বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা, বিস্ময়কর বিশ্লেষণ এবং অতঃপর
অনিরুদ্ধ আহমেদ
এক
সেদিন ওয়াশিংটন ডি সি তে অনুষ্ঠিত হেরিটেজ ফাউন্ডেশানে বাংলাদেশ ডেমক্রেসি এট দ্য ক্রস রোড শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা যেমন বাংলাদেশে দূর্নীতি বিরোধী অভিযানের প্রশংসা করেন , তেমনি সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি , প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে তাঁদের আগ্রহ এবং উৎকন্ঠা দুটোই প্রকাশ করেন। আলোচনায় , অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে , বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্র আটক প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। ঢাকা থেকে আসা একজন সাবেক কুটনীতিক উপস্থিত সকলকেই আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছিলেন যে এই সব শিক্ষকদের বিষয়ে সরকার সচেতন রয়েছেন এবং তাঁদের অধিকার যাতে ক্ষুন্ন না হয় সে ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি স্বীকার করেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিককার বিস্ফোরণ ছিল স্বতস্ফুর্ত এবং তা ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্ট বিষয় ছিল । কিন্তু এ্ই কুটনীতিক এ দাবী ও করেন যে তিনি এমন কিছু “ফুটেজ” দেখে এসছেন ঐ ঘটনার যেখানে ছাত্র-শিক্ষকদের সংশ্লিষ্টতা নয় , রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়। ছাত্র-শিক্ষকের অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে গোটা দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে দিয়ে এক ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করাই ছিল ঘটনা বিস্তারের পেছনের উদ্দেশ্য। তিনি বলেন ঐ ভিডিও ফুটেজে টাকা বিতরণ , খাবার বিতরণের দৃশ্য ও না কি রয়েছে। তাঁর এই বক্তব্যের পর উপস্থিত দর্শকদের মধ্য থেকে, যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক এবং একটি সংবাদ মাধ্যমের একজন সাংবাদিক যখন তাঁর কাছে জানতে চান , যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ঐ ঘটনার কোন নেপথ্য নায়ক কিংবা ধারণ করা ঐ ভিডিও চিত্রে যাদেরকে তাঁর কথা মতো অর্থ ও খাদ্য বিতরণ করতে দেখা গেছে , তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার কেন কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি , তখন তিনি এর কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। কেবল এটুকুই বলেছেন যে দীর্ঘদিন তিনি দেশের বাইরে থাকায় ঐ ঘটনা সম্পর্কে সর্বসাম্প্রতিক কি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে সে বিষয়ে তিনি অবগত নন।
দুই
বস্তুত সে দিনের ঐ সেমিনারের এই জিজ্ঞাসাটি কেবল মাত্র কোন বিশেষ শিক্ষক কিংবা কোন বিশেষ সাংবাদিকের জিজ্ঞাসা নয়। এ জিজ্ঞাসা সকলেরই। ঢাকা ও রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গ্রেপ্তারের ঘটনা এখন ও রহস্যজালে আবৃত রয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার জন্যে সরকারের আইন ও তথ্য উপদেষ্টা যখন অনেক কথাই বলছেন তখন এই সরকার এখনও পর্যন্ত এদের বিরুদ্ধে জরুরী আইন ভঙ্গের মামলা ছাড়া আর কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত অভিযোগ আনতে পেরেছে বলে কেউই জানায়নি। । অন্যদিকে কোটি কোটি টাকা ছড়ানো সম্পর্কে অনেকের বাগাড়ম্বরপূর্ণ উক্তি সত্বেও আমরা এখনো সরকারের কাছে শুনিনি যে এ ধরণের কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে সরকার কোন ব্যবস্থা নিয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকটা স্বতস্ফুর্ত ভাবে যে বিক্ষোভ হয়েছিল তার দায়ে শিক্ষক সমিতির দু জন কর্মকর্তা সহ অন্যান্যদের ওপর ও চাপানো হয়েছে। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করিয়ে নেয়ার পর ও তিনি এবং তাঁর সহকর্মীদের যে এখন ও আটক রাখা হয়েছে , সেটি বিস্ময়কর। রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়টি ও প্রমাণ সাপেক্ষ । সেখানকার সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান সম্পর্কে রাজনীতির একজন গুরু ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঘরোয়া আলোচনায় বললেন তাঁকে নাকি আটক করা হয়েছে অতীত কর্মকান্ডের জন্যে। অতএব তাঁর শাস্তি অনিবার্য। অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান , বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন এবং যদ্দুর জানা যায় এর পর থেকে তিনি পাঠদানের কাজেই নিবিষ্ট থেকেছেন বরাবর । তবে আওয়ামী লীগ আমলে উপাচার্যের দায়িত্ব পালনের কারণে যদি অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান এই শাস্তি পেয়ে থাকেন এবং তা অনিবার্য হয়ে থাকে , তা হলে সে রহস্যের জাল ভেদ করা দুস্কর। অন্তত ঐ রাজনৈতিক দার্শনিক, যিনি এই তত্বাবধায়ক সরকারের একনিষ্ঠ সমর্থক এবং কেউ কেউ মনে করেন যে বর্তমান সরকারের অবস্থান এবং তার ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার পেছনে তাঁর রাজনৈতিক দর্শন কাজ করছে তাঁর সঙ্গে আলোচনার পর মনে হয়েছে অনেকেরই যে ড সাইদুর রহমান খান আওয়ামী ঘরানার লোক হবার কারণে তাঁর জন্যে শাস্তি অনিবার্য । এই যদি সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে সরকারের এবং কোন বিশেষ নীতি আদর্শের কারণে কোন বুদ্ধিজীবি যদি দমন নিপীড়নের সম্মুখীন হন , তা হলে এ সরকারের যৌক্তিক কাজগুলো ও অযথা বিতর্কিত হয়ে পড়বে। মনে রাখা প্রয়োজন যে সাধারণ মানুষ সরকারের সব কাজকে একটি প্যাকেজ হিসেবে বিবেচনা করে এবং সেই থোক বিবেচনার কোন অংশ যদি ত্রুটিপূর্ণ হয় তা হলে গোটা কাজ নিয়েই প্রশ্ন ওঠে নির্বিঘ্নে। আসলে শিক্ষকদের এই গ্রেপ্তারের ঘটনার পেছনে যে সব যুক্তি দেখানো হচ্ছে এবং গোটা দেশ জুড়ে যে অচলাবস্থার সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে তার সঙ্গে শিক্ষকদের সংশ্লিষ্টতা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়নি কারও কাছেই। আর এই বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব সরকারের বেশ কিছু সাফল্যকেও খানিকটা ম্লান করে দিয়েছে। শিক্ষক-ছাত্রের সংশ্লিষ্টতার কথা তদন্ত কমিটির সামনে ও আসেনি। তদন্ত কমিটির
সভাপতি বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানও বলেছেন যে শহর ব্যাপী বিস্তৃত বিশৃঙ্খলায় শিক্ষকদের জড়িত থাকার কোন প্রমাণ তিনি পাননি। বিষয়টি যদি স্বাধীন তদন্ত কমিটি এই নিরিখে বিবেচনা করে থাকে , তা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ ঘটনা কোন ক্রমেই জাতীয় বিশৃঙ্খলার জন্যে দায়ী হতে পারে না।
তিন
বুদ্ধিজীবিদের অতীতেও এমন কিছু বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত করে তাদেরকে অভিযুক্ত করার প্রচেষ্টা সরকার চালিয়েছে , যার পেছনে যুক্তির চেয়ে ক্ষমতার শক্তিটাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে যে কারও বিরুদ্ধে যে বানোয়াট অভিযোগ আনা যেতে পারে এবং সে অভিযোগে যে তাঁর শাস্তি ও হতে পারে , তার একটি প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হচ্ছে বি এন পি জামায়াত জোট সরকারের আমলে , ময়মনসিংহের সিনেমা হলগুলোতে বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে অধ্যাপক মুনতাসির মামুনকে আটক করার ঘটনা। সুস্থ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ মাত্রেরই তখনই মনে হয়েছিল যে মুনতাসির মামুনের মুক্ত ও মৌলবাদ বিরোধী অবস্থান সরকারের পছন্দসই নয় বলে , তাঁকে ফাঁসিয়ে দেয়ার অভিপ্রায়ে সরকার শেষ পর্যন্ত তাঁকে গ্রেপ্তার করে , নির্যাতন ও চালায়। সম্প্রতি তো প্রমাণিত হলো যে জে এম বি ‘র সদস্যরাই ঐ সিনেমা হলগুলোতে হামলা চালিয়ে ছিল । ইংরেজিতে একটা কথা আছে যার বাংলা হলো কখনো কখনো বাস্তব কল্পকাহিনীর চেয়ে ও অবাস্তব হতে পারে। ড মুনতাসির মামুনের বিরুদ্ধে, জে এম বি ‘র মতো বোমা ফাটানোর অভিযোগ এ রকমই এক অবাস্তব অবিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ ছিল। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এক সময়কার সাধারণ সম্পাদক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসান ইমামের বিরুদ্ধে তেমনি রমনার বটমূলে এবং উদীচির অনুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। যে অভিযোগ প্রত্যাহার না হওয়ার কারণে তিনি এখনও দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাঁর বিদেশ অবস্থান নিয়ে নানান মত রয়েছে , সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ কিন্তু হাসান ইমাম যে রমনার বটমূলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে পারেন এ অভিযোগ ও তেমনি কল্পকাহিনীকে হার মানায় । মুনতাসির মামুন কিংবা হাসান ইমামরা যদি জে এম বি ‘র আদর্শ বাস্তাবায়নে ব্রতী হয়ে সন্ত্রাসী হয়ে ওঠেন , তা হলে এর চেয়ে বিচিত্র ও বিস্ময়কর কী হতে পারে ! অথচ সাবেক বি এন পি-জামায়ত জোট সরকার এমনি সব অভিযোগ এনেছিলেন বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিদের বিরুদ্ধে। বস্তুত তাঁদের ধ্যান ধারনার সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করার এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধীদের শায়েস্তা করার প্রস্তাব আনার জন্যেই এ সব কৃত্রিম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল তদানীন্তন সরকারের আমলে। কিন্তু এখনকার সরকার তো মুক্তিযদ্ধের আদর্শের প্রতি তাদের অবিচল প্রতিশ্রুতি জ্ঞাপন করেছে সেই প্রথম দিন থেকেই। যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার করা হয়নি , সে বিষয়ে ক্ষোভ ও প্রকাশ করেছে সরকার । তা হলে কি সরকারের একাংশের ভেতরেই সচল রয়েছে সেই ভূত যার পা পেছন দিকে এবং গোটা জাতিকে পেছনের দিকে ক্রমশই টানছে সেই ভূত যা আবার অনেকটা সিন্দবাদের দৈত্যের মতো চেপে বসেছে আমাদের জাতির ঘাড়ে। এই দৈত্যকে নামানোর দায়িত্ব কিন্তু এই সরকারের ওপরই বর্তায় ।
চার
সম্প্রতি ড কামাল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক তদন্ত কমিটির সামনে স্পষ্টতই বলেছেন যে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার আগে শিক্ষকদের মুক্তি দেওয়া আবশ্যক। ড কামাল হোসেন , যিনি এই তত্বাবধায়ক সরকারের অনেকগুলো সদর্থক কাজ সমর্থন করেছেন , তিনি ও অনুভব করেন যে এই সব বুদ্ধিজীবিকে আটক রাখার একটা নক্রার্থক প্রভাব পড়বে গোটা দেশে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাব আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে যে কতখানি গভীর ও ব্যাপক সে কথা যেমন এই বিদগ্ধ আইনজীবি জানেন , তেমনি জানেন দেশের সাধারণ মানুষ ও । আমাদের স্বকীয় ইতিহাস নির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুমিকা ছিল সব চেয়ে অগ্রগণ্য। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে , স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন পর্যন্ত এবং তার মধ্যবর্তী ও পরবর্তী আন্দোলনেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক -ছাত্ররা বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন করেছেন। কামাল হোসেন যথার্থই বলেছেন যে শিক্ষকদের মুক্তি দেওয়া প্রয়োজন ,তবে সে কেবল বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কৌশলগত কারণে নয় , শিক্ষকরা আদৌ ব্যাপক গোলযোগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কী না সেটি প্রমাণিত না হওয়ারও কারণেও। এমনিতেই সরকার এ ব্যাপারে পরস্পর বিরোধী পদক্ষেপ নিয়েছে । স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের মতো প্রশংসনীয় কাজের সঙ্গেই আবার কমিশনের রিপোর্ট প্রাপ্তি কিংবা প্রকাশের আগেই সরকার যে সব শিক্ষক -ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে তার মধ্যে একটা পরস্পর বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির পরিস্কার প্রমাণ পাওয়া যায়। এই স্ববিরোধীতা পরিহারের জন্যেই বোধ করি ড কামাল হোসেন এই আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর ঐ আহ্বানে অবশ্য রাজনীতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্রের ভুমিকা সম্পর্কে কমিশনের একটি পরামর্শের বিষয়টিও ছিল। বস্তুত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রাজনীতির সঙ্গে জাতীয় রাজনীতির যে টুকু মিল সেটি আদর্শিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষকই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এমন ভাবে সম্পৃক্ত নন যে তাঁকে রাজনীতিক হিসেবে দেখার প্রয়োজন আছে। কোন কোন শিক্ষক বড় জোর কোন রাজনৈতিক দলের উপদেষ্টার ভুমিকার পালন করেছেন কিন্তু সে ভুমিকা পালন কালেও তিনি মাঠের রাজনীতির সঙ্গে এতখানি সম্পৃক্ত হননি যে মেরুকরণের পর্যায়ে যেতে পারে কিংবা তার প্রভাব ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও বিস্তৃত হতে দেননি। অধিকাংশ শিক্ষকই রাজনৈতিক মতাদর্শকে অনেকটা তাত্বিক বিষয় হিসেবে দেখে থাকেন এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সদস্য হিসেবে মতামত প্রকাশ করে থাকেন। এর সঙ্গে দলীয় রাজনীতির যোগাযোগ নেই বললেই চলে। আর তাত্বিক ভাবে রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে বিচার বিশ্লেষণের প্রয়োজন অবশ্যই আছে, সেটি বন্ধ করলে ভাবনার জগতে খরা দেখা দেবে। আসলে এ ব্যাপারে শিক্ষকদের নিজেদের ওপরই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। সেই “চেক এন্ড ব্যালেন্স” যদি রক্ষা করা যায় , তা হলে শিক্ষকদের মতামত প্রকাশের ওপর অতিরিক্ত কোন বিধিনিষেধের প্রয়োজন নেই।
পাঁচ
এ কথা সত্যি যে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন , শিক্ষকরাও নন । কিন্তু আইনের সঠিক ব্যাখ্যা ও প্রয়োগেরও প্রয়োজন রয়েছে। কোন মতামতকে দমন করার জন্যে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করাট্রাও বে আইনী। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো এসছে , সেগুলো প্রমাণ সাপেক্ষ বিষয় । সরকার যদি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এদের অন্তত জামিনে মুক্তির ব্যবস্থায় কোন বাধা না দেয় , তা হলে গোটা জাতি অন্তত এ কথা ভাববে যে সন্দেহের সুযোগ সরকার নিচ্ছে না বরঞ্চ সেই সুবিধেটুকু যারা অভিযুক্ত তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে । এতেই সম্ভব দুষ্টের দমন , শিষ্টের পালন । নইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মতাদর্শের কারণেই নিগৃহীত হবেন আর শিক্ষা ক্ষেত্রে কাঙ্খিত শান্তি হতে পারে বিঘিœত । তদন্ত কমিশনের চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রাপ্তির আগে শিক্ষকদের আটক রাখাটা যথার্থ কী না সেটা ভেবে দেখার এখনই সময়। কোন ঘটনার পুর্ন তদন্ত ছাড়া কেবলমাত্র অপব্যাখ্যার ওপর নির্ভর করে , আদশিক কারণে যাঁদের বন্দী করা হলো , তাঁরাতো এখন ও পর্যন্ত কেবল বিবেক বন্দী ব্যক্তি । আর কে না জানে , আইনের সেই প্রথম পাঠ যে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত , অভিযুক্ত মাত্রই নির্দোষ !
১২ই অক্টোবর ২০০৭ ‘এর সমকালে প্রকাশিত
মন্তব্যের জন্য ইমেইল ঠিকানা : [email protected]
লেখক অনিরুদ্ধ আহমেদ , যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক ও কলামিস্ট।