বিপজ্জনক ধার্মিক!
বিজ্ঞান এবং ধর্মকে সঠিক ভাবে না জেনে , ধার্মিক হওয়া খুব বিপজ্জনক!
জনাব রায়হান ইদানিং নাম উচ্চারন না করে আমাদের দিকে বোমা ছোড়েন। কারন বছর দুই পূর্বে বিজ্ঞানে তার অজ্ঞতা-সম্পূর্ন মূর্খতা প্রমান করেছিলাম একটি দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে।
এর পরে এই ধার্মিক ব্যাক্তিটি বিজ্ঞান এবং ধর্ম নিয়ে প্রকাশ্যে লেখার সাহস পান নি-বিজ্ঞানের ওপর লিখতে গেলে বেইজ্জত হওয়ার একটা ভয় ভালোই ছিল।
আমি এর আগেও দেখিয়েছি জনাব রায়হানের বিজ্ঞানের জ্ঞান শুন্য। তার থেকেও মারাত্মক তার তথ্য বিকৃতি করার ক্ষমতা এবং মিথ্য প্রচারের ক্ষমতা। এগুলো কোন ধার্মিক লোকের লক্ষন নয়।
http://www.vinnomot.com/BiplabPal/Random_madness7.pdf
এবার নাম না উল্লেখ করে, উনি জানিয়েছেন, কোন এক বিশেষ ধর্মের নাস্তিকেরা, কোরানিক বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ চালাচ্ছে। কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা, পাঠক ভালোই বুঝেছেন। আসলে ওই গদাঘাতের পর আর নাম নেবার সাহস নেই।
http://www.vinnomot.com/BiplabPal/New_Folder/Biplab_Raihan.htm
যাইহোক, তার একটাই কাজ। তথ্য বিকৃতি করে, মিথ্যার সাহায্য নিয়ে মুসলিম সমাজে নিজের সন্মান প্রতিষ্ঠা করা-কোরানিক বিজ্ঞানীদের ধর্মভীরুদের কাছে দাম অনেক! কিন্তু কিভাবে মিথ্যা প্রচার এবং অজ্ঞতার অন্ধকারে ধর্মভীরুদের মাথায় টূপি ইনি পড়িয়ে থাকেন-সেটা আবার দেখি।
(১)
রায়হানের প্রথমে উদ্ধৃতিঃ
রায়হান
“সেদিন বড়ই দুর্ভোগ হবে মিথ্যাবাদীদের জন্য, যারা সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কাজে অনর্থকভাবে লিপ্ত থাকে।” (কোরআন ৫২:১১-১২)
এই যদি কোরানের বাণী হয়-তাহলে তো কোরান সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক!
কারন বিজ্ঞানের দর্শনের সংজ্ঞা ই হচ্ছে-সত্যকে ভুল প্রমান করার পরীক্ষালদ্ধ চেষ্টা-যাকে আমরা ফলসিফিকেশন বলি।
অর্থাৎ কোরানের সংজ্ঞা অনুযায়ী সব বিজ্ঞানী ই অনর্থক কাজে লিপ্ত! কারন বিজ্ঞানে পরম সত্য বলতে কিছু নেই। তাই কোন প্রকল্প ঘোষনা করলে-তাকে প্রতিষ্ঠা করতে, সেই প্রকল্পকে মিথ্যা ( নাল হাইপোথেসিস) প্রমান করার চেষ্ঠা করতে হয়। যখন দেখা যায় পক্ষে প্রমান অনেকগুলি, বিপক্ষে খুব ই কম, তখন ৯৫% বা ৯৯% ‘কনফিডেন্স’ ইনটার ভালে’ আমরা সেই প্রকল্পকে গ্রহণ করি। কিন্তু এই ১% বা ৫% মিথ্যা প্রমান করতে না পারলে-সেটা বৈজ্ঞানিক সত্য হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কোন বৈজ্ঞানিক সত্য ই পরম না-সেটাই বৈজ্ঞানিক সত্যের প্রাথমিক উপপাদ্য। তাই ওই সত্যে মিথ্যার ভাগটা নির্নয় না করলে, কোন সত্যকে বৈজ্ঞানিক সত্য হিসাবে ধরা হয় না।
আশা করি পাঠক বুঝবেন কেন ধর্ম এবং বিজ্ঞান সম্পূর্ণ আলাদা-কারন প্রথমটি বলে পরম সত্যের কথা। আর বিজ্ঞান পরম সত্যকে নাকচ করে শতকরা একশো ভাগ। বিজ্ঞানের সত্য ভেজাল সত্য-বিজ্ঞান সেটাকেই স্বীকার করে। ধর্মের সত্য পরম সত্য-ধার্মিকরা সেটাকেই মানে। পরম সত্য বিজ্ঞান বিরোধী ধারণা।
তথ্যসূত্রঃ
http://en.wikipedia.org/wiki/Falsifiability
Bunge, M. (ed). The Critical Approach to Science and Philosophy. The Free Press, London & New York, 1964.
http://plato.stanford.edu/entries/popper/
(২)
“কোরানকে ডিসক্রেডিট করার জন্য বার বার এমন কথাও বলা হচ্ছে যে, পেট্রোডলার ও ইচ্ছা থাকলে যে কোন গ্রন্থের মধ্যে বৈজ্ঞানিক তথ্য খুঁজে পাওয়া সম্ভব! এ যেন মেয়ের হাতের মোয়া! কিন্তু এই উটকো দাবির স্বপক্ষে কখনোই কোন প্রমাণ হাজির করা হয়নি। ব্যাপারটা যদি এতটাই সহজ হত তাহলে ইহুদী, খ্রিস্টান, ব্রাহ্মণ, বৌদ্ধ, ও শিখরা তাদের ধর্মগ্রন্থের মধ্যে ইতোমধ্যে হাজার হাজার বৈজ্ঞানিক তথ্য আবিষ্কার করে ফেলতেন।“-রায়হান
কোরানে বৈজ্ঞানিক তথ্য আবিষ্কারের পেছনে পেট্রোডলারে ভূমিকা নিয়ে ওয়ালস্ট্রীট জার্নালে বিস্তারিত খবর বেড়িয়েছে। এটা বেড়নোর পর, যারা এইসব ‘বৈজ্ঞানিক দাবি; করেছিলেন-তারা সন্মান বাঁচাতে হয় কোরানে বিজ্ঞানের ব্যাপারে আর কোন বিবৃতি দেন নি-বা বলেছেন তাদের কথাকে বিকৃত করা হয়েছে। এই রিপোর্ট বেড়নোর পর কিথ এল মুরকে সাংবাদিকরা কোরান নিয়ে প্রশ্ন করলে-উনি বলেছেন-তিনি এইসব ব্যাপারে যা বলেছেন তা অনেক পুড়ানো ব্যাপার। আর বলতে চান না। কি আশ্চর্য্য –কোরানে এত বিজ্ঞান আবিষ্কারের পরেও তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন নি! আমরা অবশ্য ততক্ষনে ওইয়াল স্ট্রীট জার্নালের দৌলতে জেনে গেছি তিনি কি কি ‘ফেবার’ পেয়েছেন।
http://en.wikipedia.org/wiki/Commission_on_Scientific_Signs_in_the_Quran_and_Sunnah
“Marine scientist William Hay complained of having fallen into a "trap" in interviews, while embryologist Gerald Goeringer claimed "mutual manipulation" between the scientists and conference organizers. Embryologist Keith L. Moore who had an edition of his textbook financed by Saudi Bucailleists and "concluded that God had revealed the Quran to Muhammad," declined to be interviewed telling the newspaper, “it’s been 10 or 11 years since I was involved in the Quran.
Strange Bedfellows: Western Scholars Play Key Role in Touting `Science' of the Quran Wall Street Journal, Jan 23, 2002. pg. A.1
http://www.humanists.net/avijit/article/Western_Scientists_Bribed.htm
দ্বিতীয় মিথ্যাচারটা হচ্ছে-হিন্দু ধর্মে এমন-এত বিজ্ঞানের সন্ধান নাকি ‘কেহ ই’ পায় নাই!
আমি অন্তত এরকম ২০০+ ব ই দেখেছি-যারা বুকাইলের মতন, নানান হিন্দু গ্রন্থে ‘আধুনিক বিজ্ঞানের’ সন্ধান পেয়েছেন। আমার ধারনা সংখ্যাটা ইসলামে বিজ্ঞান টাইপের গ্রন্থের চেয়ে অনেক অনেক বেশী-এবং এবং যেসব বিজ্ঞানীরা এইসব অপকীর্তি করেছেন তাদের সংখ্যাটাও অনেক অনেক বেশী- তাতে কি হিন্দু ধর্মগ্রন্থে আধুনিক বিজ্ঞান এসে গেল? পুরোটাই ধর্মের ব্যাবসা। আমাজন ডট কমে সার্চ মারলেই হিন্দু ধর্মে বিজ্ঞানের ওপর প্রায় ৮০ টা ব ই আমি পেয়েছি। এর বাইরে কত আছে ইয়ত্তা নেই। এখানে হিন্দু ধর্মের ওপর লেখা এই ধরনের কতগুলি ব ইয়ের লিস্ট আমাজন সার্চ থেকে তুলে দিলাম
http://www.amazon.com/s/ref=nb_ss_gw?url=search-alias%3Daps&field-keywords=veda+science&x=0&y=0
এই লিস্টের কিছু বই ওই জাতীয়-
http://www.vedamsbooks.com/Hinduism.htm
নিকোলাস টেসলা, রবার্ট ওপেন হাইমার, ইত্যাদি অনেক বৈজ্ঞানিকরাই উপনিশদের দর্শনের অনুগামি ছিলেন। তাতে কি হিন্দু ধর্ম বৈজ্ঞানিক হয়ে গেল?
না-পৃথিবীর কোন ধর্ম ই বৈজ্ঞানিক হতে পারে না। কারন বিজ্ঞানে পরম সত্যের অস্তিত্ব নেই-সত্যে ভেজাল না থাকলে সে সত্য বৈজ্ঞানিক সত্য হয় না। আর কোন ধর্ম তাদের ‘সত্যকে’ ভেজাল প্রমান করতে বলেন?
পরীক্ষার মাধ্যমে সত্যে ভেজাল সন্ধানের নাম বিজ্ঞান। এটা কোন ধর্মগ্রন্থ ই করে না। তাই ধর্মে বিজ্ঞান যারা পান-তারা না বুঝেছেন ধর্ম না বিজ্ঞান।
এই শ্রেনীর লোকেরা স্রেফ নিরক্ষর বা তাদের থেকেও অধম।
ড. বিপ্লব পাল, আমেরিকাতে বসবাসরত পদার্থবিদ, গবেষক এবং লেখক। এক সময় ভিন্নমতের মডারেটর ছিলেন, বর্তমানে www.fosaac.tv সম্পাদনার সাথে জড়িত।