সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রাষ্ট্র এবং দেশে সেনাপতির কর্মরহস্য
সোনা কান্তি বড়ুয়া
সম্প্রতি আমেরিকার সাপ্তাহিক ২৯শে অক্টোবরের নিউজ উইকের সাংবাদিকেরা পাকিস্তানকে ”বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রাষ্ঠ্র হিসেবে চিহ্নিত” করেছেন। কারন আজ বলতে গেলে পাকিস্তানের সমাজ জীবনের ও ব্যক্তি জীবনের সর্বত্র তালেবান ও আলকায়দা ধর্মকে বিষিয়ে দিয়ে নিজেদের আধিপত্যের শেখড় রাজনীতির গভীরে নিয়ে গেছে। আইনের শাসনের মাধ্যমে অহিংসা, সত্য, ঈমান, শৃঙ্খলা, পরিশুদ্ধ মন ও মৈত্রীকে মানব সমাজে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল যে কোন ধর্মের উদ্দেশ্য। আজ পাকিস্তানের ইতিহাসের মালিক সামরিক সেনা প্রধানগণ। অতীতের সেনাপ্রধানগণ সহ বর্তমান জেনারেল পারভেজ মুশারফ মিলে মিশে পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সমূহ ধ্বংস করে দেশটাকে লুটে পুটে খেতে মিলিটারি মার্কা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। ড: আয়েশা সিদ্দিকি তিনি তাঁর লেখা পাকিস্তানের ”মিলিটারি আই.এন.সি” শীর্ষক বইতে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। দুবাইতে সহস্র আরব্য দিন রজনী অতিক্রম করে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো আটবছর পর পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তনের দিনে মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছিলেন। লক্ষ লক্ষ রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দুর্নীতির বিষবৃক্ষে পরিপূর্ণ পাকিস্তানের রাজনীতির অঙ্গন এবং বীভৎস সর্বভূক সন্ত্রাস হ’ল পাকি রাজনীতির অভিশাপ। ধর্মকে নিয়ে পাকিস্ত—ানের সামরিক শাসকগণ সহ তালেবান ও আলকায়দা অমানবিক রাজনীতির জন্য হিংসায় উন্মত্ত হয়ে অপাপবিদ্ধ সাধারণ মানুষদেরকে বোমা মেরে দুঃখের বিষাদসিন্ধু রচনা করে চলেছে। করাচীর বেনজিরের অভ্যর্থনা মিছিলের উপর বোমা হামলা সুশীল সমাজকে করে তুলেছে অশান্ত আর ক্ষুব্ধ। পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিকগণ মানুষ হয়ে মানুষের অধিকার থেকে বঞ্চিত করলে হিংসা এবং সন্ত্রাস আরো বাড়বে। মানবঅধিকারের ভাষা পাকিস্তানের শাসকগণ অনেক দিন আগে ভুলে গিয়েছে। এইভাবে পাকিস্তানের নষ্ট রাজনীতির অমানবিক সন্ত্রাসীদের দর্প আর কতদিন চলবে?
বাংলাদেশের জনৈক অভিজ্ঞ লেখকের ভাষায়, “গান্ধী গেছেন গুলির মধ্যে, জিন্না গেলেন মারা, নাজীমুদ্দীন হইছেন রাজা, হিন্দুর দফা সারা, মোমিন মুসলমান। মুখে আল্লারসুল সবে বল। (কোরাস)।” এখন আমাদের প্রশ্ন, পাকিস্তানের চলমান রজিনীতির আলোকে বাংলাদেশের আগামী ভোটের কি হবে? সম্প্রতি বাংলাদেশের সেনাপ্রধান মইন উ. আহমদ ফ্লোরিডায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলেছেন, “ আগামী চৌদ্দ মাসের মধ্যে বাংলাদেশে অনেক কিছু পরিবর্তন হওয়া সম্ভব।” তিনি একটা গল্প বলেছেন এবং উক্ত গল্পের অবতারনায় বাংলাদেশের অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তন প্রসঙ্গে কি ইঙ্গিত করেছেন, তাহা ’সময়ই’ বলবে। বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে ২৪ বছর ছিল এবং উক্ত ২৪ বছরের রক্তাক্ত অভিজ্ঞতার ইতিহাস আজ ও আমাদের জাতীয় জীবনের সর্বত্র বিরাজমান। ১৯৭১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে ইসলামী ছাত্র সংঘের (শিবিরের) সভায় জাতীয় কুলাঙ্গার ও কাপুরুষ গোলাম আজম পাকিস্তানের জাতির পিতা মুহম্মদ আলি জিন্নাহ’র পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম বন্ধ করে দিয়ে ইসলামি কায়দা কানুন শিখে মুক্তিবাহিনী সহ অমুসলমান হত্যা করে পাকিস্তান মার্কা মুসলমান হতে দন্ডাদেশ জারী করে ছিলেন।
গত বছর ”জামায়াতের আশ্রয়ে জে এমবি’র উত্তান: (ইত্তেফাক, ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৭) র্যাবের সাফল্যকে ম্লান করেছে একটি মহল” শিরোনামে খবরের জন্য দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার আজ ও জামায়াতের বিরুদ্ধে (১)সন্ত্রাস, (২) পরিকল্পিত হত্যা, (৩) বুদ্ধিজীবি হত্যা (৪) নারী ধর্ষন (৫) সংখ্যালঘু নিধন সহ নানা দুর্নীতির বিচারের জন্য মতিউর রহমান নিযামী সহ রাজাকারদের গ্রেফতার করা হয়নি কেন? বাংলাদেশ সরকার কি জামায়াত ও রাজাকারদের অধীনে? পাকিস্তানের পতনের যুগে এবং জামায়াতের পূনরুত্থান কালে অস্থির ঘটনা চাঞ্চল্যের দ্বারা চঞ্চল মুক্তিবাহিনী ও বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রবল আধিপত্যের প্রেক্ষাপটে গণ প্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশের সংবিধানের জন্ম আধুনিক গণতান্ত্রিক অধিকারের মেনিফিষ্টো হিসেবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করেছেন বলে কি দেশের রাষ্ঠ্রক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী, পুত্র, কন্যা সহ বন্ধু বান্ধব সবাইকে মেরে ফেলবে? বাঙালি জাতিতে পিতৃ বংশ ধ্বংসকারী অকৃতজ্ঞ কাপুরুষেরা রাষ্ঠ্রক্ষমতা দখল করেছে বলে ”বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদছে।” জঙ্গিবাদ ও স্বার্ধান্ধ রাজনীতির খেলা থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে হবে। হযরত শাহজালালের মাজারে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর বোমা হামলার পর তিন বছর হয়ে গেছে, ওই বোমা হামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে কি? ইসলামি ”জঙ্গিদের নবজাগরণ (ভোরের কাগজ, ১৮ আগষ্ট, ২০০৭);” দেশের জন্য অমঙ্গল জেনে ও প্রিন্সিপ্যাল ষ্টাফ অফিসার লে: জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ”বাংলাদেশে ধর্মীয় জঙ্গিদের কোন ঘাটি নেই (সম্পাদকীয়, ভোরের কাগজ, ১২ই আগষ্ট, ২০০৭)। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা না বলে ’স্থপতি’ বলার নির্দেশ দেয় মৌলবাদী নেতা যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিযামী।
পাকিস্তানের বর্তমান রাজনীতির অভিজ্ঞতায় ইউরোপীয়ান এনলাইটেনমেন্টের আলোকে আলোকিত বাংলাদেশ রচনা করতে জামায়াতের অন্ধকার শক্তির অবসানই একমাত্র পথ। জামায়াতের কাছে বাংলাদেশ রাষ্ঠ্রশক্তির মস্তক অবনত কেন? ২৬শে মার্চ থেকে বাঙালির ঘরে ঘরে রাজাকার ও আলবদরের হিংস্র নরদেহধারী দানবেরা হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছিল। জামায়াতই ১৯৭১ এর শহীদ বুদ্ধিজীবিদেরকে সহ লক্ষ লক্ষ বাঙালি হত্যা করেছে। আল - বদরের হাই কমান্ড ছিল (১) মতিউর রহমান নিযামী (২) আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ সহ আর ও অনেকের নাম ও ঠিকানা বর্তমান সরকার জেনে ও গ্রেফতার না করে উক্ত হত্যাকারীদেরকে সালাম দিচ্ছেন। জানা গেছে সেনাপ্রধান দেশের বিশিষ্ঠ ব্যক্তিদের সাথে প্রথম যে বৈঠক করেন তাতে মজলিশে সুরার সদস্য ব্যারিষ্টার আবদুর রাজ্জাক ও সাবেক সচীব শাহ হান্নানের ছোটভাই শাহ হালিম এবং বি এন পির জামায়াত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন (যায় যায় দিন, ১৬ই জুন ২০০৭) এবং ফ্লোরিডায় সেনাপ্রধান মইন উ. আহমদ সাহেবের গল্পের সারকথা কি দেশের ”ঘর ঘর কা কাহিনী?”
লেখক এস বড়–য়া খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা এবং প্রবাসী কলামিষ্ঠ ।
পাকি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রাষ্ট্র এবং দেশে সেনাপতির কর্মরহস্য