কোন খেলা যে খেলছ তুমি
অনিরুদ্ধ আহমেদ
এক
আজকাল রাজনৈতিক কিংবা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আসলেই , পশ্চিমে প্রাচ্যে সর্বত্র “ লেভের প্লেয়িং ফিল্ড” অর্থাৎ একটি সুষম খেলার মাঠের কথা সকলেই বলেন । বাংলাদেশের রাজনীতি এবং বিশেষত নির্বাচন প্রক্রিয়া সাম্প্রতিককালে এতটাই পক্ষপাতদুষ্ট হয়েছিল যে গোটা প্রক্রিয়ার প্রতি জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে এই সমতল মাঠের কথা বলা হয় যেখানে সকল রাজনৈতিক দল ও তাদের অনুগামি অনুসারীরা সমান সুযোগের ভিত্তিতে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সৃযোগ পাবেন। ভোটকেন্দ্র থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন নির্নীত করার কাজ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি স্তরেই ক্ষমতাসীন দল তার প্রভাব বিস্তার করেছিল এই নিকট অতীতেই এমন কী রাষ্ট্রপতির দপ্তরকে ও দলীয় ভাবে দূষিত করার চেষ্টা চালানো হয়েছিল , বিচারকের অবসরগ্রহণের বয়স সীমা বর্ধিত করার আপাত নিস্পাপ কাজের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার এক ধরণের চিরবন্দবস্ত ও করেছিল বি এন পি সরকার । সেই পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন বর্জন এবং নির্বাচন কমিশনের সংস্কারের জন্যে চৌদ্দ দলীয় জোটের জোর দাবীর মুখে বিপর্যস্ত হয় বি এন পি এবং অল্প সময়ের ব্যববধানে সামরিক বাহিনী সমর্থিত একটি তত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতাসীন হয় , রাষ্ট্রপতিকে তত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের পথ থেকে কার্যত অব্যাহতি দেওয়া হয়। সন্দেহ নেই যে সেই চরম কারচুপির নির্বাচনের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে জনসাধারণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো এবং বর্তমান এই অন্তবর্তী সরকার তাঁদের বেশ কিছু ভাল কাজের জন্যে প্রশংসিত হলেন। তবে এ কথাও সত্যি যে প্রাথমিক সেই ঢালাও প্রশংসা ও জনপ্রিয়তার সময় পেরিয়ে এখন সরকারের হাল আমলের কর্মকান্ডের প্রতি ঘরে বাইরে সকলেরই দৃষ্টিনিবদ্ধ , প্রশ্ন ও উঠছে অগুণতি । সরকার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বি দলগুলোর সঙ্গে সমান আচরণ করছে কী না সে প্রসঙ্গটা এখন বেশ জোরে শোরেই উচ্চারিত হচ্ছে। স্বস্তির বিষয়টি হচ্ছে এই যে এই সেদিন ও প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমেদ আবারও সেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বললেন , নিশ্চিত করলেন ২০০৮ সালের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টিও।
দুই
প্রকৃত পক্ষে প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টাদের অনেকেই এমন সব কথা বলছেন যে সব কথা জনসাধারণ তাঁদের কাছে শুনতে চায়। কিন্তু যেমনটি আমার এক বন্ধু সেদিন বললেন ,“আমরা যা শুনতে চাই সে কথা সরকার আমাদের শোনাচ্ছে, কিন্তু আমরা যা দেখতে চাই , বাস্তবে দেখছি তার উল্টোটা।” স্পষ্টতই রাজনীতি সচেতন আমার ঐ বন্ধুটি বললেন যে সরকারের কথা ও কাজে সাম্প্রতিক কালে একটা বড় রকমের ফারাক লক্ষ্য করা যায়। তা হলে জনসাধারণ কি দেখতে চায় সরকারের কাছে ? দেখতে চায় সম্পুর্ণ নিরপেক্ষতা , কেবল নির্বাচন পরিচালনায় নয় , রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির প্রতি তাদের সামগ্রিক আচরণে। বর্তমান সরকারের দূর্নীতি দমন অভিযানের প্রশংসা করেননি এমন লোক বোধ করি খুঁজে পাওয়া যাবে না কিন্তু দূর্নীতি দমন যদি দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন না হয় , তা হলে সে অভিযানের সাফল্য নিয়ে সংশয় দেখা দেবে। দুষ্ট আর শিষ্টের সংজ্ঞা নির্ধারণটিও হতে হবে বস্তুনিরপেক্ষ দৃষ্টিতে। সে রকম দৃষ্টিকোন যেন মনে হয় ক্রমশই ক্ষীন হয়ে আসছে আর সে জন্যেই যে প্রত্যাশা ও আগ্রহ ছিল জনসাধারণের মধ্যে এই নতুন তত্বাবধায়ক সরকারকে কেন্দ্র করে , মনে হচ্ছে সেই আগ্রহের জোরে ভাটা পড়েছে যথেষ্ট। সরকার যতখানি জোরে শোরে প্রথম দিকের অভিযানে দুটি বৃহৎদলের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা চালাচ্ছিল , সেই প্রচেষ্টা ব্যাহত হওয়ায় আমার সেই বিশ্লেষক বন্ধুটি এমন কী এমন সংশয় ও প্রকাশ করলেন সম্ভবত কিছুটা পরিহাসচ্ছলেই যে প্রধান উপদেষ্টা কি কোন উপদেশ দিচ্ছেন , না কি আদেশ উপদেশ নিচ্ছেন ? বাহ্যত এই যুক্তরাষ্ট্রে এমন আশঙ্কা ও প্রকাশ করলেন কেউ কেউ যে ১১ ই জানুয়ারীর তত্বাবধায়ক সরকারের প্রতিশ্রুতি ও কর্মসুচী থেকে এখনকার তত্বাবধায়ক সরকারের কর্মসুচী ভিন্ন রকমের । একটি অভিন্ন সরকারের কর্মপ্রনালীতে যে মেরুবর্তী বৈপরীত্য লক্ষ্য করা গেছে তাতে সরকারের ভেতরের বিভিন্ন শক্তির আপাত ভারসাম্য নিয়ে ও প্রশ্ন উঠছে। রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীন সংস্কার সাধনের যে প্রচেষ্টা স্বতস্ফুর্ত ভাবে চলতে পারতো , তাতে স্থবিরতা আসে সরকারের ভুল কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে। সরকারের মধ্যে একাধিক বার পরস্পরবিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ সরকার পরিচালনার বিষয়ে এক ধরণের সংশয়ের জন্ম দিয়েছে অনেকের মনে। এই বিদেশ বিভুঁইয়ে ও প্রায়শই বৈঠকী আলাপে এই বিষয়গুলো উঠে আসে , বাঙালিরা নিশ্চিত জানতে চান, অনেকটা প্রতীকি ভাবেই যে পুতুল ও সুত্রধরের মধ্যে ্ঐকমত্য কতখানি? আবার সুত্রধরদের মধ্যে কি ঘুড়ির সুতো কাটাকাটি চলছে। সে ক্ষেত্রে কার লাটাইটা বেশী শক্তিশালি সে নিয়ে গবেষণা চলে প্রতিনিয়ত এখানকার আলাপ আলোচনায়। এমনকী ২০০৮ সালে যথাসময়ে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কী না সে নিয়ে কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিভাগের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক কমিটিতেও সংশয় প্রকাশ করা হলো। সংশয় প্রকাশিত হলো এই মর্মেও যে পাকিস্তানের মতো বড় দুটি দলের অনুপস্থিতিতে , বাংলাদেশে মৌলবাদ বিস্তার লাভ করতে পারে। যদি ও দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপ সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন গ্যাস্ট্রাইট বেশ একটা আশাবাদী চিত্র তুলে ধরলেন পাকিস্তান ও বাংলাদেশ উভয় দেশের জন্যেই কিন্তু প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের প্রশ্ন ছিল পরিস্কার । তাঁরা জানতে চাইছিলেন যে ঘোষিত এবং প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তো ? তাঁদের এ জিজ্ঞাসার পেছনে যে সংশয়টা কাজ করেছে তা ঐ সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পাবার বিষয়টি। আর সেজন্যেই বোধ করি প্রধান উপদেষ্টা সহ প্রশাসনের অনেকেই বার বার , তাঁদের সেই প্রতিশ্রুতিরই পুনরাবৃত্তি করছেন যা গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারে , ঘরে বাইরে সকলকেই এটাই আশ্বস্ত করছেন যে নির্বাচন হবেই ২০০৮ সাল শেষ হবার আগেই।
তিন
তবে কেবল নির্বাচন নয়, সব ক্ষেত্রেই এই সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখবেন, রাখবেন প্রয়োজনীয় ভারসাম্য এটা সংশ্লিষ্ট সকলেই আশা করেন। বিশেষত রাষ্ট্রপতি ইয়াজুদ্দিন আহমেদের প্রথম তত্বাবধায়ক সরকার যে নিরপেক্ষতা জলাঞ্জলি দিয়েছিল তার পর এই দ্বিতীয় তত্বাবধায়ক সরকার অন্তত কিছু দিনের জন্যে হলেও এই আস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল যে তারা সকলের প্রতি সমান আচরণ করছে। তবে সাম্প্রতিককালের কিছু কর্মকান্ড , আদেশ নির্দেশে সেই নিরপেক্ষতার প্রতিশ্রুতিভঙ্গের বেশ কিছু উপাদান লক্ষ্য করা যায়। বন্যার সঙ্গে রাজনীতিকে একাত্ম করা ঠিক নয় , নীতিগত ভাবে এ কথার সঙ্গে সকলেই একমত কিন্তু বন্যার ত্রাণ বিতরণের সময়ে কোন রাজৗনৈতিকদল ব্যানার বহন করবেন না , সেই নির্দেশটি নিয়ে যদিও রাজনীতিকরা প্রশ্ন তোলেননি , এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। বাংলাদেশে যেহেতু জরুরী আইনের আওতায় কেবল মাত্র রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ , রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ নয় সে হেতু ত্রাণ তৎপরতায় রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের পরিচিতি তুলে ধরলে মহাভারত অশুদ্ধ হতো না বরঞ্চ রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সুনাম ও পরিচিিিত তুলে ধরতে এ জাতীয় তৎপরতার সঙ্গে আরো বেশী করে সংশ্লিষ্ট হতো এবং এতে জরুরী আইনের কোন বিধিই লঙ্ঘিত হতো না। আমাদের সৌভাগ্য যে ব্যানার টানানোর প্রত্যাশায় রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ত্রাণ তৎপরতা থামিয়ে দেয়নি । কিন্তু হতবাক হয়ে এটা ও দেখতে হয়েছে যে কোন কোন সরকারী সংস্থা ত্রাণ তৎপরতায় তাদের ব্যানার বহন করেছে , ব্যানার প্রদর্শন করেছে। এই সব চেনা বামুনের পৈতের প্রয়োজন কেন হলো , সেটি বোধগম্য নয়। তবে সব চেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে , যে ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর নবজাত রাজনৈতিক দলটি (দলটির নাম আমার মনে থাকে না , সম্ভবত লিবারেল প্রোগ্রেসিভ পাটি , কারণ এখনও দলটি আঁতুড় ঘরে রয়েছে এবং এর রেজিস্ট্রেশানও হয়নি ) রীতিমতো মোটর সাইকেলের বহর নিয়ে গেছে বন্যা দূর্গতদের সাহায্য করতে। যাকে ইংরেজীতে বলে “ফ্যান ফেয়ার” তেমনি এক ধরণের প্রচার ও চাকচিক্যের মধ্যে দিয়ে দলটি যে ত্রাণ বিতরণ করতে গেল সেটি একদিকে যেমন নৈতিক দৃষ্টিতে শোভনীয় ছিল না মোটেও , অন্যদিকে তেমনি দলীয় প্রচারের বিষয়ে সরকারী নিষেধাজ্ঞার প্রতিও ফেরদৌস কোরেশীরা যে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করলেন সেটি এ কথা কি প্রমাণ করার জন্যে যে তাঁরা রাজার আশীর্বাদপুষ্ট দল , আইনের আওতায় তাঁরা পড়েন না। এই ইঙ্গিতই যদি বহন করে থাকে ফেরদৌসী কোরেশির মোটর সাইকেলের বহর , তা হলে লেভের প্লেইয়িং ফিল্ড কি এখনও মিথ হয়েই রইলো ? আর শুধু কোরেশি সাহেবের মোটরসাইকেল বহরই বা কেন, তিনি যে দল গঠন করলেন, রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ থাকার সময়ে, তার পেছনে কোন শক্তি কাজ করেছে এবং জরুরী আইনের ছত্রচ্ছায়ায় তাঁর দলীয় রাজনীতির এই বিকাশ সত্যিই তত্বাবধায়ক সরকারের নিরপেক্ষতাকে ক্রমশ মিথে পরিণত করছে।
চার
অসমতার আরো একটি স্পষ্ট দিক হচ্ছে দুই প্রাক্তন নেত্রীর প্রতি সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণ বিষয়ে । নিঃসন্দেহেই দূর্নীতিবিরোধী অভিযানকে সবাই স্বগত জানাচ্ছেন এবং নেতা নেত্রী তা তাঁরা যত বড় মাপেরই হোন না কেন , তাঁরা কেউ আইনের ঊর্ধে¦ নন এই তাত্বিক সত্যটা ব্যবহারিক সত্যে রূপান্তরিত হচ্ছে কী সব সময়ে ? একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারাগারে নিক্ষিপ্ত হলেন “ চাঁদা বাজি” র মামলায় কিন্তু যিনি সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী , যাঁর আমলে দূর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদে গোটা দেশ ছেয়ে গিয়েছিল , যিনি নির্বাচনেও স্থুল কারচুপির আশ্রয় নেয়ার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিয়েছিলেন , তিনি এখনও টেলি-কনফারেন্স লাইনে দেশ বিদেশে কথা বলছেন , তাঁর সমর্থকদের সঙ্গে। তাঁর পুত্র তারেক রহমান কারাগারে আছেন বটে , কিন্তু অপর পুত্র আরাফাত রহমান কোকো , যিনি নিজেও সম্পদের পাহাড় গড়েছিলেন কিংবা তাঁর ভাই মেজর সাইদ ইস্কান্দার এঁদের কেশাগ্র ও স্পর্শ করতে পারেনি ড ফখরুদ্দিন আহমেদের এই তত্বাবধায়ক সরকার। সত্যবটে কোকোকে ধরা হয়েছিল দরকষাকষির জন্যে কিন্তু সে বাজিতে সরকার হেরে যাওয়া সত্বেও কোকো রয়ে গেলেন মুক্ত। খালেদা জিয়ার এক ভাই শামিম ইস্কান্দার বিমানের সর্বনাশ করে , সম্ভবত পালিয়ে বিদেশে রয়েছেন , অপরজন সাঈদ ইস্কান্দার এখনও বহাল তবিয়তেই রয়েছেন , যদিও দুষ্ট লোকেরা বলে তারেক একাই সব দোষের ভাগী নন , বিষয়টা মামা ভাগ্নের একান্ত নিজস্ব। তারেকের বিরুদ্ধে চার্জ শীট গঠনে বিলম্বের এটাও একটা কারণ কী না সে নিয়ে সংশয় রয়েছে। শেখ হাসিনাকে তাঁর অসুস্থ স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি এখনও , তাঁর পুত্র-কন্যা-বোনের সঙ্গে ফোনে কথার বলার অনুমতি ও দেওয়া হয়নি। এর বিপরীতে লক্ষ্য করার বিষয় যে তারেক রহমানকে কাশিমপুর জেলে নেওয়ার অজুহাতে , তাঁকে সি এম এইচ এ নিয়ে , তাঁর মার সঙ্গে দেখা করানো হয়েছে , কথা বলানো হয়েছে। অনেকেই বলছেন যে বস্তুত তারেক এবং খালেদা ঢাকা সেনানিবাস থেকে কাশিমপুর কারাগার পর্যন্ত একই গাড়িতে ভ্রমণ করেছেন। জেল কোডে যা হাসিনার জন্যে নিষিদ্ধ , তা তারেকের জন্যে সিদ্ধ হয় কি ভাবে ? আরো লক্ষ্য করার বিষয় যে আব্দুল জলিল কিংবা শেখ সেলিমের রিম্যান্ডর জিজ্ঞাসাবাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ বৈদ্যতিন মাধ্যমে যে ভাবে বিতরণ করা হয়েছে , বি এন পি ‘র কোন নেতার জিজ্ঞাসাবাদের বিবরণ আমরা শুনতে পাইনি।পাঁচ
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ব্যত্যয় ঘটেছে, জামায়াতে ইসলামী দলের ক্ষেত্রেও। জনৈক উপদেষ্টা যখন আমতা আমতা করে আকারে ইঙ্গিতে জামায়াতে ইসলামিকে “ দূর্নীতিমুক্ত” বলে অভিহিত করেন, তখন জামায়াত কাদের আশীর্বাদে ( আশীর্বাদ কথাটা হিন্দুয়ানি , জামায়াতের জন্যে তা হবে দোয়ায় , দয়ায় ও বলা যায় !) এই সুনাম অর্জন করছে সেটা জানা দরকার । কথিত ইসলামি এন জি ও করার নামে জামায়াতের যে মন্ত্রী দলীয় নেটাওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন , সরকারী ক্ষমতার অপব্যবহার করে , সেই দূর্নীতির বিচার করবে কে ? সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল বারাকাত এক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে হিন্দুদের হাজার হাজার একর জমি দখল করে নিয়েছে। সেই দূর্নীতির বিচার করবে কে ? যে দলটি নীতির পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করছে বলে দাবী করে, অন্তত যাদের দর্শনে ধর্মীয় নীতিবোধ রয়েছে বলে দাবী করা হয় , সেই দলটি আপাদমস্তক দূর্নীতিগ্রস্ত একটি সরকারের সব রকমের অপকর্মের ভাগীদার ছিল , নারী নের্তৃত্ব সম্বন্ধে তাদের এক সময়কার অবস্থান থেকে সরে এসছিল , সেই দলটিকে না ইসলামি দৃষ্টি ভঙ্গিতে না ধর্মনিরপেক্ষ নৈতিকতায় বিবেচনায় রাখা যায়। ২৮শে অক্টোবরের হত্যাকান্ড ঘটানো , জে এম বি ‘র প্রতি তাত্বিক সমর্থন এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে , স্বাধীনতা বিরোধী ভুমিকার জন্যে জামায়ত সদস্যরা কেন শাস্তি পাবে না সে কথা উঠতেই পারে। সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ নিজেও বলেছিলেন যে স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার হয়নি স্বাধীন দেশে। এই ক্ষোভকে কাজে পরিণত করার কোন রকম উদযোগ তো দূরে থাক , দূর্নীতি দমনের অভিযানে জামায়াত যে সকল স্পর্শের বাইরে থাকছে এবং এর একটি সম্ভাব্য কারণ ও যখন এই সরকারের একজন উপদেষ্টা দাঁড় করান তখন মনে হয় কোথায় যেন একটা স্ববিরোধীতা চলছে সরকারের মধ্যেই।
অতএব সর্ষের ভেতর যদি ভুত প্রবেশ করে এবং অদ্ভুতুড়ে ঘটনাগুলোই চলতেই থাকে, তা হলে সরকারের প্রতি আস্থা কমতেই থাকবে। খেলার জন্যে সমতল ভুমির প্রয়োজন এই সত্যের পাশাপাশি , আগেতো জানতে হবে কোন সে খেলা ? রবীন্দ্রনাথের বিধাতার খেলা বোঝা মুস্কিল যতটা , তার চেয়েও বোঝা মুস্কিল বাংলাদেশের বিধাতাদের ( বিধান দাতা অর্থে) খেলা ?
এই লেখাটি ঢাকার সমকালে পত্রিকার ২৩শে অগাস্ট ২০০৭ , প্রকাশিত । লেখক অনিরুদ্ধ আহমেদ , যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক ও কলামিস্ট।