রক্ত দিয়ে পেলাম শালার এমন স্বাধীনতা!!!
আদনান সৈয়দ
ভাবতেই অবাক লাগছে যে দুদফায় পত্রিকার প্রথম পাতায় এবং সম্পাদকীয় কলামে ক্ষমা চাওয়ার পরও প্রথম আলো পত্রিকার মত প্রথম শ্রেণীর একটি পত্রিকার সম্পাদককে বায়তুল মোকাররম যেয়ে তথাকথিত ইসলামের নামে ধ্বজাধারীদের হত ধরে ক্ষমা চাইতে হয়েছে। এর চয়ে অপমান আর লজ্জার আর কী হতে পারে? আরো অবাক হয়ে হচ্ছি দেখে যে বাংলাদেশের প্রধান প্রধান পত্রিকাগুলোর বাঘা বাঘা সম্পাদক মহাশয়রাও এই একি পথে কার্টুন পাপমোচনের রথযাত্রায় শরীক হয়েছিলেন। বাংলাদেশে মৌলবাদীদের উথ্বানের দৃশ্যটি যে একরকম আফগানিস্থানকেও হার মানিয়ে দিচ্ছে সে খবরটি এখন বোধ করি আর চোখে আঙুল ুদিয়ে বলে দিতে হবে না।
কি ছিল সেই আলোচিত কার্টুনটিতে? মোহাম্মদ(সাঃ)কে অবমাননা করা যায় এমন কোন ম্যাসেজ কী সত্যি ছিল সেখানে? জানি ,সবাই এক বাক্যেই বলবেন না। তাহলে এই কার্টুনটাকে নিয়ে এরকম তাজ্জব ঘটনা বাংলাদেশে ঘটে গেল কেন? ইসলামের ঝান্ডাটি হাতে নিয়ে আজ যারা রাজপথ গরম করছেন সত্যিকার অর্থেই তাদের পরিচয়টা কী? এই মৌলানা ফতোয়াবাজদের গায়ে এত জোর আসে কোথা থেকে? প্রথম আলো যদি একটা ভুল করেই থাকে(একটি পত্রিকা ভূল করতেই পারে) তাহলে সে ভুলের জন্য ক্ষমা পত্রিকাটি অবশ্যই চাইতে পারে। উলেখ্য যে প্রথম আলো কতৃপক্ষ পত্রিকার প্রথম পাতায় এবং সম্পাদকীয় কলামে সে ভুলের জন্য দুদুবার ক্ষমাও চেয়েছেন। তারপরও একটা রাষ্ট্রে সংবিধানসম্মত একটা সরকার থাকা সত্বেও কেন প্রথম আলো পত্রিকার সম্পদককে বায়তুল মোকারমে যেতে হল এবং সেখানে খতিবের হাত ধরে আবার ক্ষমা চেতে হল? জানি, বাংলাদেশের মত একটি পশ্চাদপদ সমাজে এভাবে অন্যায়ের কাছে নাকে খত দাওয়া হয়তো তেমন কোন গর্হিত অপরাধ নয় কিন্তু আন্তর্জতিক পাড়ায় কিছু উগ্রবাদী ধর্মীয় নেতাদের এই উন্মাদনার চিত্রটি যে কত হীন এবং স্থূলভাবেই চিত্রায়িত হবে সে বিষয়টি কেউ একবার ভেবে দেখেছেন কী?
জাতি হিশেবে বাঙালির এক গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। বাংলাদেশে ইসলাম এসেছে সুফিবাদের কাধে ভর করে, ভালোবাসার বাণী নিয়ে। তাই বাংলাদেশের ইসলাম সৌদি আরবের ইসলাম নয় অথবা আফগানিস্তানের ইসলাম নয়। বাংলাদেশের মানুষ যথার্ত ধর্মপ্রাণ সহজ সাধারণ মানুষ। তারা হাতে তজবি নিয়ে জুয়া খেলে না অথবা ইসলামের নামে ভন্ডামীতে বিশ্বাসী করতে চায় না। এদের পেটে ভাত নেই, গায়ে কাপড় নেই। তারপরও এই ধর্মপ্রান মুসলমানরা আধপেট কচু-ঘেটু খেয়ে রোজা রাখছেন, কাধের গামছা ফসলের খেতে বিছিয়ে সেখানে নামাজ পড়ছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এই সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের নিয়েই একশ্রেনীর ধর্মবাজরা রাজনীতি করার নীল নক্সা আঁকছেন। এই সুবিধাভোগী ধর্মবাজরাই ইফতারীরর নামে রাজভোঁজে ব্যাস্ত থাকছেন, হজ্জ করে এসে আল-হাজ্জ নাম লগিয়ে মন্ত্রী-এমপি হচ্ছেন, লোক দেখানের জন্য লক্ষ টাকায় কোরবানির গরু কিনছেন। ধর্মই যখন তাদের একমাত্র মুখোস তখন এই কপট ধর্মের মুখসধারীরাই ধর্মকে সামনে রেখে নিজেদের আখের গোচাচ্ছেন। এরাই বায়তুল মোকাররমের মসজিদে বড় বড় ওয়াজ করছেন, পত্রিকার অফিস শুধু বন্ধই নয় পত্রিকার সম্পাদকদের গ্রেফতারের দাবী জানাচ্ছেন আবার এদের কুটিল উস্কানিতেই উগ্রবাদী মোল্লারা পত্রিকার অফিস আক্রমন করার সাহস পাচ্ছে!! একটি স্বাধীন দেশে এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে?
এবার কার্টুনিষ্ট আরিফ আহমদকে নিয়ে দুটি কথা? ভাবাই যায় না এই ছোট বাচ্চা ছেলেটিকে আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের কোন উকিল-মোক্তার কেউ এগিয়ে আসেন নি বা আসার চেষ্টাটাও করেন নি? ধীক্কার জানাই আমাদের সেইসব তথাকথিত উদার নীতির বুদ্ধিজীবিদের যারা শুধু বুদ্ধীটা জীবি করেছেন তাদের নিজেদের স্বার্থটাকেই প্রমোট করতে।ভাবতেই অবাক লাগছে স্বাধীনতা ৩৬ বছর পরও আমরা এখনো পাকিস্তানীদের হাত থেকে এক বিন্দুমাত্র মুক্ত হতে পারে নি। কে জানে হয়তো কিছুদিন বাদে বাংলাদেশেও আফগানিস্তান ষ্টাইলেই কোকের বোতলের মাপে দাড়ি রাখা বাধ্যতামূক করা হবে। এখন শুধুমাত্র সে দিনটিরই অপেক্ষায়।
রক্ত দিয়ে পেলাম শালার এমন স্বাধীনতা!!!!!!