আল্লাহ'র আত্মপ্রেমী/ আত্মম্ভরী বোকা মন

মূলঃ আবুল কাশেম

অনুবাদ: অগ্নি অধিরূঢ়

ইসলাম ধর্মে, প্রত্যেক মুসলমান একথা বিশ্বাস করতে বাধ্য যে, কোরানের প্রত্যেক শব্দ আল্লাহ দ্বারা লিখিত হয়েছে। যদি কোন মুসলমান এ কথাকে প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে তাকে ধর্মদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করে শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। আর এই ধরণের ক্ষেত্রে শাস্তি হিসেবে সাধারণত গলা কেটে মেরে ফেলা হয়। তবুও কেউ যদি খোলামনে এবং মনোযোগের সাথে কোরান পড়ে, তাহলে সে হতভম্ভ হয়ে পরবে। সে দেখবে পবিত্র বাণীর আড়ালে কত ভুল ও পরস্পরবিরোধী বক্তব্যই না রয়েছে। কোরাণের অনেক বক্তব্য আমাদেরকে স্পষ্টভাবে জানায় যে আসলে এর অধিকাংশ আসলে মানুষের রচনা, আল্লাহর নয়। 

আল্লাহ যে আসলে কতটা দুর্বল চিত্তের ছিলেন, তাই আমরা এই প্রবন্ধে আলোচনা করবো। 

আল্লাহ নিজের ঢোল নিজেই পিটিয়েছেন। নিজেকে বাহবা দিয়েছেন এবং নিজেই নিজের মহিমা কীর্তন করেছেন। 

এই হাস্যকর বিষয়টা একটু ব্যাখ্যা করে দেখা যাক: 

যিশুখ্রিস্ট নিজেই নিজেকে প্রশংসা করছেন।

কালীমাতা (এক হিন্দুদেবী) নিজেই নিজের পূজা করছেন।

গণেশ (আর এক হিন্দু দেবতা) নিজেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন।

ভগবান বুদ্ধ নিজেই নিজের প্রার্থনা করছেন।

নেলসন ম্যান্ডেলা নিজেই নিজেকে আশীর্বাদ করছেন।

হিটলার নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে দিচ্ছেন।

রাদোভান কারাদজিক নিজেই নিজেকে ভালোমানুষ বলছেন।

জর্জ বুশ নিজেই নিজেকে স চরিত্রের সনদ দিচ্ছেন।

বারাক ওবামা নিজের গুণ নিজের কাছেই বলছেন।

ওসামা বিন লাদেন নিজের কাজে নিজেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন।

হিলারী ক্লিনটন নিজেই নিজের কাছে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন।

আহমেদিনেজাদ নিজের কাছে নিজের সাফল্য প্রত্যাশা করছেন।

ইন্দিরা গান্ধী নিজেই নিজেকে সফল বলছেন।

কার্ল মার্ক্স নিজেই নিজেকে বাহবা দিচ্ছেন।

ভ্লাদিমির পুতিন নিজেই নিজের মঙ্গল কামনা করছেন।

স্যার উইনস্টন চার্চিল নিজেই নিজেকে সফল বলছেন। 

এভাবে আরও বলা যেতে পারে। 

আমরা নিশ্চয় একথা স্বীকার করব যে উপরের উদ্ধৃতিগুলো আসলে অযৌক্তিক, উদ্ভট, শিশুতোষ এবং একেবারেই বোকামীসুলভ। এমনকি যারা এই কথাগুলো বলবে বা লিখবে তাদের আমরা পাগল বা বুদ্ধিহীন বলবো এবং অবশ্যই তাদেরকে পাগলা গারদে পাঠিয়ে দেব। এরকমভাবে ভাবার আগে থামুন, কারণ কোরানের লেখক আল্লাহ ঠিক একই কাজ করেছেন। সুরা কাহফ (অনুবাদ: হিলালী এবং খান) এর বেশ কিছু অংশে দেখা যায় যে আল্লাহ নির্লজ্জভাবে নিজেই নিজের প্রশংসা করেছেন। 

*১৮.১ - সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। যিনি মোহাম্মদ এবং কেতাবটি পাঠিয়েছেন এবং এ বিষয়ে জটিলতার কোন অবকাশ রাখেননি।

*১৮.২ - (তিনি তৈরি করেছেন) সরাসরি সতর্ক করেছেন (অবিশ্বাসীদেরকে) এই বলে যে তিনি ভয়াবহ শাস্তি দেবেন। এবং বিশ্বাসীদেরকে (যারা আল্লাহর একত্বে তথা ইসলামী একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করে) এর সুসংবাদ দিচ্ছেন যে, যারা সঠিক কাজ করেছেন তাদের জন্য রয়েছে দারুণ পুরস্কার (অর্থা বেহেশত)। 

*১৮.৩ - তারা সেখানে অনন্তকাল বাস করবে। 

আমরা যদি উপরের উদ্ধৃতিগুলো মনোযোগের সাথে পড়ি, তাহলে সহজ উপসংহারে পৌঁছাবো। 

* মোহাম্মদ অথবা অন্য কেউ এই লাইনগুলোর রচয়িতা।

* আল্লাহ যদি মোহাম্মদকে এই কথাগুলো বলে থাকেন, তাহলে বলতে হবে তিনি নিশ্চয় নেশাগ্রস্থ ছিলেন অথবা শক্তিশালী মাদকের প্রভাবে আচ্ছন্ন ছিলেন।

* তাকে অবশ্যই কোন পাগলা গারদে পাঠানো প্রয়োজন। 

পাঠকদের উদ্দেশ্যে আরও কয়েকটি মজার বাণী নিবেদন করছি। 

*২৫.১ - তার মঙ্গল প্রার্থনা করি, যিনি মোহাম্মদকে মাপকাঠি দিয়েছেন (ভালো ও মন্দের, অর্থা কোরান। তিনি নিশ্চয় সৃষ্টিকর্তা (মানবজাতি ও জ্বীন সকলের)  এবং আমাদেরকে সতর্ক করেছেন। 

* ৩৪.১ - সকল প্রশংসা এবং ধন্যবাদ আল্লাহর, কারণ তিনি বেহেশত ও পৃথিবীর সকল কিছুর মালিক। তিনি সর্বজ্ঞানী এবং তিনি সবসময় সজাগ থাকেন। 

*৩৫.১ সকল প্রশংসা এবং ধন্যবাদ আল্লাহর, তিনি বেহেশত ও পৃথিবীর সবকিছুর স্রষ্টা। তাকে বন্দনা করি, তিনি ফেরেশতাদেরকে তৈরি করেছেন। তিনি যা ইচ্ছা করেন, তাই সৃষ্টি করেন। আসলে আল্লাহ সবকিছুই করতে পারেন। 

*৩৭.১৮২- এবং সকল প্রশংসা ও ধন্যবাদের মালিক আল্লাহ কারণ তিনি আলামিন (মানুষ, জিন এবং যা কিছু আছে সবকিছুর)। 

* ৪৫.৩৬ - অতএব সকল প্রশংসা ও ধন্যবাদ আল্লাহর উপরে বর্ষিত হোক, কারণ তিনিই জগতের প্রভু। 

উপরের বাক্যগুলোতে আল্লাহ নিজেই নিজেকে প্রশংসা করেছেন। নিজে নিজের বন্দনা করেছেন। 

পাঠকগণ নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন যে, আল্লাহ মোহাম্মদকে পড়ার জন্য বলেননি। আরবী শব্দ কুল (পড়) কোথাও নেই। তাই, আমরা বলতে পারি উপরের বাক্যগুলো আসলে মোহাম্মদ বা অন্য কেউ বলেছে।

আমরা যদি বিশ্বাস করি যে কোরানের লেখক একমাত্র আল্লাহ, তাহলে বলতে হবে আল্লাহর বোকামীর কোন সীমারেখা নাই। 

* আল্লাহ নিজে বলেছেন "ইনশাল্লাহ" অর্থা 'যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন'।

সুরা কাহফে আল্লাহ মোহাম্মদকে অচেতন জাতি সম্পর্কে বলেছেন। এর পূর্বে মোহাম্মদ কোন ধর্মীয় কাহিনী জানেন কিনা সে সম্পর্কে ইহুদিরা খোঁজখবর নিয়েছিল। ইহুদিদের বক্তব্য শুনে মোহাম্মদ হতভশ্ব হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি উত্তর দেবার জন্য দুই (২) সপ্তাহ সময় চেয়ে নিয়েছিলেন। আল্লাহ এ বিষয়ে সঠিক প্রতিক্রিয়া দেখাবেন সেটাই তার প্রত্যাশা ছিল। দুই সপ্তাহ চলে গেল। মোহাম্মদ তারপরও কিছু বললেন না। ইহুদি পুরোহিতরা আল্লাহর বুদ্ধির শক্তি বুঝে গেলেন। এই আচরণের ব্যাখ্যা দেয়ার কাহিনী সুরা কাহফ ১৮.২৩-২৪ তে লেখা আছে এভাবে-

মোহাম্মদ আল্লাহকে তার (আল্লাহর) দেরির বিষয়ে অভিযোগ জানালেন। আল্লাহ মোহাম্মদকে মৃদু ভর্সনা করে ইহুদী ধর্মযাজকদের সাথে কথা বলার সময় 'ইনশাল্লাহ' শব্দটি ব্যবহার করতে বললেন।

সুরাগুলো এরকম (অনু: হিলালি এবং খান)

* ১৮.২৩ - এবং কখনো বলবে না 'আমি আগামীকালকে এই এই করবো'।

* ১৮.২৪ - 'যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন'- এটা বলা বাদ দিয়ে.... ভুলে গেলে তোমার আল্লাহকে স্মরণ করবে এবং বলবে 'হয়তো আল্লাহ আমাকে অপেক্ষাকৃত আরো সত্যের কাছাকাছি নিয়ে যাবে'। 

সুরা আল-কালামে (সুরা ৬৮) আল্লাহ এক বাগানের গল্প করেছেন। বাগানের মালিকপক্ষ উচ্চ ফলন হবার অহঙ্কারে ফল তোলার সময় 'ইনশাল্লাহ' বলতে ভুলে গিয়েছিল। পরের দিন তারা বাগানে গিয়ে দেখে সব ধ্বংস হয়ে গেছে। 

লাইনগুলো এরকম-

৬৮.১৭ - আমরা কমবেশি চেষ্টা করেছিলাম, আমাদের আগ্রহের কমতি ছিল না। পরদিন যখন তারা ফল তুলতে বাগানে গেল তখন।

৬৮.১৮ - ইনশাল্লাহ (আল্লাহ যদি ইচ্ছা করেন) না বলাতে।

৬৮.১৯ -  বাগানে ঢুকেই তারা দেখল তাদের আল্লাহ গতরাতে সবাই ঘুমিয়ে থাকার সুযোগে বাগানে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। ফলে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে।

৬৮.২০ -  ফলে সকালে সমস্ত বাগানটাকে কালো দেখাচ্ছিল। পিচকালো রাত্রির মতো (সবকিছু পুড়ে নষ্ট হবার পর)

 

অবাক কাণ্ড হল নিচের সুরাতে (অনু: হিলালি এবং খান) আল্লাহ নিজে 'ইনশাল্লাহ' বলেছেন।

৪৮.২৭ - আল্লাহ অবশ্যই আমাদের দৃষ্টিশক্তিকে স্বচ্ছ করবেন, আমাদেরকে সত্যের সন্ধান দিবেন। যেরকম বাস্তব দৃশ্য মোহাম্মদকে দেখিয়েছেন। (এর মানে হল- মোহাম্মদ একটা স্বপ্ন দেখেছেন, তিনি সঙ্গিসাথীদেরকে নিয়ে মক্কায় ঢুকেছেন। সাথীদের কারো চুল ছোট করে কাটা, কেউ কেউ ন্যাড়া মাথা।) অবশ্যই তুমি আল মসজিদদালহারাম এ নিরাপদে প্রবেশ করতে পারবেন। তোমার সাথীদের কেউ চুল ন্যাড়া করবে, কেউ কেউ চুল ছোট করে কাটবে। কোন ভয় পাবে না। তুমি (মোহাম্মদ) জাননা তা তিনি (আল্লাহ) জানেন। তিনি তোমাকে বিজয়ের খুব কাছাকাছি এনেছেন। 

উপরোক্ত লাইনগুলোতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে 'ইনশাল্লাহ' শব্দটি উচ্চারণ করেছেন। আরবী কোরানে ৪৮.২৭ নম্বর সুরাটি দেখুন-

    Laqad sadaqa Allahu rasoolahu alrru/ya bialhaqqi latadkhulunna almasjida alharama in shaa Allahu amineena muhalliqeena ruoosakum wamuqassireena la takhafoona faAAalima ma lam taAAlamoo fajaAAala min dooni thalika fathan qareeban. (Note: thebold emphasis is mine) 

আল্লাহর এই শিশুতোষ বোকামীকে ঢাকার জন্য সুরার নিচে মওদুদী মন্তব্য করেছেন-এখানে ইনশাল্লাহ (যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন) শব্দটি সম্পর্কে, যা আল্লাহ তার নিজের প্রতিজ্ঞার সাথে উচ্চারণ করেছেন। যা বলতে চাই, তা হল নিজের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে ঘটনাকে অসম্ভাব্য করে তোলার কারণ কি? উত্তর হল: এখানে 'ইনশাল্লাহ' শব্দটি 'আল্লাহ ইচ্ছা করবেন না' এরকম বোঝায় না। তিনি তার প্রতিজ্ঞানে অপূর্ণ রাখবেন না। কিন্তু যে পরিস্থিতিতে তিনি এই কথা বলেছেন তা হল........

(মন্তব্য নং; ৪৮/৪৮ http://www.tafheem.net/main.html)

মওদুদীর মন্তব্য নিয়ে আমি কোন টস করবো না। হয়তো আল্লাহ নিজেও হ্যাঁ অথবা না এ দুয়ের মধ্যে কোনটাকে বেছে নিবেন তা বোঝেননি। 

মূল লেখা: http://www.islam-watch.org/AbulKasem/Fatuous-Mind-of-Allah.htm