৭ নভেম্বর এবং কর্নেল তাহের হত্যা
আবুল হোসেন খোকন
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর। অনেকে বলেন দিনটি ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি’র দিন, অনেকে বলেন ‘সেনা হত্যার’ দিন, আবার অনেকে বলেন ‘সিপাহী-জনতার গণঅভ্যুত্থান দিবস’। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, এইসব ‘অনেকেই’ তাদের দৃষ্টিকোণ বিশেষত শ্রেণীদৃষ্টিকোণ থেকে বলেন। যারা ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি’র দিন বলেন তারা এটা বলতেই পারেন। কারণ তাদের ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি’ মানেই জাতীয় শোষক-ধনিক এবং তাদের প্রভু সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে এই কথিত বিপ্লব ও সংহতি। আসলে প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে এদিনের আসল বিপ্লবকে হত্যা করা হয়েছিল। তাই প্রতিবিপ্লবীদের জন্য ৭ নভেম্বর দিনটি বিপ্লব ও তাদেরই সংহতির দিবস। সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ এবং তাদের গড়া কথিত রাজনৈতিক দলসহ ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধী-মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো এই দিনটিকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি’ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। হয়তো বর্তমান ‘আর্মি ব্যাকড’ ও ‘জামায়াতীদের রক্ষক’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারও এই নামেই দিবসটি পালন করবে। এর বাইরে যারা দিবসটিকে ‘সেনা হত্যার দিন’ হিসেবে বলে থাকেন তাদেরও যুক্তি আছে। তারা মনে করেন, দিনটিতে নির্বিচারে সেনা অফিসারদের হত্যা করা হয়েছে, তাই দিনটি ‘হত্যার’ দিন। তারা শ্রেণীগত বৈষম্যের বাইরে বিষয়টিকে দেখতে চান, শ্রেণীগত দিকটিকে সামনে আনতে চাননা। আর যাঁরা ‘সিপাহী-জনতার গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে দেখেন তাঁরা শ্রেণীগত দিকটিসহ প্রকৃত বিপ্লবের বিষয়টি ধারন করেন।
আজ থেকে ৩২ বছর আগের এই দিনটিতে, বা ’৭৫-এর ৭ নভেম্বরে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ভিতর থেকে যে ঘটনা ঘটেছিল তার প্রকৃত নায়ক ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার লে, কর্নেল (অব:) আবু তাহের বীর উত্তম। তিনিই এ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং তিনিই বন্দিদশা থেকে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেছিলেন, সেইসঙ্গে জিয়াকে ক্ষমতায়ও বসিয়েছিলেন সিপাহী-জনতার স্বার্থরক্ষা করার শর্তে। কিন্তু জিয়া ক্ষমতা হাতে পেয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-মৌলবাদ এবং দেশীয় ধনিক শ্রেণীর স্বার্থরক্ষায়। জিয়া বিশ্বাসঘাতকতা করেন ক্ষমতায় বসার শর্তের সঙ্গে, এবং ঘটনা এখানেই শেষ নয়। তিনি তার প্রাণরক্ষক তাহেরকে গ্রেফতার করেন, তারপর তার বিরুদ্ধে ৭ নভেম্বরের ঘটনার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দোষী করেন এবং এক প্রহসনের বিচার বসিয়ে তাঁকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেন। এরপর এই বিশ্বাসঘাতক জিয়া ৭ নভেম্বরের কৃতিত্ব (এবং নেতৃত্ব) নিজে নিয়ে নেন, দিনটিকে ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান’-এর বদলে কথিত বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে প্রচার করেন। আর এর সঙ্গে সঙ্গে সেনা ছাউনিগুলো থেকে বিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সিপাহী ও অফিসারদের আটক করে ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করিয়ে গুপ্ত হত্যাকাণ্ড ঘটাতে থাকেন। হাজার হাজার সিপাহী-অফিসারকে হত্যা করা হয় এভাবে। হাজার হাজার সিপাহী-অফিসার এবং জাসদ সংগঠকদের জেলখানায় আটক রেখে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। মাসের পর মাস ধরে চলতে থাকে এসব কাণ্ড। আরেকটি ব্যাপার হলো, যেহেতু এই হত্যাযজ্ঞের মূল পরিকল্পনায় ছিল সাম্রাজ্যবাদ সেহেতু ৭ নভেম্বরে সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান প্রক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের লোকেরাও প্রতিবিপ্লবের জন্য তৎপর হয়ে উঠেছিল। এ তৎপরতা সেনা ছাউনি এবং বে-সামরিক উভয় পর্যায়েই পরিচালিত হয়। সেনা ছাউনিতে তৎপর ছিল হীনস্বার্থান্বেষী অফিসাররা এবং বে-সামরিক পর্যায়ে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধী-মৌলবাদী-চরম প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীসমূহ। পরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত জিয়াউর রহমানের সঙ্গে একাকার হয়ে এরা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে থাকে।
আজকের প্রেক্ষাপটে এই প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ যে কর্নেল তাহের কোন্ লক্ষ্যকে সামনে রেখে ৭ নভেম্বরে সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান পরিকল্পনা করেছিলেন? যদিও আজ সামরিক বাহিনীর বিষয়ে দাবি করা হচ্ছে যে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এক নয়। কিন্তু পাকিস্তানি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পাল্টানোর জন্যই ৭ নভেম্বর প্রয়োজন হয়েছিল, এমন কি ওই বৈশিষ্ট্য থেকে বেরিয়ে আসতেই ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজন হয়েছিল, দেশকে স্বাধীন করার প্রয়োজন হয়েছিল। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে প্রাপ্ত এই বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন ছিল একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিমূলক, জনকল্যাণমুখী, জনগণসম্পৃক্ত গণবাহিনী। মোটেই পাকিস্তানের মতো ক্যাণ্টনমেণ্টভিত্তিক, জনসম্পৃক্ততাহীন বা জনবিচ্ছিন্ন, জবাবদিহিতাহীন, অগণতান্ত্রিক বা অফিসারদের হুকুমের দাসভিত্তিক সেনাবাহিনী কাম্য ছিল না। জনগণের জন্য সত্যিকারের সামরিক বাহিনী বা গণবাহিনীর জন্যই কর্নেল তাহের ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়া মাত্রই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আর তখনই প্রমাণ হয়েগিয়েছিল যে এখানে কারা পাকিস্তানি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য রক্ষা করতে চায়। অর্থাৎ নেতৃত্ব থেকে পাকিস্তানি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পক্ষেই অবস্থান দেখা যায়। এমনকি এ প্রশ্নে তাহের যখন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেও কথা বলেন, তখন তিনিও তাহেরের সঙ্গে একমত হতে ব্যর্থ হন। ফলে তাহেরকে চাকরী থেকে সরে আসতে হয় এবং বিকল্প পথে লক্ষ্য অর্জনের চিন্তা করতে হয়। এখানে উল্লেখ করতেই হয় যে ক্যাণ্টনমেণ্টভিত্তিক, জনসম্পৃক্ততাহীন বা জনবিচ্ছিন্ন, জবাবদিহিতাহীন, অগণতান্ত্রিক বা অফিসারদের হুকুমের দাসভিত্তিক সেনাবাহিনী না হয়ে তখন যদি আমাদের সেনাবাহিনী জনগণের গণবাহিনী হতো তাহলে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে নিহত হতে হতো না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত হতে হতো না, দেশে গণতন্ত্র বিপন্ন হতো না, সামরিক শাসন আসতো না এবং মুক্তিযুদ্ধের শত্র“রা ক্ষমতা দখল করতে পারতো না, মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত ’৭২-এর সংবিধানও ক্ষত-বিক্ষত হতো না।
কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার গণঅভ্যুত্থান প্রচেষ্টার কারণ এখানেই। তিনি পাকিস্তানি আদলের সেনাবাহিনীকে সত্যিকারের গণবাহিনীতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। শ্রেণী-বৈষম্যের ব্যবস্থাকে ভেঙে শ্রেণীহীন ব্যবস্থাপনা কায়েম করতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনানির্ভর শোষণমুক্ত, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। আর সেজন্যই বৃহত্তর সৈনিকগোষ্ঠীর সঙ্গে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সম্মিলনে সিপাহী-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সফল পরিণতি ঘটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিপক্ষে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তি, তাদের এদেশীয় এজেণ্ট ও দালালগোষ্ঠী, ’৭১-এর পরাজিত যুদ্ধাপরাধী চক্র এবং স্বার্থান্বেষী মহলগুলো ছিল অনেক বেশী সতর্ক ও সংগঠিত। যে কারণে ৭ নভেম্বরে সিপাহী-জনতার গণঅভ্যুত্থান বিজয়ী হতে বা সফল পরিণতি লাভ করতে পারেনি। এতে বিজয়ী হয়েছে প্রতিশক্তি এবং এর ফলশ্র“তিতে প্রাণ দিতে হয়েছে কর্নেল তাহেরকে, প্রাণ দিতে হয়েছে আরও বহু মানুষকে। আসলে ’৭১-এর পর আরও এক গণহত্যাযজ্ঞের মধ্যদিয়ে নিধন করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে এবং সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে প্রতিশক্তিকে। ফলে আজও পর্যন্ত আমাদের সেনাবাহিনী পূর্বসূরীদের আদল বা বৈশিষ্ট্য থেকে বেরিয়ে এসে আলাদা কিছু হয়েছে এমন বলার সময় আসেনি।
সিপাহী-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মর্মকথা
আমাদের উপমহাদেশে সামরিক বাহিনীর জন্ম হয়েছিল ব্রিটিশদের উপনিবেশের স্বার্থে। এই বাহিনীই পরে ভেঙে ভারতীয় এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হয়। এরপর এই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী থেকে হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বাহিনীর নাম পরিবর্তিত হলেও এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বা আদল কিন্তু থেকে যায় সেই গোড়াতেই। অর্থাৎ এই বাহিনী থেকে যায় দেশের মালিক জনগণের বদলে শোষক বা ধনিক গোষ্ঠীর নিজস্ব স্বার্থরক্ষাকারী লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে, এবং শোষকগোষ্ঠী যখন সাম্রাজ্যবাদী মহাশত্র“র তাবেদার তখন এই বাহিনীও হয় একই বৈশিষ্ট্যের। ফলে যখনই সাম্রাজ্যবাদ এবং তাদের তাবেদারদের স্বার্থে আঘাত লাগে, জনগণ শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তখন এই বাহিনী দেশরক্ষার নামে সাম্রাজ্যবাদী তাবেদারদের রক্ষার জন্য নেমে পড়ে। আবার এই বাহিনীর নিজস্ব আদল হলো অফিসাররা সব প্রভু, এবং সিপাহী বা ছোটরা সব দাস। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই দাসরাই অনেক বেশী সংখ্যাগুরু, আর প্রভুরা গুটি কয়েক বা সংখ্যালঘু। তারপরেও সংখ্যালঘুদের ক্রিতদাস হিসেবে চলতে হয় এই সংখ্যাগুরুদের। এসব কারণেই মূলত এই উপমহাদেশে (বিশেষ করে ব্রিটিশ শাসনামলে) অনেকবারই সিপাহী বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছে, যা গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস হয়ে আছে। কেননা এই ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো না ঘটলে হয়তো ব্রিটিশদের বিতাড়নে বেশী বেগ পেতে হতো।
বাংলাদেশে কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বাধীন ‘সিপাহী-জনতার গণঅভ্যুত্থান’ দর্শনে বিশ্বাসীদের ভিতরে যে ধারণাটি কাজ করেছে তার মূল কথা হলো মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানি আদলের প্রচলিত এই বাহিনী মানেই বুর্জোয়া বা ধনিক শ্রেণীর রক্ষক। অথচ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতি ছিল গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং শোষণমুক্তি বা সমাজতন্ত্র। এই শোষণমুক্তির জন্য অবশ্যই শোষক শ্রেণীর শক্তিভিতকে ভেঙে ফেলা প্রয়োজন। আর এ রকম একটি বিপ্লবী কাজের জন্য প্রয়োজন এমন একটি গণঅভ্যুত্থান যে অভ্যুত্থানের নায়ক হবে শোষিত-বঞ্চিত বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এবং শোষিত-বঞ্চিত বৃহত্তর সিপাহীগোষ্ঠী। এই দুইয়ের মিলনেই সম্ভব মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশিত শোষণমুক্ত বাংলাদেশ কায়েম করা। যেহেতু ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পরও এই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি এবং রাষ্ট্র-সমাজ-লক্ষ্য-আদর্শের বৈশিষ্ট্যসমূহ মুক্তিযুদ্ধের আগের অবস্থায়ই থেকে গিয়েছিল সেহেতু শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য জরুরি হয়ে উঠেছিল এই সিপাহী-জনতার গণঅভ্যুত্থানের। এজন্যই সিপাহী এবং জনতার সম্মিলন ঘটানো এবং সেইসঙ্গে সম্মিলিত গণঅভ্যুত্থান প্রয়োজন হয়েছিল। এই কাজটির জন্যই তখন সামরিক পর্যায়ে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা এবং বে-সামরিক পর্যায়ে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিপ্লবী গণবাহিনী ও জাসদ তৎপরতা চালিয়েছিল। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ এবং তাদের এদেশীয় তাবেদারচক্র-ধনিকগোষ্ঠী-’৭১-এর যুদ্ধাপরাদীশক্তিসহ অন্যান্য গণবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর সংহতি বা সম্মিলিত প্রতিবিপ্লবের সাফল্যেই কার্যত ব্যর্থ হয় সিপাহী-জনতার ওই গণঅভ্যুত্থান। ফলে ৭ নভেম্বর পরবর্তী সফল হয় প্রতিবিপ্লব ও প্রতিবিপ্লবীদের সংহতি।
শেষ কথা
সেই ৭ নভেম্বরের প্রত্যাশা যদি পূরণ হতো তাহলে বাংলাদেশ আজ অন্য বাংলাদেশ হতো। বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে থাকতো ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের দর্শনে। এই বাংলাদেশে জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী জনগণের বাহিনী ছাড়া কখনই সাম্রাজ্যবাদ এবং তাদের প্রতিভূদের ক্রীড়নক হিসেবে কোন শক্তি থাকতো না, দেশে যুদ্ধাপরাধী বা মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির অস্তিত্ব থাকতো না। এমনকি দেশে কথিত ওয়ান ইলেভেন ঘটিয়ে সাম্রাজ্যবাদ-বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ চক্রের জয়জয়াকার ঘটানোর অবকাশ থাকতো না, সামরিক শাসকদের সৃষ্ট বিএনপি-জামায়াত জোটকে নানা কৌশলে গণরোষ থেকে রক্ষা করে ফের রাজনীতি করার ব্যবস্থা করে দেওয়ার সুযোগও ঘটতো না। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষত-বিক্ষত করে বৃহত্তর জনগণের প্লাটফর্মকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টাও সম্ভব ছিল না। সুতরাং এখানে ৭ নভেম্বরের আসল প্রত্যাশাগুলো পূরণ হয়নি। আর পূরণ হয়নি বলেই শাষিত-বঞ্চিত বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর লড়াইও শেষ হয়নি। একই কারণে কর্নেল তাহের এবং তাঁর ৭ নভেম্বরও শেষ হয়নি। শেষ হবে না যতোদিন না বিপ্লবের বিজয় আসবে।
আবুল হোসেন খোকন: সাংবাদিক, কলামিস্ট ও মানবাধিকার কর্মী।