ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আর রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধের মধ্য দিয়া মানবিকতার মুক্তি ঘটে
-জামাল আবেদীন ভাস্কর
ধইরা নিলাম মতিউর রহমান নিজামী জীবনে কোন দুর্নীতি করে নাই, বউ-বাচ্চা আর পার্টির পয়সায় এই দেশে রাজনীতি কইরা চলছেন...ধইরা নিলাম বিদ্যমান সমাজ বাস্তবতায় তার আয় ব্যয়ের হিসাব দুর্নীতির আওতায় পরে না...ধইরা নিলাম জামায়াতের সকল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ধর্ম রক্ষার তাগীদে, দালালী বইলা কোন আচরন তাগো অভিধানে নাই...ধইরা নিলাম সালেহী ভালো ছাত্র তাহের স্যাররে খুন করনের কোন পরিকল্পনা ছিলো না তার...ধইরা নিলাম জামায়াতের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি সব তাগো বিরুদ্ধে দাঁড়াইছে ষড়যন্ত্র মূলক ভাবে...তাইলে কি তার বিরুদ্ধে কোন কথা কওন যায় না!? জামায়াত আর শিবির এই দেশে জায়েজ হইয়া যায়!?
মানুষের ইতিহাস কোনকালেই তার ধর্মের ইতিহাস ছিলো না...তার ইতিহাস নির্মিত হইছে অস্তিত্ত্ব রক্ষার নিমিত্তেই...ধর্মও আসছে তার অংশ হিসাবে, ধর্ম আসছে মানুষের অজ্ঞতার সুযোগে আসা রহস্যময়তা থেইকা। ধর্ম আসছে শোষক শ্রেণীর সুবিধাবাদীতা থেইকা, প্রতারণার অস্ত্র হিসাবে। ইতিহাস বিশ্লেষণ করলেও তা পাওন যায়...আর তাই ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মুহাম্মদেরও তৎকালীন ধর্মভিত্তিক শাসকগো বিরুদ্ধে বক্তব্য ছিলো...বক্তব্যের আবরণ ছিন্ন কইরা বিধ্বংসী যুদ্ধ ছিলো। মুহাম্মদও পূর্বতন ধর্মগুলিরে একভাবে নাকচ করে...যেহেতু হিন্দু ধর্ম সেমেটিক এলাকার বাইরের একটা ধর্ম তাই তার ইতিহাসে এই দুইয়ের বিরুদ্ধে কোন বক্তব্য নাই, খেরেস্তান বা ইহুদী ধর্মরে যেমনে নিজের ধর্মে একীভূত করেন সেইরম কোন সক্রিয়তা নাই হিন্দু আর বৌদ্ধ ধর্মের ব্যাপারে...
আমরা বুঝতে পারি মুহাম্মদের ভ্রমণাভিজ্ঞতার ব্যাপ্তি আরবীয় অঞ্চলের বাইরে ছিলো না...হায় দরিদ্র মুখাপেক্ষী আরবেরা বড় নৌকার আবিষ্কার করে নাই ক্যানো সবার আগে! নূহের নৌকার পরিকল্পণা তবে কার ছিলো! মুহাম্মদের সদুদ্দেশ্যের প্রতি আমি প্রায়শঃই মোহিত আবেগ ছড়াই। আরবভূমির যথেচ্ছারের বিরুদ্ধে একজন লোক দাঁড়াইতেছে জাইনাই আমার শ্রদ্ধাবোধ প্যারামিটারের পারদ উদ্র্ধমূখী হয়...কিন্তু ধর্মের কিছু নিজস্ব চরিত্র আছে...সেইমতোন ধর্ম পুরুষতান্ত্রিক হয়...ধর্মের কিছু দূর্বলতা আছে...সেইমতোন ধর্ম পারলৌকিক প্রবনতা পায়...ধর্মের কিছু সুবিধাবাদীত্ব আছে...সেইমতোন ধর্ম আগ্রাসী হয়।
ধর্মের বিশ্বাসধর্মীতার বিরুদ্ধে যূগে যূগে কালে কালে বিচক্ষণ ব্যক্তিরা দাঁড়াইছেন স্বমহিমায়...কিন্তু রহস্য ভাঙলে মানুষের আবেগের কমতি দেখা দ্যায়...রহস্যের প্রতি বিশ্বস্ততায় মানুষের দায়িত্বের পরিধী কমে...নিস্কৃতি ঘটে অনেক ইহজাগতিকতা থেইকা...আর এই কারনে বিজ্ঞানের সকল কথাই কোরআনে থাকনের পরেও(?) প্রশ্নবিদ্ধ ধার্মিকেরাই কেবল বিজ্ঞানের পদ্ধতিগত প্রক্রিয়ায় অংশ নেন...আল কিন্দী আর আল ফারাবী কিম্বা ইবনে সিনাগো আমরা কেবল মুসলিম নামের ব্যবহারেই আসতে দেখি, তাগো কোরআন সম্পর্কীত প্রশ্নমালা গুলি উহ্য থেকে যায়...বিজ্ঞানের বিস্তৃতি কিম্বা প্রযুক্তির বিকাশ দেখতে হয় নাছারা নাস্তিক ভূমিতে...
ধর্ম আসে তার স্বচরিত্রেই...রাষ্ট্রীয় ভাবে যখন ইবনে খালদুন ভাবেন, তখন তার চিন্তায় সাম্যের রাষ্ট্রীয় চিন্তা আসে...ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের কথা তিনি কন না, তার কথায় প্রতিধ্বনিত হয় ব্যক্তির ধর্ম চিন্তার প্রতিফলন...আর এই কারনে ধর্মভিত্তিক শাসকেরা তারে বন্দীত্ব উপহার দ্যান নিয়তঃ...আমরা খালদুনের মুসলিমত্ব টানি কিন্তু তার ইহজাগতিকতারে উপেক্ষা করতে চাই প্রতিনিয়তঃ...
বাংলাদেশের জন্মলগ্নেই এই দেশের মানুষরে মোটা দাঁগেই ধর্মের এই বৈশিষ্ঠ্যের মুখমুখি হইতে হইছে...যারা যুদ্ধ করছে তাগো মাথায় ছিলো মুক্তির স্বপ্ন, সমতার স্বপ্ন, স্বাধীনতার স্বপ্ন...আর যুদ্ধের বিরোধীতা করছে যারা তাগো মাথা জুইড়া ছিলো ধর্মীয় পাগড়ি...হয়তো বা নিজামীরা নির্বোধ ছিলেন...হয়তো বা নিজামী অন্ধ ছিলেন...কিন্তু ধর্মের সুবাস আসলে ঐ পথেই টানে মানুষরে। ধর্ম বিশ্বাসী রাজনীতি মানুষরে এমনেই অন্ধত্ব দ্যায়...তারা আর চোখে দেখে না বিশ্বাসের পর্দা সরাইয়া...ধর্মভিত্তিক মানুষ নিয়া আমার প্রশ্নমালা এতোটা কঠোর নয় যদিও, কিন্তু ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আর রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিয়া ইতিহাসে কোথাও কোন ইতিবাচকতা দেখি না...পারলৌকিক লোভ আর লাভের হাতছানি বাদে...
এই দেশে নিজামীরা-সালেহীরা বর্তমানে আমাগো সেই পুরানা অন্ধত্বের রাজনীতির দিকে টানতেছে...যেই রাজনীতি মানুষরে কখনোই প্রশ্ন করনের অধিকার দ্যায় না...যেই রাজনীতি কখনোই জবাবদিহিতার অবকাশ রাখে না...যেই রাজনীতি মানুষরে পশুর মতোন নির্বোধ কইরা রাখনের চেষ্টা করে...যেই রাজনীতি চিরটাকাল শাসক-শোষকের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হইছে...
আসুন নিজামীগো বর্জন করি মানবিকতার মুক্তি লাভের সংগ্রামে!