জনগণ পুঁজিবাদী সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি !

আইয়ুব আহমেদ দুলাল

বাবা আর পারছি না’- এই মেসেজটা যেন কমন হয়ে পড়েছেগত কয়েকমাস ধরে আমার আশেপাশে বাংলাদেশী প্রবাসী যারা রয়েছে তাদের কাছ থেকে শুনে আসছিতাদের বাড়ী থেকে এরকম মেসেজ এসেছেগতকাল আমার মাও একই মেসেজ আমাকে সুধালেনযেহেতু আমার মেসেজটা পরে এসেছে তাতে করে বুঝলাম দ্রব্যমূল্যের বিড়ম্বিত নাভিশ্বাস থেকেই একান্ত বাধ্য হয়ে মা ফোন করেছেনমায়ের করুন মুখটা তখন চোখের সামনে ভেসে উঠলপরিবার পরিজনদের ছেড়ে দুর দেশে বসবাস করে যদি মায়ের সেই করুন চেহারাটা মানষপটে ভেসে উঠে তাহলে কোন ছেলে তা সইতে পারে! তাও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির ফলে তাদের খাদ্য যোগানের লাগামে টান পড়েছে বিধায় প্রবাসে অসংখ্য সমস্যার মাঝে থেকেও যদি পরিবারে অমন সংকট দেখা দেয় তাহলে পরিজন ছেড়ে বিদেশে পড়ে কষ্ট করার কি মানে থাকে! দেশ থেকে বিদেশে আসা মানে যা বুঝি তা হল, পরিবারের চাহিদা যথাযথ পূরণ করার পর কিছুটা উদ্বৃত্ত রাখা এবং সেই উদ্বৃত্ত দিয়ে ভবিষ্যতের সোপান রচনা করাকিন্তু এখন অবস্থা যা হয়েছে তাতে করে উদ্বৃত্ত দুরের কথা পরিবারের সদস্যদের খাদ্যের যোগান দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে

বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনেক সফলতা রয়েছে কোন সন্দেহ নেইকিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে যা প্রধান এবং অত্যাবশ্যক- সেটাই নিয়ন্ত্রনের বাইরেপেটে ক্ষুধা থাকলে- মানুষ তার মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলে, ভেজা বিড়ালও তখন হিংস্র হয়ে যায় নীতিকথা অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়, ভয়ঙ্কর পরিনামও তুচ্ছ মনে হয়, আইন কানুন হয়ে যায় ক্ষুধার্ত জীবের পদতলের আবর্জনা

আমাদের দেশে এটা কিসের লক্ষন? সরকার ব্যর্থতার কথা বলছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রন করতে পারছে নাএটা কেমন কথা ? সরকার তথা প্রশাসন পারে না এমন কোন কাজ নেই বর্তমান পৃথিবীতে প্রবহমান অতি ক্ষুদ্র জীবানু পর্যন্ত মানুষ সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে, তখন আমাদের দেশের অস ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের জিম্মি করে তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটাচ্ছে, সিন্ডিকেট নামক পাগলা ঘোড়ার লাথি-গুতা খেয়ে জনগন মুখ থুবড়ে পড়ছে, নিম্মআয়ী গরীব দুঃখী অসহায় মানুষের মাথার উপর দিয়ে শকুনের দল উড়ে বেড়াচ্ছে, অথচ তারা বলছে বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছেযেন দায়সারা বক্তব্য! প্রশ্ন হল বিশ্ব বাজারে কত বাড়ে ? সেই তুলনায় আমাদের দেশে কত বাড়ে ? আজ থেকে সাড়ে আট বছর আগে দেখেছি সৌদিতে ৩.৭৫ রিয়াল সমান এক ডলার, এখনো তাই রয়েছেতারাও বিশ্ববাজারের সাথে তাল মিলিয়ে আনুপাতিক হারে জিনিষপত্রের দাম বাড়ায়তাতে দেখা যায় বৃদ্ধি মাত্র এক থেকে দুই রিয়ালঅথচ বাংলাদেশে গত এক সপ্তাহে মসুর ডালের দাম বেড়েছে ১৬ টাকা (ইত্তেফাক-২০.০৩.০৮), যেখানে এককেজি ডালের মুল্য হওয়া উচিত ছিল ১৬টাকাএসব বৈষম্য সত্যিই অবিশ্বাস্যসৌদি আরব কি বিশ্ববাজারের বাইরে, নাকি বাংলাদেশ বাইরে? আমাদের দেশে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কর্মকান্ড বা বক্তব্য শুনলে মাঝে মধ্যে মনে হয় মঙ্গল গ্রহের মত কোন এক পৃথক গ্রহে বাংলাদেশের জম্ম, সুদুর পৃথিবী থেকে যা নিয়ন্ত্রন করা সহজ নয়

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কেউ কেউ ব্যাখ্যা দেয় নীরব দুর্ভিক্ষ হিসাবে, কিন্তু যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে সরব হতে বোধ হয় একমাস লাগবে নাসরকার তার কর্মচারীদের বেতন ভাতা বৃদ্ধির চিন্তাভাবনা করছে, সেটা কি সমাধান হল ? বেসরকারীরা কি করবে, বেকাররা কি করবে, কৃষকেরা কি করবে, দিনমজুরেরা কি করবে, ভিক্ষুকেরাই কি করবে ? ভিক্ষুককে ভিক্ষা এক টাকা থেকে বড়জোর দুইটাকা পাবলিকে দিয়ে থাকে, তাও করুনা করে, বিরক্তি ভরে, খুচরা পয়সা নেই বিধায়সেখানে বেতন বেশী পেয়ে তাদেরকে পাঁচ টাকা দেবে কেউ ? বেকারদের পকেট মানি কে দেবে ? বাবা, বড়ভাই, নাকি শশুরের ভুমিকায় নিয়োজিত কেউ ? বেকারের এমনিই বেইল নাই, আবার শশুর ! তাহলে উপলব্ধি করার বিষয় হল- অভাবগ্রস্থ মানুষগুলো নীতিবান হবে, নাকি নীতিবর্জিত হবে ?

এ ধরনের সংকটময় পরিস্থিতিতে জনগন শুধু সরকারের দিকেই চেয়ে থাকেবেতন বৃদ্ধি করে কি হবে, তাতে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশীবরং কঠোর হস্তে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রন করা ছাড়া বিকল্প নেইসরকার যদি বাজার নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ হয় এবং কারণ উঘাটন করে যথাযথ ব্যবস্থা যদি না নিতে পারে তাহলে নিশ্চিত বুঝা যাবে যে, দেশের জনগন শোষনের মাঝে আছেশোষন অথবা শাসনজনতা ডু অব ডাই বিশ্বাসীঅর্থা সঠিক শাষন চাই, না হয় পুরো শোষন, কিন্তু পাটাপুতার মাঝে গোল-মরিচ হয়ে নিষ্পেষন হতে চায় না কেউ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেহেতু বাজার নিয়ন্ত্রনহীন বা ব্যর্থতার কথা বলছে সেহেতু তাদের সরাসরি বলা উচিত যে আমরা সঠিক শাসনে নয় শোষনে বিশ্বাসীতা স্বীকার করতে যদি বুক কাঁপে অথবা বিবেকে বাধা দেয় তাহলে আত্মহত্যা করাটাই শ্রেয়কিছু না হোক, বিশ্বজুড়ে সুনামের খাতায় অন্তত একটি শিরোনাম হবে যে, বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রন করতে না পেরে সেদেশের শত শত সংশ্লিষ্ট কর্ণধার দায়িত্ব ছেড়ে স্বেচ্ছায় আত্মহনন করেছেসেই সুবাধে পরবর্তীতে যারা দায়িত্ব নেবে তারাও নিশ্চিত হয়ে যাবে যে, ব্যর্থতার পরিনাম স্বেচ্ছায় আত্মহনন এবং এক সময় দেখা যাবে যে, দেশ পরিচালনায় পরাজয় মানে এডলফ হিটলারের পথ অবলম্বন করাএতে করে জনগন কিছুটা হলেও আস্বস্ত হবে এই ভেবে যে, পাগলা ঘোড়া সত্যিই নিয়ন্ত্রনহীনঅথবা সিডরের মত অদৃশ্য, অস্পৃশ্য, দুর্দমনীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মনে করে মনকে সান্তনা দেবে অন্যথায় তাদের বুঝ দেওয়ার মত অন্য কোন প্রপাজান্ডা নেই

মানুষ বাঁচতে চায় দুর্নীতিবাজদের মত কোটি টাকার মালিক হয়ে নয়, তিন বেলা ডাল-ভাত খেয়ে সুস্থ্যভাবে বাঁচতে চায়সুতরাং ভনিতা না করে, আজাইরা ফালতু বক্তব্য না দিয়ে সিন্ডিকেটের কালোহাত ভেঙ্গে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট হবেন এটাই আমাদের কামনা প্রয়োজনে ছোট বড় পাইকার এবং আমদানী রপ্তানীকারকদের চিহ্নিত করে তাদের নথিপত্র স্টাডি করে মূল্যনির্ধারণ-পূর্বক যৌথ বাহিনীর সমম্বয়ে প্রতিটি থানায় বা উপজেলায় সরকারীভাবে বাজার নিয়ন্ত্রন সিন্ডিকেট গড়ে তুলুনতাছাড়া দেশের সরকারী, আধা-সরকারী বাহিনীর সদস্যগন নাকি ব্যারাকে বেকারই থাকে লেফরাইট, খাওয়া আর ঘুম এছাড়া তাদের কোন কাজ নেই, বাট উই ওয়ান্ট মোরযৌথ বাহিনীর হস্তক্ষেপ নিশ্চয়ই কাজে আসবে, এটা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস

 

আইয়ুব আহমেদ দুলাল

সৌদি আরব

E-mail:- [email protected]

             [email protected]