প্রতিক্রিয়া পোস্ট

 তসলিমাকে নিয়ে

বিপ্লব পাল

 

তসলিমা কিছুদিন আগে এখানে ঘুরতে এসেছিলেন। উনার সাথে দেখা করবো করবো করে-কিছুতেই হয়ে উঠছিল না। শেষে দেখা হল।

উনার বুকের মধ্যে অনেক বেদনা। মৌলবাদিদের তো তাও চেনা যায়। সমরেশ মজুমদার যে ভাষায় উনাকে বেশ্যা বলে গালাগাল করেছেন বা সুনীল গাঙ্গুলী উনার বই নিশিদ্ধ করার যে ফরমান দিয়েছেন তা ক্ষমার অযোগ্য। সুনীলদার সাথে টরেন্টোতে দেখা-উনাকে তসলিমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলাম। উনি আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন-শুধু ওইটা এরিয়ে গেলেন।

তসলিমার সাথে ব্যাক্তিগত আলাপনে যা বুঝলাম-উনি আসলে ধর্মবিরোধির চেয়েও বেশী পুরুষ বিরোধি । যে সমাজে সুনীল, সমরেশ থেকে নবীগঞ্জের মোল্লারা মেয়েদের সম্বন্ধে এক ই ধারণা পোষন করে- পার্থক্যটা শুধু গোডাওন আর শোকেশে-সেখানে ওর পুরুষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে আমি আশ্চর্য্য হই নি।

নারীবাদ নিয়ে তসলিমার প্রায় দুঘন্টার একটা ইন্টারভিউ আমি নিয়েছি। এখন রাজনৈতিক কারনে উনি এটার প্রচার চান না। পরে আরো ভাল করে নারীবাদ নিয়ে বলবেন বলেছেন। ওর কথা গুলো না শুনলে-এই দক্ষিন এশিয়াতে মেয়েদের কিভাবে ধর্মের বেশ্যা বানিয়ে রাখা হয়েছে, কেও বুঝবে না। সমানাধিকারটা ওর রক্তের সাথে মিশে গেছে-একটা ছোট্ট গল্প বলি--

ওর ভাই আমার স্ত্রীকে বৌদি বলে ডাকায়, উনি ভাইকে কড়কে দিলেন -আরে দাদা কিডা? ওর নাম নাই? জ়ানেনত-কোলকাতায় বাজারে গেলে মাছওয়ালা থেকে সবাই আমায় বলে বৌদি। আরে আমার নাম নাই? নাকি মেয়েদের নাম থাকতে নাই? সবাই বৌদি?

তসলিমা আমাদের উপমহাদেশের মেয়েদের নির্যাতনের কাছাকাছি থাকতে চান। সেটাই উনার লেখার ঘরবাড়ি। সবাই ভাবে উনি বোহেমিয়ান। উনি আমায় বললেন-আসলেই উলটো-আমার ফ্ল্যাট খুবই গোছানো। সব ফেলে আসতে হল!

যাগগে, উনার সাথে রাজনীতির ব্যাপারে যা কথা হয়েছে সেটা আমি প্রকাশ করতে চাই না। ভারতীয় রাজনীতির সবটাই অন্তসার শুন্য-উনিও বোঝেন। কিন্ত সেখানে থাকতে ত হবে!

বিপ্লব ৭/২৮/০৮


. বিপ্লব পাল, আমেরিকাতে বসবাসরত পদার্থবিদ, গবেষক এবং লেখক। এক সময় ভিন্নমতের মডারেটর ছিলেন, বর্তমানে www.fosaac.tv সম্পাদনার সাথে জড়িত।