কোরবানী, দেশের ১০০০ কোটি টাকা ক্ষতি, সিডোর এবং একটি দৈববানী

আসিফ ইকবাল

প্রতি বছরের মতো গত ২১ ডিসেম্বর দেশব্যপী ঘটে গেল কোরবানী নামের গো-হত্যাযজ্ঞকি নারকীয় উল্লাসে পাঁচ জন ছয় জন মিলে প্রকাশ্য দিবালোকে একটি আস্ত গরুকে টেনে হিচড়ে মাটিতে ফেলে! তারপর সেই আদিম মানুষদের মতো ধারালো ছুড়ি নিয়ে নিরিহ পশুটার উপর ঝাপিয়ে পড়েশিশুরা তাকিয়ে দেখে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটছে কিছুক্ষণ আগে মনের আনন্দে ঘাস খাওয়া গরুটির ধমনী থেকে রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকে গরুর ছিন্ন মাথা, নাড়িভুড়ি, থকথকে রক্তআমার মনে বাজতে থাকে ব্লেইজ প্যাসকেলের সেই বিখ্যাত উক্তি: "Men never do evil so completely and cheerfully as when they do it from religious conviction" 

সেই শৈশব থেকেই আমরা শুনে আসছি এই কোরবানীর তথা এই জান্তব উল্লাসের মধ্যে রয়েছে ত্যাগ ও তিতিক্ষার অমোঘ মন্ত্রকিসের ত্যাগ? কিসের তিতিক্ষা? ধরি একজন আবদুল করিম ৫ হাজার টাকা শেয়ারে একটি গরু কিনে কোরবানী দিয়ে আত্মিয়স্বজন এবং অভাবীদের নামমাত্র কিছু মাংস দিয়ে ভাগে পেল ২ হাজার টাকার মাংসতারপরই তার বাসায় নানান জায়গা থেকে আসতে থাকে আরো কিছু মাংসএবং দিনের শেষে তার ফ্রিজে কিন্তু কমপক্ষে নিজ শেয়ারের ৫ হাজার টাকার মাংস হয়ে যায়এবার বলুন আবদুল করিম কি ত্যাগটা করলো? ত্যাগ যদি এর মধ্যে কিছুটা থেকে থাকে তাহলে তা করে থাকে বেচারা গরু-ছাগলগুলো, অকাতরে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েইসলাম কি তাহলে এইসব গবাদী পশুর কাছ থেকেই আমাদেরকে ত্যাগের শিক্ষা নিতে বলে? কোরবানীর মধ্য দিয়ে আবদুল করিমদের যা হয় তা হলো একসাথে বেশকিছু পরিমান মাংস কয়েক দিনে রাক্ষসের মতো সাবাড়ের মধ্য দিয়ে একটি স্থুল ভোগবাদের ব্যবস্থাআমাদের দেশে তবুও তো গরীবগাবড়াগণ দুইচার টুকরা মাংস পায়মূল ইসলামে কিন্তু তারও কোন বাধ্যবাধকতা নেইআপনি যে কোন আলেম উলেমাকে জিজ্ঞেস করলেই এর সত্যতা সম্পর্কে জানতে পারবেন

এবার আমি একটি সাধারণ হিসাব করে দেখাব এই কোরবানীর মধ্য দিয়ে দেশের কমপক্ষে কত টাকা ক্ষতি হয়ে গেলযদি ধরে নেই দেশের ২০% লোকও কোরবানী দেয় তাহলে বর্তমান জনসংখ্যা ১৮ কোটি ধরলে কোরবানী দেয় মোট ৩,৬০,০০০০০ জনএর মধ্যে প্রতি কোরবানীদাতা যদি ৩০০০ টাকা করে ব্যয় করে তাহলে তারা কোরবানী বাবদ ব্যয় (প্রকৃত অর্থে অপচয়) করে মোট ১০৮০,০০০০০০০০ টাকাধরে নেই চামড়া বাবদ রাষ্ট্র পেল ৮০,০০০০০০০০ টাকাতাহলে কোরবানী বাবদ মোট অপচয় হলো ১০০০,০০০০০০০০, মানে এক হাজার কোটি টাকাএই অপচয় ব্যক্তি ব্যক্তি করে রাষ্ট্রের হয়ে যায়তার মানে প্রতি বছর এই ইসলাম নির্দেশিত জান্তব উল্লাসে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে এক হাজার কোটি টাকা

প্রলয়ঙ্করী সিডোরে কিছুদিন আগে বাবা-মা, ভাইবোনসহ অজস্র স্বজন হারিয়েছে দেশের এগারোটি জেলার খেটে খাওয়া অতিশয় সাধারন মানুষএবং সেই সাথে হারিয়েছেন হাড়ি পাতিল, মাছ ধরার জাল, ঘর, গাছপালা, গৃহপালিত পশু, অনেক কষ্টে জমানো কিছু টাকা, কানের দুল সহ সবকিছুএকবারও কি কোরবানীদাতাদের কেউ ভেবেছেন এই টাকাগুলো দিয়ে এবার গরু না খেয়ে সিডোর আক্রান্ত মানুষগুলোকে দিয়ে দেই? এই এক হাজার কোটি টাকা দিয়ে কি শুধুই তাদের একবেলার আহার জুটতো? নাকি তাদের মুখে সারা জীবনের জন্য একটি হাসির পোচ একে দেয়া যেত?

মহান আল্লাহতায়ালা যে কথা বলতে পারেন সেই প্রমাণ নাকি তিনি কয়েকবার রেখেছেনপাহাড়ে পর্বতে, গুহায়কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত তাকে কোন কথা বলতে দেখা যাচ্ছে নানবী না হয় আর নাই পাঠালেন, কথা বলতে তো কোন দোষ নেই বিজ্ঞানের কল্যানে যদি স্যাটেলাইট টিভি, ইন্টারনেট ইত্যাদির মাধ্যমে যে কোন ঘটনা যদি এখন সারা দুনিয়ার মানুষ একই সাথে দেখতে এবং শুনতে পারে, তাহলে সর্বশক্তিমান আল্লাহ কি এমন একটি ব্যবস্থা করতে পারেন না যে তিনি সারা দুনিয়ার পিছিয়ে পড়া মুসলমান জনসাধারনের উদ্দেশে একটি বানী দিবেন যা কেবল একজন নির্দিষ্ট মহাপূন্যবান ব্যক্তিই শুনবেন না, শুনবেন সকলে? আর সেই ব্যবস্থা করে তিনি যদি সকল মুসলমানের উদ্দেশ্যে বলতেন, ‘হে গরুর অধিক গরু মুসলমানগন, তোমরা কি দেখনা আমি ভূমিকম্প, সুনামি, সিডোর ইত্যাদির মাধ্যমে মূহুর্তের মধ্যে কি পৈশাচিক নৃশংসতায় ছিন্নভিন্ন করে দেই বি¯তৃত জনপদদেখনা কিভাবে কুকুর বেড়ালের মতো ভাসতে থাকে অসহায় নারী, বৃদ্ধ, জোয়ান আর অপাপবিদ্ধ শিশু? যাও, তোমরা যাও সেখানে কোরবানী আর দিতে হবে না তোমাদেরসেখানে যেয়ে তাদের পাশে দাড়াও আর আমার ধর্ষকামীতার ক্ষতগুলো কিছুটা হলেও কমাও’ 

ঢাকা, বাংলাদেশ

২২ ডিসেম্বর ২০০৭