প্রধান উপদেষ্টার কাছে খোলা চিঠি

অনন্ত বিজয় দাশ, মাহবুবুল আলম, মামুন আল ফারুক, আনিসুজ্জামান মুকুট, ইমন, অনন্ত, পলাশ

 

মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা,

      আপনার কাছে আজকের এ চিঠি লিখতে হবে, আমরা কখনো ভাবতেও পারিনি (আমরা কায়মনোবাক্যে কামনা করি, আর কাউকে যেন এ ধরনের চিঠি না লিখতে হয়), তবু অসহায় হয়ে চরম ব্যথিত হৃদয়ে এ চিঠি লিখতে বসেছি, কারণ আজকের এ অসহায়ত্বের দিনে আপনিই পারেন আমাদের সম্বল হয়ে দাঁড়াতেকিন্তু আমরা জানি না, এ চিঠিটি আপনার কাছে পৌঁছুবে কি-না 

      কিছুদিন আগেও আমাদের সবার চোখে-মুখে রঙিন স্বপ্ন ঝলমল করছিল, মাত্র দু-এক মাসের মাথায় অনার্স পাঠ চুকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি ডিগ্রি অর্জন করব; সবাই নানা স্বপ্নের জাল বুনছিলাম ভবিষ্য জীবন নিয়ে; কিন্তু হঠা করেই গত ২১ শে এপ্রিল আমাদেরই সহপাঠী-বন্ধূ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে অপহরণ হয়ে যায়, পাষণ্ডদের দ্বারা প্রচণ্ড শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ক্ষোভে-দুঃখে-লজ্জায়-অপমানে হারপিক খেয়ে আত্মহত্যা করতে যায়, উদ্ধার হয় পরের দিন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেআমরা কল্পনাও করতে পারিনি, চোখের সামনে কখনো এ রকম ঘটনা দেখতে হবে দুর্বৃত্তের দুঃসাহস দেখে চমকিত হতে হয়, কোন দেশে বাস করছি আমরা! বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সংরক্ষিত এলাকা থেকে (অন্তত আইনগত দৃষ্টিতে হলেও) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অপহরণ হয় বহিরাগতের দ্বারা, বিচারপ্রার্থীদের হুমকি দেয় এসিড মেরে মুখ ঝলসে দেবে! 

     মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, আপনি একটু খোঁজ করলেই জানতে পারবেন আমাদের এ সহপাঠীর পরিবার আজ কতটা অসহায়; লোকলজ্জা আর প্রাণভয়ে তাঁরা কেউ মামলা করতে রাজি হচ্ছে নাএই মুহূর্তে মেয়েটা- সুস্থ হয়ে উঠুক, বেঁচে থাকুক- এটাই তাদের চাওয়া; কিন্তু আমরা ভাবতে পারছি না, সহ্যও করতে পারছি না-এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কী করণীয় কিছুই নেই? রাষ্ট্র কী পারে না এই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াতে, তাদেরকে সাহস যোগাতে? বিশ্ববিদ্যালয় পড়য়া মেয়ে ধর্ষিত (ক্ষমা করে দিয়ো সহপাঠী, এ শব্দ আমরা ব্যবহার করতে চাইনি) হওয়ার পরও যদি বিচার না পায়, যদি বিচার না হয়, তবে কার হবে? কে বিচার চাইবে

     মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতিতে আমরা ভাতের বদলে আলু খেতে রাজি আছি, পেট চেপে ক্ষুধা ভুলতে রাজি আছি, যাতায়াত ভাড়া এক লাফে দ্বিগুণ হলেও পায়ে হেটে পথ পাড়ি দিতে রাজি আছি; কিন্তু চোখের সামনে থেকে দুর্বৃত্তের দল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে তুলে নিয়ে যাবে, রাতভর লাঞ্ছিত করে হাসপাতালে ফেলে যাবে, আমাদের সহপাঠী-মিষ্টি আপা জীবন-মৃত্যুর দরজায় দাঁড়িয়ে ছটফট করবে, আর তা দেখে আমরা চুপ করে বসে থাকবো, ভবিষ্য বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখবো- আমাদের শরীরের চামড়া তো এতটা পুরু হয়ে যায়নি 

     মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ, একটা কিছু করুন অপরাধীকে এভাবে ছেড়ে দিবেন না, ছেড়ে দেয়া যায় নাআমরা বিশ্বাস করতে চাই, আমাদের দেশের শাসনব্যবস্থা এতটা অকার্যকর বা ভঙ্গুর হয়ে যায়নি; অপরাধী যতই ক্ষমতাবান, প্রভাবশালী আর বিত্তবান-ই হোক না কেন, তার দুঃসাহস আর ক্ষমতার দম্ভ চূর্ণ করে দেবার ক্ষমতা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের আছে 

লেখকবৃন্দ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী।