পাকিস্তান: সংশয়ের আবর্তে ক্ষীণ এক রূপালি রেখা
অনিরুদ্ধ আহমেদ
এক.পাকিস্তানের ইতিহাসের এমন যখন সুদিন , বহুদিন পর সেখানে আবার গণতান্ত্রিক বিজয়ে যখন প্রত্যেকে আশাবাদি তখন আমার এই লেখার এমন নেতিবাচক শিরোনামে কেউ কেউ হয়ত চমকে উঠবেন , ভাববেন পাকিস্তান বিদ্বেষের কারণেই বোধ হয় পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক শক্তির এমন বিজয়কে আমি খাটো করে দেখছি অথবা পাকিস্তানকে নিয়ে আমার নৈরাশ্যবাদ , নিদেনপক্ষে সংশয়বাদ, এতখানি প্রবল যে পাকিস্তানের ইতিহাসের এই হঠাৎ আলোর ঝলকানিকে আমি সদর্থক ভাবে বিশ্লেষণ করতে পারছি না। পাকিস্তানের এই বিজয় , পাকিস্তানকে সত্যিকার অর্থে , আধুনিক ও উদার ও সহনশীল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করবে কী না সে নিয়ে আমার মনে , সত্যি বলতে কী , যথেষ্ট সংশয় আছে । যদি ও মানতে দ্বিধা নেই যে পাকিস্তানের ইতিহাসে, সম্ভবত সত্তরের নির্বাচনের পর, এই প্রথম সব চেয়ে আলোচিত নির্বাচন হয়ে গেল এবং এই নির্বাচনের ফলাফলে পাকিস্তানের প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও আপাত দৃষ্টিতে গণতন্ত্রের যে বিজয় সূচিত হলো এবং সামরিকতন্ত্র কিংবা সামরিক বাহিনী সমর্থিত সরকার যে চূড়ান্ত প্রত্যাখ্যানের সম্মুখীন হলো সেটি গণতন্ত্র প্রেমী মানুষ মাত্রের কাছেই আশার কথা। এই নির্বাচনে কেবল যে জেনারেল মুশাররফ সমর্থিত , কিংবা বলা যায় জেনারেল মুশাররফকে সমর্থনকারী, মুসলিম লীগ ( কায়েদে আজম) এর ভরাডুবি হলো তাই-ই নয় বরঞ্চ একই সঙ্গে পাকিস্তানের মৌলবাদী দলগুলো, মৌলবাদের শক্ত ঘাঁটিগুলোতেই বিপর্যস্ত হলো। বিশেষত আফগানিস্তান সংলগ্ন পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে, বেশ অনেক দিন পর আবার ধর্ম নিরপেক্ষ দল আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির ( যা একসময়কার ন্যাশনাল আওয়ামিী পার্টিরই রূপাান্তরিত পরিচয়) বিজয় , সেখানে মুসলমান মৌলবাদীদের আস্তানাকে দূর্বল করেছে এবং জঙ্গি তৎপরতার বিপক্ষে একটি গণতান্ত্রিক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। মুশাররফ ক্ষমতায় টিকে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করতে গিয়ে যে দ্রুত জনসমর্থন হারিয়েছেন তার সংখ্যাতাত্বিক হিসেব পাওয়া যায় সেখানকার নির্বাচনের ফলাফলে। শেষ পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন কী না , না কি জাতীয় সংসদে অভিশংসনের সম্মুখীন হবেন , না কি বরখাস্তকৃত প্রধান বিচার পতি ইফতিখার মোহাম্মদ চৌধুরীর পুনর্বহালে আদালতের আদেশেই কি , নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর ঐ পদে টীকে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে , এসব প্রশ্নের জবাবেই বোঝা যাবে যে পাকিস্তানের রাজনীতির জটিলতা হ্রাস পায়নি আদৌ। গণতন্ত্রিক শক্তির এই জয়লাভকে যদি মুশাররফের এই পরাজয়ের মাপকাঠিতে পরিমাপ করা হয় তা হলে নিশ্চয়ই এটি বিরাট একটি অর্জন কিন্তু এই বিজয়ের অন্যমাত্রাগুলোও বিবেচনায় নেওয়ার দাবী রাখে।আপাত দৃষ্টিতে এটি গণতন্ত্রের বিজয় বলে চিহ্নিত হলেও , বস্তুত পাকিস্তানে গণতন্ত্র যে নতুন জটিল সঙ্কটের সম্মুখীন হতে চলেছে , সে বিষয়ে কোন সংশয় নেই। আর সেই জটিলতার আবর্তে আরো একবার দেশটি নিপতিত হলে , এ থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লাগবে আরো এক দশক। লক্ষ্য করার বিষয় পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি চমকপ্রদ চক্রকাল ( সাইকেল ) রয়েছে। সেই অনুপাতে পাকিস্তানে এক সঙ্গে বড় জোর দুই মেয়াদ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক সরকার বহাল থাকে কোন ক্রমে এবং তারপরই আপনা থেকেই সামরিকতন্ত্রের চক্রকালের সূচনা হয়। সেই দীর্ঘ ইতিহাস পরিক্রমা না করে ও বলা যায় যে পাকিস্তানে জেনারেল জিয়াউল হকের মৃত্যু পরবর্তী সময়ে সেখানে গণতন্ত্রের যে সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং ভুট্টো তনয়া বেনজির যখন নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসেন , তখনকার সেই উত্তঙ্গ আশাবাদ বেশি দিন টিকে থাকেনি । বস্তুত বেনজির ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টির কাছ থেকে জনগণের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি কিন্তু তারা দু বার ক্ষমতায় গিয়ে দূর্নীতির পাহাড় গড়েছিলেন এবং সদ্য নিহত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ক্ষমতায় থাকার সময়ে , তাঁর স্বামি আসিফ আলী জারদারী যে নজির বিহীন দূর্নীতির আশ্রয় নিয়েছিলেন , সেটিও নিন্দনীয় বিষয়। বেনজিরের প্রভা ও প্রতিভা নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে সেখানকার সামন্তবাদী পদ্ধতির সামনে।
দুই
স্মরণ করা যেতে পারে যে ১৯৯৯ সালে “ উড়োজাহাজ অভূত্থান “এর মাধ্যমে মুশাররফ যে ভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন , তার আগের সময়টাও সুখকর ছিল না মোটেই। নেওয়াজ শরীফের মুসলিম লীগ , দুই তৃতীয়াংশ ভোটে জয়লাভ করার পর ও , অনেকটা বাংলাদেশের বি এন পি সরকারের মতোই সর্বত্র এক ধরনের “ গণতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র “ চালু করেছিল। আর তারই একটি ঘৃণ্য রূপ আমরা লক্ষ্য করি যখন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ঘরে প্রবেশ করে , নেওয়াজ শরীফের দলের উচ্ছৃঙ্খল লোকজন এবং শেষ পর্যন্ত বিচারপতি পালিয়ে রক্ষা পান যদিও , আদালতের মর্যাদা রক্ষা পায়নি সেদিনও। অতএব আদালত অবমাননায় মুশাররফের আগেই নেওয়াজ শরীফ যে দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন , পরিহাসের বিষয় একই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটান মুশাররফও, যার মূল্য মুশাররফকে দিতে হলো অমূল্য ভোটের অঙ্কে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকামী নেওয়াজ এ বিষয়ে কতখানি আন্তরিক সে নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। অন্যদিকে বেনজিরের মৃত্যুর পর এখন যখন আসিফ জারদারী কার্যত দলের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত তখন তাঁর কাছ থেকে রাষ্ট্র কি আশা করতে পারে , সে নিয়ে সঙ্গত কারণে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে সৌভাগ্যের বিষয এই যে জারদারী নিজে প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থি হচ্ছেন না ,তিনি নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি , তাঁর দল থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্যে একাধিক নাম শোনা যাচ্ছে। বস্তুত পাকিস্তান পিপলস পার্টি এবং মুসলিম লীগ ( এন ) উভয় দলেরই অতীতের পর্বত প্রমাণ বিচ্যুতিগুলোকে এখন সকলেই খাটো করে দেখছেন এই কারণে যে জেনারেল মুশাররফের অপসারণের জন্যে , গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত এই দুটি দলের গুরুত্ব সর্বাধিক। পাকিস্তানের জনগণ ও বোধ হয় এই মূহুর্তে চাইছেন যে দুটি দলের মধ্যে একটি মোটা দাগের বোঝাপড়া হোক , যাতে করে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতা থেকে খানিকটা প্রান্তিক অবস্থানে নেওয়া যেতে পারে। সুতরাং এই বিজয় যেমন মুশাররফের প্রতি অনাস্থার শামিল , তেমনি এই বিজয়ের মাধ্যমে সেই অনাস্থা কাজে পরিণত হোক সেটা ও জনগণ চাইতেই পারে। আর নেওয়াজ শরীফ জনগণের এই দাবীকে কাজে লাগাতে রাজনৈতিক কৌশলে এগিয়ে আছেন, যথেষ্ট। নেওয়াজ শরীফ এবং আসিফ আলি জারদারির মধ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচনোত্তর প্রথম বৈঠকে একত্রে কাজ করার জন্যে যে মোটা দাগের সহমত হয়েছে , সেটি বাহ্যিক ভাবে পাকিস্তানের গণতন্ত্রের জন্যে অত্যন্ত সুখপদ বলে মনে হতে পারে কারণ মুশাররফ জরুরী অবস্থা আরোপ এবং প্রধান বিচারপতি ইফতিখার মোহাম্মদ চৌধুরীকে অপসারণ করে নিজের ভাবমূর্তিকে কেবল জাাতীয় ভাবে নয় , আন্তর্জাতিক ভাবেও যে পর্যায়ে নামিয়ে নিয়ে এসছেন , তার মূল্য সম্ভবত তাঁকে দিতে হবে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে , মুশাররফের বিদায় , যতই গণতান্ত্রিক হোক না কেন , পাকিস্তানের রাষ্ট্রিক কাঠামোতে , সেটি পরোক্ষ ভাবে হলে ও মৌলবাদীদের জন্যে সুখকর ঘটনা হবে কী না সেটি ভেবে দেখার বিষয়। কাজেই ক্ষমতার এই দ্বন্দ্বে মুশাররফের বিদায় ঘন্টা , পাকিস্তান এবং গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্যে কতটা স্বস্তিকর হবে , সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
তিন
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে পিপিপি এবং মুসলিম লীগ (এন ) এর মধ্যে এ রকম একটি ব্যাপক ভিত্তিক জোট পাকিস্তানের রাজনীতিতে স্থিতিশীল অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে। কিন্তু যারা নেওয়াজ শরীফের মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে পরিচিত , তাঁরা ভালোই জানেন যে নেওয়াজ শরীফের দলের অনেকের অবস্থানই ধর্মীয় মৌলবাদীদের অনেক কাছাকাছি , যা কী না পাকিস্তানকে একটি আধুনিক ও উদারনৈতিক রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করবে। উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে মৌলবাদীদের পরাজয় যেমন আশার আলো দেখায় , তেমনি নেওয়াজ শরীফের দলের মধ্যে যে সব মৌলবাদী আত্মস্থ হয়ে আছে পাঞ্জাবে ও অন্যত্র তাদের বিজয় তেমনি আশঙ্কাজনক। হয়ত অনেকেই বলবেন যে কার্যত মুসলিম লীগ ( এন) ও পিপলস পার্টির মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই , তাদের উভয়ের দলই সামন্ততান্ত্রিক ভুস্বামীদের দ্বারা পরিচালিত এবং উভয়দলই ধর্মীয় স্পর্শকাতরতাকে নির্বাচনে ব্যবহার করার প্রয়াস চালায় তবু ও এ কথা সত্যি যে ইসলামি মৌলবাদের যে বিকাশ আমরা নেওয়াজ শরীফের দলে দেখি তেমনটি দেখি না পিপলস পার্টিতে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যেতেই পারে যে মুসলিম লীগ ( এন) এবং পি পি পি ‘র জোট সরকার জঙ্গি দমনে কতখানি সমর্থ হবে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক লড়াইয়ে কতখানি সহয়াক হবে সে নিয়ে সংশয় আছে। বরঞ্চ আশঙ্কা করা হচ্ছে যে পাকিস্তান পিপলস পার্টিতে খুব উঁচুমানের নের্তৃত্বের অভাবে , সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্বেও , শেষ পর্যন্ত দলটি মুসলিম লীগ ( এন ) এর অধীনস্থ হয়ে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে উদার ও ধর্মনিরপেক্ষ যে রাজনীতির বিকাশের কথা এখন বলা হচ্ছে সেটি রুদ্ধ হবে অচিরেই। মনে রাখা প্রয়োজন যে পাকিস্তানের রাজনীতি যতই জনমুখি হোক না কেন , সেখানে সেনাবাহিনীর ভুমিকাকে মেনেই এগোতে হবে রাজনীতিকদের । অভিযোগ আছে , যে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার একাংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে , ইসলামি জঙ্গিবাদের সঙ্গে। আই এস আই ’এর এই অংশটিকে মুশাররফ নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন অত্যন্ত কৌশলের সঙ্গে। কখনও তিনি চরমপন্থি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছেন , কখনও জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নগদ নারায়ণ লাভ করেছেন। মুশাররফের এই দ্বিমুখি ভুমিকা নিন্দনীয় কিন্তু তিনি সেখানে একধরণের চেক এন্ড ব্যালেন্স আনার চেষ্টা করেছেন। এই প্রচেষ্টা যে সব সময়ে সফল হয়েছে তা নয় , তবে মুশাররফ ব্যক্তিগতভাবে যে জঙ্গিবাদকে সমর্থন করেননি এমনকী ইসলামি মৌলবাদকে সেটি লক্ষনীয় বিষয়।পরবর্তীতে যে দুটি সম্ভাব্য ঘটনা পাকিস্তানে ঘটতে পারে , তার একটি হচ্ছে মুশাররফের প্রস্থানের পর এবং পিপলস পার্টির প্রতি সহানুভুতি সমর্থন হ্রাস পাওয়া শুরু করলে , ক্ষমতার শক্তিশালি অবস্থানে চলে আসবে মুসলিম লীগ ( এন ) এবং তারা জামায়াতে ইসলামির মতো দলকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করবে। সে ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের আবরণেই , পাকিস্তানে আবার এক ধরণের ধর্মতান্ত্রিক ব্যবস্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে । দ্বিতীয়টি হলো , যদি পিপলস পার্টি ধর্মনিরপেক্ষতার দিকে এগোতে চায় , তখন সেনাবাহিনীর মৌলবাদী অংশটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। এই দুই ধরণের ঘটনাই পাকিস্তানের জন্যে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।
চার
নেওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লীগের সঙ্গে পিপলস পার্টির এই জোট গঠন ছাড়া আরো একটি বিকল্প ছিল যেটি দলের জন্যে কম নিরাপদ হলেও রাষ্ট্রের জন্যে মঙ্গলজনক বিষয় হতো। পিপলস পার্টি , ছোট ছোট দলের সাহায্যে এবং মুশাররফের মুসলিম লীগ ( কিউ) ‘র পরোক্ষ সমর্থনে একটি জোট সরকার গঠন করতে পারতো , মুশাররফকে বিতাড়িত করার প্রচেষ্টা না নিয়ে। বস্তুত মুশাররফকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে নেওয়াজ শরীফের উৎসাহের কারণটি ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা থেকেই সঞ্জাত। পিপলস পার্টি সেই ফাঁদে পা দিলে, মৌলবাদীদের কাছে নিজেদের ভবিষ্যৎ পরাজয়ের পথ পরিস্কার হয়ে উঠবে। পাকিস্তানে একটি উদার ও আধুনিক শক্তির উত্থানের কথা ভেবেছিলেন বলেই বেনজির ভুট্টো মুশাররফকে স্বপদে বহাল রেখেই , ক্ষমতাগ্রহণের প্রয়াস চালিয়েছিলেন । বেনজিরের ঘাতকরা তাঁকে সে সুযোগ দেয়নি । তাঁর মৃত্যুতে যে সহানুভূতি ভোটে তাঁর দল ক্ষমতার পথে এগুচ্ছে তাতে জারদারীরা আদৌ বিচক্ষণতার পরিচয় দেবে কী না কে জনে।
পাঁচ
আসলে পাকিস্তানের ক্ষমতা থেকে মুশাররফের বিদায়ের চেয়ে ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে , পরমাণূ শক্তি সম্পন্ন সেই রাষ্ট্রে ইসলামি জঙ্গিবাদের বিস্তার রোধ করা। এই প্রচেষ্টায় যদি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তমদল মুসলিম লীগ ( এন) এবং সেনাবাহিনীর একাংশ উদাসীন থাকে কিংবা ইসলামি জঙ্গিবাদের প্রতি তাদের যদি মৌন সমর্থন ও থাকে , তা হলে দেশটির গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সংশয়ের অবকাশ থেকেই যাবে। শত সমালোচনা সত্বেও মুশাররফ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যেই হোক , কিংবা নিখাদ দেশপ্রেমের কারণেই হোক , জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন রাজনীতিক ও সেনাবাহিনীর একাংশের বিরোধীতা সত্বেও সেটি প্রশংসনীয় । মুশাররফকে বিতাড়িত করতে গিয়ে পাকিস্তানিরা যদি জঙ্গি মৌলবাদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানকে নমনীয় করে তোলে , তা হলে যে ক্ষীণ রূপালি রেখা মেঘের আড়াল থেকে দেখা যায় পাকিস্তানের দিগন্তে , তা সংশয়ের আবর্তে বিলীন হবে এবং পাকিস্তান থেকে যাবে সেই তিমিরেই , যেখান থেকে সে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল।
এই লেখাটি ঢাকার দৈনিক সমকাল পত্রিকায়, ২৭শে ফেব্রুয়ারী, ২০০৮ প্রকাশিত হয়েছে। লেখক অনিরুদ্ধ আহমেদ , যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক ও কলামিস্ট।