথা হচ্ছে, সমকামিরা যদি ‘বায়োলজিকাল ডেড এন্ড’ কিংবা প্রকৃতিজগতের বিচ্যুতিই হয়ে থাকে, তবে এই হারে সমকামিরা পৃথিবীতে টিকে থাকল কি করে? আমাদের বুঝতে হবে যে, যত স্বল্প সংখ্যকই হোক না কেন, প্রানীজগতে সমকামিতার প্রবৃত্তি একটি বাস্তবতা, শুধু মানুষের ক্ষেত্রে নয়, প্রাণিজগতের প্রায় সকল প্রজাতির ক্ষেত্রেই। প্রকৃতিতে সবসময়ই খুব ছোট হলেও একটা অংশ ছিল এবং থাকবে যারা যৌনপ্রবৃত্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের চেয়ে ভিন্ন। কিন্তু কেন এই ভিন্নতা? এর একটি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় ইকোলজিস্ট জোয়ান রাফগার্ডেন রোথসব্ররগ তার “Evolution's Rainbow: Diversity, Gender and Sexuality in Nature and People.” বইয়ে ২০। তিনি বলেন, যৌনতার উদ্দেশ্য সনাতনভাবে যে কেবল ‘জিন সঞ্চালন করে বংশ টিকিয়ে রাখা’ বলে ভাবা হয়, তা ঠিক নয়। যৌনতার উদ্দেশ্য হতে পারে যোগাযোগ এবং সামাজিকিকরন। তিনি বলেন :
‘যদি আপনি সেক্স বা যৌনতাকে যোগাযোগের একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে দেখেন, তাহলে আপানার কাছে অনেক কিছুই পরিস্কার হয়ে যাবে, যেমন সমকামিতার মত ব্যাপার স্যাপারগুলো – যা জীব বিজ্ঞানীদের বছরের পর বছর ধরে বিভ্রান্ত করে রেখেছিল। বনোবো শিম্পাঞ্জীদের মধ্যে সমকামী সংশ্রব বিষমকামীদের মতই দেদারসে ঘটতে দেখা যায়। আর বনোবোরা কিন্তু প্রকটভাবেই যৌনাভিলাসী। তাদের কাছে যৌনসংযোগের (Genital contact) ব্যাপারটা আমাদের ‘হ্যালো’ বলার মতই সাধারণ। এভাবেই তারা পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করে থাকে। এটি শুধু দলগতভাবে তাদের নিরাপত্তাই দেয় না, সেই সাথে বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য আহরণ এবং সন্তানদের লালন পালনও সহজ করে তুলে’।
শুধু বনোবো শিম্পাঞ্জীদের কথাই বা বলি কেন, বাংলাদেশেই আমরা যেভাবে বড় হয়েছি সেখানে ছেলেদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব হলে একজন আরেকজনকে স্পর্শ করে, হাতে হাত ধরে কিংবা ঘারে হাত দিয়ে ঘোরাঘুরি করে। ঝগড়া-ঝাটি হলে বুকে জড়িয়ে ধরে আস্থা পুনর্প্রতিষ্ঠিত করে। মেয়েরাও তাই। এই আচরণ একটু প্যাসিভ তবে এ ধরনের প্রেরণা কিন্তু মনের ভেতর থেকেই আসে। বলা বাহুল্য, এই প্রেরণার মধ্যে কোন জিন সঞ্চালনজনিত কোন উদ্দেশ্য নেই, পুরোটাই যোগাযোগ এবং সামাজিকীকরনের প্রকাশ।
যোগাযোগ আর সামাজিকরণের কথা মাথায় রেখেই জোয়ান রাফগার্ডেন রোথসব্ররগ তার বিবর্তনবিদ্যা সংক্রান্ত ‘ইভ্যলুশনস রেইনবো’ (পূর্বে উল্লিখিত) বইয়ে ‘যৌনতার নির্বাচন’ (sexual selection)-এর বদলে ‘সামাজিক নির্বাচন’ (social selection) – এর প্রচলন ঘটানোর প্রস্তাব করেছেন। তিনি বলেন, প্রানীজগতের সাংগঠনিক ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে তাদের খাবার, সঙ্গী প্রভৃতির সঠিক নির্বাচনের উপর। প্রাণিজগতের এই নির্বাচনই কখনো রূপ নেয় সহযোগিতায়, কখনো বা প্রতিযোগিতায়। এবং এটাই শেষ পর্যন্ত সমস্ত পারিবারিক বিবিধ সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করে। কোন কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে সেই সম্পর্ক একগামিতা বা মনোগামিতে রূপ নিতে পারে (মানুষ ছাড়াও কিছু রাজহাঁস, খেঁকশিয়াল, কিছু পাখির মধ্যে একগামী সম্পর্ক আছে), কখনো বা রূপ নেয় বহু(স্ত্রী)গামিতা বা পলিগামিতা (সিংহ, বহু প্রজাতির বানরের মধ্যে এরকম হারেম তৈরি করে ঘোরার প্রবণতা আছে), কখনোবা বহু(পুরুষ)গামিতা বা পলিঅ্যান্ড্রি (কিছু সিংহ, হরিণ এবং প্রাইমেটদের মধ্যে)তে। এমনকি অনেকসময় দলে একাধিক ‘জেন্ডারের’ মধ্যেও সম্পর্ক স্থাপিত হয়। যেমন, ব্লু গ্রীন সানফিশ নামের একপ্রজাতির মাছ আছে যেখানে এক একটি ঝাঁকে দুই পুরুষ মাছের মধ্যে সমধর্মীযৌনতার বন্ধন (same-sex courtship) গড়ে উঠে। এখানে মুখ্য পুরুষ মাছটি (এদের ‘আলফা মেল’ বলা হয়) একটি বৃহৎ সাম্রাজ্য গড়ে তুলে আর তারপর অপর পুরুষ মাছটিকে সাথে নিয়ে তাদের যৌথ সাম্রাজ্যে স্ত্রীমাছগুলোকে ডিম পাড়তে আমন্ত্রণ জানায়। অনেকসময় দ্বিতীয় পুরুষ মাছটি স্ত্রী মাছের অনুকরণ করে স্ত্রী মাছের ঝাকের সাথে মিশে যায় - যা অনেকটা আমাদের সমাজে বিদ্যমান ক্রস-জেন্ডার প্রতিনিধিদের মতই। ড. রোথসব্ররগের মতে, যৌন-প্রকারণ এবং সমধর্মী যৌনতা এভাবে প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করে, যা অনেক সময়ই মোটা দাগে কেবল শুক্রানুর স্থানান্তর নয়। সামাজিক নির্বাচন হচ্ছে সেই বিবর্তন যা সামাজিক সম্পর্কগুলোকে টিকিয়ে রাখে। ড. রোথসব্ররগের মত সামাজিক নির্বাচনের ধারণাকে সমর্থন করেন ব্রুস ব্যাগমিল এবং পল ভ্যাসি সহ অনেক বিজ্ঞানীই।
তবে বেশিরভাগ জীববিজ্ঞানীই এখনই ‘যৌনতার নির্বাচনকে’ সরিয়ে দিয়ে ‘সামাজিক নির্বাচন’কে গ্রহণ করার পক্ষপাতি নন, কারণ প্রকৃতিজগতের বেশিরভাগ ঘটনাকেই ‘যৌনতার নির্বাচন’ দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনবাদী জীববিদ জেরি কয়েন রোথসব্ররগের সমালোচনা করে বলেন২১ : ‘She ignores the much larger number of species that do conform to sexual selection theory, focusing entirely on the exceptions. It is as if she denies the generalization that Americans are profligate in their use of petrol by describing my few diehard countrymen who bicycle to work.’। নেচার পত্রিকায় রোথসব্ররগের বইটির ভুয়সী প্রসংশা করার পরও তার ‘সামাজিক নির্বাচন’ তত্ত্বের সমালোচনা করে নৃতত্ত্ববিদ সারাহ হর্ডি বলেন ২২ – ‘(তার) এ (উদাহরণ) গুলো যৌনতার নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য উপযুক্ত কারণ নয়, বরং এগুলো হতে পারে জীব-বৈচিত্রকে (সামাজিকভাবে) গ্রহণযোগ্য করার অনুপ্রেরণা’। এর কারণ আছে। অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন, যৌনতার নির্বাচনের মাধ্যমেই হোমসেক্সুয়ালিটিকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। সমকামিতার জিন (যদি থেকে থাকে) যোগাযোগ ও সামাজিকতার উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে উপযোগি তা বনোবো শিম্পাঞ্জীদের ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে। আবার এমনো হতে পারে মানুষের মধ্যে ‘গে জিন’-এর ভূমিকা পুরুষ এবং স্ত্রীতে ভিন্ন হয়। ইতালীর একটি সমীক্ষায় (২০০৪) দেখা গেছে, যে পরিবারে সমকামী পুরুষ আছে সে সমস্ত পরিবারে মেয়েদের উর্বরতা (fertility) বিষমকামী পরিবারের চেয়ে বেশি থাকে ২৩। আন্দ্রিয়া ক্যাম্পেরিও-সিয়ানির ওই গবেষণা থেকে জানা যায়, বিষমকামী পরিবারে যেখানে গড় সন্তান সন্ততির সংখ্যা ২.৩ সেখানে গে সন্তানবিশিষ্ট পরিবারে সন্তানের সংখ্যা ২.৭ । এছাড়া এডয়ার্ড ও উইলসন ‘কিন সিলেকশন’-এর মাধ্যমে হোমোসেক্সুয়ালিটিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিলেন সেই ১৯৭৮ সালেই ২৪। টক-অরিজিনের এই লিঙ্কটিতেও বিবর্তনের আধুনিক তত্ত্বের মাধ্যমে সমকামিতার সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে ২৫। কাজেই যে কারনেই সমাজে হোমোসেক্সুয়ালিটির অস্তিত্ব থাকুক না কেন, এবং সেগুলোকে উপস্থাপনের সঠিক মডেল নিয়ে বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানীদের মধ্যে যত বিতর্কই থাকুক না কেন (বিজ্ঞানে এধরনের বিতর্ক খুবই স্বাভাবিক), এটি এখন মোটামুটি সবাই স্বীকার করে নিয়েছেন (যান্ত্রিক ডারউইনবাদী আর গুটিকয় ধর্মান্ধ বিজ্ঞানীরা ছারা) যে, সমকামিতার মত যৌন-প্রবৃত্তিগুলো ‘অস্বাভাবিক’ বা ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ’ নয়, বরং বৈজ্ঞানিক উপাত্ত ও তত্ত্বের সাহায্যেই এই ধরনের যৌন-প্রবৃত্তিগুলোকে ব্যাখ্যা করা যায়; জীববিজ্ঞানের আধুনিক গবেষণা কিন্তু সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। আজ আমি যখন এ লেখেটি লিখতে বসেছি তখন সারা পৃথিবী জুড়ে চারশ’রও বেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গে জিন নিয়ে গবেষনা হচ্ছে।
আমি আগামী পর্বে তাদের সে সব গবেষণা নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করব।
৪র্থ পর্ব পড়ুন ...
[1] হার্মাফ্রোডাইট শব্দটি এসেছে গ্রীক উপকথা থেকে। হার্মাফ্রোডিটসও ছিলেন প্রাচীন গ্রীসের একজন দেবতা। তার বাবার নাম ছিল হার্মেস, আর মা ছিল আফ্রোডাইট। একদিন প্রস্রবণে স্নানের পর তিনি উভলিংগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। হার্মাফ্রোডিটস থেকেই ইংরেজীতে হার্মাফ্রোডাইট (hermaphrodite) শব্দটি এসেছে। শ্লেষাত্মক হলেও সত্যি যে, পশ্চিমা বিশ্ব গ্রীক মিথলোজির সাথে তাল মিলিয়ে প্রানীজগতের সমন্বয় করলেও, প্রানীজগতের উভলিঙ্গত্ব কোন মিথলজি কিংবা রূপকথা নয়, বরং কঠিন বাস্তবতা।
ড. অভিজিৎ রায়, মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক; ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ ও ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে' গ্রন্থের লেখক। ইমেইল : [email protected]