চার অশ্বারোহী 

অনুবাদক: অগ্নি অধিরূঢ়
 

পূর্ব প্রকাশের পর... 

ক্রিস্টোফার হিচেনস: এর সাথে আপনি বিভিন্ন বোগাস অলৌকিক কাহিনীগুলোকে যোগ করতে পারেন। এগুলো ধর্মকে একটি সম্পূর্ণ ভণ্ডামোর ভাঁড়ারে পরিণত করেছেন। অলৌকিকে বিশ্বাসীরা বলত আইনস্টাইন এই মহাবিশ্বের পিছনে কোন এক অলৌকিক শক্তির অস্তিত্বে বিশ্বস করত। আইনস্টাইন এক জায়গায় বলেছিলেন -"মূল বিষয়টা হল কোন অলৌকিক বলতে কিছু নেই আবার প্রকৃতির নিয়মের কোন ব্যত্যয় নেই, এটা সত্যি রহস্যময়।" এই বাক্যটিকে ভিত্তি করে তারা আইনস্টাইনকে বিশ্বাসী বলে প্রচার করে। অথচ এই দুটো বিষয়কে গুলিয়ে ফেলা যে আসলে তাদের স্বল্পবুদ্ধির পরিচয় তা তারা বোঝে না। আমরা অবিশ্বাসীরা যেমন করি তেমন প্রত্যেক ধর্মভীরু মানুষ অন্যের ধর্মকে সমানভাবে সমালোচনা করে। তার মানে তারা অন্যদের মেকী, অলৌকিক ও ছদ্ম গন্তব্যকে বাতিল করে দেয়। অন্যদের বিশ্বাসের চালাকিগুলোও তাদের চোখে পড়ে। আপনারা জানেন প্রত্যেক খ্রিস্টান জানে বিশ্ব স্রষ্টা সম্পর্কে কোরান কোন সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারে না। যারা মনে করে কোরানে সবকিছু আছে, তারা কোরান ভালভাবে পড়ে দেখেনি। আর এটা আসলে আত্মসমালোচনাহীন দুর্ভেদ্য মনোভঙ্গি ছাড়া আর কিছুই নয়। আমার ধারণা আমরা যখন এসব চিহ্নিত করি তখন সেটা জটিল রূপ ধারণ করে। মানুষ চার্চে গিয়ে বা প্রার্থনায় বসে কিরকম অনুভব করে আমরা তাকেও আলোচ্য করে তুলি। যতো ইতিবাচকভাবেই চিন্তা করুননা কেন সেটাও ওদের জন্য কোন বিষয় নয়। আসল ঘটনা হল, বৌদ্ধ, হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান সবাই একইরকম অনুভূতি বোধ করে। এ থেকে প্রমাণ হয় যে এই অনুভূতি যিশুর পবিত্রতা বা কোরানের কোন অনন্যতার উপর নির্ভর করে না। এর কারণ... 

ড্যানিয়েল ডেনেট: কারণ, সেখানে যাবার সতেরো রকমের পথ আছে। 

ক্রিস্টোফার হিচেনস: কথায় কথায় একটা ছোট্ট পয়েন্ট বলি। প্রসঙ্গান্তরে যাবো না। আর মনের মধ্যেও এটা লালন করা প্রয়োজন। আজ সকালে এবিসি নিউজকে আমি একথাটাই বলেছিলাম। তারা প্রশ্ন করেছিল-"ধর্ম যে কিছু ভাল কাজ করেছিল এবং ধর্মভীরু মানুষরাও ভাল লোক হয়- এ কথা কি আপনি বলবেন না?" এ নিয়ে আপনার কোন বিতর্কে জড়ানোর দরকার নেই এবং কথায় কথায় তাদের যে কাউকে জিজ্ঞাসা করুন -"হ্যাঁ হামাস যে গাজাতে সামাজিক উন্নয়ন চালাচ্ছে এমন কথা আমি শুনেছি।" মাদকদ্রব্য চোরাচালানের জন্য কারাগারে আটক ফারাহ খানের দলের সবাই তরুণ এমন কথা আমি শুনেছি। আমি একথা আনন্দের সাথেই গ্রহণ করতাম। কিন্তু সেমেটিয় বিরোধী মতবাদ এবং সেনা প্রভাবিত শাসক কোন ঘটনাকে ওল্টাতে পারবে না। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিসা মানুষকে আচ্ছন্নতা থেকে মুক্ত করেছে এ বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু যারা নিজের জন্য ধর্মানুভূতির আশ্রয় চায়, তাদের জন্য আমার সহানুভূতি আছে। 

স্যাম হ্যারিস: আপনি আরও যা যা করতে পারেন, তা হল... 

ক্রিস্টোফার হিচেনস: না আপনি করতে পারেন না কারণ এটা সম্পূর্ণ অসততা। 

স্যাম হ্যারিস: আপনি একটা আইডিওলজির উদ্ভাবন করতে পারেন। কিন্তু ওইরকম মানসিক অবস্থায় যদি তা আবিষ্কৃত হয় তাহলে তাকে সম্পূর্ণ অসত্য বলা ছাড়া কোন উপায় নেই। আপনি কোটি কোটি মানুষের কাছে প্রচার চালিয়ে কিছুটা সফল হতে পারেন। আপনি বলতে পারেন -"এটা আমার নতুন ধর্ম"। মানুষকে শিক্ষা দিন যে সন্তানকে বিজ্ঞান, গণিত, অর্থনীতি পড়াতে হবে। সর্বোচ্চ সামর্থ্য অনুযায়ী তাদেরকে যাবতীয় নাগরিক সভ্যতা শিখতে হবে। যদি তাদের মধ্যে এইসব বিষয়ে উসাহের অভাব দেখা যায় তাহলে মৃত্যুর পর সতের জন শয়তার তাদের উপর অত্যাচার চালাবে। (হা! হা! হা! হা!) এই পদ্ধতি খুবই কাজের, হয়তো ইসলামের চাইতেও বেশি কার্যকরী হবে। তারপরও ওই সতের জন শয়তান থাকার সম্ভাবনা কতটুকু? শূন্য। 

রিচার্ড ডকিন্স: এই নীতি আপনার ব্যর্থ হতে পারে। কারণ বিদগ্ধ বুদ্ধিজীবী এবং ধর্মতাত্ত্বিকদের সাথে একভাবে কথা বলতে হবে এবং জনসমাবেশে আর একভাবে বলতে হবে। শিশুদের সাথেও কথা বলার পদ্ধতি ভিন্ন হতে হবে। এবং আমরা সকলে ধর্মতত্ত্বের বিদগ্ধ অধ্যাপকদের দ্বারা নিন্দিত হব, অবহেলিত হব। মানে, আমি জানিনা আপনারা ঠিক কি অনুভব করছেন, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি যে ধর্মতত্ত্বের পণ্ডিতেরা ভিন্ন কথা বলবেন। তারা নিজেদের মধ্যে বা অন্য পণ্ডিতদের সাথে যা আলোচনা করবেন, তার চাইতে সম্পূর্ণ বিপরীত কথা জনসম্মুখে বলবেন। তারা হয়ত অলৌকিকত্ব নিয়ে বলবেন, হয়ত... 

ড্যানিয়েল ডেনেট: তারা জনসমাবেশে কথা বলবেন না। 

রিচার্ড ডকিন্স: হ্যাঁ। কিন্তু আর্চবিশপকেতো বলতেই হবে। 

ড্যানিয়েল ডেনেট: হ্যাঁ। কিন্তু বিদগ্ধ ধর্মতাত্ত্বিকরা যখন প্রচারকের সাথে কথা বলবেন, তখন প্রচারকের বলার কিছু থাকবে না। 

রিচার্ড ডকিন্স: হ্যাঁ। তা খুব সত্যি। 

ড্যানিয়েল ডেনেট: তার মানে, আমি বলতে চাচ্ছি মানসম্পন্ন ধর্মতত্ত্ব আসলে স্ট্যাম্প সংগ্রহের মত। এটা খুবই বিশেষায়িত ব্যাপার এবং কম মানুষই তা করতে পারে। 

রিচার্ড ডকিন্স: এসব অনায়াসে উপেক্ষা করা যায়। 

ড্যানিয়েল ডেনেট: এসব তাদের নিজস্ব ব্যাপার, তারা যা বলে তার সাথে ধর্মের যোগ বড় ক্ষীণ, তাদের চিন্তা-ভাবনাকে আমাদের অবহেলা করা উচিত কারণ তাদের কথাবার্তা আমার অভিজ্ঞতামতে, দৃষ্টি আকর্ষণীয়, মনলোভা, হালকা ধরণের। এর সাথে জীবনের সত্যিকারের অর্থের কোন সম্পর্ক নেই। 

ক্রিস্টোফার হিচেনস: ওহ না। আমি অবশ্যই রিচার্ডকে আক্রমণের বিষয়ে প্রফেসর অ্যালিস্টার ম্যাকগ্রাথ এর প্রশংসা করব। Tertullian এর সেই বিখ্যাত উক্তি "Credo Quia Absurdum" (রহস্যময়তার কারণে এটা বিশ্বাসযোগ্য) আমি বিশ্বাস করি। একথাটি আমাদেরকে সবসময় বলা হয়েছে, বেশিরভাগ খ্রিস্টান এতে বিশ্বাস করে। আপনারা মনে করেন, এটা হাস্যকর সেজন্য আমি বিশ্বাস করি? না। এটা প্রমাণিত, আমি নিজে পরীক্ষা করেছি। আমি ঠিক জানিনা যে এটা ম্যাকগ্রাথ এ আছে কি না। কিন্তু এর অসম্ভাব্যতা সম্পর্কে Tertullian আগেই বলেছেন। আর সেজন্য এটা বিশ্বাসযোগ্য রূপ লাভ করেছে। এটা খুব মূল্যবান পার্থক্য, আমি মনে করি, কারও মনকে ভাল করার জন্য এটা বেশ উপযোগী।

চলবে...