চার অশ্বারোহী
অনুবাদক: অগ্নি অধিরূঢ়
পূর্ব প্রকাশের পর....
ক্রিস্টোফার হিচেনস: তরুণ বয়সে এই তালিকা নিজের সাথে রাখতাম। এ বিষয়ে একজন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যের সাথে নিয়মিত আলোচনা হত। অবশ্য তাদের পল্লবগ্রাহী জ্ঞান সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার সাথে সাথে বিলীন হয়ে গেছে। অবশ্য ওদের অনেকে অশেষ ত্যাগ স্বীকার করেছে, জীবনে তাদের অনেক ভুগতে হয়েছে। জীবনের পথে নিরন্তর লড়াই করতে হয়েছে। তোমরা জান, তাদের স্বপ্ন এক আদর্শ সমাজকে ঘিরে। তাদের প্রধান উৎসধারা মরে গেছে; কিন্তু কেউ কেউ আছেন যারা হতাশ হয়ে যাননি। আদর্শকে ধরে রেখেছেন, পরিত্যাগ করেননি। কারণ এটাও এক ধরণের স্বীকারোক্তির সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে সম্পৃক্ত। কিন্তু হ্যাঁ, এটা অবশ্যই যে, তার মানে, যদি আমাকে কেউ বলে -তুমি সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা তাদেরকে কিভাবে বলবে। তুমি কি জাননা একথা বললে ওরা কাঁদতে শুরু করবে। তোমার কথা ওদের হৃদয়ে আঘাত দেবে। মোনো নিজেকে উপহাসের পাত্র করে তোলো না। অযথা অযৌক্তিক কথা বোলো না। অবশ্য এ ধরণের একই রকম একাধিক ঘটনার কথা আমি শুনেছি।
ড্যানিয়েল ডেনেট: লোকজন আমার কথার ভঙ্গিকে যখন রূঢ়, বিদ্বেষপূর্ণ, আক্রমণাত্মক এবং ভয়ংকরভাবে উস্কানীমূলক বলে, তখন আমার মনে হয়.... আচ্ছা আমি যদি তেল রাজনীতি কিংবা ঔষধ শিল্প নিয়ে কথা বলি তাহলেও কি তাকে রূঢ় বলা হবে? এটা কি সীমানা ছাড়িয়ে যাবে, না।
রিচার্ড ডকিন্স: অবশ্যই তা হবে না।
ড্যানিয়েল ডেনেট: আমি মনে করি, তেল রাজনীতি বা ঔষধ শিল্পের মতো একইরকমভাবে ধর্মকেও যেন মূল্যায়ন করা হয়। আমি ঔষধ কোম্পানীর বিরুদ্ধে নই, তাদের কিছু কাজ আমার মোটেও পছন্দ নয়। আমি তাদের এইসব নীতির বিরোধীতা করি। আর ধর্মকেও আমি তাদের সাথে একই পংক্তিতে রাখতে চাই।
ক্রিস্টোফার হিচেনস: ট্যাক্স না দেবার অভিযোগ সহ।
ড্যানিয়েল ডেনেট: হ্যাঁ।
রিচার্ড ডকিন্স: হ্যাঁ।
ক্রিস্টোফার হিচেনস: অথবা রাষ্ট্রের ভর্তুকীর কথাও এর সাথে সংযুক্ত করা যেতেপারে।
রিচার্ড ডকিন্স: অন্যান্য সব বিষয়ের চাইতে রাষ্ট্রের কাছ থেকে ধর্ম যে সব সুবিধা নিয়ে থাকে আমি সেইসব বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। যে কোনভাবে হোক আমরা ধর্ম বিশ্বাস করি বা না করি বিষয়টা এখন পরিস্কার। কিছু ঐতিহাসিক পরম্পরা ধর্মের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করেছে। কারণ একটি উগ্র আক্রমণাত্মক আচরণ ধর্ম গ্রহণ করার পক্ষে সবসময় থেকেছে।
ড্যানিয়েল ডেনেট: আর সবচেয়ে বেশি মজা পেয়েছি তা হল... প্রথমে আমি রাগে উন্মত্ত হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরে মজা পেয়েছি। তাদের বিশ্বাসকে আক্রমণ করে এমন অবিশ্বাসীদের একটি তালিকা করা হয়েছে এটা জেনে আমি সত্যিই খুব মজা পেয়েছি।
রিচার্ড ডকিন্স: কিন্তু কিভাবে?
ড্যানিয়েল ডেনেট: আসল ঘটনা হল ধর্মে অবিশ্বাসী ব্যক্তিরাই আমার বইয়ের সবচাইতে ভয়ংকর সমালোচনা লিখেছে। তারা ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের অনুভূতিকে আঘাত করতে ভয় পেয়েছে। আতঙ্কগ্রস্থ হয়েছে। তারা আমাকে খুব খারাপভাবে শাস্তি দিয়েছে। যতটা কোন গভীর বিশ্বাসীও আমাকে দিত না।
রিচার্ড ডকিন্স: একেবারে ঠিক আমার অভিজ্ঞতা। হ্যাঁ, ঠিক একই অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে।
স্যাম হ্যারিস: তাহলে তোমাদের মধ্যে একজন এই দৃষ্টিভঙ্গিটাকে করুণা করছো? আমার মতে এটা এক রকমের সংশোধনবাদী ধারণা। এর প্রয়োজন আছে। তুমি জান মানুষকে তাদের পৌরাণিক বিশ্বাসের মধ্যে নিরাপদে রেখে দেয়া উচিত।
রিচার্ড ডকিন্স: আচ্ছা?
স্যাম হ্যারিস: আমার মনে হয় সেই প্রশ্নের একটা উত্তর আছে। ভিন্ন একটি বিষয়ে আমাদের অজ্ঞতা দূর করবে। অথবা অন্তত: আমার ভিন্ন মতাদর্শকে খানিকটা আলোকিত করে তুলবে। এ বিষয়ে... আমার ধারণা, আমি আমার ধনুকের তেমন ক্ষতি না করেই বলতে পারি, আমি এখনও আধ্যাত্মিক, অতিন্দ্রীয় ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে যাচ্ছি। অবিশ্বাসীদের আতঙ্ক যে আমি বুঝতে পারি, তা অবশ্য আমি স্বীকার করি। আমি জানি বিভিন্ন ধরণের দুর্লভ অভিজ্ঞতা আপনাদের হয়েছে। অবশ্য এ কথা শুধুমাত্র বিবেকের কোন তাড়না ছাড়া ধর্মবিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে বলছি। এবং শুধুমাত্র ধর্মবিষয়ে আলোচনার কথা এজন্য বলছি যে আসলে এসব কুসংস্কারে পূর্ণ প্রহেলিকা ছাড়া কিছুই নয়। অথচ এই ধর্ম কোন কারণ ছাড়াই আমাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক আলোচনাকে পণ্ড করে। কিন্তু এটা পরিস্কার যে জনগণের কিছু অসাধারণ অভিজ্ঞতা আছে। ধর্মকে তাদের গ্রহণ করার একাধিক কারণ থাকতে পারে। হয়তো তারা এতে নেশাগ্রস্ত অথবা বছরে পর বছর তারা জীবনগুহায় নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছে। অথবা কিছু স্নায়ুবিক প্রতিক্রিয়ার ফল হিসেবে তারা ধর্মের মধ্যে ডুবে আছে। কিন্তু যাই বল না কেন ধর্ম বিষয়ে প্রত্যেকের নিজস্ব যৌক্তিক অভিজ্ঞতা থাকে। আর মানুষ নিজেকে পরিস্কার দেখতে পছন্দ করে। জীবনে সেই সব দিনগুলোই তার কাছে শ্রেষ্ঠতম যে দিনগুলোতে সে নিজেকে স্পষ্ট দেখতে পেরেছে। নিজেকে আবিষ্কার করতে পেরেছে। তোমরা জান, তারা প্রকৃতির মুখাপেক্ষী থাকে। মানুষ তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে তাকে মর্যাদা দেয়। তাকে আজ আমরা উপহাস বা খেলার পাত্রে রূপান্তরিত করেছি। এটাই সেই কারণ, আমি কেন একে ব্যঙ্গ করে নিজেকে নোংরা করবো? এসব বলার কারণ হল, অন্ততঃ জনগণের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে মানুষের জীবনের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ আবেগ নিয়ে তোমরা উপহাস করছো আবার তাকে ভাগাড়ে নিক্ষেপ করছো।
রিচার্ড ডকিন্স: দেখুন স্যাম, আমি আপনার সাথে একমত হতে পারছি না। আপনি যে কথাগুলো বললেন তা খুব ভাল কথা, কারণ আপনার কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, অতিন্দ্রিয় রূপ লাভ করার ক্ষেত্রে ধর্ম একমাত্র বিষয় নয়। এটা একটা ভাল প্রস্তাব। কারণ কারও নাস্তিক হওয়াটাও একটা রাজনৈতিক অধিকার। অবিশ্বাসী না হয়েও উপায় নেই। কারণ নীতিবোধের বিভিন্নতা কোন সাহায্য করতে পারে না। এজন্য সবখানে বিভিন্ন সংস্কৃতির সংমিশ্রণ থাকাটা অপেক্ষাকৃত ভাল। কিন্তু তোমার সাথে আমার একটু মতভেদ আছে। আমি বিতর্ক না করলেও এর মূল্য কমে যাবে না।
স্যাম হ্যারিস: ঠিক।
ক্রিস্টোফার হিচেনস: তুমি জিনোম এর অগ্রদূত ফ্রান্সিস কলিন্স এর সেই বিখ্যাত উক্তিটি নিশ্চয় শুনেছো। তিনি বলেছেন- একদিন পাহাড়ে চড়তে গিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে তিনি এতটাই বিমুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন যে, তারপর তিনি পাহাড় থেকে হামাগুড়ি দিযে নেমে এলেন এবং যিশুর কাছে আত্মসমর্পণ করলেন। একটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক পরিসমাপ্তি।
(সবাই তার সাথে একমত হলেন)
ক্রিস্টোফার হিচেনস: অথচ কোথাও বলা নেই যে যিশুখ্রিস্ট এই পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছে।
স্যাম হ্যারিস: ঠিক, একটি ঝরণার তিনটি...
রিচার্ড ডকিন্স: তিনটি অংশ থাকে।
স্যাম হ্যারিস: এই অংশগুলো ট্রিনিটির (ত্রিত্ব) কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
ক্রিস্টোফার হিচেনস: হ্যাঁ। তাতো বটেই। আমরা একই বা ভিন্ন পথের ত্রিক। আমরা এভাবেই পরিকল্পিত হয়েছি। চারমাথা ঈশ্বর হয়তো আর আসতে পারবে না।
স্যাম হ্যারিস: ঠিক (সহাস্যে)
ক্রিস্টোফার হিচেনস: অভিজ্ঞতা থেকে আপনি এসব জানেন। কিন্তু এটা এক বিরাট ধরণের পার্থক্য তৈরি করবে, এবং আমার ধারণা মানুষের অনেক সন্দেহ দূর করবে। তারা বুঝতে পারবে আমাদের আবেগ হল আমাদের ব্যক্তিত্বের বাড়তি মূল্যবোধ। এই অনুভূতি বিবর্তনের জন্য উপকারী নয়। আচ্ছা, আমরা এসব প্রমাণ করতে পারবো না, কিন্তু আমাদের জন্য এসব কথা কোন পরিবর্তন আনছে না। সব একই রকম থেকে যাচ্ছে। অতিপ্রাকৃতকে নিজের বলে ভেব না, এবং কোন প্রিস্টের সাথে কোনভাবে যুক্ত থেকো না কিংবা তাদের দলভুক্ত হতে যেয়ো না।
ড্যানিয়েল ডেনেট: হ্যাঁ। এটা দুঃখজনক ঘটনা যে মানুষ সাধারণ বুদ্ধিতে তাদের ঐশ্বরিক অভিজ্ঞতাকে বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে ঈশ্বরের কাছ থেকে যেহেতু আসেনি সেহেতু তা যতটা দেখা যায় ততোটা কাঙ্ক্ষিত না। এটাই ধর্মের স্বপক্ষে একরকমের প্রমাণ। না, এটা যেমন দেখতে ঠিক তেমনই বিস্ময়কর। এটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তোমার জীবনে এটা বিশেষ মুহূর্ত এবং এটাই সেই মুহূর্ত যখন তুমি নিজেকে ভুলে যাবে। যে সব পদ্ধতিতে তুমি নিজেকে ভাবো তার চেয়ে হয় তো এভাবে তুমি আরো ভালো বোধ করবে। প্রকৃতির সমস্ত সৌন্দর্য এবং মহানুভবতাকে অনুভব করতে পারবে। এটার কথাই বলছিলাম এবং এটাই বিস্ময়কর। কিন্তু মানুষের কাছ থেকে যা আমি পেয়েছি এসব তার চেয়ে বেশি কিছু নয়।
রিচার্ড ডকিন্স: এটা ছিনতাই হয়ে গেছে। ছিনতাই করেছে...
ক্রিস্টোফার হিচেনস: হ্যাঁ, এটা সহ। আমার ধারণা এটা মানুষের ব্যক্তিত্বের এক ধরণের বিকৃতি অথবা ব্যর্থতা। আমি এসব খোলাখুলিই বলছি। কারণ ধর্ম মানুষকে নিজের কাছে নিজেকে ছোট করে দেয়। মানুষ কতটা আজ্ঞাবহ তা নির্ণয় করে। ধর্ম সবসময় মানুষকে আত্মোৎসর্গ করার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু আসলে এটা এইসব মুহূর্তগুলি নিয়ে অস্বাভাবিক অভিযোগ করে, এটা বলে যে - আমি হঠাৎ বুঝতে পারলাম এই বিশ্বের যাবতীয় উদ্দেশ্য সব আমাকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে।
স্যাম হ্যারিস: হ্যাঁ, হ্যাঁ।
রিচার্ড ডকিন্স: হ্যাঁ।
ক্রিস্টোফার হিচেনস: এবং আমি এসবকে চরমভাবে অবজ্ঞা করি। আমার বিশ্বাস আমরা মানুষের এইসব অজ্ঞতা নিয়ে অনায়াসে হাসাহাসি করতে পারি।
স্যাম হ্যারিস: ঠিক।
রিচার্ড ডকিন্স: ঠিক।
ড্যানিয়েল ডেনেট: অবশ্য, আমিও এভাবে ভাবি। আমাদের এরকমই করা উচিত। সত্যি আমাদের অবশ্যই...
ড্যানিয়েল ডেনেট: এটা সেটা নিয়ে প্রফেসর ডেনেট বিনম্র ছিলেন- এ ধরণের ভাবনা ভাবতে ভাবতে আমি ক্লান্ত।
রিচার্ড ডকিন্স: হ্যাঁ।
ড্যানিয়েল ডেনেট: এবং হীন মনোভঙ্গি... এই ধারণা মানুষকে শ্বাসরূদ্ধকর উদ্ধত করে তোলে, এবঙ আমার ধারণা...
ক্রিস্টোফার হিচেনস: তোমরা যাই বলোনা কেন আমরা আসলে একদিকে বেশি জোর দিচ্ছি। আমার কথায় মন খারাপ কোরো না। আমি ঈশ্বরের জন্য কিছু অর্থহীন কাজ করার পক্ষে।
ড্যানিয়েল ডেনেট: হ্যাঁ। তা তো বলবেই।
(সমস্বরে অট্টহাটি)
ক্রিস্টোফার হিচেনস: আচ্ছা, সেটা কতটুকু ভদ্রতা হবে?
স্যাম হ্যারিস: এই পয়েন্টে আমাদেরকে আবার ফিরে আসতে হবে। বিজ্ঞানের উদ্ধত মনোভাব বিষয়টি মোটেও ফেলনা নয়। কারণ বিজ্ঞান ছাড়া আর কোন তত্ত্ব ধর্মকে এত নির্মমভাবে অপমানিতকরে না। আমার জানা মতে মানুষের ইতিহাসে বিজ্ঞানীরাই প্রথম যাঁরা বলেছেন-আমি জানি না। তার মানে যদি তুমি কোন বিজ্ঞানীকে তাঁর নিজের বিষয়ে কিছু বলতে বল, তাহলে তিনি মাথা নাড়াতে থাকবেন। তিনি বলবেন - আমি নিশ্চিত নই। কিন্তু আমি জানি এই কক্ষে আমার চাইতে এই বিষয়ে আরও বেশি জানেন এমন কেউ আছেন। আর হ্যাঁ, অবশ্যই তুমি জান যে এখনও সব তথ্য আমরা পাইনি। এটাই আলাপের আদর্শ ধরণ। এই পদ্ধতিতে আমরা আমাদের অবহেলার বিষয়টাকে কিছুটা সুযোগ দেয়ার জন্য আংশিক হলেও খোলামেলা হতে পারি।
ক্রিস্টোফার হিচেনস: আচ্ছা। আসলে অনেক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তি এই ধরণের ভণ্ডামী করে থাকেন। তবে তুমি যা বলছো আমি তা বুঝতে পেরেছি।
স্যাম হ্যারিস: আচ্ছা। হ্যাঁ, হ্যাঁ। ঠিক বুঝেছো।
ক্রিস্টোফার হিচেনস: মেনি নামের একজন ইতিহাসবিদ বলেছেন না আমি আত্মসমর্পিত।
রিচার্ড ডকিন্স: না, কিন্তু যে কোন প্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তিত্বের এরকম করা উচিত। যে কোন...
ক্রিস্টোফার হিচেনস: হ্যাঁ। তাদের এমন করা উচিত।
রিচার্ড ডকিন্স: ধর্মপ্রাণ মানুষ সম্পর্কে একথা সাধারণভাবে সত্য যে তারা যা বিশ্বাস করে সেই সব ধর্মগ্রন্থাদি তারা প্রতি সপ্তাহে পাঠ করে। ওদের তিনজন ঈশ্বর আছে। কুমারী মেরি, যিশুতো মারা গেছে... আর একজন হলো... কি যেন নাম? ... তিন দিনের জন্য অন্তারালে ছিল, পরে আবার এসেছে।
ক্রিস্টোফার হিচেনস: হ্যাঁ।
রিচার্ড ডকিন্স: আমার বক্তব্যের সারমর্ম হল- মন:কষ্ট দেবার জন্য আমাদেরকে তারা এখনও অভিযুক্ত করে চলেছে। তারা বলছে আমরা নাকি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী, যা ভাল জানিনা তাকে নিয়েও সন্দেহ পোষণ করি।
ড্যানিয়েল ডেনেট: আমি জানি বিজ্ঞানীরা নিজেদেরকে সবসময় প্রশ্ন করে- আমি হয়তো ভুল করতে পারি। এই প্রশ্নটাকে বিশ্বাসীরা কখনও চিন্তা করেছেন বলে আমার মনে হয় না।
ক্রিস্টোফার হিচেনস: আসলে... তোমার কথাকে সমর্থন না করলে কি কিছু মনে করবে?
ড্যানিয়েল ডেনেট: না।
ক্রিস্টোফার হিচেনস: অনেকরকম কথাবার্তা বিশ্বাসী মানুষকে কঠোর করে তুলেছে। না, তাদেরকে পেটানোর বিষয়ে নয়, আলোচনা প্রসঙ্গে বলছি। তারা বলবে যে বিশ্বাসহীন দুনিয়াতে তারা বাস করছে। একটি প্রার্থনা বাক্য আছে- "হে ঈশ্বর, আমাকে অবিশ্বাসের হাত থেকে রক্ষা কর। গ্রাহাম গ্রীন একটি বিশেষ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন-ক্যাথলিক হওয়াটা অবিশ্বাসের প্রতি ছুড়ে দেয়া এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। অসংখ্য মানুষ দুইরকম বইয়ের উপর নির্ভর করে জীবন যাপন করে। আসল ঘটনা হল, আমি দেখেছি, অসংখ্য মানুষ নিজেকে সবসময় বিশ্বাসী হিসেবে পরিচয় দেয়। শুনতে খারাপ লাগবে সেজন্য বলছি না যে এটা স্কিজোফ্রেনিয়া, তবে তাদের কথার আপাতগ্রাহ্যতা সম্পর্কে তারা সচেতন। তবে সন্দেহ করার আইডিয়াকে তারা সম্মান করেন। যখন সম্ভব তখন তারা এই বিষয়ে ভাবেন।
রিচার্ড ডকিন্স: যখন তারা নিজের দেষকে হাল্কা করার মানসে ধর্মসূত্র পাঠ করে তখন বেশ মজা লাগে। নিজের দেষ স্বীকার করার মাধ্যমে তারা বোধহয় মনের সন্দেহকে দূর করতে চায়। আমি বিশ্বাস করি, আমি বিশ্বাস করি, আমি বিশ্বাস করি- এই ধরণের মন্ত্র পাঠ করার কারণ কি? মনের সন্দেহ দূর করার জন্য কোন জোর খাটানো নাকি অন্তরের অবিশ্বাসকে ঢেকে রাখার একটি প্রায়- কোনটা? 'আমি বিশ্বাস করি' এই কথাটি বারবার বলার কারণ আসলে 'আমি বিশ্বাস করি না'।
ক্রিস্টোফার হিচেনস: হ্যাঁ, তা তো বটেই। ধর্মনিরপেক্ষতার বিরোধীরাও একই ধরণের। তারা অন্যদেরকে বিশ্বাসী দেখতে চায়। অন্যরা যাতে অবিশ্বাসী না হয়ে যায় তার জন্য ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা এমন সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়।
রিচার্ড ডকিন্স: হ্যাঁ।
.... চলবে