১৫ই আগষ্ট : সেই দু:সহ কালো রাত্রির কথা !

মোহাম্মদ দানেশ

 

 

 আজ ১৫ই আগস্ট বাঙ্গালী জাতির সবচেয়ে গভীর শোকের দিনএই কলংকময় ইতিহাস সৃষ্টির সাথে জড়িতরা এদেশেরই মিরজাফরদের দোসর।  ওরা কি মানুষ নামের কলংক!  ওরা হায়েনার চেয়েও ঘৃণিত, যতদিন এই  বাংলাদেশ থাকবে , ততদিন ওরা ঘৃণিত হয়ে থাকবে বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরেওরা কি জানেনা ! ওরা কি বোঝেনা! ওরা কি অবোধ শিশু?  কাকে ওরা হত্যা করলো!  

ওরা হত্যা করলো হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালীকে! ওরা হত্যা করলো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালীকে! ওরা হত্যা করলো দুঃখিনী  বাংলাকে! বাংলার  ইতিহাসকে!  ত্রিশ লক্ষ শহীদের অমর আত্মাকে! তিন লক্ষ ধর্ষিতা মা বোনের অশ্রুকে!  

জাতিসংঘে সর্বপ্রথম বাংলায় ভাষণ দেয়ার মত সসাহস একমাত্র তিনিই দেখাতে পেরেছেন  কারন তিনি আমাদের জাতির জনকওরা কি করে পারলো  আসমান সমান এমন বুককে ঝাঁঝরা করতে! মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে অবুজ শিশুর  কোমল বুকে বুলেটের আঘাত হানতে ! এমন নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড কি পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি  ঘটেছে !  

ওরা জানেনা ওরা যে ইতিহাসকে হত্যা করতে চেয়েছে শত চেষ্টা করেও সেই  ইতিহাসকে কেউ হত্যা করতে পারেনা যেমন পরেনি নবাব সিরাজদৌলার ইতিহাসকে ! যে নেতার  মন ছিল পাহাড়ের মতো  উঁচু , হ্রদয় ছিল সাগরের মতো  বিশাল, বুকের পাটা ছিল এই বাংলাদেশটাই ! যার লক্ষ্য ছিল মানবতার মুক্তি! যার স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা!

সেই মহা নায়কের হত্যাকারী হায়েনারা  কেন আজও জীবিত ! ওদেরকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলাতে  ঘাটে ঘাটে এত বাধা কেন ? কেন? কেন?  

সংস্কৃতি মনা মানুষ ছিলেন  শেখ কামাল সারাদিন খেলাধুলা নিয়ে যার সময় কাটতোযার স্বপ্ন ছিল আবহনী ক্লাব !  যার স্বপ্ন ছিল ক্রীড়ার মাধ্যমে বিশ্বজয় ! ক্রীড়ার মাধ্যমে বিশ্বশান্তি স্থাপন! ঘাতকের বুলেটে  সেই উদিয়মান যুবককে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হলোসেদিন সে কালোরাতে  নির্মমভাবে আরও প্রাণ দিতে হলো  তার নবপরিণিতা স্ত্রীকেওসদ্য বিবাহিত শেখ  জামাল যিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর সদ্য অফিসার, তাকেও মেহেদী না শুকানো নব বধুসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হলো ! 

বিবাহ  উসবে বেড়াতে আসা জনকের একমাত্র  নিরীহ ভাই শেখ নাসেরকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হলো ! মৃত্যুর পূর্বে যিনি বার বার  ঘাতকদের উদ্দেশ্য আকুতি মিনতি করে  বলেছেন  আমি  নিরীহ মানুষ, রাজনীতি করিনা আমাকে মারছেন কেন ? না, -ঘাতকরা কোন কথা মানতে রাজি নাকোন  সাক্ষী রাখা যাবে না সবাইকে হত্যা করা হবে  

ওরা জানেনা দিন দুনিয়ার মালিককে  হত্যা করা যায় না তিনিই স্বয়ং সাক্ষী রয়ে গেলেন! এমন বিভস নারকীয় জঘন্য হত্যাকান্ড হিটলারের বর্বরতাকেও হার মানায়! গুলিবিদ্ধ বঙ্গজননী যখন পানির জন্য আর্তনাত করছিলেন , সেসময় তাঁর নয়নের মণি রাসেল কে মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নির্মমভাবে  হত্যা করল পাষন্ডরা  

সবাইকে  শেষ করার পর সর্বকালের ঘৃণিত খুনীরা  খুঁজতে থাকে আর বাকী  রইলো কে এ খুনের  সাক্ষী!  মেয়ে দুটিতো (হাসিনা , রেহেনা) রেঞ্জের বাইরে ! অতএব ধর প্রকৃতি প্রেমিক  জনকের পোষা  প্রিয় কালো কুকুরটিকে , হয়ত একদিন অবোধ পশুর মুখে জবান আসতে পারে।  কুকুরটা তার প্রিয় প্রভু হত্যার  প্রতিশোধ নিতে আসতে পারে ! সুতরাং কাউকে স্বাক্ষী রাখা যাবেনা জনককে রক্ষা করতে ঐযে  ছুটে  আসছে কে ! নাঃ ওকে গাড়ী থেকে  নামতে দেয়া হবে নাঅতএব কর্নেল শাফায়াত জামিল কে গাড়ীর ভিতরেই শেষ  করে দেয়া হলো 

যে নেতা বলতে পারে, আমার ব্যার্থতা : I love my people আমার সফলতা: I love my people. যার রক্তে  ছিল বাংলার স্বাধীনতা , বাংলার মেহনতি মানুষের  মুক্তিযিনি বলতে পারেন আমি মারা গেলে আমার লাশটা বাংলার মাটিতে পৌঁছে দিওনিজে রাস্ট্রীয়  ক্ষমতায় থেকেও যিনি অকাতরে বলেছেন, মানুষে পায় সোনার  খনি আর আমি পাই চোরের খনি।  স্বাধীন দেশে ভাইয়ে ভাইয়ে আর রক্তারক্তি দেখতে চাইনা নিজের নিরাপত্ত্বার কথা  না ভেবে বঙ্গভবন বাদ যিনি নিজের  সাদামাটা বাড়ীতে স্ব পরিবারে বসবাস করতে পারেন নিরাপত্তা বাহিনীর অনুরোধের  উত্তরে বলেছিলেন বাংলার মানুষ আমাকে মারতে পারে না! বাংলার মানুষকে তিনি এতই ভালবাসতেন যে, মৃত্যুর  সময়ও তিনি বিশ্বাস করতে পারেননি  ঘাতকেরা তাঁকে মেরে ফেলবে ! তাইতো তিনি বলেছিলেন তোরা কি চাস ? আর তাঁর এ কথাও সত্য , বাংলার মানুষ তাকে মারেনি, মেরেছে যারা তারা হায়েনার চেয়েও হিংস্র পশুর চেয়েও অধম 

এতবড় মহান নেতাকে  হত্যার পর ঘাতকেরা তাঁর লাশকেও ভয় পেয়ে গেলএ লাশ ঢাকা শহরে রাখা যাবে নাএ লাশ বড় বিপদজনক ! মৃত্যু মুজিব আবার বলে উঠতে পারে এবারের সংগ্রাম রাজাকার নির্মূলের সংগ্রাম!  বঙ্গবন্ধুর সমাধি দেখে জনতা আবার ৭১ এর মত গর্জে ওঠতে পারে ! অতএব সাবধান !    তারা বঙ্গবন্ধুর লাশ নীরব নিভৃত পল্লীতে সমাহিত করলো।  কত  নিঁখুত পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত!  

ওরা উদিয়মান তুখোড় নেতা শেখ ফজলুল  হক  মণিকে হত্যার পরে তাঁর  সন্তান সম্ভবা  স্ত্রীকেও হত্যা করলো! কেউ কি জানে ! এমন জঘণ্য কলংকময়  কালরাত্রি  বাংলায় কি আর কখনও এসেছিল! এমন কাল রাত্রি যেন কারো জীবনে না আসে !  এ রাত্রির যেন শেষ নেই ! ভোর হয়না কেন ? কখন ভেসে আসবে ফজরের সেই সুমধুর আওয়াজ আল্লাহু আকবর’ !!!  

 হায়রে করুণ মত্যু কাকে বলে ! মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতরাতে কাতরাতে ঘাতকদের  উদ্দেশ্যে  শেখ মণির স্ত্রীর করূণ আর্তনাদ  আমার পেটে  সন্তাান , আমার সন্তানকে বাঁচতে দিন কিন্তু না সেদিন ঘাতকের হাত একটুও কাঁপেনি  শেখ মণির স্ত্রীকে হত্যা করতে!  অলৌকিক ভাবে বেঁচে গেল মায়ের লাশের উপর শুয়ে  থাকা অবোধ শিশু  মাস্টার তাপসযিনি আজ ব্যারিষ্টার তাপস!  সে দিন কে জানত মায়ের লাশের উপর শুয়ে  থাকা অবোধ শিশুটি একদিন মাতৃহত্যার বিচার চাইবে! 

ঘাতক পাষন্ডরা কি করে পারলো দাদা নাতিকে (আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও আবুল হাসনাত আবদুল্লার ছোট ছেলে) এক সংগে কবরে পাঠাতে ! আদরের নাতি যখন গুলির শব্দে আতংকে- নিরাপদ আশ্রয় ভেবে দাদুর কোলে ওঠে দাদুকে জড়িয়ে ধরে - সেই অবোধ শিশুকে কিভাবে হত্যা করে!!! ফুটফুটে শিশু সুকান্তর কী দোষ ছিল? ও তো  বেড়াতে এসেছিল ! ওর দেহ কেন বুলেটের আঘাতে ছিন্নভিন্ন করা হলো ? জবাব নেই ! এ হত্যাকান্ডের কেউ কোন জবাব দিতে পারবে না!   

এ হত্যাকান্ড বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে জগন্যতম ঘটনা এ হত্যাকান্ডের পর বিশ্ববাসীর নিকট বাঙ্গালীর পরিচয় হয়েছে এরা বেইমানের জাতি , এরা নেমক হারামের জাতি ! বিশ্ববিবেক অবাক হয়েছে ! তারা বুঝে গেছে যারা মুজিবকে মারতে পারে তাদেরকে আর যাইহোক বিশ্বাস করা যায়না।  

ঘাতকদের ভয় ছিল এ হত্যাকান্ডের খবর যাতে অন্য কেউ  জানতে না  পারেতাই তারা রামপুরা টিভি ভবনের বাছাইকরা কর্মকর্তাদেরও একের পর এক নির্মম ভাবে  হত্যা করতে  লাগলো ।   

এখানেই কাহিনীর শেষ নযখুনীরা নিজেদের কে রক্ষা করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থাই গ্রহণ করলো ।   এ খুনের যাতে কোন বিচার কোন দিন কেহ চাইতে না  পারে তার জন্য তারা Indemnity Act নামে  এক কালো আইন  পাশ করালোখুনিরা বাংলার মানুষের  গৌরবের  ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে চাইলো ভুলিয়ে দিতে চাইলো  বিশে¡র  এক সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয়  নেতার কথা , যাকে হত্যা করে  কোন আইনেই কেহ পার পাবে না 

ইতোমধ্যে সাগরে অনেক পানি গড়িয়ে গেছে ,অনেক কথা হয়েছে, অনেক অনুনয় বিনয় করা হয়েছে ! কাজ হয়নি ! জাতি  আজ  কালবিলম্ব না করে অবিলম্বে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বিচার চায় ! এ বিচার করতেই হবে খুনিদের বিচার চায়! বিচার চায় মানব জাতিকে কলংক করার জঘণ্য অপরাধে অপরাধী জনকের রক্তে রাঙানো সেই সব পশুদের ! 

e-mail:[email protected]