বাংলাদেশে নির্বাচন বানচালের রোডম্যাপ?
আবুল হোসেন খোকন
বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রধান যথাক্রমে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবং জেনারেল জিয়াপত্নী খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে জেলখানায় বন্দি করা হয়েছে। ফলে দুই দল থেকেই সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, তারা তাদের দলীয় প্রধানদের ছাড়া নির্বাচনও করবে না, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোন আলোচনায়ও বসবে না। লক্ষ্য করলে যে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে ওঠে তা হলোÑ বাংলাদেশের বর্তমান ‘অনির্বাচিত-অগণতান্ত্রিক-অসাংবিধানিক’ সরকার যেন এটা জেনেই পদক্ষেপ নিয়েছে। অর্থাৎ তারা জানে হাসিনা-খালেদাকে বন্দি করলে এই দল দুটি নির্বাচনে অংশ নেবে না, এবং এই সূত্র ধরে আগামী ২০০৮ সালের শেষে ঘোষিত নির্বাচন অনুষ্ঠানের রোডম্যাপ থেকে সরে আসা যাবে। সেইসঙ্গে এই দল দুটিকে ক্ষত-বিক্ষত করতে দুই নেত্রীর অনুপস্থিতিতে কিছু সরকারি দালাল (প্রকৃতপক্ষে সামরিক বাহিনীর কব্জায় আটকেপড়া নেতা) কে যেমন বিএনপির মান্নান ভূঁইয়া গং এবং আওয়ামী লীগের আমু-রাজ্জাক-তোফায়ের-সুরঞ্জিত-মুকুল-সাইযিদ গংদের ব্যবহার করা দারুণ সহজ হবে।
নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করলেও পরে তাদের মাঝ থেকেই এমন একটা ধারণা তুলে ধরা হয় যে, এই সময়ের মধ্যে ভোটার পরিচয়পত্র ও জাতীয় আইডি কার্ড করা সম্ভব নাও হতে পারে। আর এটা না হলে রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন করা যাবে না। কিন্তু এ কথা বলে নির্বাচনী রোডম্যাপ পরিবর্তন বা রোডম্যাপ বাতিল করলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হতে পারে এমন আশঙ্কা রয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আশঙ্কামুক্ত হতে দুইনেত্রীকে মাইনাস করার ফর্মূলাটিই বেছে নেওয়া হয়েছে বলে মনে হয়। কারণ পরিকল্পনাকারীদের জানা যে, দুইনেত্রীকে বন্দি রাখা হলে তাদের দল নির্বাচন বয়কটের পথ বেছে নেবে এবং তখন বলা যাবে, দেশের প্রধান বা বড় দুই দলকে বাদ দিয়ে কিভাবে নির্বাচন হয়? এরকম নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না, তাই নির্বাচনী রোডম্যাপ থেকে সরে আসা ছাড়া সরকারের পক্ষে বিকল্প পথ ছিল না। আর এভাবেই সামরিক বাহিনীনির্ভর এই ফখরুদ্দিন সরকারের পক্ষে বেরিয়ে আসে অনির্দিষ্টকাল ক্ষমতায় থাকার উপায়। আবার সামরিক বাহিনীর পক্ষেও বেরিয়ে আসে এই রাবার স্ট্যাম্প সরকার দিয়ে সফলভাবে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে যাবার উপায়। এছাড়া সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনী শক্তির জন্যও বহুজাতিক লুটেরা গোষ্ঠীসহ বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ গংদের মাধ্যমে বাংলাদেশের এই বে-আইনি পরিমণ্ডলের সুযোগে অবাধ লুটপাট ও আগ্রাসন চালানোরও মোক্ষম সুযোগ।
লক্ষ্য করা বিষয় হলো, গত ১১ জানুয়ারি ২০০৭ বর্তমান ফখরুদ্দিন সরকার সংবিধান অনুযায়ী ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচন করে নির্বাচিত রাজনৈতিক শক্তির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের শপথ নিলেও সে শপথ ভঙ্গ হয়ে গেছে গত ১২ এপ্রিলে। কারণ তারা নির্বাচন করেনি, ক্ষমতা হস্তান্তরও করেনি। ফলে শুধু শপথই ভঙ্গ হয়নি, সংবিধানও ভঙ্গ করা হয়েছে। ফলে এ সরকারকে এখন একটি বে-আইনি সরকার বলে মনে করা হয়। এদিকে ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৭ থেকে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের ৫ বছরের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। সংবিধান অনুযায়ী, ৫ বছর মেয়াদ পূরণের পর নতুন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের কথা। কিন্তু সংসদ না থাকায় নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেরও উপায় নেই। ফলে এখন ইয়াজউদ্দিনকেই দায়িত্ব পালন করে যেতে বলা হয়েছে। এতেকরে কোন রকমে দায়িত্ব পালন হলেও রাষ্ট্রপতির পদটিও জটিল অবস্থায় পড়ে গেছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রের প্রধানও মেয়াদের বাইরে নিয়মবহির্ভূতভাবে ক্ষমতায়, সরকারও নিয়মবহির্ভূতভাবে ক্ষমতায়। কোন দেশে যদি রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকার অবৈধ হয়ে পড়ে তখন সে রাষ্ট্র বা দেশের নিরাপত্তজনীত অবস্থা কোন্ পর্যায়ে দাঁড়ায় তা বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না।
এদিকে বাংলাদেশে কার্যত এখন অতীতের সামরিক শাসনের মতো শাসন চলছে। এখানে গভীর রাতের অন্ধকারে মামলা হচ্ছে, ভোররাতে গ্রফতার হচ্ছে, অসময়ে কোর্ট বসিয়ে ‘যা ইচ্ছা তাই’ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে, সাদা পোশাকের লোকেরা ’৭১-এর স্টাইলে তৎপরতা চালাচ্ছে (আবার তারা বলছেও যে ‘আমরা পাকিস্তানি সৈন্য না’)। এইসব তৎপরতার মধ্যদিয়ে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধী, মৌলবাদী জঙ্গি এবং রাজকার-আলবদর-আলশামসদের রাজকীয় নিরাপত্তা তৈরি করা হচ্ছে।
এদিকে গত ১৭ আগস্ট বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে পাঁচ শতাধিক রিমোট কন্ট্রোল বোমা হামলার দু’বছর পূর্তির দিনে বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রে মৌলবাদী জঙ্গি নেটওয়ার্কের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিবরণ প্রকাশ হয়েছিল। এই বিবরণ তুলে ধরা হয় জঙ্গি তৎপরতা নির্মূল অভিযানের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা, সিআইডি, র্যাব গোয়েন্দা ইউনিট প্রধানের বরাত দিয়ে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে ভিত্তিতে সংবাদপত্রে প্রকাশিত এই বিবরণের একটি শিরোনাম ছিল ‘জঙ্গিরা নির্মূল হয়নি, সংগঠিত হচ্ছে’ [ভোরের কাগজ, ১৭ আগস্ট ২০০৭]। এই বিবরণের ইন্ট্রোতে বলা হয়, ‘জঙ্গি নেটওয়ার্ক এখনও ভাঙা যায়নি। বরং জঙ্গিরা দেশের প্রচলিত আইন ও শাসন ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নতুন করে সংগঠিত হয়ে নানাভাবে বোমা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। জোট সরকারের সময় জঙ্গিরা সিরিজ বোমা হামলার পর আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছিল। এখন তারা আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, আগে দেশের অন্য স্থানে জঙ্গি তৎপরতা বেশি লক্ষণীয় হলেও এখন জঙ্গিরা খোদ রাজধানীতেই একাধিক ঘাঁটি গেড়ে তৎপরতা চালাচ্ছে। জঙ্গিরা আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ ও মাইন আকৃতির বোমা তৈরি করছে বলেও প্রমাণ মিলতে শুরু করেছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, জঙ্গিদের নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার লক্ষণ ভাল নয় এবং যদি তারা সফল হয় তবে পরিস্থিতি হবে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে ভয়াবহ।’
আরেকটি জায়গায় গোয়েন্দা সূত্রগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘জঙ্গি এই সংগঠনটির (জাদিদ আল কায়েদা) অর্থের অন্যতম জোগানদাতা সৌদি আরবের জেদ্দার বাসিন্দা শায়খ আবদুর রহমানের ঘনিষ্ট বন্ধু আলী অবদুল গত মার্চ মাসে ঢাকা সফর করে ফিরে গেছেন নিজ দেশে। মার্চের শুরুর দিকে তিনি ঢাকা আসেন। গোয়েন্দা নজরদারি এড়িয়ে ৩ দিন তিনি ঢাকায় অবস্থান করেন।’ ‘জেএমবির সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা আবদুর রহমানসহ ১২ বোমাবাজ এখন সৌদি আরবের রিয়াদে আল খারিজ এলাকায় অবস্থান করছেন।’
র্যাব, সিআইডিসহ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দেয়া এই তথ্য বা বিবরণ নিয়ে বড় রকমের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ তাদের কাছ থেকে তো এমন নেতিবাচক তথ্য আশা করার নয়। তারা কি করে এই আতঙ্কজনক খবর দেয়? তারা, বিশেষ করে দেশে যৌথবাহিনীর এতো তৎপরতার পরেও কি করে জঙ্গিদের এমন বাড় বাড়ে? সত্যিই বাড় বাড়ছে? নাকি বাড়ানোর ব্যবস্থামতো কাজ হচ্ছে? নাকি বিশেষ কোন উদ্দেশ্যে এমন একটা আতঙ্কজনক খবর ছাড়া হয়েছে? আরেকটি খবর প্রায় সব জাতীয় দৈনিকেই প্রকাশ হয়েছে। এখানে ১৩ আগস্ট প্রকাশিত ‘সংবাদ’-এর খবরটি উদ্ধৃত করা হলো। ‘সংবাদ’-এর শিরোনাম ছিল, ‘ধর্মীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবেঃ মাসুদ’। গুরুতর অপরাধ দমন জাতীয় সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক লে. জেনারেল মাসুদ উদ্দীন চৌধুরী ১২ আগস্ট ‘ডেভেলপিং রুলস অফ এনগেজমেণ্ট অ্যান্ড কম্ব্যাটিং টেরোরিজম’ শীর্ষক এক সেমিনার উদ্বোধন করার পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ টিকে থাকতে পারবে না। এমনকি ধর্মীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে জঙ্গিবাদ দমনে সরকার আমেরিকার সহযোগিতা নেবে।’ তার এই বক্তব্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে শেষের কথায়, ‘প্রয়োজনে জঙ্গিবাদ দমনে সরকার আমেরিকার সহযোগিতা নেবে।’ প্রশ্ন হলো, তাহলে কি সবকিছু কোন বিশেষ রোডম্যাপ অনুযায়ী অগ্রসর হচ্ছে? এমনিতেই বিশ্বায়ন বা বাজারি অর্থনীতি দিয়ে বাংলাদেশকে দখলে নেওয়ার অনেক কাজ ইতিমধ্যেই এগিয়ে গেছে। তারপর মানুষের মধ্যে এই সন্দেহ যে, একদিন মার্কিন বাহিনী এদেশ সরাসরি দখল করে নেবে। এখন গোয়েন্দা সূত্রগুলোর উপযাজক হয়ে নেতিবাচক খবর বা তথ্য প্রদান, এবং জেনারেল মাসুদের বক্তব্যে কেমন যেন একটা বিশেষ যোগসূত্র এবং বিশেষ একটা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সেই গন্ধটা কি মানুষের সন্দেহের অনুকূলেই?
সবাই জানি সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তি নানা সূতো খুঁজে বেড়ায়, সূতো তৈরি করার জন্য তাদের এজেণ্ট বা তাবেদারদের কাজে লাগায়, তারা নিজেরাসহ তাদের তাবেদার সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের কোন কোন মৌলবাদী দেশ এবং এ অঞ্চলের দেশ পাকিস্তানকে দিয়ে জঙ্গি মৌলবাদের উত্থান ঘটায়। এইসব জঙ্গি মৌলবাদী শক্তির স্বার্থে নগদ অর্থ, সামরিক গোয়েন্দা সহায়তাসহ সামরিক সাজ-সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়। আর এই কাজের জন্য কোন দেশের সরকার যদি নিজেই এগিয়ে আসেÑ তাহলে তো কথাই নেই। সবেমিলে চমৎকার ক্ষেত্র গড়ার কাজ হয়। আফগানিস্তান, ইরাক, যুগোস্লাভিয়ার মতো দেশগুলো এর জ্বলন্ত উদাহরণ। আফগানিস্তানের জঙ্গি মৌলবাদীদের পাকিস্তানে সর্বাত্মক সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে, এমনকি অভিযোগ আছেÑ তালেবানদের সঙ্গে তালেবানী পোশাক পড়ে মার্কিন ও পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সদস্যরা একযোগে আফগান সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়েছিল। এরপর তারা নজিবুল্লাহ সরকারকে হটিয়ে, তালেবান মৌলবাদীদের ক্ষমতায় বসিয়ে নজিবুল্লাহদের রাস্তায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আবার ঠিক ‘মৌলবাদ’ ‘মৌলবাদ’ অভিযোগ তুলেই মার্কিন সামরিক বাহিনী সরাসরি হামলা চালিয়ে তালেবানদের হটায় এবং ক্ষমতা কব্জা করে। বর্তমান হামিদ কারজাই সরকার মানেই হলো মার্কিন তাবেদার সরকার। আর এইসব করা হয়েছে অর্থনৈতিক-সামরিক ট্র্যাটেজিক স্বার্থেই। আফগানিস্তানে এখন ইঙ্গো-মার্কিন সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করা হয়েছে। তাহলে বাংলাদেশও কি আফগানিস্তান হবে?
লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে ১৯৭৫-এর রাজনৈতিক পটের সামরিকী পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে কার্যত বাংলাদেশের মৌলিক দর্শনের পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে। বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের দর্শন বাঙালি জাতীয়তাবাদ-গণতন্ত্র-ধর্মনিরপেক্ষতা-সমাজতন্ত্র থেকে পুরো উল্টো ধারায় দাঁড় করানোর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার কাজ চলে আসছে। চলছে মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে ধ্বংস করে রাজাকার-আলবদর-আলশামস-জামাতিদের সুপ্রতিষ্ঠিতকরণের কাজ। এ এজেন্ডা এখন চলমান। তার প্রমাণ বিগত ৫ বছর বিএনপি-জামাত জোট দুর্নীতি-হত্যাসহ মানবতাবিরোধী ভয়াবহ অপতৎপরতার মাধ্যমে একদিকে বাংলাদেশকে ধ্বংস করার কাজ পরিচালনা করেছে, আরেকদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানকে নির্মূল করার কাজ করেছে। এখনও সেই কাজটিই চলছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিকে সর্বশক্তি দিয়ে নির্মূল করা হচ্ছে। আর জঙ্গি মৌলবাদীদের গডফাদার জামাতিদের রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপদে। তাদের বিরুদ্ধে সরকার, যৌথবাহিনী, গোয়েন্দা বিভাগÑ এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও কোন দোষ খুঁজে পাচ্ছে না! সুতরাং তারা (মৌলবাদী জঙ্গিরা) বাড়ছে, বাড়ার সব ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে, এভাবে সর্বস্তরে তাদের অস্তিত্ব শক্তিশালী করতে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ দেশের মহাসর্বনাশ ঘটানোর জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করা হচ্ছে।
তাই আজ যখন জেনারেল মাসুদ কথা বলেন, গোয়েন্দা সূত্রগুলো উপযাজক হয়ে আতঙ্কজনক তথ্য দেন তখন সন্দেহ, উৎকণ্ঠা না জেগে পারে না। এমনিতেই বাতাসে নানা উদ্বেগজনক কথাবার্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থেকে সুবিধা করতে পারছে না বা তাদের দিয়ে হয়তো কারও সুবিধা হচ্ছে না, তারা মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন, অতএব এখন কোন একটা ইস্যু চাই যা দিয়ে সুবিধার জায়গাটা পাকা করা যায় বা ষোলকলা পূর্ণ করা যায়। এমন সব পরিকল্পনাই বাস্তবায়নের কাজ চলছে কিনা কে বলবে? খালেদা জিয়াকে না ধরে ঠুনকো মামলায় কেন শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হলো, তার গ্রেফতারের পর গোটা দেশ বিক্ষোভে জ্বলে ওঠার মুহূর্তে কেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমান সে গুড়ে বালি ছিটিয়ে আন্দোলনের বদলে আইনি লড়াইয়ের কথা বলে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করলেন, আর এক ব্যারিস্টার উপদেষ্টা কেন ঘটনা দেখে হতাশ হয়ে বললেন, ‘শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের পর যে প্রতিবাদ হচ্ছে তা একেবারেই সীমিত’? উপদেষ্টা কেন ‘অসীমিত’ বা ‘বড় ঘটনা’ চাচ্ছিলেন বা সে রকম উস্কানী দিচ্ছিলেন তা প্রশ্নবোধক। এ সমস্ত ঘটনা কীসের ইঙ্গিত বা মেসেজ তা দেশপ্রেমিক মাত্রই বোঝা জরুরি। শেখ হাসিনা গ্রেফতারের পর দেশে কোন বিশৃঙ্খলা না ঘটায় কার্যত কারও বিশেষ উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যাওয়ায় এখন আবার যে ইঙ্গিত, বিশেষ করে জঙ্গি হামলার আশঙ্কার কথা এবং জেনারেল মাসুদের কথাÑ এগুলো কেবল নতুন নতুন উৎকণ্ঠাকেই বাড়িয়ে তুলছে।
৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭
আবুল হোসেন খোকনঃ সাংবাদিক, কলামিস্ট ও মানবাধিকার কর্মী