চার অশ্বারোহী 

অনুবাদক: অগ্নি অধিরূঢ়
 

পূর্ব প্রকাশের পর.......

স্যাম হ্যারিস: কৌতুহলের বিষয় এটাই। 'প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস' করা সত্যিই একটি অনন্য বিষয়। তার মানে বিশ্বাসের নিজস্ব মতবাদ এটাই। এই রূপক দিয়েই থমাসকে সন্দেহ করা যায়। আপনি এখান থেকেই শুরু করতে পারেন। বিশ্বাস নিজেই বিশ্বাসের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ। সাধারন মানুষ প্রমাণের কোন স্বরূপ অনুধাবন ছাড়াই বিশ্বাস করতে পারে। এই ধরণের বিষয় নিয়ে আমার সাথে যেসব বিতর্ক হয়েছে তার সারসংক্ষেপ আপনি ব্যবহার করতে পারেন। তার মানে আমরা কিছুটা আস্টেপৃষ্ঠে..... আসলে যে ফ্রান্সিস কলিন্সের কথা বলছিলেন, এই বই থেকে বাদ দিতে পারেন। কিন্তু মূল ঘটনা হল ঈশ্বরের উপলব্ধি নিজেই একটি সূক্ষ্ম ব্যাপার। আপনার সেই কথা "কোন প্রমাণ ছাড়াই শুরু করা ভাল" শুনে আমরা বিস্মিত হয়েছিলাম। কারণ তখন কোন প্রমাণ ছাড়াই শুরু করে সেটাকেই আপনি প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করতে পারবেন। আর তারপর কোন প্রমাণ চাইলে তাকে বুদ্ধিবৃত্তিক দূর্নীতি, উস্কানীমূলক বক্তব্য বা এই ধরণের বিরোধীতা বলে পরিগণিত করবেন। এভাবে আত্মপ্রবঞ্চনার ধারাবাহিক ক্রিয়া দিয়ে আপনি নিজের অপধারণাগুলোকে সফল রাখবেন।

ক্রিস্টোফার হিচেনস: কিন্তু এ ধরণের আইডিয়া সাধারণত সুগঠিত হয় না। কারণ সেখানে বিশ্বাসযোগ্য কিছুই থাকে না।

স্যাম হ্যারিস: ঠিক। বিশ্বাস সম্পর্কে এটা খুব সুন্দর একটা পয়েন্ট।

ক্রিস্টোফার হিচেনস: যদি প্রত্যেকে যিশুর পুনরুত্থান দেখতো, যদি আমরা জানতাম যে এই পুনরুত্থান আমাদেরকে রক্ষা করেছে, তাহলে এক অপরিবর্তনীয় বিশ্বাসের জগতে আমরা বাস করতাম। এই ধারণা এখন আরও পরিশীলিত হত। আর এটা হয়তো আসলে.... আমাদের মধ্যে যারা এই ধারণার অসারতা বোঝেন তারা খুব খুশি কারণ এই ঘটনা সত্যি হরে তা খুব ভয়ংকর হত। কিন্তু যারা বিশ্বাসী তারাও এর সম্পূর্ণ প্রমাণ প্রত্যাশা করেন না। কারণ তাহলে যে সন্দেহ পোষণ করার কিছুই থাকবে না। আর এ তো সবাই জানে যে সচেতনতার সাথে কিছুতেই কোন যুদ্ধ চলে না। 'আত্মার আঁধার রাত্রি' বলতে আসলে কিছুই নেই।

স্যাম হ্যারিস: কেউ কেউ... আমাদের বইয়ের একটা পর্যালোচনা ছিল। ঠিক কোনটা তা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। কিন্তু সেটা একটা সুনির্দিষ্ট পয়েন্ট ছিল। এই পুনরুত্থান জাতীয় ঘটনার পিছনে পূর্ণাঙ্গ প্রমাণ থাকবে এ ধরণের প্রত্যাশা করাটাই বোকামী। তার মানে আমি বোঝাতে চাচ্ছি যে, যদি খুব বেশি প্রমাণের কারণে সবাই বিশ্বাসের পক্ষে জোর করে তাহলে তা জাদুর চমক দেখাবে। আসলেই এটাই ফ্রান্সিস কলিন্স (Francis Collins)। আমি দু:খিত, তারপরও বলব যে এটাই ফ্রান্সিস কলিন্স।

ক্রিস্টোফার হিচেনস: আমার অক্সফোর্ডের বন্ধু ক্যানন কেন্টন বলেছিল, চার্চ যদি তুরিনের পবিত্র কাফনকে বৈধতা দিত। তাহলে সে তার পদমর্যাদাকে বিসর্জন দেবে। কারণ তারা সেরকম প্রচেষ্টা নিয়েছিল, কিন্তু সে এর কোন অংশ হতে চাচ্ছিল না।

স্যাম হ্যারিস: ঠিক।

ক্রিস্টোফার হিচেনস: আগের মত সৌভাগ্যবান হবার জন্য আমি আমার বইয়ের বিশ্বভ্রমণ বন্ধ করার প্রত্যাশা করি না। মানে আমি বলতে চাচ্ছি যে আমার বইয়ের প্রকাশের প্রথম সপ্তাহে জেরি ফলওয়েল (Jerry Falwell) মারা গেছেন। এটা সত্যিই বিস্ময়কর।

স্যাম হ্যারিস: আসলে আপনার ভাগ্য অবাক করার মত।

ক্রিস্টোফার হিচেনস: মাদার তেরেসা নাস্তিক হয়ে যাবেন এমন প্রত্যাশা আমি করি না।

ড্যানিয়েল ডেনেট: ঠিক।

(সমস্বরে উচ্চস্বরে হাসি)

ক্রিস্টোফার হিচেনস: কিন্তু তার চিঠি পড়লে বোঝা যায়, এই মুহূর্তে আমার হাতে একটা আছে, সত্যিই বেশ মজার, কৌতুহল সঞ্চারী। মাদার তেরেসা তার কাছে পাপ স্বীকারকারী বা তার উপরওয়ালাদের সবসময় একই কথা বলেন -"যখন জনসাধারণের মধ্যে থাকি কিংবা যখন গির্জার বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে রত থাকি তখন আমি কোন কথা শুনতে পাই না, আমি কারও উপস্থিতি অনুভব করি না।" এটা মোটের কোন ছোট বিষয় নয়। কারণ এর উত্তরে তাকে বলা হয়- "বা! দারুণ! সত্যি আপনি মহান।" আপনার দু:খভোগ আপনাকে যিশুর ক্রুশবিদ্ধের সহমর্মী করে তুলেছে।" আপনি এরকম অবস্থায় ঝগড়া করতে পারেন না। আপনি বিশ্বাসের উপর যত কম আস্থা রাখবেন ততো বেশি তাকে বর্ণনা করতে পারবেন।

স্যাম হ্যারিস: ততো বেশি একে সত্য বলে প্রমাণ করবেন।

ক্রিস্টোফার হিচেনস: হ্যাঁ, সেই সংগ্রাম এবং 'আত্মার আঁধার রাত্রি' এগুলো নিজেই নিজেকে প্রমাণ করবে। সুতরাং এই বাস্তবতা যে কর্তৃপক্ষের ক্ষমতাবলয়কে অনাবৃত করে দেয় তা আমরা বুঝে ফেলেছি। এই ধরণের মানসিকতার সাথে আমরা বিতর্ক করার আশা করতে পারি না।

স্যাম হ্যারিস: না, আসলে এই ক্ষেত্রে আমি ভিন্নমত পোষণ...

ড্যানিয়েল ডেনেট: না, কিন্তু তুমি এই মুহূর্তে যা করছো, আমরাও তা করতে পারি। ব্যাপকভাবে প্রচারিত চালাকিগুলো দেখো, এগুলো সব চক্রাকার, নিজেই নিজের শক্তি যোগায়। যে কোন কিছুতে রূপান্তরিত হতে পারে। তুমি এদের সাথে বিতর্ক করতে পার না, তুমি বুঝতে পারবে, আসলে এটা চিন্তার কোন বৈধ পদ্ধতি নয়। কারণ যে কোন রকমের ভণ্ড মতবাদ লালন, পালন ও প্রচারের জন্য এই একই পদ্ধতি ব্যবহার করা সম্ভব। আসল ঘটনা হল কৌশলের বৈচিত্র্য আমাকে বিস্মিত করেছে। তারা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে গর-রাজী হয়, সংক্ষেপে বললে একে বিশ্বাসবিহীন শুদ্ধতা বলতে হয়। কোন বিরুদ্ধবাদী লোকের সাথে আলোচনা শুরু করলে দেখতে পাবে তারা একই হৃদয়গত খেলা খেলছে। তোমাকে হয়তো তারা নিজের স্বর্গীয় অনুভূতির কথা বারবার বলতে থাকবে। আসলে আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হল এসব কোন নতুন পদ্ধতি নয়। এই কৌশলগুলো হাজার বছর ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে। 

(অসমাপ্ত)