এই ধরনের দাদাগিরি আর কদিন?
-বিপ্লব
আজকেই খবরটা আনন্দবাজারে পড়লাম। কোলকাতা বন্দরে বাংলাদেশি বার্জ ঢোকা নিশিদ্ধ করা হয়েছে। গত দুমাসে গঙ্গায় প্রায় চারটি বাংলাদেশি বার্জ ডুবে যায় এবং এতে কোলকাতা বন্দরে জাহাজ চলাচলে সমস্যা দেখা যায়।বন্দর কতৃপক্ষ জানিয়েছেন বাংলাদেশের বার্জগুলি এত নিম্ন মানের-এবং ওভার ক্যাপসাইজড-গঙ্গার পলিতে ধাক্কা খেয়ে ডোবার সম্ভবনা ষোল আনা। তাতে বন্দর আটকে যাচ্ছে। সেই জন্যে ওই সব বার্জ ৭০% এর বেশী ভর্ত্তি হলে-কোলকাতা বন্দরে ঢুকতে দেও্য়া হবে না।
ভারতের এই সিদ্ধান্তে মুখ থুবরে পড়েছে বাংলাদেশের সিমেন্ট শিল্প-যারা সম্পূর্ণ ভাবে এই বার্জের ওপর নির্ভরশীল।
বাংলাদেশ বার্জ মালিক সমিতির প্রেসিডেন্ট আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন এই সব শর্ত মানা অসম্ভব এবং এক তরফা ভাবে চাপানো হয়েছে।
বাংলাদেশ এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মেঘনাতে দুটি ভারতীয় বার্জকে দুসপ্তাহ আটকে রেখেছে!
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক কোনদিন ই ভালো হবে না- যদি এই ধরনের কুনাট্য চলতেই থাকে।
প্রথমে ভারতীয় কতৃপক্ষের কথায় আসি। সিদ্ধান্ত নেওয়া হল বাংলাদেশের বার্জের বিরুদ্ধে-আর তাদের সাথে আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করলেন না বন্দর কতৃপক্ষ। ইস্যুটা কি? বার্জ যাতে না ডোবে? তা বাংলাদেশের মালিক রা কি চান তাদের বার্জ ডুবুক? এটাত তারাও চান না। সুতরাং তাদের সাথে সিদ্ধান্ত নিলে-তারাও সমাধানসূত্রে সানন্দে রাজী হতেন। প্রশ্ন উঠতে পারে বন্দর কতৃপক্ষ তাদের নিজেদের স্টান্ডার্ড ঠিক করেছে। কিন্তু যাদের ওপর সেই স্টান্ডার্ড চাপানো হচ্ছে-তাদের সাথে কথা না বলে কি করে এটা করা সম্ভব? বিশেষ করে যেখানে অন্য একটি দেশের স্বার্থহানি হওয়া বিলক্ষন জড়িত।
এটা সম্পূর্ণ একধরনের দাদাগিরি সুলভ মনোভাবের ফল। বাংলাদেশ ত কিছু করতে পারবে না-তাই আমরা যা বলবো সেটাই আইন-সেটাই ওদের মানতে হবে-ভারতের এই ধরনের 'দাদাসুলভ' মানসিকতায় এই কুনাট্যের শুরু।
পরের ধাপটা কি? বাংলাদেশের সব সংবাদপত্রে চাতক পাখির মতন চেয়ে আছে ভারতবিরোধি সংবাদ খাওয়ানোর জন্য। এইভাবেই তীব্র ভারতবিরোধি জনরোষ তৈরী হয়েছে বাংলাদেশে। এর সাথে ইসলামের মশলা মেশালে-সেটা আরো গুরুপাক-সন্ত্রাসবাদি তৈরীর কারখানায় দাঁড়ায়। এতে লাভ কিছু হয় না। বরং ভারতে যখন বাংলাদেশে ট্রেনিংপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীরা ধরা পড়ে-ভারতেও তীব্র বাংলাদেশ বিরোধী জনমত তৈরী হয়। এতে দাদাগিরি করার লোকের সংখ্যা এবং সমর্থক বাড়তে থাকে।
হিংসা এবং শত্রুতা আগুনে ঘৃতাহুতি-যত ঢালবে তত আগুন।
আমার ধারনা দ্বায়িত্ব নিয়ে-ভারতকেই এগিয়ে আসতে হবে। ভারতের কোন সিদ্ধান্তে-তা যত ই সার্বভৌম হোক না কেন-তাতে যদি বাংলাদেশের স্বার্থ জড়িত থাকে-বাংলাদেশ কতৃপক্ষর সাথে পরামর্শ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। বাংলাদেশে বি এন পি সরকারের সময় এসবেও কিস্যু হত না-সম্পর্ক ভাল করাটা বি এন পির রাজনৈতিক স্বার্থের পরিপন্থী। কিন্তু বর্তমান কেয়ারটেকার সরকার ভারতে সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী। সুতরাং তাদের সাথে ঘন ঘন বৈঠক করে-বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
সদিচ্ছা ছাড়া সমাধান সম্ভব না। চাওয়ার আগে-কি দিয়েছি-সেটা দেখতে হয়।৯/৫/০৮
ড. বিপ্লব পাল, আমেরিকাতে বসবাসরত পদার্থবিদ, গবেষক এবং লেখক। এক সময় ভিন্নমতের মডারেটর ছিলেন, বর্তমানে www.fosaac.tv সম্পাদনার সাথে জড়িত।