আমাদের অন্ধতা

জাহেদ মোতালেব

রূপকথার একটা গল্প বলিবেদমা গেছে শ্বশুর বাড়িশ্বশুর বাড়িতে কি রকম আদর কদর বুঝতেই তো পারেনশাশুড়ি তাকে খুব খাওয়ালরাতে বিছানা করে মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে পাঠালকক্ষে ঢুকেই সে পড়ে গেল ধন্ধেকিভাবে ঢুকি? এদিক দেখে, ওদিক দেখে, কোথাও পথ পায় নাশেষে বুদ্ধি ভেজে দিল এক লাফ ভেবেছিল উপর দিয়ে ঢুকতে পারবেকিন্তু পড়ল মশারি ছিঁড়ে খাটের উপরকোমর ভেঙেছে তো ভেঙেছেকোন বেভুলে দিল পায়খানা করেতারপর খাটের নিচে গিয়ে লুকাল বর্তমান সময়ে নিজেদের কথা চিন্তা করতে গেলে নানির বলা এ গল্প কেবল মনে পড়ে শতাব্দীপ্রায় অচল অকেজো অন্ধ নানির মতো মনে হয় নিজেদের

আমাদের সমগ্র পথ জুড়ে আঁধারঅন্ধতা আমাদের আগলে রেখেছেএত অন্ধতার কারণ কি? সূত্র সন্ধানের সরল-জটিল ভাবনা, বিকল্প ভাবনার পথ বেয়ে যেতে আমরা অক্ষম উপনিবেশ লালচ বা বিদেশপ্রিয়তা আজ পর্যন্ত এতটুকু কমে নি স্বকীয়তার শূন্যতা, অজ্ঞানতা এবং সঞ্চিত ক্ষুদ্র ধারকরা জ্ঞানের কূপমণ্ডূকতা ব্যক্তিচেতনার দিক থেকেও ঊর্ধ্বে উঠতে দেয় না বিচিত্র বঞ্চিত মানুষের পথের বাধায়, নিষিদ্ধতার মৌল অমানবিকতায় বোধিসম্পন্ন বাঙালি না হয়ে ধনতান্ত্রিকের পা চাটা, অন্ধকারের পূজা করা ভঙ্গুর, ক্ষীণ, দুর্বল, কুসিত দারিদ্র্যে ভরা বেকার, ভিক্ষার মৃত বেঁচে মুনাফার লুটপাট, ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর বিলাসিতার নোংরামি দেখে দেখে আমরা ধেড়ে ইঁদুর হয়ে অবিরত বিষ খেয়ে চলি

নিজেদের আমরা উন্মূক্ত করলাম, নিজস্ব চিন্তা করলাম, নিজস্ব পথ খুঁজে বের করলাম এবং মুক্তি পেলাম কর্মের সুগঠিত ধারায়Ñ এরকম উচ্ছ্বাসের, কল্পনার ধারা বহুদিন এ সমাজে নেইকোন কালে আদৌ কি ছিল? আমরা আদিমতাকে বেশি করে পূজা করিমনুষ্য হওয়ার যে তীব্রতা তা ভিক্ষাবৃত্তি শুষে নেয়জাতিগত চেতনা, রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিত্ব কিছুই অর্জিত হয় না সারাদিনের জীবন-যাপনটা হাজার হাজার বছরের পুরনোতা নৈরাজ্যবাদী-নৈরাশ্যবাদী উপাখ্যানতা রাষ্ট্রের জটিল রাজদুর্নীতি, ঘুষের চমক, চোরাকারবারী নীতি, নতুন উপনিবেশের সেবা করা রীতি হয়ে গেছে

মৌলবাদ এখন আমাদের মুক্তির নামআমরা তার নামে বিজাতীয় গাই, নাচিমৌলবাদ আসলে কি? প্রতিটি বদ্ধতাকেই আমরা মৌলবাদ বলবসে হোক জ্ঞানের, চিন্তার, কর্মের, ধর্মের, তত্ত্বের, জীবন যাপনেরÑ যা-ই হোক তা যাবতীয় অন্ধতার সমান্তরালবদ্ধ জলাশয়ে যেমন মশা জন্মে, তেমন প্রতিটি চিন্তার ও কর্মের বদ্ধতায়, পরনির্ভরশীলতায় মগজের মশা-মাছি বেড়ে যায়তখন নানারকম মানসিক ধ্বংসাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে নিজেদের এবং পর-প্রজন্মের ক্ষতি করে চলি

যাবতীয় অবিকাশের নাম মৌলবাদএখানে জ্ঞানের মুক্তির দিগন্ত নেইএটা জ্ঞানের নির্যাতনময় এমন এক ব্যবস্থা যা আমাদের উদ্বোধক চেতনাকে নিষ্ক্রিয়, সংগ্রামী ক্ষমতাকে বোধহীন, আলো-বাতাসহীন ধ্বংসমুখী করে দেয়ধর্মীয়, তত্ত্বীয়, অর্থনৈতিক পরোক্ষ প্রত্যক্ষ ঔপনিবেশিকতা বিকাশের পুরো পরিপন্থীযাবতীয় বিকল্পের বিরোধী হয়ে সামরিক নির্মিতির আগে-পরের কলুষিত সমাজ, মিথ্যাচার, ভণ্ডামি, নষ্টামি আমাদের রুদ্ধ করে ধর্মীয়রা গাছের পাতায়, মাংসের টুকরায়, মাছের পেটে এখনো এই একবিংশে এসেও অলৌকিকতার ছড়াছড়ি দেখেজাত পাতের ঘৃণা, নকল মানুষকে সম্মানে এখনো আমরা প্রাগৈতিহাসিকধর্মের নামে আমাদের রুদ্ধ করা হয় জামায়াত আমাদের রুদ্ধ করেঘুষ দুর্নীতি আমাদের রুদ্ধ করে রাজনীতি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সন্ত্রাস, কালোবাজারি, বৈষম্যের ব্যাপকতা আমাদের রুদ্ধ করেবধির করেএই দেশীয় শিক্ষার রূপ আমাদের আলো দেখায় না মৌলবাদের ব্যাপকতা, ভিন্ন ভিন্ন রূপগুলো বুঝতে পারি নাসমাজে প্রত্যেকে নেতা হয়ে বেশি বুঝে বসে আছি সীমাবদ্ধতার কথা জানি নাজানলে অস্বীকার করিআমরা সহনশীল নই, আক্রমণাত্মকযতটুকু সহনশীলতা দেখা যায় তা আসলে বাধ্যতা, স্বভাব নয়আমরা সংঘাতে, সন্ত্রাসে পারদর্শী হচ্ছি

আমাদের মৌলবাদ কেমন? মৌলবাদ-এর মূল হচ্ছে আদিমতার মূল, পশুত্বের মূল প্রাচীন মানুষের রক্তপাতের, মিথ্যার, দখলদারিত্বের মূল মানুষের কাজ হচ্ছে অনবরত নতুনভাবে নিজেকে সৃষ্টি করাঅর্থা উত্তরোত্তর উন্নত পর্যায়ে বিবর্তিত হওয়া বর্জনের বদলে আমরা আদিম পাশবিকতা দিন দিন বেশি আত্মস্থ করে আত্মঘাতী, মনুষ্যঘাতী হচ্ছিঅনড় স্থির মানসিকতা, কুসংস্কার, অজ্ঞতা, অজ্ঞানতা-সৃষ্ট সমগ্র অন্ধতায়  পূর্ণ, বিকাশহীন, আমরা অধঃবিবর্তিতযার পরিবর্তন নেই তার সৃষ্টি কোত্থেকে হবে? ভাদ্রের জলাশয়ে রোগা মহিষের মতো গা ডুবিয়ে বসে থাকা ছাড়া যেন অন্য কোন কাজ নেই

আমরা দরিদ্র থাকতে পছন্দ করিপরকালে দরিদ্রের হিসাব কমবেহেশত সহজ ও সুনিশ্চিতএ মানসিকতা লালন করে আত্মতুষ্ট থাকিশুধু দুটো খেয়ে পরে বাঁচতে চাইআমরা যুক্তিবিদ্যা বাদ দিই, বাণিজ্যবিদ্যার অসম হাওয়া খেতে উন্মাদ হই যুক্তিকে বুঝেও অস্বীকার করে বিশ্বাসের অনড় অন্ধ খোলশে ডিম পাড়ি

আমাদের সামাজিকতার প্রতি পদে গরলঅমৃতের ধারা এত ক্ষীণ যে চোখেই পড়তে চায় না সামাজিক বিকাশ বলতে কিছুই হয়নি এখানে মধ্যপ্রাচ্য-শ্রমে, কালো বাজারি টাকায়, বিদেশি সাহায্যের লুটপাটে ছিটেফোঁটা অসম অর্থনৈতিক বিকাশ চোখে পড়েমৌলবাদ ঔপনিবেশিকতাকে নীরবে ডেকে ডেকে আনেআর ধর্মীয় মৌলবাদ ক্ষমতার পূজারীতারা ক্ষমতা চায়, শাসনভার চায় জিনিসটা তাদের নাগালে দীর্ঘদিন না থাকলেও ইদানীং ক্ষমতার অনেক স্বাদ তারা পাচ্ছে সাম্প্রতিককালে জোর যার মুল্লুক তারÑ এ নতুন দুরবস্থা চালু হয়েছে সাম্রাজ্যবাদী নগ্ন আমেরিকা আফগানিস্তানে ও ইরাকে হত্যাযজ্ঞ, দখলদারিত্ব কায়েম করে দেখিয়েছেএ হচ্ছে মৌলবাদের জোরজবরদস্তি উগ্র রূপ রাষ্ট্র আমেরিকা বর্তমান পৃথিবীর নিকৃষ্ট মৌলবাদওই মৌলবাদ ক্ষতি করে ব্যক্তির, সমাজেরএ মৌলবাদ ধ্বংস করে মানবতাজনতা অবিকশিত আবেগে নিজেদের ভরাডুবি দেখছেতারা জনতাকে নষ্ট করেছেতারা জনতাকে রক্ষা করছে বলে ভণ্ডামি করেজনগণের চেতনায় হত্যা করে মানবিকতার গল্প বানায় আর শোনায়কর্মে নিকৃষ্ট, কথায় উকৃষ্ট আমেরিকা বিপন্ন করেছে মানবতাতারা স্বার্থান্ধ সভ্যতার দাবি নিছক অহং, ভড়ংতারা নিজেদের ছাড়া কখনো কারো উপকারী ছিল না পৃথিবীর সব রাষ্ট্র যেন ছাগলের ৩ নম্বর বাচ্চাআমাদের এখানে যে প্রতিবাদ হয়েছে, সেখানে মানবিক আবেগের চেয়ে ধর্মীয় আবেগ বেশি

কোন্ আকাক্সক্ষা মানবের উপযুক্ত? ধর্মের ধারাবাহিক মিথগুলো আত্মস্থ করা? অর্থবৈষম্যের দীর্ঘতা হজম করা? পাশবিকতার সমৃদ্ধি? ধর্ম তো আমাদের অন্ধতাকেই উস্কে দেয় প্যারালাল কাজটা এখন সাম্রাজ্যবাদ করছেবলে, প্রশ্ন করো না, আত্মসমর্পণ করোমগজে সিল মেরে দেয় প্রশ্নহীন উত্তরাধিকারী বিশ্বাসে কি হচ্ছে এখন? আমরা প্রযুক্তির ঝলোমলো রূপের বর্তমান জগতে প্রাচীনই থেকে গেছি জ্ঞানহীনতায় আমরা উন্মাদ আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্র, ক্লাস্টার বোমার তাণ্ডব দেখি মানুষের স্বার্থপরতার নৃশংসতা দেখিবোধের নাগাল পাই নাকর্মের বোধ, সাধনার বোধ গড়ে ওঠে না নিজেদের তফা করে দেখা হয় না

আমরা মানুষকে ৮ টুকরো করে নালায় ফেলি মানুষের রগ আর গলা কাটিশিশু থেকে বৃদ্ধা সবাইকে নষ্ট করিধর্মের নামে, মতাদর্শের নামে ঘর পোড়াই, মন পোড়াই, বাস্তু থেকে উখাত করিঘৃণা ছড়াই বিদ্বেষ ছড়াইপোষণ করিলালন করি আত্মধ্বংসের বীজ শিশুদের প্রশ্ন শেখাই নাভীতুর ডিম বানাইআগ্রহ জন্মাই নাঅন্ধ বানাইকিছু দেখতে নিষেধ করিদেখা পাপজানা পাপ বিশ্বাস করা মানে স্বর্গ সুগমডুবে থাক সাঁতরানোর প্রয়োজন নেই একবিংশের প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করে এখনো আদিমতা লালন করিতা পৃথিবী ধ্বংসের প্রক্রিয়ায় এগুনোর মতো

আমরা বধির মানুষআমরা মৌলবাদী দৃষ্টিহীনসর্ব দরিদ্রপচন আমাদের মূলেই অগ্রগতির বিরুদ্ধ শক্তি অজ্ঞানতাকে ঘৃণার বদলে ভালবাসিএখনো সেই অদৃষ্টবাদী, ম্লেচ্ছ বা নীচই রয়ে গেছিকোথাও আমাদের সম্মান নেই কর্মহীন মহারাজ হতে একাগ্র চোরামিতে প্রথম হই, বিফলতায় প্রথম হই, ভিক্ষাবৃত্তিতে অগ্রবর্তী

ব্যক্তিবোধের দিক থেকে সৃজনশীলতায়, জ্ঞানে, বিদ্রোহে বিপ্লবে যারা জীবন চালিত করে সমষ্টিবোধের দিকে পৌঁছতে চায়, পুরাতনী লোকেরা তাদের কেবল কোণঠাসা করে, নেংটো করে ফেলেএদিকে রাষ্ট্রীয় লুটপাটের সাথে সমন্বয় রেখে পরিকল্পনাহীন, মান্ধাতার, ধস নামা শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে অন্ধতার অসংখ্য কানা গলি তৈরি করে জাতীয় একাগ্রতা, ঐক্যবোধ, সমবোধ বিনাশের কাজ চলছে পুঁজির খারাপ চক্রান্তে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ও জোর চর্চা, রাষ্ট্রের একনায়কীকরণ, উত্তরাধিকারীকরণ, জনসাধারণকে শোষণের, বিকশিত হতে না দেওয়ার সংস্কৃতি, জাতে মৌলবাদী চরিত্রে স্বৈরাচারী রাষ্ট্রের ক্ষমতার ক্রম বিকেন্দ্রায়নÑ ক্ষমতার অজস্র কেন্দ্রে মার খেয়ে আত্মবিলোপের দিকে যাচ্ছি আত্মস্বার্থে ভূত হয়ে দীর্ঘদিন বসে থাকতে পারি; দ্রুত, সঠিক কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি না প্রসারণ নেই প্রাণময়তা, আত্মপ্রত্যয়, আত্মজিজ্ঞাসা আমাদের স্বভাব থেকেই হারিয়ে গেছেকোন কালে কি আদৌ ছিল নাকি সর্বকালে বিভিন্ন রাজশক্তির নিকট বন্দিত্বই বাস্তবতা ছিল? মনে দেহে পরপোষ্যতা, অতীতমুখিতা, নি®প্রাণতা, চিন্তা-কর্মে উদ্যমহীনতা; দীর্ঘদিনের ত্যাগী দর্শনের ভিড়ে আমরা ভোগের জন্য কাতরÑ আবিষ্কারে নই ইতিবাচক বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে ইতিহাসের অনেক দূরবর্তী আমরাএখনো পর্যন্ত আনন্দের সার্বজনীন কোন রূপ গড়ে তুলতে পারিনিআমরা সাহসহীন, লেজগুটানো, কদাকার মানুষকোথায় গেল মানুষ? নায়ক? বীর? বীর কজন আছে? আমরা এমন ব্যবস্থা করেছি, ভালো মানুষেরা হাসির খোরাক হয়, পদতলে যায়সেদিন পথ চলতি এক বুড়ো আরেক বুড়োকে খেদের সাথে বলছিলেন, আমরা ঘুষ খাই আর ঘুষ দিইবলি আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভাববাসিসোনার বাংলাকে ভালবাসে না এমন কেউ নেই

স্ববিরোধিতায় ঊর্ধ্বগামীকেউ অবৈধের চূড়ান্তে গিয়ে ভালো সাজে, প্রচুর ধর্মকর্ম করে, সম্মান পায়বিপুল সংখ্যক লোক আকাশের দিকে চেয়ে থাকে

সুস্থ জীবনবোধ প্রকাশের সংস্কৃতি, চিন্তা, কর্মের, সুন্দরের সংস্কৃতির দুয়ার ক্রমান্বয়ে বন্ধ করে দিচ্ছে রাজদুর্নীতি মানসিকতার ক্রম উন্নতি দিয়ে একটা স্তরে পৌঁছতে দিচ্ছে নামানসিক বিবর্তনের অভাবে সক্ষমতার সর্বোচ্চ কাঠামোর কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারি নাআরো বেশি অধঃপতিত, ঋণগ্রস্ত হচ্ছি ঋণগ্রস্ত ভিক্ষাবৃত্তির সংস্কৃতিই এক নম্বর সংস্কৃতিআমাদের দ্বিধার ও মৃত্যুর সংস্কৃতিতাই সমাজের দুরবস্থার ঢালহীন সাম্রাজ্য থেকে যুক্তির তরবারি-রাজ্যে প্রবেশ হয়ে উঠছে না

ধর্মের গোড়ায় আছে কর্তৃত্ববাদধর্মের বাইরেও কর্তৃত্ববাদএখন রাজনীতি-বিষ সবাইকে বাধ্যতামূলক পান করতে হয়সমাজের মানুষেরা মানসিকতার দিক দিয়ে কোথায় অবস্থান করছে, জানি? এটাও মনে রাখি না, যেখানে কর্তৃত্ব আছে সেখানে ক্ষমতা যুক্ত ক্ষমতার প্রবণতা সর্বদা শোষণের দিকেএকজন যুক্তিবাদী জ্ঞানবান মানুষ যদি বলে, ধর্ম আর ধর্মের প্রভুর সৃষ্টি মানুষের মগজে মানুষের যেহেতু বিবর্তন আছে, সময়ের সাথে সাথে ধর্মের অসামঞ্জস্য বাড়তে থাকে মানুষকে শৃঙ্খলায় আনার প্রাথমিক প্রচেষ্টা হলো ধর্মতার ভিত্তি ভয় ও লোভের ওপর দাঁড়ানোএখন মানুষ জ্ঞানের শৃঙ্খলায়, স্বাধীনতায় চমকার চলতে পারেসীমিত গণ্ডি থেকে তাকে বেরুতে হবেহাজার বছরের মগজের জঞ্জালের ধারাবাহিকতা ঝেঁটিয়ে নতুন চিন্তার বিশাল দুনিয়ায় পৌঁছতে হবে

ধর্মবাদীরা এর জবাবে কী করবে? আমরা কি তা অনুমান করতে পারি? ধর্মের নাম শান্তি ও মানবকল্যাণ হলেও রক্তপাত, অশান্তি, মানবের অপমান, নির্যাতন এসবই বেশি দেখিপ্রশ্ন করলে, জানতে চাইলে ভয়াবহ অপরাধ হয়ধর্মে অসহায় অধীনতা ছাড়া আর যা আছে, সেই মানবিকতা, যা সব ধর্মের বৈশিষ্ট্য, আমরা তাকে ঊর্ধ্ব করি না কেন? যেসব জীবনবিধানের কথা বলা হয় তাতে অপরিবর্তনীয়তায় বদ্ধতার সৃষ্টি হয়দিন দিন তা মানুষকে আরো অপরিপক্ব করে শারীরিক, মানসিক, প্রাকৃতিক নিয়মের বহির্ভূত করে ঠেলে দেয় সাম্প্রদায়িকতায় প্রত্যেক ধর্মবাদীই এক অর্থে সাম্প্রদায়িকএকবিংশ শতাব্দীর বেশিরভাগ মানুষই বিষাক্রান্ত নিজেদের জন্য ক্ষতিকরবিশ্ব ইতিহাসে শোষিত হওয়ার পথ তৈরি করে নিজের সর্বনাশ করছে বদ্ধতাকে অস্বীকার করার বদলে বেশি করে আঁকড়ে ধরছেযুগ যুগের লোভ আছে, ভয় আছেএ লোভ এবং ভয়কে জয় করতে পৃথিবীর কম মানুষই আজ পর্যন্ত পেরেছেএসব অন্ধতা, বন্ধতা-বদ্ধতা, প্রশ্নহীন আনুগত্য, অকেজো প্রশংসা, লোভ-ভয়ের উগ্রতায় ভয়ংকর আগ্রাসী এক অন্ধশক্তিকে আমরা দেখি তীব্রতায় তারা মনুষ্যবিরোধী, পুঁজিবাদী কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিক শাসনের সাম্প্রদায়িক স্লোগানে আস্ফালন করেতারা জঙ্গিতাদের সংগঠিত রাজনীতি নৈতিকতাবর্জিততারা সমাজ-সম্পর্কের ভিত্তিকে দূষণ করে চলেছে

দূষিত রাজনীতির চাপ, ধর্মীয় উগ্রতা, আধুনিক মানুষের প্রাচীন মানসের ভিতর পকেট ভরাইঅথচ আমাদের অধিকাংশ ঘর হা-ভাত অনুজ্জ্বলতায় দশদিক শূন্যমানবতা লাঞ্ছিত সাম্রাজ্যবাদী দখলদারিত্ব, লুটপাটের শেষ না হয়ে অব্যাহত চলছেইবারে বারে তারা রূপ পাল্টায় রাস্তার ধারে যে পাগল আত্মমৈথুনে ব্যস্ত ও বিকারহীনÑ আমাদের অবস্থা তার চেয়েও নিকৃষ্ট মানুষের মিছিলে, প্রতিবাদে, সংগ্রামে তারা পুঁজির অনাচার চালায় ইহলৌকিক ও পারলৌকিক ঈশ্বরের চাপে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচিÑ তারও উপায় নেইএখনো মানসিক উদ্বাস্তু ভরা পৃথিবীআরো যেন মরতে হবে পারমাণবিক, রাসায়নিক, জীবাণু অস্ত্র থেকে শুরু করে যাবতীয় যুদ্ধাস্ত্রে নিজেদের ধ্বংস করা সামান্য সময়ের ব্যাপার মাত্র প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করার নিশ্চয়তা কে দেবে? মানুষের মানসিকতার পরিবর্তনের প্রশ্ন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

আমরা তো ক্রমাগত ডুবছি জটিল অন্ধকারেআবার মুক্তিও আমাদের হাতেসরল আশাবাদিতায় মৃত্যু ছাড়া কোন পথ খোলা নেই জটিলতার ভিতর দিয়ে পথ করে করে এগোতে হবে অন্ধতার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান তো আমাদের নিতেই হবেসময়ের যা অবস্থা, পৃথিবীর ধর্ম ও সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা না পাল্টালে কোথাও কোন আলো নেই, কোন স্বপ্ন নেইযে প্রশ্ন আরো জরুরি, ব্যবস্থা পাল্টানোর জন্য আমরা কী করব, কী করতে পারব।//