আজ জেল হত্যা দিবস !
মোহাম্মদ দানেশ
আজ জেল হত্যা দিবস ! বাঙালী জাতির আরেকটি গভীর শোকের দিন ! এ জাতিকে পুরোপুরি পঙ্গু করার জন্যই ঘাতকরা সেদিন রাতের আঁধারে পৃথিবীর জঘন্যতম এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে ! এ শোকের কি শেষ আছে ! রক্তের দাগ না শুকাতেই খুনিরা এ মর্মান্তিক হত্যাকান্ড ঘটালো। এবার যাদেরকে হত্যা করা হলো, তারা হলেন বঙ্গব›ধুর অবর্তমানে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী সফল অধিনায়ক। বঙ্গব›ধুর সবচেয়ে কাছের মানুষ, যোগ্য উত্তরসূরী। ঘাতকরা জানতো এই জাতীয় চার নেতা জীবিত থাকলে তারা কোন দিন পার পাবেনা। তাই তারা ৩রা নভেম্বর এ জগন্যতম হত্যাকান্ডে মেতে উঠলো! খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেও নিজেদেরকে নিরাপদ ভাবতে পারেনি, সব সময় আতঙ্কে ছিল কখন জনতা ফুঁসে উঠে!
কলঙ্ককময় ইতিহাস সৃষ্টির সাথে জড়িত যারা এরাতো এদেশেরই মিরজাফরদের দোসর! মানুষ নামের কলঙ্ক! হায়েনার চেয়েও হিংস্র! যতদিন এই বাংলাদেশ থাকবে , ততদিন ওরা ঘৃণিত হয়ে থাকবে এই বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে! কে কবে শুনেছে জেলখানায় বিনা বিচারে আবদ্ধ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করতে ! এ হত্যার কাহিনী হিটলারের নিষ্ঠুরতাকেও ছাড়িয়ে যায় !
মানুষ কিভাবে পারে চার দেয়ালে বন্দি অন্য মানুষের বুক জানালার ফাঁক দিয়ে রাইফেলের গুলিতে ঝাঁজরা করে দিতে ! মৃত্যু নিশ্চিত করতে আবার বেয়নেট চার্জ করতে! জেল খানায় ঢুকতে বাঁধা দিলে কি করে আর একজন মানুষ বলতে পারে ‘‘ওরা যা করতে চায় করতে দাও”! এ হলো পৃথিবীর নিকৃষ্টতম উক্তি। যেমন ছিল আর একটি উক্তি ‘‘প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা হয়েছে ” ঝড় যিধঃ ! ঠরপব ঢ়ৎবংরফবহঃ তো আছে ! এগুলো কি একসুত্রে গাথা উক্তি ! মানব ইতিহাসের এই নিকৃষ্ট ও জঘন্যতম উক্তিগুলি আমাদের জাতীয় যাদুঘরে সংরক্ষণ করা উচিৎ, যাতে ভবিষৎ প্রজš§ এই নরপিচাশদের সম্পর্কে জানতে পারে! এরা মানুষ নাম নিয়ে পশুর চেয়েও কতনিচু ! কত অধম! কত নিকৃষ্ট! আবার এরাই হলো তথাকথিত ধার্মিক! আমাদের কল্পনাও হার মেনে যায় , কিভাবে নিছক ক্ষমতার লোভে রাজনীতির স্বার্থে একশ্রেনীর মানুষ আবার এসব মর্মান্তিক পশুত্বকে সমর্থন করে! যারা এসব হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বেনিফিসিয়ারী তারাও কি এ হত্যার দায় এড়াতে পারে! যদি মানুষ হয়ে থাকেন , একবার নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন!
আজ জাতীয় চার নেতার যে সব স্বজনরা জীবিত আছেন তাদের কথা একবার ভাবুন ! যার বাবাকে, যার স্বামীকে, যার ভাইকে এভাবে হত্যা করা হয়েছে, কি ব্যাথা তার বুকে ! মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতরাতে কাতরাতে যার পিতা পানি পানি করে চিৎকার করে পানি না পেয়ে মারা গেছেন! তার বুকে কি দাউ দাউ আগুন , একমাত্র সেই জানে ! আহা ! এইতো স্বাধীন বাংলাদেশ!
যে পাখীটি জবাই করা হয় তারও বাঁধন খুলে দিতে হয় ! কারগার হলো রাষ্ট্রীয় নিরাপত্বাগার, ৩রা নভে¤র যদি হয় সেই নিরাপত্বার নমুনা , যুগযুগ ধরে মানুষ সেই নিরাপত্বাদানকারীদের জন্যে থুথু ছাড়া আর কোন যোগ্য প্রতিদান দেবে ? যে যত বড় দাম্ভিকই হোক ইতিহাস মুছতে পারেনা কেউ। দেশকে স্বাধীন করার আপরাধে যারা খুন হলো, কোন মুখে এ জাতি দাড়াবে তাদের কাছে ! আজš§ ক্রীতদাস না হলে কেউ কি ভাবতে পারে ! এ দেশ যদি আজ স্বাধীন না হতো তাহলে কত সুখেই না আমরা থাকতাম! পশ্চিমারা আামাদেরকে কত ইজ্জতই না দিত! হায়েনাদের কলোনী হয়ে থাকা কত মধুরই না ছিল ! বিশ্বে বাঙালীদের কত পরিচিতিই না ছিল !
আথচ খুনিরা আজও এ সমাজে বহাল তবিয়তে আছে ! আজ ও তারা রাতের অন্ধকারে দেশের বাকী নেতৃত্বটুুকু ও শূন্য করে দিতে চায় ! এর ধারা বাহিকতায় ২১ শে আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা! এ সবই একসুত্রে গাঁথা !
যাদের নেশা রক্তের হোলি খেলা তাঁদেরকে মানুূষ বলা যায়না ! এরা প্রৃতিক্রিয়াশীল শক্তি ! ধর্মের নাম নিয়ে এরা নিরীহ ধর্মভীরু মানুষকে বার বার ধোঁকা দিয়ে আসছে ! এদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো যেভাবেই হোক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়া ! ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এরা নানা রকম ফতোয়া দেয় ! ক্ষমতার জন্য এসব ফতোয়ার নির্লজ্জ পরিবর্তনও হয়! এদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে! স্বাধীনতার স্বপক্ষের সকল শক্তিকে এক হয়ে কাজ করার সময় কি এখনও হয়নি ?
অনেকেই বুঝে বা না বুঝে অনেক কথাই বলেন ! তাদের নিকট বিনীত প্রশ্ন , যারা দেশকে ,জাতিকে নেতৃত্ব শূন্য করতে চায় , যারা দেশকে মেধাশূন্য করতে চায় ! যারা স্বাধীনতার ইতিহাস মুছে দিতে চায় ! যারা জাতির জনকের হত্যার সাথে জড়িত ! ৩রা আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ! যারা সর্বশেষ ২১শে আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার সাথে জড়িত ! যারা জাতির জনকের মর্মান্তিক শাহাদৎ বার্ষিকীতে মিথ্যা জš§দিনের কেক কেটে রক্তানোন্দের হোলি খেলায় মেতে উঠে ! তাদের সাথে স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ত্বদানকারী শক্তি কিভাবে এক টেবিলে বসে !
রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি ! এ দাগ শরীর থেকে মুছে গেলেও মন থেকে কোনদিন কি মুছবে? এ দাগ যে বড় বেদনাদাযক ! বড় শোকাবহ !
আজ জাতির সামনে সময় এসেছে জাতিয় এ অবিসংবাদিত চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহম্মদ , ক্যাপ্টেন এম.মুনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানের মূল্যায়নের ! যারা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে এতবড় একটি মুক্তিযুদ্ধকে সুচারুভাবে পরিচালনা করে দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন , মুক্তিযুদ্ধের যৌক্তিকতা বর্হি:বিশ্বে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছেন , যারা পাহাড় সমান মনোবল নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেশবাশিকে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছেন, যারা পাকিস্থানী হানাদারদেরকে মাত্র নয় মাসের ব্যবধানে পরাজিত করে বিশে¡র বুকে এক নতুন ইতিহাস রচনা করতে সমর্থ হয়েছেন, এসব স্বাধীনতাকামী নেতারা দেশের জন্য কি না করেছেন ! কটা রাত তাঁরা নির্ভাবনায় ঘুমিয়েছেন! কটা দিন তারা পরিবারের সংগে, ছেলে মেয়েদের সংগে কাটিয়েছেন ! যারা দেশের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করলেন আজ তাদের হত্যার রায় নিয়েও আইনের বহু মারপ্যাচ দেখানো হচ্ছে ! অথচ তৎকালীন সময়ে এ হত্যাকান্ড যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেখেছে তারা আনেকেই আজও জীবিত। কি বিচিত্র এ দেশ ! দেশের কেন্দ্রীয় কারাগারে অনধিকারে প্রবেশ করে দেশের চারজন শীর্ষ রাজনীতিবিদকে হত্যা করা হলো ! অথচ তাদের পরিবারই যদি বিচার না পায় ! তবে আর কারা এ দেশে বিচার পাবে !
স্বাধীনতার সফল চার রূপকার ! হায়েনারা তোমাদেরকে শারিরিক ভাবে হত্যা করলেও তোমরা অমর হয়ে আছ প্রতিটি বাঙ্গালীর হ্রদয়ে ! তোমাদের অবদান কোনদিন ইতিহাস থেকে মুছে যাবে না ! তোমরা বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান ! তোমরা আমাদের গর্ব ! তোমাদের রক্তের ঋণ বাঙালী কোনদিন ভুলবে না ! একদিন এ হত্যার আসল ইতিহাস বেরিয়ে আসবেই ! অন্তত পৃথিবীর ইতিহাস তাই বলে ! একটি দুটি প্রজন্ম বেঈমান হতে পারে , কোন জাতি চিরকাল বেঈমান থাকে না ।
জাতির এ কলংকময় ঘটনার সাথে জড়িতদের যাতে কোনদিন বিচারের কাঠ গড়ায় দাড়াতে না হয় সে জন্য ঘাতকেদের পৃষ্ঠপোষকরা সে কুখ্যাত কাল আইন (ইনডেমনিটি অ্যাক্ট) করেও পার পাবে কতোকাল ? তারা জানেনা, পাপে ছাড়েনা বাপেরেও ! এ হত্যার বিচার হবেই বাংলার মাটিতে ! সে দিন আর বেশী দুরে নয় । যারা পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভাবে এ হত্যাকান্ডের বেনিফিসিয়ারী হয়ে খুনিদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ! বাঙালী জাতি তাদেরকেও কোনদিন ক্ষমা করবে না । বাঙালীর বহমান ইতিহাস তাই বলে ! এ জাতি বড় দুঃসাহসী, বিশ্ব বাসি তা জানে !
১৯৭১ এ তারা প্রমাণ করে দেখিয়েছে সৎসাহস থাকলে যে কোন শক্তিকে মোকাবেলা করা যায় । তারা দেখিয়েছে কিভাবে দা, কুড়াল, লগি, বৈঠা নিয়ে একটি দেশকে স্বাধীন করা যায় ! বিশ্ববাসি দেখেছে কিভাবে গভীর মনোবল নিয়ে এ দেশের দামাল ছেলেরা অত্যান্ত দুর্ধর্ষ নিয়মিত একটি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছে ! এ জাতি কে বার বার প্রতিক্রিয়াশীলরা দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন বারই শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেনি । এবারও পারবেনা।
E-mail: [email protected]