নৈতিকতা নিয়ে আমার ভাবনা গুলো
মুক্তমনায় এখন লেখালেখি চলছে, সামনের বইমেলাতে প্রকাশিতব্য আমাদের বই “ধর্ম ও বিজ্ঞান, সংঘাত নাকি সমন্বয়”কে কেন্দ্র করে। একটি বিশেষ বিষয়কে ঘিরে সবাই তার পক্ষের - বিপক্ষের যুক্তি তুলে ধরছেন, নানা বড় বড় মনীষী, গবেষকদের উদ্ধৃতি দিচ্ছেন যার যার নিজের লেখাতে। এর মধ্যে অবধারিত ভাবেই হয়তো একটা কথা বার বার চলে আসছে, ধর্ম মানুষের কি কাজে লাগে , ধর্মের প্রয়োজনীয়তা এবং উপকারিতা। এই লেখা গুলো পড়ার পর যখন নিজে নিজে সেগুলোকে নিয়ে ভাবি আর নিজের প্রতিদিনের জীবনের চারপাশটা মিলিয়ে দেখতে যাই, প্রায়শই একটা জিজ্ঞাসা মনে খেলে যায় । কোনটা তাহলে সত্যি? একটা জিনিস একই সাথে কালো এবং সাদা দুটো হতে পারে না, জিনিসটি হয় কালো নয় সাদা। নাকি আমরা চরম স্বাভাবিক সত্যকে মেনে নেয়ার মতো সাহস নিজেদের মধ্যে সঞ্চয় করতে পারি না, নিজেদের মানসিক দুর্বলতাকেই ধর্মের আবরনে মুড়ে নেই? আর বার বার কন্যা দায়গ্রস্ত পিতার মতো কালো মেয়েকে উজ্জল শ্যাম বর্ন বলে চালাতে চাই, ব্যাপার তাই কি ? আমার চিন্তা ভাবনাই কি ধোয়াশা নাকি আমিই ঠিক বিষয়টি বুঝতে পারছি না। আমার এই লেখা অনেকটা আমার আত্ম জিজ্ঞাসা। এতে শুধুই আমার মনের ভাবনা গুলো যেগুলো অনেক সময়ই জট পাকিয়ে যায় তাই লিখছি। এতে কোন মনীষীর কিংবা গবেষকের উদ্বৃতি নেই, আছে সাধারন একজন মানুষের তার চারপাশ অবলোকন করা আর তার দ্বিধাগ্রস্ত মনের এলোমেলো ভাবনা।
অনেকেই তাদের লেখায় ধর্মের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, মানুষের মধ্যে নৈতিকতা সৃষ্টির জন্য ধর্মের প্রয়োজন আছে। সত্যিই কি তাই? কি সেই ধর্ম বিশ্বাস যার থেকে নৈতিকতা উৎপন্ন হয়ে এমন চরমে চলে যায় যে একজন মানুষ অন্য একজন মানুষের গলায় ছুরি চালিয়ে দিতে দ্বিধা বোধ করেন না? কোন সেই নৈতিকতার কারনে প্রত্যেক ধর্মের ধর্মপ্রাণ লোকেরা অন্য আর ধর্মের ধর্মপ্রাণ মানুষের বাসায় জলগ্রহন করতে দ্বিধা বোধ করেন? একজন ধর্মপ্রাণ ব্রাক্ষণ কিছুতেই কোন হাজী মওলানার বাড়ীতে খাদ্য দ্রব্য স্পর্শ করবেন না, যেমন করবেন না একজন মওলানাও একজন ব্রাক্ষণের বাড়ীতে। অথচ দুজনেই যার যার ধর্মের মহারথী, দুজনেই নৈতিকতার ধারক এবং বাহক। এতে নৈতিকতাই বা কোথায় আর ধর্মই বা কোথায়? এটা কি তাদের প্রতি সৃষ্টি কর্তার কিংবা সৃষ্টি কর্তার প্রতি তাদের অনাস্থাই প্রমাণ করে না? মানুষকে ঘৃণা করা, একজন মানুষের প্রতি আর একজন মানুষের অবিশ্বাস ও সন্দেহই কি ধর্ম আর নৈতিকতা?
ধর্ম থেকে আসা নৈতিকতার কিছু উদাহরণঃ আমি এখানে আমার চোখে দেখা ধর্মের নৈতিকতা নিয়ে আমার ভাবনা গুলো লিখবো। বাংলাদেশ অত্যন্ত গরীব দেশ হওয়াতে আমাদের দেশের লোকের সর্বপ্রথম যে চিন্তাটা থাকে তাহলো যেনতেন প্রকারে নিজের এবং ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য যতো দ্রুত এবং যেকোন উপায়ে সম্ভব আখের গুছিয়ে ফেলা। অন্ততঃ জলপাই সরকার এসে অনেক রথী মহিরথীর বাড়ি থেকে যে হারে রিলিফের টিন উদ্ধার করেছেন তাতে এ ব্যাপারে অন্তত কারো দ্বিমত থাকার কথা না। যার যতোই থাকুক না কেন সোনার চামচে যেনো নিজের সন্তান খেতে পায় তার সুবন্দোবস্ত নিশ্চিত করে যেতেই হবে। যার যার সার্মথ্যনুযায়ী সে সে হাত বাড়ায়। মসজিদের শহর ঢাকা, সুমধুর আজানের ধ্বণিতে চারপাশ অনুরণিত সারাবেলা। মুসলমানদের দ্বিতীয় মহামিলন এজতেমা হয় এই দেশে। যে দেশের প্রায় নব্বই ভাগ লোক চূড়ান্ত ধর্মপ্রান সে দেশ দুর্নীতিতে ডাবল হ্যাট্রিক !!! এটাকে কি চোখে দেখবো? এই রঙের নাম কি কালো না সাদা? নাকি ছাই বর্ন এটাকেই বলব?
চরম দারিদ্রতার কারণে বাংলাদেশের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী, সে যে উপায়েই হোক বিদেশ পাড়ি জমান। দুর্ভাগা বাংলাদেশের চরম হতভাগা লোকগুলো সোনার হরিণের পিছনে বাবা - মায়ের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে ছুটে আসে নিজের তথা পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায়। বারো থেকে ষোল লক্ষ টাকা ব্যয় করে এসে যখন দেখে হরিণ গলিয়ে সোনা বের করে নেয়া হয়েছে বহু আগেই তখন তারা স্তব্ধ হয়ে যান। পিছনের সব ইতিহাস ভুলে যেয়ে, বাংলাদেশে কি করতেন, কি পড়তেন সেই দিন খাচায় তুলে রেখে, সেই টাকা উদ্ধারের জন্য যে কোন কাজ পান তাতেই ঝাপিয়ে পড়েন। এরমধ্যে সবচেয়ে সহজ লভ্য কাজ হচ্ছে কোন ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্টে ঢুকে পড়া। ধার্মিক দাড়িওয়ালা, ক্ষেত্রবিশেষে টুপিওয়ালা মালিকরা তাদেরকে কখনো কখনো থাকা খাওয়ার জন্য কিছু দেন, অনেক সময় শুধু কাজের সুযোগটাই দেন, টিপসের টাকাই এলাহী ভরসা। আজকাল যেহেতু অবৈধ অভিবাসীদের উপরে বিদেশীরা খুবই ক্ষ্যাপা, অবৈধ কাউকে কাজে রাখা যে কারো জন্যই দশ নম্বর মহা বিপদ সঙ্কেত। তাই অবৈধ অভিবাসীদের কাজের ক্ষেত্র সীমিত হওয়ায় মাঝে মাঝে অনেক মালিক কৈফিয়ত দেন যে, এতো রিস্ক নিয়ে যেহেতু রেখেছি, পয়সা বেশি দিতে পারব না। অসহায় ছেলে গুলো কাগজ হলে একটা হিল্লা হবে এই আশায় বুক বেধে সেটাই নীরবে মেনে নেয়।
একশ্রেণীর ধর্ম পেশা লোকজন যে থালায় খাচ্ছে, সেই থালাকেই ফুটো করে যাচ্ছেন অবিরত। প্রথমতঃ অবৈধ একজনকে আশ্রয় দিচ্ছে, সরকারের বিরুদ্ধে যেয়ে। অবৈধভাবে তার শ্রমকে অপব্যবহার করছে এবং সরকারকে প্রতিনিয়ত শুল্ক ফাকি দিচ্ছে। যে শুল্ক দ্বারা সবার সন্তানদের স্কুল - কলেজের খরচা আসবে, অসুস্থদের ভাতা আসবে, গৃহহীন কারো গৃহের ব্যবস্থা হবে, কর্মহীন কারো মাসিক ভাতা আসবে, সব কিছুর উৎস এই শুল্ক। একসাথে কতোজনকে ফাকি দিচ্ছে তারা? সৃষ্টিকর্তা, সরকার, বিবেক ???
কিন্তু এই তারাই আবার সরকারের কাছে আবেদন - নিবেদন করে রবিবারে বাচ্চাদের ধর্ম শিক্ষার জন্য সরকারের কাছ থেকে বিনা মূল্যে মিলনায়তন সহ ইমামের বেতন আদায় করছেন। এর মধ্যে ধর্ম কোথায় আর নৈতিকতা কোথায় ? কিসের মূল্যবোধ তারা তাদের সন্তানদেরকে তথা সমাজকে উপহার দিচ্ছেন? ঠিক আছে কাফের সরকারকে ঠকাচ্ছে, কাফেরদের প্রতি কোন মূল্যবোধের বা বিবেকের দরকার নেই, কিন্তু দেশী ভাইদেরকে ঠকানোর পেছনে কি যুক্তি? এদের অনেকেই প্রায় প্রতি বছর পরিবার নিয়ে হজ্বব্রত পালন করে আসেন, তারপর আবার অনেক সময়ই শোনা যায় এই রেস্টুরেন্ট মারামারি হয়েছে কারণ পাচ বছরের দিন রাত খাটা পয়সা না দিয়ে বরং সেই শ্রমিককে পাওনা টাকা দেয়ার ভয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে, শ্রমিককে পুলিশে দিয়ে, মালিক হজ্বে !!!! জামিনে বেরিয়ে এসে তখন দেখা যায় সেই শ্রমিক মালিককে মারতে গিয়েছে, এদের সবাই কিন্তু ধার্মিক। এই রেষ্টুরেন্ট মালিকরা প্রায় প্রত্যেকেই প্রাথমিক অবস্থায় একদা শ্রমিক ছিলেন যারা পরবর্তী জীবনে মালিক হয়েছেন। শ্রমিক অবস্থায় তারা যে যন্ত্রণা ভোগ করেছেন, মালিক হয়ে তারা অন্যদেরকে সেই একই জিনিস ফিরিয়ে দিচ্ছেন, জীবন থেকে কি শিখেছেন তবে তারা কিংবা ধর্ম থেকে?
আজকাল আবার আর একটা ব্যাপার থাকে। মদ বিক্রি না করলে রেষ্টুরেন্ট চালানো যাবে না, আবার হাজী সাহবে মানুষরা মদ বিক্রি করতে পারবেন না। সামাজিক একটা ইয়ে ইয়ে ব্যাপার এসে যায়। তাই মালিকরা প্রত্যেকেই বয়ান করে থাকেন মদ বিক্রির পয়সা তারা খাবার বিক্রির পয়সা থেকে আলাদা রাখেন। কারন এটা হালাল না। এটা দিয়ে তারা কর্মচারীদের বেতন দেন। এখন, প্রথমতঃ যখন কেঊ বিল দেন, তখন তারা নিশ্চয়ই মদের টাকা আর হালাল খাবারের টাকা আলাদা করে দেন না। তারা তাদের কষ্ট করে উপার্জন করা হালাল টাকাতেই পাওনা পরিশোধ করেন। আর দ্বিতীয়তঃ যে ছেলে গুলো হাত পুড়িয়ে রেধে খাওয়াচ্ছে তারা হালাল পরিশ্রম করে তাহলে হারামের টাকায় বেতন নিচ্ছে!!!! যিনি কর্মচারীদেরকে হারাম বেতন দিচ্ছেন, তার বিবেক কিসের উপর ভর করেছে? এট কি ধর্ম না তার থেকে উৎপন্ন হওয়া নৈতিকতা?
পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে মানবিক অধিকার যাতে খর্ব না হয় এবং মানুষের জীবন যাত্রার মানের সমতা রাখতে বিভিন্ন ধরনের ভাতার প্রচলন আছে। এই ভাতার মূল উদ্দেশ্য থাকে দুর্বলদেরকে রক্ষা করা, তাদের নূন্যতম মানবিক প্রয়োজনগুলো মেটানো। প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের প্রত্যুৎপন্নমতি বুদ্ধির দ্বারা সরকারের সাথে টম এন্ড জেরীর হাইড এন্ড সিক গেম খেলে সারা বেলা। এমন কোন ভাতা নেই যা সরকারের কাছ থেকে তারা আদায় করেন না। এমনকি তালাকপ্রাপ্তা ভাতাও। আইনতঃ তারা বিবাহ বিচ্ছেদ করেন এবং ধার্মিক মতে বিবাহিত থাকেন। এই ভাতা কিন্তু খুব একটা সামান্য নয়। অনেকে এই টাকায় ঢাকায় গুলশানে, বারিধারায় তিন হাজার স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট পর্যন্ত কিনে নেন দু’বছরে। যদিও কাফের সরকারের এই পয়সাযে তাদের জন্য হালাল সেটা তারা কোরানের আয়াত, সুন্নাহ, ফিকাহকে ডলে পিষে বুঝিয়ে দিয়ে ছাড়বেন। ধর্মের মাধ্যমে নৈতিকতা শিক্ষার কি চরম উদাহরণ!!! তদুপরি বলব, যখন একজন অধার্মিক লোক চুরি করেন, তাকে নিয়ে উচ্চ বাচ্য করার হয়তো তেমন কিছুই নেই, তার জন্য হয়তো অন্যদের দৃষ্টিকোন থেকে সেটাই স্বাভাবিক। সে কোন কিছুর আড়ালে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করে না। কিন্তু একজন ধর্মপ্রান সমাজ স্বীকৃত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী ব্যাক্তি যখন চুরি করে তখনতো ধর্মের দিকে অঙ্গুলী উঠবেই, ধর্ম আধারিত নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হবেই স্বাভাবিক নিয়মে। প্রার্থনার ব্যাপারটি নিয়ে ধার্মিকরা সারাক্ষন মাতামাতি করেন। তারমানে কি এই ধরে নেয়া যায় না, অন্যায় করেন বলেই বারবার কারো কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন আসে? যদিই অন্যায়ই না করেন, দুর্বলতাই না থাকে, তবে কিসের ক্ষমা চাওয়া? নিজেরা দুর্বল বলেই সারাক্ষন কারো আজ্ঞাবহ হওয়া কিংবা কারো উপড় নির্ভর করার ব্যাপারটা আসে।
আমার বিশ্লেষণে দুই ধরনের ধার্মিক আছে। এক ধরন হলো সাদা মাটা ধার্মিক। তারা কিছু না জেনে না বুঝেই ধার্মিক কিংবা বাবারেও করতে দেখছি তাই আমিও করি টাইপ। এই শ্রেণীর এমন অবস্থা বাবারও দশ খানা ছেলে পুলে ছিল তাই নিজেরাও সেই খাতায় নাম দিতে থাকে। যতক্ষণ না ডাক্তার এসে থামান স্বাস্থ্যগত কোন কারণ দেখিয়ে। এদেরকে আমি ঠিক ধার্মিক বলি না, বলি প্রথা পালনকারী, জিজ্ঞাসাহীন এক ধরনের আজ্ঞাপালনকারী বাহন। দ্বিতীয় দল হলেন আসল দল, মুখে দুনিয়া কয় দিনের কিন্তু কাজে সেই দুনিয়ার জন্য এমন কোন কর্ম নাই যা তারা করবেন না। সব জিনিসের একটা ধর্মভিত্তিক ব্যাখা তাদের কাছে পাওয়া যাবে। যেকোন জিনিসকে ধর্মের আলোকে তারা আলোকিত করে ফেলেন। নিজেদের মতো নৈতিকতার একটা ব্যাখা নিশ্চয়ই তাদের মন তৈরী করে রাখেন, যার খোজ খবর আমরা রাখি না। কবির কথানুযায়ী হয়তো দারিদ্রতা মানুষকে মহান করে কিন্তু টি। আই। বি’র রিপোর্টনুযায়ী মানুষকে চোর করে, অনন্ত বাংলাদেশের চৌদ্দকোটি মানুষ তাই প্রমান করেছে।
শুধু কি দারিদ্রতাই নৈতিকতাকে ক্ষয় করেঃ উপরের আলোচনা থেকে মনে হতে পারে শুধু দরিদ্র লোকেরাই ধর্মকে ব্যবহার করে কিংবা ধর্মের আড়াল বা আশ্রয় নিয়ে অন্যায় করে থাকেন। আসলে কি তাই? আমার সীমিত দৃষ্টিতে দেখা, অনুভব করা ও জ্ঞানের আলোক বলব না। তাহলে ধনী আরব রাষ্ট্রগুলো কিংবা কম্যুনিষ্টরা মানুষের উপর এতো অন্যায় করছেন, কেনো? বরং ধর্মের আবরনই অনৈতিক স্খলনের জন্য দায়ী। ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষ নিজেকে আড়াল করে এবং সকল ধরনের অনৈতিক অপরাধ করে থাকে। দুবাই বা অন্য যেকোন মুসলমান রাষ্ট্রে গেলেই এটা দেখা যায়। আরবরা দরিদ্র না কিন্তু তারা দরিদ্র দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সাথে টাকা - পয়সা, ওয়ার্ক পারমিট ইত্যাদি বহু ব্যাপার নিয়ে দিন রাত মিথ্যে কথা বলছে, প্রতারণা করছে। সেই মিথ্যে কথা শুরুর আগে একবার ইয়াল্লাহ বলছে, শেষে একবার বলছে। দরিদ্র দেশের মানব সন্তানদের ব্যবহার করে উটের দৌড় করাচ্ছে, কিংবা যৌন হয়রানী করছে। কিন্তু আবার আজান দেয়ার সাথে নামাজ পড়ে চিত্ত শুদ্ধও করছে। বেশীর ভাগ আরবদের বেশ কয়েকটি করে বাড়ি থাকে, যার অনেক গুলোই ফাকা ও তালাবন্ধ থাকে বছরের পর বছর, সেই জায়গায়ই হয়তো পাচশ গজ দূরে একটি কুড়ের মধ্যে বারোজন মানুষ গাদাগাদি করে থাকেন। ধর্ম কি সেই শিক্ষায় দেন মানুষকে ? ধর্মের দ্বারা নৈতিকতা কতো জায়গায় ধর্ষিত এবং পদদলিত। তবে শক্ত আইনের বাধনে যেসব জায়গায় পড়তে হয় সেসব জায়গায় অনৈতিক কাজ অনেক কম হয়। উদাহরনস্বরূপ বলা যায়, যেলোক দেদারসে ট্যাক্স ফাকি দিচ্ছে কিংবা ভীড়ের বাসে টিকেট ফাকি দিচ্ছে অথবা কর্মচারীর বেতন মেরে দিচ্ছেন, সেই তিনিই কিন্তু কখনও ভুল জায়গায় পার্কিং করার চিন্তা মাথায় আনবেন না, কিংবা মেয়েকে কাফের বিদেশী ছেলেদের সাথে কোএডুকেশনে পড়তে দিবো না কিংবা আঠারোর আগে আইনতঃ বিয়ে দিবেন, এই ধরনের চিন্তা মাথায় আনবেন না। যে আরবরা নিজের দেশে অ - আরবীয় সমাজের মানুষের সাথে গরু ছাগলের মতো ব্যবহার করেন, তারাই যখন ইউরোপে গরমের ছুটি কাটাতে আসেন, পরিবার পরিজন নিয়ে, অ - আরবীয় সমাজের সাথে তখন শিষ্ট ও চরম ভদ্র আচরন করে থাকেন। তাহলে কি শক্ত, কঠোর, অলংঘনীয় সব আইনগুলো অনেক সময় ধর্মের সমান্তরাল হিসেবে কাজ করে স্থান - কাল - পাত্র ভেদে নৈতিকতা শিক্ষা দেয় মানুষকে?
ধার্মিকরা হয়তো গুনাহ হবে সেইজন্য অনেক সময় অনেক অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন কিন্তু ভয় দেখিয়ে কি সব সময় নিজেকে বিরত রাখা যায় যদি অন্তর থেকে কেউ তাগিদ অনুভব না করেন? বিবেক থেকে অন্যায়কে অন্যায় ভাবেন না বলেই হয়তো সাধারনতঃ দেখা যায় যেকোন অন্যায় করার পর ক্ষমা চেয়ে নিজেকে শুদ্ধ করে নেয়ার একটা ভরসা ওদের মধ্যে কাজ করে। যখন কেউ ভাবেন আমি অন্যায় করে উপাসনার দ্বারা তার থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিতে পারবো, সেই ভাবনার প্রেষনাই তাকে অন্যায়ের প্রতি জোর ধাবিত করে। ধার্মিকরা প্রায়ই তাদের ধর্মের প্রতি অত্যন্ত ভালোবাসা থেকেই হয়তো বলে বসেন, ধর্মের কোন দোষ নেই এর অপব্যাখা দেয়া হচ্ছে। তাই যদি সত্যি হয়, ধর্ম যদি এতোই নাজুক ব্যাপার হয়ে থাকে যে, যে খুশী সেই তার অপব্যাখা কিংবা ভুল ব্যবহার করতে পারে, তাহলে সেই দুর্বল জিনিসটা “নৈতিকতার” মতো একটা শক্ত জিনিসের ভার কিভাবে নিতে পারে? অজ্ঞতা থেকেই ভয়ের আর ভয়ের থেকে নানারকম কল্পনার সৃষ্টি হয়। রাক্ষস, খোক্কস, পরী, পংক্ষীরাজ ঘোড়া কিংবা এমন কোন অবয়বের যাকে সর্ব শক্তিমান মনে করার আপ্রান চেষ্টা চলে। যার উৎস হলো অজ্ঞতা কিংবা ভয় তা কি করে নৈতিকতা ধারন করতে পারে?
এই লেখাটা পড়ে আপাত মনে হতে পারে যে, ধর্ম সব অনৈতিকতার কারন বা ধার্মিক লোকেরাই অনৈতিক কাজ করে। কিন্তু আমার মতে ধর্মহীনতা মানেই যেমন নীতিহীনতা নয় তেমনি ধার্মিক মানেই নীতিবান, সচ্চরিত্রের লোক সবাই নন। শুধু ধর্ম মানুষকে নৈতিকতা শিক্ষা দেয়, এই ধারনাটা সাধারনের মাঝে বদ্ধমূল হওয়াটা বিপদজনক। এতে করে ধর্মের ঢাল ব্যবহার করে অনৈতিক কাজ গুলো হরদম করে যাওয়ার একটা একটা সুযোগ সে পাচ্ছে এবং আমাদের চারপাশের বাস্তব বলে দেয়, সেই সুযোগের সদ্বব্যহার সে করছে। ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্য অনুধাবন করতে পারা আর সেই অনুভূতিকে বিবেকের কষ্টি পাথরে ঘষে নিজের জীবনে প্রতিফলন ঘটানোই আমার মতে নৈতিকতা, যা ধার্মিক অধার্মিক সকলের মধ্যেই থাকতে পারে কিংবা থাকেও। পরিশেষে নিজের একটা উপলব্ধি যেটা থেকে মুক্ত হওয়া এ জীবনে আর সম্ভব হবে না জানি, সেটা লিখছি। ধর্মের ব্যাখা বলি আর গল্পই বলি, যেখানে ধর্ম নিজেই বলেছে, প্রথমে মানুষে এসেছে এবং পরে তার কল্যানের জন্য ধর্ম এসেছে। প্রত্যেক ধর্মের এই একই গল্প, শুধু গল্পের চরিত্রের নাম আর প্লট আলাদা। সেজন্য যা মানুষের প্রয়োজনে সৃষ্টি হয়েছে এবং মানুষের পরে এসেছে তা যেনো কখনই মানুষের থেকে বড় না হয়ে উঠে। প্রয়োজনের বস্তু যখন যাদের প্রয়োজন হবে তারা ব্যবহার করবেন নিশ্চয়ই , কিন্তু তাকে সবার জন্য অনিবার্য করে তোলার কোন কারন নেই। আজকের এই সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়ের যুগে এটুকু উপলব্ধি করতে পারি, এই পৃথিবীর এখন ধার্মিক মানুষের চেয়ে নীতিবান মানুষের প্রয়োজন অনেক অনেক অনেক বেশী।
২৫.০৬.০৮