আত্মা নিয়ে ইতং-বিতং (৪র্থ পর্ব)
(উৎসর্গ: গায়ক সঞ্জীব চৌধুরী – আত্মায় অবিশ্বাসী একজন পরিপূর্ণ ইহজাগতিক মানুষ)
আগের পর্বের পর ...
এ সিরিজের আগের পর্বটি শেষ করা হয়েছিল এই বলে -
কিন্তু তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে আত্মা যদি নাই থাকল, বিভিন্ন জনের মরণপ্রান্তিক অভিজ্ঞতাগুলোকে (এনডিই এবং ওডিই) কিভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে? একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে আমেরিকার শতকরা প্রায় ১৫-২০ ভাগ লোক মনে করে তাদের জীবনের কোন না কোন সময় ওডিই বা এনডিই –এর অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এর কি ব্যাখ্যা?
এর ব্যখ্যা অবশ্যই আছে, এবং তা বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানেই বেরিয়ে এসেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন মস্তিস্ক আমাদের দেহের এক অতি জটিল অংগ। কি রকম জটিল একটু কল্পণা করা যাক। মস্তিস্কের জটিলতাকে অনেক সময় মহাবিশ্বের জটিলতার সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে। কোটি কোটি গ্রহ -নক্ষত্র ছরিয়ে ছিটিয়ে থেকে আমাদের পরিচিত এই সুবিশাল এই মহাবিশ্বে তৈরি হয়েছে বিশাল বপুর সব সৌরজগত কিংবা ছায়াপথের। ঠিক একই রকমভাবে বলা যায়, আমাদের করোটির ভিতরে প্রায় দেড় কিলো ওজনের এই থকথকে ধুসর পদার্থটির মধ্যে গাদাগাদি করে লুকয়ে আছে প্রায় দশ হাজার কোটি নিউরন আর কোটি কোটি সায়ন্যাপসেস; আর সেইসাথে সেরিব্রাম, সেরিবেলাম, ডাইসেফেলন আর ব্রেইনস্টেমে বিভক্ত হয়ে তৈরি করেছে জটিলতম সব কাঠামোর। আমি যখন ২০০২ সালে আমার পিএইচডির কাজ শুরু করতে গিয়ে মস্তিষ্কের মডেলিং করছিলাম তখন ব্রেনের প্রায় তেতাল্লিশটি কাঠামো (প্রত্যংগ) সনাক্ত করে মডেলিং করেছিলাম। সেগুলোর ছিল বিদ্ঘুটে সমস্ত নাম – কর্পাস ক্যালোসাম, ফরনিক্স, হিপোক্যাম্পাস, হাইপোথ্যাল্মাস, ইনসুলা, গাইরাস, কডেট নিউক্লিয়াস, পুটামেন, থ্যালমাস, সবাস্ট্যানশিয়া নাইয়াগ্রা, ভেন্ট্রিকুলাস ইত্যাদি ২৪। আমাদের চিন্তাভাবনা, কর্মমান্ড, চাল চলন এবং প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা অনেকাংশেই মস্তিস্কের এই সমস্ত বিদ্গুটে নামধারী প্রত্যঙ্গগুলোর সঠিক কর্মকান্ডের এবং তাদের কাজের সমন্বয়ের উপর নির্ভরশীল। দেখা গেছে, মস্তিস্কের কোন অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হলে, কিংবা এর কাজকর্ম বাধাগ্রস্থ হলে নানারকমের অদ্ভুতুরে এবং অতীন্দ্রীয় অনুভূতি হতে পারে। যেমন, কর্পাস ক্যালোসাম নামের গুরুত্বপুর্ণ কাঠামোটি মস্তিস্কের বামদিক এবং ডানদিকের কাজের সমন্বয় সাধন করে থাকে। আমরা সবাই জানি যে, আমাদের ব্রেন একটি হলেও এটি মুলতঃ ডান এবং বাম – এই দুই গোলার্ধে বিভক্ত। এই দুই গোলার্ধকে আক্ষরিক অর্থেই আটকে রাখে দুই গোলার্ধের ঠিক মাঝখানে ‘কাবাব মে হাড্ডি’ হয়ে বসে থাকা কর্পাস ক্যালোসাম নামের প্রত্যংগটি। কোন কারণে মাথার মাঝখানের এই অংশটি আঘাতপ্রাপ্ত হলে মাথার বামদিক এবং ডানদিকের সঠিক সমন্বয় ব্যাহত হয়। ফলে রোগীর দ্বৈতসত্ত্বার (Split Brain experience) উদ্ভব ঘটতে পারে। ষাটের দশকে রজার স্পেরি, উইলসন এবং মাইকেল গ্যাজানিগার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বেরিয়ে আসে মজার মজার সব তথ্য। দেখা গেল এ ধরনের রোগীদের মাথার বামদিক একধরনের চিন্তা করছে তো ডানদিক করছে আরেক ধরণের চিন্তা ৯, ২৫। মাথার দুই ভাগই আলাদা আলাদা ভাবে কনশাস বা চেতনাময়। মাথার বামঅংশ পেশাগত জীবনে ড্রাফটসম্যান হতে চায়, তো ডান অংশ হতে চায় রেসিং ড্রাইভার ২৫! এখন যারা আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাসী, তাদের কাছে সহজেই এ প্রশ্নটি উত্থাপন করা যায়, মস্তিস্ক-বিভক্ত দ্বৈতসত্ত্বাধারী রোগীদের দেহে কি তাহলে দুটি আত্মা বিরাজ করছে? বাড়তি আত্মাটি তাহলে দেহে কোত্থেকে গজালো? বোঝাই যাচ্ছে, আত্মার অস্তিত্ব দিয়ে এই ঘটনার ব্যাখ্যা মিলে না, এর ব্যাখ্যা সঠিকভাবে দিতে পারে ‘দ্বিখন্ডিত মস্তিস্ক’ এবং মাথার মাঝখানে থাকা কর্পাস ক্যালোসাম নামের গুরুত্বপূর্ন অংগের কাজকর্ম।
চিত্রঃ আমার পিএইচডির কাজের অংশ হিসেবে মানব মস্তিস্কের বিভিন্ন অংশ সনাক্ত করে ত্রি-মাত্রিক মডেলিং করতে হয়েছিল। আমি ৪৩ টি অংশ সঠিকভাবে সনাক্ত করে মডেলিং করেছিলাম২৪। উপরের ছবিতে আমার করা সেই মডেলিং-এর অংশবিশেষ দেখনো হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, আমাদের চিন্তাভাবনা, কর্মমান্ড, চাল চলন এবং প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা অনেকাংশেই মস্তিস্কের এই সমস্ত প্রত্যঙ্গগুলোর সঠিক কর্মকান্ডের এবং তাদের সমন্বয়ের উপর নির্ভরশীল।
আবার বিজ্ঞানীরা এও দেখেছেন, হাইপোথ্যালমাস নামে মস্তিস্কের আরেকটি প্রত্যংগকে কৃত্রিমভাবে বৈদ্যুতিক ভাবে উদ্দীপ্ত করে (মূলতঃ মৃগীরোগ সারাতে এ প্রক্রিয়াটি ব্যবহৃত হত) দেহবিচ্যুত অবস্থার সৃষ্টি করা যায়, অন্ততঃ রোগীরা মানসিকভাবে মনে করে যে সে দেহ বিযুক্ত হয়ে ভেসে ভেসে বেরাচ্ছে। এ ধরণের অবস্থা সৃষ্টি হয় মস্তিস্কে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেলে (হাইপারকার্বিয়া) কিংবা কোন কারণে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে (হাইপক্সিয়া)। কিছু কিছু ড্রাগ যেমন, ক্যাটামিন, এলএসডি, সিলোকারপিন, মেসকালিন প্রভৃতির প্রভাবে নানাধরনের অপার্থিব অনুভূতির উদ্ভব হয় বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ সমস্ত ড্রাগের প্রতিক্রিয়া হিসেবে অচৈতন্যাবস্থা থেকে শুরু করে দেহ-বিযুক্ত অনুভূতি, আলোর ঝলকানি দেখা, পূর্ব্জন্মের স্মৃতি রোমন্থন, ধর্মীয় অভিজ্ঞতা সবকিছুই পাওয়া সম্ভব। আমি এক ভদ্রলোককে চিনতাম যিনি যীশুখ্রীষ্টকে দেখাবার এবং পাওয়ার জন্য এলএসডি সেবন করতেন। আমার আরেক বন্ধু প্রথমবারের মত গাঁজা খেয়ে এমন সমস্ত কান্ড কারখানা করা শুরু করেছিল যে মনে পড়লে এখনো হাসি পায়। হাড় কাঁপানো শীতের রাতে ‘গরমে পুইড়া যাইতাছি’, ‘আমারে হাসপাতালে নিয়া যা’ বলে হাউ মাউ কাঁদতে আর চ্যাচাতে লাগল। আমাদের তখন সদ্যকৈশোর উত্তীর্ণ বয়স, কলেজ পালিয়ে ‘গাঁজা খেলে কেমন লাগে’ – এই রহস্য উদ্ঘাটনে আমরা তখন ব্যস্ত। ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম সেরাতে। যদিও শেষটা বন্ধুটিকে হাসপাতালে নিতে হয়নি, কিন্তু পরদিন তার পাংশু মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝেছিলাম কি ধকলটাই গেছে তার উপর দিয়ে সারা রাত ধরে। সবাই মিলে চেপে ধরায় সে বলেছিল, ‘সারা রাত ধরে আমি শুধু দেখছিলাম আমি একটা নিকষ কালো অন্ধকার টানেলের মধ্য দিয়ে হেটে চলেছি, আর সব কিছু আমার উপরে ভেঙ্গে পড়ছে’। গরম গরম বলে চ্যাচাচ্ছিলি কেন – এ প্রশ্ন করায় বলেছিল, তার নাকি মনে হয়েছিল টানেলের শেষেই দোজখের আগুন, সে আগুনে নাকি তাকে পুড়িয়ে ঝলসিয়ে কাবাব বানানো হবে! বলা বাহুল্য, এগুলো উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, মরণ-প্রান্তিক এবং দেহ-বিযুক্ত অনূভুতিগুলো আসলে কিছুই নয়, আমাদের মস্তিস্কেরই স্নায়বিক উত্তেজনার ফসল। আর এজন্যই শ্মশানঘাটের কোন কোন সাধু-সন্নাসী কেন গাঁজা, চরস, ভাং খেয়ে ‘মা কালীকে পেয়ে গেছি’ ভেবে নাচাচাচি করে, তা বোঝা যায়।
এ প্রসংগে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী সুসান ব্ল্যাকমোরের কথা বলা যেতে পারে। সুসান ব্ল্যাকমোর মরণ-প্রান্তিক অভিজ্ঞতা বিষয়ে বিশেশজ্ঞ একজন মনোবিজ্ঞানী, ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। এক সময় টেলিপ্যাথি, ইএসপি, পরামনোবিদ্যায় বিশ্বাসী থাকলেও, আজ তিনি এ সমস্ত অলৌকিকতা, ধর্ম এবং পরজগত সম্বন্ধে সংশয়ী। সংশয়ী হয়েছেন নিজে বৈজ্ঞানিকভাবে এগুলোর অনুসন্ধান করেই। তিনি ‘ডাইং টু লিভ’, ‘ইন সার্চ অব দ্য লাইট’ এবং ‘মীম মেশিন’ সহ বহু বইয়ের প্রণেতা। তিনি তার ‘ডাইং টু লিভ : নিয়ার ডেথ এক্সপেরিএন্স’ (১৯৯৩) বইয়ে উল্লেখ করেছেন অক্সফোর্ডে অধ্যয়নকালীন সময়ে (সত্তুরের দশকে) তিন বন্ধুর সাথে মিলে মারিজুয়ানা সেবন করে কিভাবে একদিন তার ‘আউট অব বডি’ অভিজ্ঞতা হয়েছিল, কিভাবে তিনি টানলের মধ্যদিয়ে ভেসে ভেসে বেরিয়েছিলেন, অক্সফোর্ডের বিল্ডিঙ্গের বাইরে ভাসতে ভাসতে আটলান্টিক মহাসগর পাড়ি দিয়ে নিউইয়র্কে পৌছিয়েছিলেন, তারপর আবার নিজের দেহে ফিরে গিয়েছিলেন ৮ । তার এ অভুতপূর্ব অভিজ্ঞতার কাহিনী লিপিবদ্ধ করে রাখা আছে The Archives of Scientists' Transcendent Experiences (TASTE) ওয়েবসাইটে। কিন্তু সুসান ব্ল্যাকমোর যা করেননি তা হল অন্যান্য ধর্মান্ধ ব্যক্তিবর্গের মত ‘ধর্মীয় আধ্যাতিকতার অপার মহিমায়’ আপ্লুত হয়ে যাওয়া, কিংবা এঘটনার পেছনে অকাট্য প্রমাণ হিসেবে স্রষ্টা, আত্মা কিংবা পরজগতের অস্তিত্বকে মেনে নেওয়া । বরং তিনি যুক্তিনিষ্ঠ ভাবে এনডিই এবং ওবিই-এর বৈজ্ঞানিক কারণ অণুসন্ধান করেছেন এবং উপসংহারে পৌছিয়েছেন যে, মরণ প্রান্তিক অভিজ্ঞতাগুলো কোন পরকালের অস্তিত্বের প্রমাণ নয়, বরং এগুলোকে ভালমত ব্যাখ্যা করা যায় স্নায়ু-রসায়ন (neurochemistry), শরীরবিজ্ঞান (physiology) এবং মনোবিজ্ঞান (psychology) থেকে আহৃত জ্ঞানের সাহায্যে২৭।
চিত্রঃ মরণপ্রান্তিক অভিজ্ঞতার সময় অনেকেই টানেল বা সুরঙ্গ দেখে থাকেন ।
কেন মরণপ্রান্তিক অভিজ্ঞতাগুলোতে কেবলই টানেল বা সুরঙ্গ দেখা যায়? বিশ্বাসীরা বলেন, ওটি ইহজগত আর পরজগতের সংযোগ পথ। টানেলের পেছনে আলোর দিগন্ত আসলে পরজগতের প্রতীকী রূপ। কিন্তু তাহলে অবধারিতভাবে প্রশ্নের উদয় হয় - কেন কেবলই সুরঙ্গ? কেন কখনো দরজা নয় কিংবা নয় কোন বেহেস্তী কপাট কিংবা নয় গ্রীক মিথোলজীর আত্মা পাড়াপাড়ের সেই ‘রিভার স্ট্যায়ক্স’? এখানেই সামনে চলে আসে আধ্ম্যাতিকতার সাথে বিজ্ঞানের বিরোধের প্রশ্নটি। বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘সুরঙ্গ দর্শন’ আসলে মরনপ্রান্তিক কোন ব্যাপার নয়, নয় কোন অপার্থিব ইঙ্গিত। সেজন্যই মরনপ্রান্তিক অবস্থার বাইরেও মৃগীরোগ, মাইগ্রেনের ব্যাথার সময় অনেকে সুরঙ্গ দেখে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সুরঙ্গ দেখা যেতে পারে মস্তিস্ক যখন থাকে খুবই ক্লান্ত, শ্রান্ত, কিংবা কোন কাজে যখন চোখের উপর অত্যধিক চাপ পড়ে। আবার কখনো সুরঙ্গ দেখা যেতে পারে এলএসডি, সাইলোকিবিন কিংবা মেসকালিনের মত ড্রাগ-সেবনে। আসলে স্নায়ুজ-কল্লোল (neural noise) এবং অক্ষীয়-করটিকাল জরিপণের (retino-cortical mapping) সাহায্যে টানেলের মধ্য দিয়ে আঁধার থেকে আলোতে প্রবেশের আভিজ্ঞতাকে ব্যাখ্যা করা যায়২৮ । শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুজীববিজ্ঞানী জ্যাক কোয়ান (Jack Cowan) ১৯৮২ সালে পুরো প্রক্রিয়াটিকে একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে গানিতিক মডেলের সাহায্যে ব্যাখা করেছেন২৭ । তার মডেলের সাহায্যে কোয়ান দেখিয়েছেন, কর্টেক্সে ডোরা দাগ থাকলে তা আমাদের চোখে অনেকটা সর্পিল কুন্ডলী (spirals) আকারে রূপ নেবে। এগুলো আমরা ছোটবেলায় ‘দৃষ্টি বিভ্রমের’ (visual illusion) উদাহরণ হিসেবে দেখেছি। নীচে পাঠকদের জন্য এমনি একটি ছবি দেওয়া হল। ছবিটি দেখুন । বক্ররেখাগুলোকে সর্পিলাকার কুন্ডলী বলে বিভ্রম হবে। যদিও বাস্তবতা হল, বক্ররেখাগুলো একেকটি বৃত্ত।
চিত্রঃ বক্ররেখাগুলোকে সর্পিলাকার কুন্ডলীর টানেল বলে বিভ্রম হচ্ছে। যদিও বাস্তবতা হল, বক্ররেখাগুলো একেকটি বৃত্ত। প্রমাণ হিসেবে ওগুলোর উপর আঙ্গুল ঘুরিয়ে দেখতে পারেন।
মরণপ্রান্তিক অভিজ্ঞতা লাভের সময় প্রায় একই রকম বিভ্রম ঘটে মস্তিস্কের মধ্যেও। ড্রাগ সেবনের ফলে কিংবা অত্যদিক টেনশনে কিংবা অন্য কোন কারণে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে ভিজুয়াল কর্টেক্সের গতিপ্রকৃতি সততঃ বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে এ সময় ব্যক্তিরা নিজেদের অজান্তেই টানেল-সদৃশ প্যাটার্ণের দর্শন পেয়ে থাকেন। এটাই সুরঙ্গ-দর্শনের মূল কারণ। সুরঙ্গ দর্শনের এই স্নায়ুজ-কল্লোল এবং অক্ষীয়-করটিকাল জরিপণের গাণিতিক মডেলটির পরবর্তীতে আরো উন্নতি ঘটান পল ব্রেসলফ, সুসান ব্ল্যাকমোর এবং ট্রস্কিয়াঙ্কো এবং অন্যান্যরা২৮, ২৯।
চিত্রঃ স্নায়ুজ-কল্লোল এবং অক্ষীয়-করটিকাল জরিপণের সাহায্যে সুরংগ দর্শনের আভিজ্ঞতাকে ব্যাখ্যা করা যায়।
কাজেই বোঝা যাচ্ছে সুরঙ্গ-দর্শনের মাঝে অলৌকিক বা অপার্থিব কোন ব্যাপার নেই, নেই কোন পারলৌকিক রহস্য, যা আছে তা একেবারে নিরস, নিখাঁদ বিজ্ঞান।
এখন কথা হচ্ছে, টানেল দর্শনের অভিজ্ঞতা যদি মস্তিস্ক সঞ্জাত হয়ে থাকে তবে ঈশ্বর দর্শন, দিব্যদর্শন, কিংবা ওহিপ্রাপ্তির মত অন্যান্য ধর্মীয় কিংবা অপার্থিব অভিজ্ঞতাগুলোও কি আসলে স্রেফ মস্তিস্কসঞ্জাত কিংবা ইল্যুশন/ হ্যালুসিনেসশন? আর এ ব্যাপারগুলো পুরোটাই মস্তিস্কসঞ্জাত হয়ে থাকলে মস্তিস্কের মধ্যে কি এমন কোন বিশেষ জায়গা আছে, যেটি উদ্দীপ্ত করলে 'গায়েবী আওয়াজ' শুনবার মত কিংবা 'ঈশ্বর দর্শন' করার মত অপার্থিব অনুভূতির জন্ম হতে পারে? বিজ্ঞান কি বলে?
এ নিয়ে আগামী পর্বে লিখবার আগ্রহ রইল।
৫ম পর্ব পড়ুন...
ড. অভিজিৎ রায়, মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক; ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ ও ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে' গ্রন্থের লেখক। ইমেইল : [email protected]