জর্জিয়ার যুদ্ধঃ রাশিয়া বনাম আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ

-বিপ্লব  

অহ! ঠান্ডা যুদ্ধের সেই দিনগুলির  আরো হিমেল প্রত্যাবর্তন। জাতিসংঘে রাশিয়া এবং আমেরিকার দূতেরা যে ভাষায় একে অন্যকে গালি দিলেন-তা সত্য ই অনবদ্য! আমেরিকা যখন রাশিয়াকে বলে সাম্রাজ্যবাদি-রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত এক কথায় এর যতার্থ উত্তর দিয়েছেন-কে কাকে বলে! সুঁচ বলে চালুনি ফুঁটো!  

প্রথমত যেকোন রাষ্ট্রের ধারনাটাই গোলমেলে-অযৌত্বিক।  দক্ষিন অসেটিয়ার যুদ্ধে সেটাই প্রমান হল। জর্জিয়া যখন রাশিয়ান ফেডারেশন থেকে বেড়িয়ে ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা ঘোষনা করল-সেটা রাশিয়ার মনঃপুত ছিল না। রাশিয়ান ফেডারেশন ১৪৫ টি জাতিগোষ্টির সমন্বয়ে গঠিত।  সেখানে জর্জিয়ান জাতি কেন স্বাধীনতা ঘোষনা করবে-তার কোন যৌত্বিক ইতিহাস নেই-কারন জর্জিয়া ছিল সোভিয়েতের এক গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। ক্ষমতার আলিন্দে এরা বৈষ্যমের স্বীকার ছিলেন তাও না-স্টালিন ছিলেন জর্জিয়ান। জর্জিয়ার সাথে রাশিয়ার সম্পর্কটা অনেকটা বাংলাদেশ এবং ভারতের মতন। 

জর্জিয়াতে দুটি জাতিগোষ্ঠি আছে যারা জর্জিয়ান নয়-অসেটিয়া এবং আবখেজিয়া।  জর্জিয়াতে অন্তর্ভুক্তি এরা মেনে নেয় নি। ফলে যবে থেকে জর্জিয়া স্বাধীন-সেই তবে থেকে এরাও জর্জিয়ার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষনা করেছে। রাশিয়া  প্রথম অসেটিয়ার যুদ্ধে যোগ দেয়-এবং অসেটিয়ার অধিকাংশ লোক রাশিয়ান পাশপোর্ট নিয়েই চলাফেরা করেন।

অসেটিয়ার অধিকাংশ লোকজন যেহেতু রাশিয়ানদের সাথে থাকতে চাই-সঙ্গত কারণেই রাশিয়া এদের মিলিটারি প্রোটেকশন দিয়ে থাকে। ফলে জর্জিয়া যখন দক্ষিন অসেটিয়াতে

বিদ্রোহী দমনে সামরিক অভিযান শুরু করে-রাশিয়া ৮ ই আগষ্ট থেকে পালটা জর্জিয়া আক্রমণ করে। 

পুরো ব্যাপারটা রাষ্ট্র নামক সংজ্ঞার মতন গোলমেলে। ধরুণ কালকে কাষ্মীরের লোকজ়ন বলছে আমরা আলাদা জাতিগোষ্টির লোক-তাই পাকিস্তানের সাথে থাকতে চাই। ভারত কি পাকিস্তানের হাতে তাদের তুলে দেবে?  দেবে না। কারণ রাষ্ট্র সংজ্ঞাটাই কোন যুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে নেই। রাষ্ট্রের ঘোষিত লক্ষ্য- ক্ষমতার আরো বৃদ্ধি। মিলিটারি এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা।  ফলে ভারত কাষ্মীরে সেনা অভিযান চালিয়েছে। এবং পাকিস্তান যেহেতু সামরিক শক্তিতে ভারতের চেয়ে অনেক ছোট-তারা রাশিয়ার মতন সরাসরি কাশ্মীরে ঢোকার চেষ্টা করে না-বকলমে সন্ত্রাসবাদে মদত দেয়। ভারত যদি ভুল না করে থাকে-তাহলে জর্জিয়া কি ভুল করল?  ধরুন চিটাগঞ্জের উপজাতিরা ভারতের সাথে যোগ দিতে চাই। বাংলাদেশ তাহলে সামরিক অভিযান চালাবেই। জর্জিয়া ঠিক সেটাই করেছে। সেই জন্যে ভারত কি বাংলাদেশ আক্রমন করতে পারে?  রাশিয়া কিন্তু ঠিক এই কাজটিই করেছে।  কোন যুক্তি এখানে ঠিক কে ঠিক করে দেবে?  রাশিয়া জানাচ্ছে অসেটিয়াতে জাতিগোষ্টী নির্মুলী করন চালাচ্ছিল জর্জিয়ান মিলিটারি। কাশ্মিরীরাও ভারতের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এক ই অভিযোগ আনে। বাংলাদেশের মিলিটারির বিরুদ্ধে  চট্টগ্রামের উপজাতিদের অভিযোগ হুবহু এক। এবং প্রতিটি অভিযোগের ই সত্যতা আছে। 

 সুতরাং রাশিয়ানরা যদি অসেটিয়ানদের বাঁচানোর জন্য জর্জিয়ার বিরুদ্ধে  প্রতি আক্রমন করে থাকে মানবিক দৃষ্টিভংগী থেকে তা কি খুব ভুল? তাহলেত এই প্রশ্নও  ও উঠবে-কাশ্মিরী বিচ্ছিন্নতাবাদিদের পাকিস্তানি সাহায্য, চট্টগ্রামে ভারতের সাহায্য এবং আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদিদের বাংলাদেশী সাহায্য মানবিকতার দৃষ্টিতে কি খুব অন্যায়? এই জন্যেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মানবিকতার জন্য সাম্রাজ্যবাদ বলে একটি যুদ্ধবাদি দর্শন আছে-যাতে আমেরিকানরা সবচেয়ে বেশী পারদর্শী!!!!

http://www.vinnomot.com/BiplabPal/America4.pdf 

জর্জিয়া এবং ইউক্রেন এই মুহুর্তে ন্যাটোতে ঢুকতে চাই। ঘরের তলায় ন্যটোর বসতি স্থাপন রাশিয়ার কাম্য নয়। ফলে জর্জিয়াকে কোনঠাশা করে, তাকে রাশিয়ান ফেডারেশনের দিকে রাখা রাশিয়ার জন্য জরুরী। মনে রাখবেন ২০২০ সালের মধ্যে রাশিয়া আবার সুপার পাওয়ার হবে। কারণ রাশিয়ার অগাধ প্রাকৃতিক সম্পদ-অফুরন্ত শক্তি ভান্ডার। এক দশকের মধ্যে ঠাণ্ডা যুদ্ধ ফিরে আসবে। এটাই ভাবা হচ্ছিল। দেখা গেল অনেক আগেই ফিরে এল। 

বুশ, কন্ডোলিশা রাইস এবং ম্যাকেইন ঘরে বসে বাক্যমিশাইল ছাড়ছেন রাশিয়ার প্রতি। দেশের ছাত্ররা বোকা থেকে গাধা হচ্ছে-মধ্যবিত্তরা গরীব হচ্ছে-সেদিকে খেয়াল নেই। ইনারা রাশিয়াকে হুমকি দিচ্ছেন। পাড়ার মস্তানদের মতন। আমি হচ্ছি পৃথিবীর একমাত্র সাম্রাজ্যবাদি শক্তি-তোকে বসিয়ে দিয়েছিলাম-তুই আবার মাথা তুলছিস? রাশিয়ার প্রতি আমারিকার ভাবটা এখন এমন ই। এই পাড়ার মস্তানির অভ্যেস কবে যে যাবে! 

কি করতে পারে আমেরিকা? কিছুই না। ইরাক যুদ্ধ চালাতে ফতুর।  আর রাশিয়ার সাথে টেক্কা? এখনো রাশিয়া পৃথিবীর দ্বিতীয় শক্তিশালী সেনাবাহিনী। বৃহত্তম অস্ত্রবিক্রেতা। আঁচর কাটার ক্ষমতাও নেই আমেরিকার। বরং রাশিয়া তেলের সাপ্লাই বন্ধ করে দিতে পারে। সেই জন্য রাশিয়া পাত্তাও দিচ্ছে না এই ফাঁকা হুমকির। এতেব মধ্য এশিয়াতে রাশিয়ান সাম্রাজ্যবাদ এখন হবে অপ্রতিহত। হজম করা ছাড়া উপায় নেই আমেরিকার। এবং গোটা বিশ্বের ও।  রাষ্ট্র নামক গোজামিল ধারণার অবলুপ্তি না হলে-সাম্রাজ্যবাদের চিতা জ্বলবে না। 

 মেরীল্যান্ড

 ৮/১২/০৮ 

 http://biplabspiritualism.blogspot.com/

  http://biplabpal2000.googlepages.com/

 


. বিপ্লব পাল, আমেরিকাতে বসবাসরত পদার্থবিদ, গবেষক এবং লেখক। এক সময় ভিন্নমতের মডারেটর ছিলেন, বর্তমানে www.fosaac.tv সম্পাদনার সাথে জড়িত।