পাপের পাতা ভারী করবেন না, প্লিজ 

আইয়ুব আহমেদ দুলাল

সুবিচার দেশে আছে, দেশ যতদিন থাকবে সুবিচারও ততদিন থাকবে- এই বিশ্বাস আমরা হয়ত কিছুটা ফিরে পেয়েছি, আলহাদুলিল্লাহকিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- চোরের মার বড় গলা ছোট হবে কবে ? সম্প্রতি লাল-দালানের বাইরে থাকা রাজনীতিবিদেরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে মনগড়া বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেনতাদের সেসব বক্তব্য শুনে সত্যিই ব্রীড়ায়িত হইঅথচ যাদের হওয়ার কথা তাদের হয় নাএমনকি তাদের কথাবার্তায় দেশপ্রেম খুঁজে পাওয়া দায়তবে তারা যে দেশকে নয়, বরং দল বা ব্যক্তিকেই বেশী পছন্দ করে সেটা স্পষ্টঐসব রাজনীতিবিদের উপর নির্ভর হয়ে ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া কতটুকু নিরাপদ হবে- এটাই প্রশ্নআসল কথায় আসা যাক, গত ৯ এপ্রিল টিভি খবরে দেখেছিলাম একজন বিজ্ঞ প্রথম সারির প্রবীণ রাজনীতিবিধ মিডিয়াকে সংলাপ প্রসঙ্গে বলেছিলেন- নিঃশর্তে নেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে, সকল বন্দী রাজনীতিবিদদের মুক্তি দিতে হবে, তারেক রহমানকে মুক্তি দিতে হবে, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে ইত্যাদি, তারপর তারা ইলেকশনে যাবে বা সংলাপে করবে--- ব্লা ব্লা ব্লাতিনি কিভাবে, কোন বিবেকে বর্তমান কেয়ারটেকার সরকারের পদক্ষেপগুলোকে মিথ্যা আখ্যা দিলেন বোধগম্য হয় নাতার মানে, দিনের আলোর মত স্পষ্ট দুর্নীতির এপিঠ ওপিঠ দেখেও তিনি দুর্নীতিকে সমর্থন করছেনতিনিই বা কোন স্বভাবের মানুষ, বোঝা মুশকিলএক মাসও হয়নি একটি মামলায় তার ছেলের তের বছরের সাজা হয়েছে এবং তার সাজাপ্রাপ্ত ছেলে ও তার সুযোগ্যা কন্যা আদালতে বিচারককে তুই-তোকারি করে গালমন্দ করেছেন (পত্রিকায় প্রকাশ)প্রশ্ন হল- তিনি কোন সংস্কারে লালিত আর তার ছেলেমেয়েরা কোন সংস্কৃতির মাঝে লালন পালন হয়ে আসছেন ? কোন বোকা বা বধিরকে জিজ্ঞাসা করলেও হয়ত উত্তরে বলবে- সন্ত্রাস, দুর্নীতি এবং অপসংস্কৃতির মাঝেসুতরাং তাদের মত ব্যক্তিগন যদি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে যান তাহলে এদেশে সন্ত্রাস, দুর্নীতি বা অপসংস্কৃতির ফসল উপন্ন হবে- কোন সন্দেহ নেই

একই দিনে অন্যান্য দলের কোন কোন রাজনীতিবিধ প্রায় একই ধরনের বক্তব্য টেনে এনে সরকারকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন- দেশ অচল করে দেবে, জনগন মেনে নেবে না, গনঅনশন হবে, নতুন কর্মসূচী দেবে, নতুন কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান ইত্যাদিদেশের জনগন কি এখনো অচেতন ? দেশটা কি দাবার কোট ? আর মানুষগুলো কি দাবার গুটি ? উত্তরে হয়ত সচেতন মহল বলবে- না, তাদের ধারনা মিথ্যা এবং কল্পনাপ্রসুততাহলে জরুবী অবস্থার পেড়ায় দাঁড়িয়ে এসব কি হচ্ছে ?

আবার কিছু কিছু সুযোগ সন্ধানী রাজনীতিবিধ রয়েছেন যারা ঝোপ বুঝে কোপ মারেনসুশীল সমাজ বা মুক্তিযোদ্ধা কমান্টার ফোরাম (রাজাকার নির্মুল সংশ্লিষ্ট নিরপেক্ষ জন) বাদে বড় দলগুলোর প্রথম সারির কিছু কিছু রাজনীতিবিধ ইদানিং রাজাকারের বিচারের ব্যাপারে সোচ্চায় হয়ে উঠতে দেখা গেছেভাল ভাল বিবৃতিও দিয়ে যাচ্ছেন জামায়াতের সাথে জোট গঠনেও অস্বীকার করছেনপ্রশ্ন হল বিভিন্ন মেয়াদে আপনাদের দলও ক্ষমতায় ছিল তখন বিচার করলেন না কেন? সেই সুযোগ সৃষ্টি করেন নাই কেন ? তাহলেতো কার্যক্রম ধারাবাহিক হয়ে একসময় বিচার হয়েই যেতজানি উত্তরে হয়ত মনে মনে এটাই বলবেন- স্বার্থের টানে লুটপাটের প্রতিযোগীতায় ব্যস্ত ছিলাম

জোটের বিষয়ে আবার সবাই সোচ্চারজোট করে হলেও ক্ষমতায় যাওয়াই হল মূল টার্গেটহোক সে রাজাকার, স্বৈরাচার কিংবা ফতোয়াবাজ একাত্তরে নয়মাসের নৃশংস নির্যাতন, নয় বছরের স্বৈরশাসন, আর যুগ যুগ ধরে চলছে অসহায় মেয়েদের উপর ফতোয়াবাজীর বিষাক্ত ছোবল- এই সব কিছুকে ভুলে গিয়ে জোটের অংশীদার হিসাবে মুল দলের নেতৃবৃন্দের মুখে তখন প্রশংসার স্ফুলিঙ্গ ফুটতে থাকেএটাই কি রাজনীতি ? নাকি এটাকে লাজনীতি কিংবা অলাজনীতি বলা উচিত, ঠিক স্পষ্ট নয়। 

মাননীয় রাজনীতিবিধগন দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতিকে সরকারের ব্যর্থতা বলে তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছেন, তাদের সহযোগিতা না করে বরং আরো উস্কানী দিচ্ছেন, জনগনকে রাজপথে নামানোর ফন্দিফিকির করছেনএতে স্পষ্টই বোঝা যায় যে, স্বল্প সময়ে কেয়ারটেকার সরকার যা দেখিয়েছেন নির্বাচিত সরকার পাঁচ বছরে তার দশআনাও দেখাতে পারেননি দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রক বা সিন্ডিকেটে যারা আছেন তাদের বেশীর ভাগই বর্তমানে জেলের ভেতরেবাইরে থাকা অবশিষ্ট সিন্ডিকেটের সদস্যরাই কলকাঠি নেড়ে সরকারের ব্যর্থতার তালিকা ভারী করছেনঅথচ আপনাদের উচিত অধৈর্য্য না হয়ে কেয়ারটেকার সরকারকে তাদের মেয়াদ উত্তীর্ন হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মকরনে সহযোগীতা করে তাদের সকল কর্মসুচীকে সফল করাযাতে তারা একটি সুস্থ্য, সুন্দর, পরিপাটি এবং ভেজালমুক্ত একটি সুজলা সুফলা দেশ প্রস্তুত করে আপনাদের হাতে তুলে দিতে পারে এবং আপনারা তারই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেনআর তা যদি না করেন তাহলে এদেশ দুর্নীতির ক্যান্সারে আক্রান্তই রয়ে যাবেসেই ফল আপনি ভোগ না করলেও আপনার ভবিষ্যত প্রজম্ম ভোগ করবেভোগ করতেই হবে কাউকে না কাউকেতখন পরপারেও আপনার দুর্নীতির পাতা ভারী হতে থাকবেমূলতঃ আমরা তেমন বাংলাদেশ আশা করি নাআমরা আমাদের দেশকে সোনার বাংলা হিসাবেই পেতে চাই

আইয়ুব আহমেদ দুলাল                                                                              ২০.০৪.০৮                                                                                              সৌদি আরব

E-mail:- [email protected]

             [email protected]