ধর্ম সবকিছুকে বিষাক্ত করে তুলছে

ক্রিস্টোফার হিচেনস

অনুবাদক: অগ্নি অধিরূঢ়

পূর্ব প্রকাশের পর...

ধর্মগুলোর সবচেয়ে পরিশীলিত সমালোচনাকেও সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক বলে মনে হবে। ধর্মগুলো মানুষের তৈরী। হ্যাঁ, এটাই সবচেয়ে নরম নিন্দা। এমনকি যে মানুষের হাতে এটা তৈরি হয়েছে, সেই মানুষও কোন নবী, ত্রাণকর্তা অথবা গুরুর অনেক কথার সাথে একমত হবে না। তারপরও অন্তত: পরবর্তীকালের উদ্ভাবন এবং অগ্রগতির অর্থ তারা বলার আশাটুকু করতে পারে। এটা জানা কথা যে, তারা অর্থা সাধারণ মানুষ কথা বলা শুরু করলেই ধর্ম বা ধর্মের দালালরা তাদের বাধা দেবে। তারপরও তারা দাবী করে যে তারা জানে। শুধুমাত্র জানা নয়, তারা সবকিছু জানে। ঈশ্বর অস্তিত্ববান, শুধু এটুকু জানা নয়। তারা বলে যে ঈশ্বর আমাদের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন: ঈশ্বর আমাদেরকে সৃষ্টি করেছে, এই বিশ্বকে পরিচালনা করছে; এছাড়াও ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু প্রত্যাশা করেন। আমরা কি খাব, কি পড়ব, এমনকি আমরা যৌনতাকে কোন দৃষ্টিতে দেখব ইত্যাদি। অন্যভাবে বললে বলা যায়, এ ধরণের বিস্তৃত এবং জটিল আলোচনায় আমরা খুব খুব স্বল্প বিষয়ে অনেক অনেক বেশি জানি। তারপরও মানুষকে আলোকিত করার প্রত্যাশা আমরা করি। যাবতীয় দলাদলির মধ্যে একটি বিষয়ে আমরা সবাই একই দলভুক্ত। 

আমাদের চাহিদা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য ধর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে এ বিষয়ে কারও কোন মতভেদ নেই। এ ধরণের বোকামো কিছুটা অহংকারের সাথে মিশ্রিত থাকে। এই ধরণের অহংকারকে ব্যবহার করে বিতর্ক থেকে বিশ্বাসকে বাদ দিতে হবে। যে ব্যক্তি নিজের ভাবনা সম্পর্কে স্থির প্রতিজ্ঞ এবং নিজের বিশ্বাসের স্বপক্ষে স্বর্গীয় অজুহাতকে ব্যবহার করেন, তিনি আসলে মানব প্রজাতির শৈশবাবস্থায় রয়ে গেছেন। আমরা দীর্ঘকাল আগেই সেই অবস্থাকে বিদায় জানিয়েছি। আর অন্য সব বিদায়লগ্নের মত এটাকেও দীর্ঘায়িত করতে চাই না। 

ধর্মের সাথে বিতর্ক থেকে সবধরণের বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এটা সমাপ্তি নয় বরং এখান থেকেই শুরু করতে হবে। দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস, মানব প্রকৃতি নিয়ে সব ধরণের আলোচনা এই ধর্মের সাথে বিতর্ক দিয়েই শুরু করতে হবে। কারণ সুন্দর ভবিষ্যত অথবা সভ্য জীবনের জন্য যে বিতর্ক তার সমাপ্তি থেকে নতুন করে শুরু করা যায় না। ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বরূপ বেশ স্পষ্ট। কারণ এখনও জীবনের বিবর্তন ঘটছে, একে অস্বীকার করা সম্ভব নয়। 

মৃত্যুভয়, আঁধারের রাজ্য, অজানা জগত এবং সবগুলোর জন্য যতোক্ষণ পর্যন্ত কাতর হইনি ততোক্ষণ পর্যন্ত প্রাণের বিবর্তন থেমে যাবে না। এই কারণে ধর্মের সাথে বিতর্ককে আমি থামাই না। আপনারা হয়ত বলবেন যে, এটা আমার জন্য স্বাভাবিক। কিন্তু ধর্ম কি আমাকে একই রকম প্রশ্রয় দেবে? আমি এটা জিজ্ঞাসা করছি, কারণ আমার সাথে আমার ধর্মভাবাপন্ন বন্ধুদের কিছু বাস্তব ও গুরুতর পার্থক্য আছে। যারা সত্যিকারের স বন্ধু তারা অবশ্য এতে সায় দেবে। আমি তাদের গথিক রীতির ক্যাথেড্রাল (Cathedral) দেখে বিস্মিত হই। এক মুর্খ ব্যবসায়ীর কাছে আসা আরবী কোরানের চীকারকে "সম্মান" করি। এমন কি হিন্দু ও জৈনদের সান্তনা বা স্বস্তি পাবার জায়গাটি সম্পর্কেও আমি আগ্রহ বোধ করি। কোন রকম বিনয়ের বিনিময় ছাড়াই আমি এমন করতে থাকব। কিন্তু আসলে ধর্ম শেষ পর্যন্ত কোন কিছু করতে সক্ষম নয়। আমি যেভাবে বলছি এবং যেভাবে আপনি পড়ছেন, ধর্মভাবাপন্ন মানুষেরা এইসব কথাকে আক্রমণ করতে, ধ্বংস করতে চায়। তারা আমাকে এবং আপনাকে খুন করার জন্য নানারকম পদ্ধতির কথা চিন্তা করে। বিভিন্ন মানবিক কষ্টকর অর্জনের বিষয়ে যে সব অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে তাতে আমি আমি একটা কথাই বলতে পারি। আর তা হল -"ধর্ম সবকিছুকে বিষাক্ত করে তোলে।" 

সমাপ্ত