সিঁথির সিঁদুর মুছে ভোটের ফটোর আদেশ কেন?

সোনা কান্তি বড়ুয়



সম্প্রতি দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় ২০০৮ সালের ১০ই জানুয়ারি সংখ্যায় “ভোটার হতে আসা হিন্দু নারীদের সিঁথির সিঁদুর মুছে ছবি তোলা” শীর্ষক সংবাদ পড়ে বিশ্বের শান্তিকামী জনতা সহ আমরা বিস্মিত ও জঙ্গীবাদ উত্থানে কিংকর্ত্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছি। আমাদের জন্মস্থান চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানায় উক্ত অঘটনঘঠন পটীয়সী কর্মটি জনতার চোখের সামনে ঘটে গেল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে কি তালেবানেরা রাজাকারদের সাথে মিলে আমাদের হাত থেকে লুট করে নিয়ে গেল? অথচ কবি শামসুর রাহমানের কবিতায় আমরা পড়েছি, “তুমি আসবে বলে হে স্বধীনতা, / সখিনা বিবির কপাল ভাঙলো,/ সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল হরিদাসীর।” ধর্মের নামে মানুষের অধিকার পদদলিত করার ষড়যন্ত্র ধর্ম ব্যবসায়ী জামাতের চেলাদের কাজ। অনেক হিন্দু নারী প্রাচীন বাংলায় জামাতদের মা হয়ে জন্ম গ্রহন করেছিলেন। মাতৃহত্যা মহাপাপ ও অহিংসা পরম শান্তিময় কর্ম।


ইতিহাস কথা কও। মইত্যা রাজাকার খালেদা জিয়ার প্রভাবশালী মন্ত্রী ছিল। অথচ মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরে ভাত নেই এবং পরনের কাপড় নেই। এই আমাদের জাতীয় ট্রাজেডী। জনতা সহ মুক্তিযোদ্ধাদের অনন্ত দুঃখের জন্য দায়ী জেঃ জিয়া। মুক্তিযোদ্ধাদের গায়ের চামড়া দিয়ে রাজাকারগণ ডুগডুগি বানায় বলে আমাদের স্বাধীনতার কবি শামসুর রাহমান দুঃখভারাক্রান্ত মনে কবিতা লিখে দেশে অদ্ভুত অন্ধকার যুগের মর্মবেদনা রচনা করে গেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা কে লুট করে নিয়ে যায় যুদ্ধাপরাধী জামাতের দল, রাজাকার - রাজাকার করে সকলে। দেশ জুড়ে এই নাম ছড়িয়ে গিয়েছিল, সকলের আতঙ্ক - মইত্যা রাজাকার। সামরিক শাসকদের অসংখ্য দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক সমস্যায় দেশ জর্জ্জরিত। আজ বাংলাদেশ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভোটের জন্য অগ্নিগর্ভ। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করলেন, আর সামরিক শাসকগণ দেশকে রাজনৈতিক অন্ধকারে ডুবিয়ে আমাদের স্বাধীনতাকে অতল তলে তলিয়ে দিলেন। ভাঙা যতো সহজ গড়া অসম্ভব কঠিন কাজ। জেল খানায় দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ সহ চার জাতীয় নেতাকে খুন করার পর ও দেশের সামরিক বাহিনীর লজ্জা শরমের বালাই নেই। সিংহাসনে বসার জন্যে জে: জিয়া ও জে: মঞ্জুরের সাথে রক্তাক্ত যুদ্ধ হয় অথচ পাকিস্তান আমলে বায়ান্নোর পর ও কোন বাঙালি সেনাকর্মকর্তা বা সদস্য বাংলা ভাষা আন্দোলনের জন্য বিদ্রোহ ঘোষণা করার রেকর্ড নাই কেন? বাংলাদেশের জে: জিয়া ও জে: এরশাদ গণতন্ত্রকে সমূলে ধ্বংস করে ধর্মভিত্তিক অমানবিক রাজনীতি রচনা করে জামাত রাজত্বের অদ্ভুত সন্ত্রাসি যুগের সূত্রপাত হ’ল।


জে: জিয়াউর রহমান ও জেঃ এরশাদ আজকের স্বাধীনতা বিরোধী জামাত ও যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ঠ্রক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দায়ী। দুর্নীতি বধ নাটকে সেনাশাসক গণ রাষ্ঠ্রদ্রোহী। জেনারেল জিয়া এবং জে: এরশাদের যথাযোগ্য বিচার না হবার কারনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করার নামে নিজেরাই অসংখ্য দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক সমস্যা স্থাপন করে বাংলাদেশের বিজয়কে রাজাকারগণ দখল করে ফেলেছে। বাংলাদেশের রাজনীতি ও ইসলামের সাম্য-মৈত্রী -স্বাধীনতার সুখের স্মৃতি ও যে নিষ্ঠুর হয় তা কি আমরা ভুলে গেছি? সামরিক শাসকগণ বেলজ্জা বেহায়া জামাত ও রাজাকারদেরকে প্রধানমন্ত্রীর সিংহাসনে বসায় কি করে? দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বেঁচে থাকলে তো সেনা শাসকগণের “দুর্নীতি বধ” নাটকের মঞ্চ তৈরী হয় না। মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা “মেঘনাদ বধ” কাব্যের কথা সেনাশাসকদের হয়তো মনে আছে। “হে লক্ষপতি, ভুলিলে কেমনে জনম তব কোন মহাকুলে।” জেনারেল জিয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়ে রাজাকার নিয়ে রাজত্ব করে গেল।


একাত্তরের মহাজাতক ও স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। দেশের স্বাধীনতায় মহাশান্তি মহাপ্রেমের ঝর্ণাধারায় উদ্ভাসিত “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।” ধর্মভিত্তিক জামাত মার্কা বাংলাদেশ বানাতে বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে সবে ধন নীল মনি জেনারেল জিয়া তাদেরকে প্রবাসে বাংলাদেশ দূতাবাসের আমলা পদে অভিষিক্ত করার পর রাজাকারদিগকে দেশের প্রধানমন্ত্রী সহ রাষ্ট্রক্ষমতায় সাহেব বিবি গোলাম নিযুক্ত করে গেলেন। জে: জিয়া প্রেসিডেন্ট হয়ে শুরু হয়ে গেল বাংলাদেশের অদ্ভুত এক অন্ধকার যুগ। বঙ্গবন্ধু জেঃ জিয়াকে নিজের ছেলের মতো øেহ করতেন। বিশ্বাসঘাতক নানাভাবে নানারূপে বিরাজমান। জনতার প্রশ্ন: জেঃ জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যাযজ্ঞের সাথে জড়িত ছিল কি? জেঃ জিয়ার কর্মকান্ডই উক্ত প্রশ্নের জন্য উত্তরদায়ী। যেমন কর্ম তেমন ফল। সংখ্যা গরিষ্ঠের ধর্মকে রাজনীতির মধ্যমণি হিসাবে ব্যবহার করেছে জেনারেল জিয়া এবং জে: এরশাদ। ধর্মনিরপেক্ষতাকে সমূলে ধ্বংস করে রাজনীতির সিংহাসন অধিকার করে দিনের পর দিন জোট সরকার উন্মত্ত তান্ডবলীলায় বাংলাদেশের মানবতার অনিষ্ঠ সাধন করে জনতার দরবারে ধর্মের বিষবৃক্ষ বপন করে।


জে: জিয়ার ৬ বছরের রাজত্ব এবং খালেদা জিয়ার ১৫ বছরের রাজত্ব পাকিস্তানের সেনাশাসকদের বুদ্ধিজ্ঞানকে ও হার মানায়। কারন পাকিস্তানের ইতিহাসে কোন সেনাশাসকের পতœী আজ ও উক্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারে নি। জে: জিয়ার বংশকে ভবিষ্যতে রাজার বংশ করার ইচ্ছা যুদ্ধাপরাধীদের মনে আছে। জে: জিয়ার বি এন পি দেশের নষ্ঠদের সহ রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের অভয়ারাণ্য।


দেশের জনতা উক্ত নেতাদের ভণ্ডামি দেখতে দেখতে গোটা প্রশাসনের প্রতি বিশ্বাস ওঠে গেছে এবং জনতা হাঁড়ে হাঁড়ে টের পেয়েছেন এই জগতে টাকার খেলা। টাকার বস্তায় শক্তির খেলা। রাজনীতির টাকা চট্টগ্রামে লালদীঘি ময়দানের বলিখেলার মতো কুস্তি খেলে। বাংলাদেশের বিজয় সংবিধানে নেই, রাষ্ঠ্রক্ষমতায় নেই, বাংলাদেশের স্বাধীনতার চাবি ঢুকেছে সেনাশাসকদের ধর্মভিত্তিক রাজনীতির রসের হাঁড়িতে। আমাদের স্বাধীনতার সিংহাসনে বসে রাষ্ঠ্রক্ষমতার ফায়দা লুটে পুটে খাচ্ছে জামাত এবং যুদ্ধাপরাধীগণ। রাজনৈতিক নেতাদেরকে মেরে সেনাশাসকের পতœী খালেদা জিয়া তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন সেনাকুঞ্জের ক্যান্টনম্যানস্থ ৬নং মইনুল রোডের সেনামার্কা রাজকীয় বাসার বদৌলতে। বঙ্গভবনের চেয়ে ও সেনামার্কা বাসার কি শক্তি তা খালেদা জিয়াই বাংলাদেশের উজ্জ্বল দৃষ্ঠান্ত। সেনাশাসকদের অমানবিক দর্প নেতাদের অধিকার খর্ব করে। দেশ এবং জাতি সব জেনে ও সেনাশাসকদের বন্দুকের গুলির যাদু টোনা দিয়ে জনতার হাত বেঁধে রেখেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাতীয় জিহাদ ঘোষনা করার মাহেন্দ্রক্ষণ জানুয়ারী মাস থেকে শুরু করতে হবে।


সেনা মার্কা বাসা আজ ও বাংলাদেশ শাসন করে এবং এর অভিনব স্বাক্ষর আমাদের জাতীয় মহিয়সী মহিলা শেখ হাসিনার কারাবাস। সেনাশাসকগণ কি বানরের পিঠাভাগের রাজনীতি করেন? আপনাদের চেয়ে ভাল নেতা তো গাছে ধরে না। শেখ হাসিনা হচ্ছে বঞ্ছনা, খালেদা জিয়া লোভ। লোভের সাথে বঞ্ছনাকে একই পাল্লায় মাপা তো বুদ্ধিমান রাজনীতির কাজ নয়। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষনাতে জামাত হাউ মাউ করে কেঁদে কেঁদে কুম্ভীরাশ্র“ বর্ষন করে যাচ্ছে। ইউরোপীয়ান এনলাইটেনমেন্টের (আলোকিত যুগসন্ধিক্ষণে) পরম শত্র“ ছিল খৃষ্ঠান পাদরী (ধর্ম গুরু) সম্প্রদায় সহ পোপ ঠিক তেমনি আজকের বাংলাদেশের এনলাইটেনমেন্ট এবং স্বাধীনতার পরম শত্র“ জামাত সহ মতিউর রহমান নিযামী গ্যাং। জাগো, বাঙালি জাগো। ভয়কে আমাদের জয় করতে হবে। না, রাজনীতির অন্ধকার দেশে শেষ হয় নি। উৎপীড়িত জনতা ও ছাত্র সমাজ সহ না-পাওয়া মুক্তিযোদ্ধরা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করবে।