'মার্ক্সবাদ কি বিজ্ঞান' প্রসঙ্গে
মার্ক্সবাদ যে অতি সরল অবস্থার বিজ্ঞান এবং লেনিন এবং মাও অবস্থার চাপে এটাকে ধর্মের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন-এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। আমি এই নিয়ে আগেও মুক্তমনাতেই লিখেছিঃ
http://biplabpal2000.googlepages.com/MarxistScience.pdf
স্যার পপার এবং মার্ক্স
কম্যুনিউস্ট পাপের গল্প
http://biplabpal2000.googlepages.com/America11.pdf
আমি তাত্ত্বিকতায় না গিয়ে বাস্তব নিয়ে বলি। কমিনিউজম নিয়ে পশ্চিমবাংলার এক জনপ্রিয় রাজনৈতিক ফোরামে বিতর্কে
লিপ্ত আছি গত দুদিন ধরে-ব্যাপারটা বঙ্গীয় কমরেডদের কাছে ইসলামকে অবমাননা করার মতন সমান উত্তেজক-ঠিক অভিজিত যেমন লিখেছে-http://struggle.ws/anarchism/writers/anarcho/leninism/legacy.html
দুদিনে প্রায় দেড়শো পোস্টের গালাগাল হজম করেছি। মার্ক্সবাদে বঙ্গজ সন্তানরা এত ই অন্ধ-এদের তিনটি শ্রেণী লক্ষ্য করলাম
-শ্রেফ গালাগাল দেয়-কিছু বোঝে না-এসব বলতে গেলে এক নাগাড়ে আপনাকে শোধনবাদি, আমেরিকার দালাল ইত্যাদি শ্লোগান দিয়ে যাবে। লেনিন নির্দেশিত শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস ছাড়া আমরা বাকী সব চক্রান্ত বলে মনে করি-এইসব ধর্মীয় ডায়ালগ শুনতে হয়। এরা হিন্দুত্ব বা ইসলামিস্টদের চেয়ে কম মৌলবাদি নয়।
-তাত্ত্বিক শ্রেণী। এই ধরনের আর্টিকল তাদের দেখান। প্রথমেই বলবে-দূর তুমি ত মার্ক্সবাদ কিছুই বোঝ নি। তারপর দশহাত কাঁকুরবিচির মতন দ্বান্দিক বস্তবাদের ওপর হাজার জার্গন-অজ্ঞেয়বাদি বস্তুবাদ, হেগেলিয়ান মেটাফিজিক্স ইত্যাদি শোনাবে। আমি এদের জন্যে একটা সরল প্রেস্কিপ্শন রেডি করেছি। এদের লেনিনের কোন একটা আর্টকল ধরিয়ে দিয়ে দেখাতে বলি-এখানে দ্বান্দিক বস্তুবাদ কোথায় আছে দেখাওত বাপু। তখন বাতচিত শেষ। কারন দ্বান্দিক বস্তুবাদ এরা বোঝে না-আর লেনিনের রচনার প্রায় সবটাই ডিডাকশনিজম বা ইনডাকশনিজম। দ্বান্দিক বস্তুবাদ খুব কম। এর একটা বড় কারন ইতিহাস। ১৯১৭ সালে ফেব্রুয়ারী বিপ্লবের পড় লেনিন যখন রাশিয়াতে ফেরার অনুমতি পেলেন, তখন রাশিয়াতে বলশেভিকদের চেয়ে আনার্কিস্ট সোস্যালিস্টরা অনেক বেশী জনপ্রিয়। লেনিন দেখলেন মার্ক্সবাদের লেজ ধরে
বসে থাকলে হবে না--অতএব লেনিনজমের নামে বাকুনীনের এনার্কিজম বিপ্লবের তত্ত্বর ( যা মার্ক্সবাদ বিরোধি) অধিকাংশ দর্শন আত্মসাৎ করলেন [১]। পরবর্ত্তীকালে বলশেভিকরা এইসব ইতিহাস মুছে দিয়েছে। সুতরাং লেনিনের যে বৈপ্লবিক
পথ-তা যদিও লেনিন বলতেন মার্ক্সবাদ-অনেক এনার্কিস্ট ঐতিহাসিকরা বলেন তা আসলেই এনার্কিস্ট বিপ্লব-পার্থক্যটা শুধু হচ্ছে এনার্কিস্টরা গণতন্ত্র চাইতেন -পার্টির কেন্দ্রীয় গণতন্ত্র নয়-এই কেন্দ্রীয় গণতন্ত্রের ব্যাপারটা একান্তই লেনিনের।
-কনফিউজড রোম্যান্টিক মার্ক্সবাদি। এরা সাম্যবাদ, শোষনমুক্ত সমাজের চিন্তায় বিভোর। কবিতা লেখেন আমেরিকার বিরুদ্ধে। আবার আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ার সুযোগ আসলে, সেখানেই ছোটেন্ সব ফেলে। এদের কাছে মার্ক্সবাদি হওয়া মানে দেরিদার মতন মানবিকতাবাদি হওয়া।
যাইহোক তবুও স্বীকার করতেই হয়-মার্ক্সবাদের হাত ধরেই বাঙালী প্রগতিশীল হয়েছে। এখন সময়-তার পরের ধাপে বাঙালীকে টেনে তোলা। অভিজিতের এই প্রবন্ধটি সেই কাজ ভালোভাবেই করবে বলে মনে করি।
[১]
ড. বিপ্লব পাল, আমেরিকাতে বসবাসরত পদার্থবিদ, গবেষক এবং লেখক। এক সময় ভিন্নমতের মডারেটর ছিলেন, বর্তমানে www.fosaac.tv সম্পাদনার সাথে জড়িত।