গীতা দাসের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে
অনেক অনেক ধন্যবাদ গীতা দাসকে তার সুচিন্তিত এবং সুলিখিত মন্তব্যের জন্য। আমার লেখা নিয়ে প্রশংসাসূচক মন্তব্যগুলো নিয়ে আমি কিছু লিখছি না, ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া এ মুহূর্তে আমার বিশেষ করণীয় কিছু নেই। লেখার শেষে যে সমালোচনামূলক মন্তব্য তিনি করেছেন সেগুলো আমি মাথা পেতেই নিচ্ছি। তবে এ নিয়ে এ অধমের কিছু বলবার আছে। তবে আমার এ বক্তব্য গীতা দাসের অভিযোগের জবাব নয়, নয় আমার লেখার কোন সাফাই সওয়াল।
ইন্টারনেটে বিশেষতঃ মুক্তমনায় আমার লেখাগুলো আসলে আমার দিনপঞ্জির মত। মাঝে মধ্যেই আমার পুরোনো লেখাগুলোতে উল্লিখিত চিন্তাভাবনা, ধ্যান ধারণাগুলোকে আবার নতুন করে বিস্তৃত করি নতুন নতুন জ্ঞানের আলোকে। সে জন্যই পাঠকেরা আমার লেখার মধ্যে কখনো কখনো পুনরুক্তি খুঁজে পেতে পারেন। আমি নিত্য নতুন গল্প ফেঁদে দৈনিক, সাপ্তাহিক বা লিটল ম্যাগাজিনে লিখি না। আমার লেখালিখি আবর্তিত হয় সাধারণতঃ দর্শন এবং বিজ্ঞানের কোন বিষয়কে ঘিরে। আমার আত্মা নিয়ে সাম্প্রতিক সিরিজটির কথা বলা যায়। লেখাটির কিছু কিছু উদাহরণ আমি আমার ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’ বইটির প্রথম অধ্যায়ে উল্লেখ করেছিলাম। আসলে ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’-এর প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। প্রাণের উৎপত্তির পেছনে আত্মা নামক কোন অশরীরী সত্ত্বার প্রয়োজন ছিল না সেইটি খুব সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হয়েছিল অধ্যায়টিতে। আর আমার আত্মা নিয়ে সাম্প্রতিক সিরিজটিতে আত্মা নিয়ে ধ্যান ধারণার বিস্তৃতি দেখানো হয়েছে। গ্রীক সমাজে এবং প্রাচীন ভারত থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমিকভাবে এই ধারনার বিস্তৃতি এবং বিবর্তন দেখানো হয়েছে। সেই সাথে আত্মার অসারত্বকে আরো বিস্তৃতভাবে ও যুক্তিনিষ্ঠভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। রমন লাম্বার প্রসঙ্গ প্রাসঙ্গিকভাবেই এসেছে, পুনরুক্তি হিসেবে। কিন্তু সেই সাথে তো অনেক নতুন ধারণোও সিরিজটিতে নিয়ে এসেছি। যেমন, ‘হেফ্লিক লিমিট’, ‘হেলা কোষ’, ‘ক্রিপ্টোবায়োটিক স্টেট’ সহ বিভিন্ন কিছু সম্ভবত পাঠকদের জন্য নতুন। আমি এর আগে এগুলো বিস্তৃতভাবে কোথাও বলি নি। আবার, প্রথম পর্বটিতে আত্মার ধ্যানধারণার উদ্ভবের পেছনে জরথ্রুস্ট্র কিংবা সেন্ট অগাস্টিনের ধারণাগুলোও আগে এত বিস্তৃতভাবে উল্লেখ করা হয়নি, যেমনি ভাবে উল্লেখ করা হয়নি জাপানী, এবোরোজিন্স, মালয় দ্বিপবাসীদের মধ্যে বিরাজমান আত্মা সংক্রান্ত বিভিন্ন লোককথার উদ্ভবকে। ভবিষ্যতের পর্বগুলোতে আত্মা নিয়ে নানা ধরণের ‘বৈজ্ঞানিক’ পরীক্ষার উল্লেখ করা হবে, সেই সাথে আসবে মরণ-প্রান্তিক (নিয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্স) এবং দেহ বিচ্যুত অভিজ্ঞতার (আউট অব বডি এক্সপেরিয়েন্স) ব্যাখ্যা, যেগুলোকে সাধারণতঃ আত্মার অস্তিত্বের প্রমাণ হিসেবে গন্য হয়ে থাকে। আমার পিএইচডির কাজ হিসেবে মস্তিস্কের গঠনের ত্রিমাত্রিক মডেলিং-এর উপর যৎসামান্য কিছু কাজ করেছিলাম। সেগুলোকেও এই সিরিজে নিয়ে আসব – এবং তা হবে প্রথমবারের মতই। সেই সাথে থাকবে দ্বৈতসত্ত্বা বা Split Brain experience নিয়ে নানা ধরনের মজার মজার পরীক্ষালব্ধ ফলাফলের বর্ণনা। সম্ভবতঃ বাংলাভাষায় এত বিস্তৃতভাবে এভাবে কোথাও এগুলো লেখা হয়নি। সব মিলিয়ে সিরিজটি একটি আকর্ষনীয় সিরিজে পরিণত হবে বলেই আমার বিশ্বাস। এ বিষয়ে আপনার ধৈর্য এবং সঙ্গ কামনা করছি।
আমার লেখা নিয়ে আপনার আগ্রহ এবং মন্তব্যের জন্য আবারো অসংখ্য ধন্যবাদ।
অভিজিৎ রায়
জানুয়ারী ৬, ০৭