অন্তর্ঘাত
(রাজনৈতিক উপন্যাস)
আবুল হোসেন খোকন
[ সত্তর দশক বিশেষ করে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে সামরিক শাসনের পটভূমিকে ভিত্তি করে এই রাজনৈতিক উপন্যাসটির অবতারণা। অপ্রকাশিত এ পাণ্ডুলিপির অংশবিশেষ ধারাবাহিকভাবে মুক্তমনায় তুলে ধরা হলো। লেখক ]
পার্ট - ১২
বিনু ভাবছিল, বিপ্লবের জন্য উর্বরক্ষেত্র তৈরি করেছিল ওরা। আর কিছুটা সময় পেলেই সফল হতে পারতো। কিন্তু গভীর ষড়যন্ত্র এবং অন্তর্ঘাত সর্বনাশ করে দিয়েছে। এমন কি অনুকূল ভবিষ্যতটাকেও ওরা ধুলিস্যাৎ করে দিতে চাইছে। বিপ¬বের উল্টো ধারায় নিয়ে যেতে চাইছে সবকিছুকে। বিনু’র এখন বিশ্বাস হচ্ছে, ’৭১-এর সু-মহান জনযুদ্ধের পর বিনুরা যা করতে চেয়েছিল, তা আপাতত ব্যর্থ হয়েছে। বিনুরা তেমন কিছুই করে যেতে পারছে না। গভীর হতাশায় কুঁকরে গেল ও। সত্যিই কি কিছুই দিয়ে যেতে পারছে না ওরা? এতো আত্মত্যাগ, রক্তদান, জেল-জুলম-নির্যাতন ভোগ, জীবন বিসর্জন সবই কি বৃথা হয়ে গেল? আর ভাবতে পারছে না বিনু। মাথা নিচু করে কাঁপতে লাগলো ও।
বেশ অনেক্ষণ ডুকরে ডুকরে কাঁদলো। তারপর আস্তে আস্তে নিজের সত্ত্বায় ফিরে আসার চেষ্টা করলো। নিজেকে প্রশ্ন করলো, সত্যিই কি এতো আত্মত্যাগ বৃথা যেতে পারে? কেন যেন মনে হলো, এটা হতেই পারে না। আত্মত্যাগ বৃথা যেতে পারে না। এক একটি আত্মত্যাগ ভবিষ্যতের যাত্রাপথকে সঠিকভাবে চিনিয়ে দেয়, পথকে আরো সুগম করে দেয়। আত্মত্যাগে কারো ক্ষতি হয় ঠিক, কিন্তু সমষ্টির জন্য তা হয় পাথেয়। এই জায়গাটায়ই বিনু স্বস্তি পেতে চায়। হ্যাঁ, ও এবং ওর পার্টির কমরেডরা অনেক আত্মত্যাগ করেছে, কিন্তু প্রত্যাশিত সময়ে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হলেও চলার পথ, পথের শত্র“, ষড়যন্ত্র এবং অন্তর্ঘাতিদের চিনিয়ে দিতে পেরেছে। এ থেকে ভবিষ্যত লড়াকুদের পথ সুগম হবে। এ পথ এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের বিজয়কে নিষ্কণ্টক করবে। বিপ্লব হবে দীর্ঘজীবী। নিশ্চয়ই হবে, হতেই হবে।
বাইরে হঠাৎ ঝটপট শব্দে সম্বিত ফিরে পেল বিনু। পুরো স্বাভাবিক হবার আগেই দড়াম করে কাঠের দরজা খুলে গেল। সেখানে উদ্ভ্রান্ত দাঁড়িয়ে রিতু। অপেক্ষা না করে ভিতরে ঢুকে পড়লো এবং হরবর করে যা বললো তাতে থ হয়ে গেল বিনু। রিতু বললো, ওই চিহ্নিত রাজাকার-আলবদর কমাণ্ডাররা সব খবর পেয়ে গেছে। ওরা সাদা পোশাকের সশস্ত্র লোক ডেকে এনেছে। এলাকা ঘিরে ফেলেছে ওরা। পালাতে হবে। ‘এক মুহূর্ত বিলম্ব নয়’ বলে বিনুকে তুলে নেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লো রিতু। বিনু হাত তুলে বাধা দিলো। ডান হাতে স্টেন তুলে নিলো। বললো, পালাবার প্রশ্নই ওঠে না। তুমি চলে যাও। এক্ষুণি চলে যাও। আমি ওদের উচিত শিক্ষা দিচ্ছি।
কিন্তু ওর কথায় কান না দিয়ে আবারও এগিয়ে গেল রিতু। সঙ্গে সঙ্গে ডান হাতের শক্ত ঝটকায় সড়ে আসতে হলো। বিনু কঠোর দৃষ্টিতে রিতুর চোখে চোখ রেখে বললো, এটা আবেগের সময় নয়। আমাকে নিয়ে কোনভাবেই আত্মরক্ষা করতে পারবে না। আমি সুস্থ হলে কথা ছিল। আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করার অর্থ হবে, দু’জনেরই একসঙ্গে মৃত্যু। স্মরণ করো, শুধু দু’জন নয়। যাকে নিয়ে আগামী দিনের স্বপ্ন দেখছি, নতুন ভবিষ্যতের আশা করছি সেই স্বপ্ন এবং আশারও মৃত্যু হবে। তুমি কি চাও সব শেষ হয়ে যাক?
হতবিহ্বল রিতু মাথা নাড়লো। বিনু বললো, সুতরাং ভবিষ্যতকে বাঁচাতে হবে, তোমাকেও বাঁচার চেষ্টা করতে হবে। আর আমি! আমি তো মৃত্যুর ৯৯ ভাগ পূর্ণ করেই আছি। তাহলে ভাবনা কিসের? যাও, দ্রুত চলে যাও ওরা এখানে এগিয়ে আসার আগেই।
ঠিক তখনই বাইরে থেকে ’হল্ট’ বলে কেও চিৎকার করে উঠলো। সাদা পোশাকের লোকেরা হালকা মেশিনগান বাগিয়ে মাটির ঘরটির দিকে এগিয়ে আসছে। বিনু আবারও কঠোর চোখে রিতুর দিকে তাকালো। রিতু যেন সম্বিত ফিরে পেল। ওর দু’চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো জলের ধারা। বিনুর ইশারায় তারপরেও ঘুরে দাঁড়ালো রিতু, এবং এগিয়ে গেল আরেকটি দরজার দিকে। বিনু শেষ শব্দটি উচ্চারণ করলো, লং লিভ রেভ্যুলুশন। আমি কভার করছি রিতু, তুমি এগিয়ে যাও।
রিতু আস্তে করে দরজা খুলে বেরিয়ে যেতেই একঝাঁক গুলিবৃষ্টি হলো। বিনুর মনে হলো রিতুর ওপরই চালানো হয়েছে। কঠোর হয়ে উঠলো ওর চোয়াল। ঠিক তখনই ওর অবস্থান লক্ষ্য করে আরেক ঝাঁক বুলেট ছুটে এলো এবং পাশের জানালা-কবাট ছিটকে খুলে পড়লো। স্টেনের সেফটি ক্যাচে সিঙ্গল-সট ওপেন করে জানালার ফাঁক দিয়ে বাইরে লক্ষ্য করলো বিনু। ডানহাতে স্টেনের নল টার্গেটে স্থাপন করলো। নলের রেখায় পড়লো এগিয়ে আসতে থাকা এক পিস্তলধারীর মাথা। ট্রিগারে সঙ্গে সঙ্গে চাপ দিলো। প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে উঠলো বদ্ধ ঘর। অন্যদিকে লুটিয়ে পড়লো পিস্তলধারী। তার সঙ্গীরা কালবিলম্ব না করে মাটিতে শুয়ে পড়লো। এবার বিনু সেফটি ক্যাচে অটো-সট ওপেন করলো এবং সাদা পোশাকধারীদের ওপর এক পশলা বুলেট ছুঁড়ে দিলো। বেশ কয়েকজন সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। অবশ্য বাকি কয়েকজনের সাব-মেশিনগান থেকে ধেয়ে এলো ঝাঁকে ঝাঁকে বুলেট। এসব লুফে নিলো মাটির দেওয়াল। ভাঙা জানালায়ও কয়েকটি বুলেট আঘাত করলো। ঝটকায় জানালার পাশটা খুলে পড়লো। বিনুও সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা জবাব দিলো। মনে মনে বললো, পুরো তিনটি ম্যাগজিন ভর্তি বুলেট রয়েছে তোমাদের জন্য। সেইসঙ্গে চেষ্টা করলো বিছানা থেকে নেমে পড়তে। কিন্তু বুলেটবিদ্ধ পা সহায় হলো না। দেহও সায় দিলো না। উত্তেজনায় বিনু অবশ্য ভুলে গেল প্রচণ্ড যন্ত্রণার কথা। জানালা দিয়ে আবার এক ঝাঁক বুলেট ঢুকে দেওয়ালের আরেক পাশে আঘাত করলো। ভেঙে চুরমার করে দিলো একটা কাঁচে বাঁধানো গ্রামীণ ওয়ালম্যাট। বিনু আবার লক্ষ্য করলো বাইরে। হামলাকারীরা গা-ঢাকা দিয়েছে পাশের বাড়ি এবং গাছ-পালার আড়ালে। তবে একজনকে ওয়াকিটকি বের করে কথা বলতে দেখলো। লোকটির কপাল বরাবর টার্গেট করে ট্রিগার টিপে দিলো বিনু। সঙ্গে সঙ্গে কয়েক হাত দূরে ছিটকে পড়ে স্থির হয়ে গেল টার্গেট। আরেক পাশ থেকে আবারও এক ঝাঁক বুলেটের পাল্টা জবাব এলো বিনুর দিকে। তারপর স্থির হয়ে গেল। সুনসান হয়ে গেল সব। কিছু সময় কোন শব্দ থাকলো না গোলাগুলির।
মিনিটখানেক পর হ্যান্ড মাইক বেজে উঠলো বাইরে। কেও বললো, ‘বাড়ির চারদিক ঘিরে ফেলা হয়েছে। গুলি করবেন না, আত্মসমর্পন করুন’। কয়েক দফা একই কথা বলা হলো। নিরবতা ভঙ্গ করলো বিনু ওর স্টেন থেকে এক পশলা বুলেট ছুঁড়ে দিয়ে। জানিয়ে দিলো আত্মসমর্পনের কোন ইচ্ছে ওর নেই। লড়েই মরবে ও। এতেকরে সব চুপচাপ হয়ে গেল আবার। বিনু বুঝলো, নতুন কৌশলে এবার হামলা হবে। কিন্ত ওরপক্ষে কিছুই করার নেই। সুস্থ থাকলে দেখিয়ে দিতে পারতো কৌশল কাকে বলে। কিন্তু এখন ও অসহায়, নিরুপায়।
অন্তত পাঁচ মিনিট কেটে গেল। গ্রামবাসীর চিৎকার-আহাজারি এবং গুঞ্জন ছাড়া কোন সারাশব্দ নেই। বিনু একটু সড়ে এসে দেওয়ালে বালিশটি রাখলো। পিঠ এলিয়ে দিলো। তারপর স্টেনে নতুন আরেকটি ম্যাগজিন ভরে দরজা বরাবর টার্গেট করলো। অপেক্ষায় থাকলো শত্র“র। মনে মনে বললো, প্রতিক্রিয়াশীলচক্র ধ্বংস হোক, সাম্রাজ্যবাদের দোসররা ধ্বংস হোক, দালালরা নিপাত যাক, সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক, লং লীভ রেভ্যুলিউশন, জয় হোক মেহনতি মানুষের।
বাঁ-হাতের দেওয়াল ফুটো করে একটি নল বেরিয়ে এলো এবং লক্ষ্যহীনভাবে এক পশলা গুলি ছুঁড়লো। কোন জবাব দিলো না বিনু। ওদিকে গুলি ছুঁড়েই হামলাকারী নল বের করে নিয়েছে। কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করে বিনু ওই দেওয়াল লক্ষ্য করে পুরো এক ডজন বুলেট বৃষ্টি ছুঁড়লো। ওপাশে বেশ কয়েকজন আর্তচিৎকার করে উঠলো। ঠিক তখনই ডান দিক থেকে একইভাবে দেওয়াল ফুটো করে একটি এসএলআর-এর নল ঢুকে বুলেট নিক্ষেপ করলো বিনুর অনেকটা বাম দিকে। জবাবে ওই নল লক্ষ্য করে আরও এক ঝাঁক বুলেট ছুঁড়ে দিলো। এবারও আর্তচিৎকার করে উঠলো একজন। বিনুর পিছন দিকের দেওয়ালে ব্রাশ ফায়ার করলো শত্র“পক্ষ। কিন্তু পিছনটা শক্ত কাঠের আস্তরণে মাটির মোটা দেওয়াল থাকায় কোন কাজ হলো না। বিনু ভাবলো, এভাবে এলোপাথারি জবাব না দিয়ে প্রতিটি বুলেটের হিসেব করে শত্র“কে শায়েস্তা করতে হবে। সে কারণে জবাব দেওয়া বন্ধ করলো ও। অন্যদিকে শত্র“পক্ষও নিরব হলো আবার।
বিনু অনেক কষ্টে খাট থেকে গড়িয়ে পড়লো নিচে। প্রচণ্ড ব্যাথাকে পাত্তা না দিয়ে গড়িয়ে চলে এলো মূল দরজার কাছাকাছি। ফুটো দিয়ে দেখলো, জটলা করছে সাব-মেশিনগানধারী কয়েকজন। ওদের টার্গেট করে ট্রিগার টিপলো। তারপর আরও খানিকটা এগিয়ে স্টেনের ব্যারেল ভাল করে বাইরে তাক করলো। ওপাশ থেকে এক ঝাঁক বুলেট ছুটে এলো এবং এর অন্তত দুটি বিদ্ধ হলো বিনুর ব্যান্ডেজ বাঁধা হাতে। যন্ত্রণাকে পাত্তা না দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ওই লক্ষ্য বরারর ব্রাশ করলো। আর্তচিৎকার ছড়িয়ে পড়লো। পিছন দিক থেকে এক ঝাঁক বুলেট বিদ্ধ করলো বিনুকে। অনেক কষ্টে ব্যারেল ঘুরিয়ে পাল্টা জবাব দিলো ও। তখনই ম্যাগজিন শূন্য হয়ে গেল। রক্তে ভেসে যাচ্ছে বিনুর গোটা শরীর। চেষ্টা করলো স্টেনের ম্যাগজিন খুলে ফেলতে। একহাতে কষ্ট হলো। কিন্তু ম্যাগজিন রিলিজ করতে পারলো। অন্য ম্যাগজিনটি কোমরে রেখেছিল। সেটা বের করলো। তখনই ওর সামনে চাইনিজ টমিগান হাতে একজন এগিয়ে এলো এবং গোটা ম্যাগজিন শেষ করলো ওর বুক বরাবর। ছিন্নভিন্ন দেহ নিয়ে লুটিয়ে পড়তে বাধ্য হলো বিনু।
(বারো)
বিনুকে হত্যার দৃশ্যটি নিজের চোখে দেখলো রিতু। ও আরেক ঘরে অনেক শিশু-নারী-পুরুষের ভেতর। এরা সবাই একে অপরকে জড়িয়ে আহাজারি করছে। এদের মাঝেই রিতু। বিনুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পেছনের দরজা খুলে এক লাফে এ ঘরে ঢুকে পড়েছিল ও। ঠিক তখনই ওকে লক্ষ্য করে শত্র“পক্ষের এক ঝাঁক বুলেট ছুটে আসে। কিন্তু গুলিবিদ্ধ হবার আগেই ভেতরে চলে আসে ও। অল্পের জন্য রক্ষা পায় রিতু। কিন্তু এখন দেখতে পেলো কীভাবে ওর স্বামী বিনুকে একজন টমিগানধারী ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করলো, আর মাটিতে লুটিয়ে পড়লো বিনুর রক্তাক্ত দেহ।
শক্ত পাথর হয়ে কয়েক লহমা দাঁড়িয়ে থাকলো রিতু। তারপর বিদ্যুৎ গতিতে কোমর থেকে বের করে আনলো পিস্তল। ঘাতক টমিগানধারী কয়েক গজ দূরে সামনের উঠোনে দাঁত বের করে হাসছে। লোকটার খুলি বরাবর টার্গেক করলো রিতু, সঙ্গে সঙ্গে টিপে দিলো ট্রিগার। মনে হলো ঘাতকের মাথাটা বিস্ফোরিত হলো, মগজ ছড়িয়ে পড়লো সামনের উঠোন বরাবর। এরপর আস্তে করে দেহটি বিনুর পাশেই ধপাশ পড়ে দাপাতে লাগলো । এর কয়েক সেকেন্ড পরই ঝাঁক ঝাঁক বুলেট ছুটে এলো শত্র“পক্ষের তরফ থেকে। গুলিতে নারী-শিশুদের অনেকে হতাহত হলো। রিতু সামনে এগিয়ে এসে শত্র“দের লক্ষ্য করে কোন বিরতি না দিয়ে ট্রিগার টিপে চললো পাগলের মতো। বুলেটে ধরাশায়ী হলো প্রতিপক্ষের বেশ কয়েকজন। কিন্তু পাশ থেকে এক সাব-মেশিনগানধারীর ব্রাশ ফায়ারে রিতুর মুখমণ্ডল, গলা এবং পাজর এফার-ওফোর হয়ে গেল। লুটিয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত রিতু ঘাতকটিকে লক্ষ্য করে ট্রিগার টিপে যেতে থাকলো। দুটো বুলেট আঘাত করলো ঘাতককে। তার হৃদপিণ্ড এবং কানের এপাশ দিয়ে ঢুকে ওপাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল বুলেট।
তারপর সব শেষ। ইতস্তত কিছু গুলির শব্দ হলো এবং তারপর হঠাৎ করেই সব থেমে গেল। নেমে এলো গভীর নিরবতা।
(তেরো)
হাসপাতাল। সদ্য ভূমিষ্ট শিশুর সুতীক্ষ্ণ চিৎকারে বিদীর্ণ চারপাশ। শিশুটির পাশেই রক্তাক্ত মা রিতু। ওদের বেডের দু’পাশে অনেক মানুষ। এরমধ্যে ডাক্তার-নার্স ছাড়াও রয়েছে পুলিশ, গ্রামের নারী-পুরুষ এবং শিশুরা। সবাই নির্বাক। শুধু চিৎকার করে চলেছে একটি শিশু। চিৎকারের মর্মবাণীতে কিছু ছিল। ডাক্তার এগিয়ে এসে আলতো করে রিতুর মাথায় হাত রাখলো। এখনও প্রাণপ্রদীপ নিভে যায়নি ওর। হঠাৎ চোখের পাতা কেঁপে উঠলো। আস্তে আস্তে রিতুর চোখের পাতা সামান্য ফাঁক হলো। দৃষ্টি চলে গেল ক্রন্দনরত শিশুর দিকে। ঠোঁটটা একটু নড়লো, যেন হাসতে চেষ্টা করলো। তারপর গ্রাম্য শিশুদের ওপর স্থির হলো চোখের মনি। ওভাবে স্থির হয়েই থাকলো। ডাক্তার বললেন, শি ইজ নাউ ডেড।
সমাপ্ত
আবুল হোসেন খোকন : লেখক-সাংবাদিক, কলামিস্ট ও মানবাধিকার কর্মী।