‘কান্না পেলে কাঁদতে হয়, কিন্তু কিভাবে কাঁদবো’
রণদীপম বসু
‘কান্না পেলে কাঁদতে হয়’। যদি এ মুহূর্তে কবিতা বিষয়ক আলোচনায় ভূমিকা টানার সুবিধার্থে বিষয় হিসেবে ‘কান্না’কে নির্বাচন করি নিশ্চয়ই পাঠক আশ্চর্য হবেন না। কেননা ‘কান্না’ একটি শব্দ, একটি বিষয় এবং উপলব্ধিজাত একটি ভাবও। ‘কান্না’ একটি ভাষা। একই সাথে তা একটি প্রক্রিয়া এবং ঘটনা-পরম্পরায় ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াজাত একটি ফলাফল। তার পেছনে রয়েছে অসংখ্য অনুষঙ্গ- দুঃখ, কষ্ট, বিষাদ, আঘাত, যন্ত্রণা, বিচ্ছেদ, বিরহ, ভাঙন, অপ্রাপ্তি, অব্যক্ততা, কাতরতা, উদ্ভ্রান্তি ইত্যাদি ইত্যাদি। কান্না নিয়ে বিচিত্র প্রকরণ ও ভাব বৈচিত্রে যুগে যুগে বহুবর্ণিল বহু রচনা সৃষ্টি হয়েছে এবং আগামীতেও আরো হবে। শক্তিশালী হাতে পড়লে বিশাল অভিসন্দর্ভ রচনাও সম্ভব। তাই খুবই সংক্ষিপ্ত পরিসরে কবিতার কলাবর্তে আমরাও না হয় এই সর্বজনবোধ্য কান্নাকে নিয়ে একটু নেড়েচেড়ে দেখতে পারি, অত্যন্ত মোটা দাগে এবং মোটা বুদ্ধি দিয়ে।
কান্না একটি ক্রিয়া এবং ‘সাবজেক্ট’ বা উদ্দেশ্যও। যদি বলি ‘মেয়েটি কাঁদছে’, সাধারণ একটি বাক্যের মতোই সবাই একবাক্যে বুঝে নিচ্ছে, মেয়েটি কান্না নামক একটি সাধারণ প্রক্রিয়ার ফলাফল প্রকাশ করছে কান্নার মাধ্যমে। হয়তো কেউ চিমটি কেটেছে বা মেরেছে, তাই সে কাঁদছে। হতে পারে ‘ভেউ ভেউ’ করে কাঁদছে অথবা নীরবে কাঁদছে এবং চোখ দিয়ে টলটল পানিও ঝরছে, যাকে আমরা অশ্র“ বলি। এই যে কান্নাটা কী ভাবে ঘটছে, যা আমরা ধারণা করলাম, এটা আমাদের স্মৃতিকোষে গেথে থাকা একটা ‘আর্কিটাইপ’ মাত্র। কেননা সবাই এভাবেই কাঁদে এবং এভাবে কাঁদার সাধারণ ধারণা সবার মনে একটা নিষ্কম্প স্থায়ী চিত্র হয়ে আঁকা আছে। এজন্য কাউকে কোন কল্পনা করতে হয় না বা কল্পনার প্রয়োজনও হয় না। অর্থাৎ পাঠকের এখানে কল্পনা করার কিছুই নেই। নিতান্তই খুব সাধারণ একটা বর্ণনামূলক বাক্য বা বাক্যাংশ হিসেবে তা কারো মনে বিশেষ কোন প্রভাব ফেলতে পারছে না। যদি বলা হতো ‘বড় কষ্ট পেয়ে মেয়েটি কাঁদছে’, তাহলে আগের বাক্যাংশটির সাথে ‘বড় কষ্ট পেয়ে’ বাক্যাংশের সংযুক্তিতে কান্না প্রক্রিয়ার পেছনের একটা বিমূর্ত কারণ বর্ণনা যুক্ত হয় কেবল। এতে অর্থের কি কোন ইতর বিশেষ ঘটে? মোটেই না। এ ক্ষেত্রেও পাঠকের কল্পনাশক্তি ব্যবহারের কোন দরকারই হয় না। এখানে কল্পনার কী-ই বা আছে? কষ্ট পেয়েই তো সবাই কাঁদে। নইলে কি কেউ কাঁদে? এই সাধারণীকরণের বাইরে যাওয়ার সুযোগ কই পাঠকের!
এবার একটু কাব্যের ঢং এনে যদি বলি ‘কাঁদছে মেয়ে কষ্ট পেয়ে’, কোন পরিবর্তন কি চোখে পড়ে? একটু পড়ে বৈ কি, কিছুটা ছন্দের দোলা। চার মাত্রার স্বরবৃত্তের খুব সাধারণ একটা প্রকরণের মধ্যে ফেলে সেই বর্ণনামূলক সরল বাক্যটিকেই ছন্দযুক্ত করা হয়েছে শুধু। এতে অর্থের কি কোন পার্থক্য এসেছে? না কি পাঠকের কল্পনাকে জাগাতে পেরেছে? কোনটাই না, যে কেউ এক পলক দেখেই বুঝে ফেলতে পারি। যেমন, ‘তোমরা যদি/ মারতে আসো/ কাঁদবো আমি/ ভ্যাঁ- করে’- এরকম অর্থদ্যোতনাহীন সাধারণ বর্ণনামূলক কথা বা কিছু শব্দসমষ্টিকে কোন ছন্দের প্রকরণে গেঁথে নিলেই সাহিত্য ভাষায় একে বলা যেতে পারে ‘পদ্য’। এতে নেই ভাবের কোন ব্যঞ্জনা বা বক্তব্যের পেছনে কল্পনাকে উন্মুক্ত করার কোন প্রয়াস বা এতটুকু সুযোগও।
কিন্তু যখনি আমরা আকস্মিক এমন কোন বাক্যের মুখোমুখি হই- ‘বুকের আকাশে তাঁর গলে গলে ঝরে মেঘ’, থমকে যাই এবং চমকিত হই। ‘আর্কিটাইপ’ ভেঙে এক অভূতপূর্ব নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই। শব্দের অভাবনীয় প্রয়োগ-ব্যঞ্জনায় অপ্রস্তুত আমরা তখন আক্ষরিক অর্থপ্রকাশে অসহায় হয়ে পড়ি। কল্পনার সীমাহীন উন্মুক্ততায় আশ্রয় নিয়ে আমাদের নিজেকেই অর্থাৎ পাঠককেই গড়ে নিতে হয় এর অন্তর্গত অর্থময়তা। শব্দের প্রতীকী দ্যোতনায় রোমাঞ্চিত হই। বাধ্য হয়েই আমাদেরকে ভাবতে হয়- ‘বুকের আকাশ!’, এ আবার কেমন! আকাশ তো আকাশই, বুকের মধ্যেও কি আকাশ থাকে! সেটা কেমন আকাশ? আকাশের প্রতিরূপ? কিভাবে? এই আকাশের মতোই ওই আকাশটাতেও কি তেমনি যা কিছু থাকার কথা, সব থাকে? ওখানে মেঘও জমে, কীভাবে? কিসের মেঘ? তা আবার গলে গলে ঝরেও! কেন ঝরে? কোথায় ঝরে? একের পর এক এই যে এতোসব প্রশ্নধারা তৈরি হতে থাকে, তৃপ্ত না হওয়াতক পাঠকের সৃষ্টিশীল কল্পনা ক্ষান্ত হয় না, বিস্তৃত হতেই থাকে। এবং পাঠক আশ্চর্য হয়ে আবিষ্কার করেন যে, এটাই তো কান্না! কিন্তু এই কান্না আমাদের পরিচিত প্রচলিত সেইসব কান্না থেকে দারুণভাবে ভিন্ন। অন্যরকম। গভীর, বিস্তৃত, বহুমাত্রিক দ্যোতনায় উজ্জ্বল! আমাদের চির পরিচিত আকাশটাই অন্য এক ব্যাখ্যাহীন জগতে ঢুকে কেমন অচেনা অথচ খুব আপন আকাশ হয়ে নিবিড় স্পর্শ বিলাতে থাকে। মেঘগুলোও আমাদের এইসব চিরচেনা মেঘ নয়, অন্য কোন মেঘ, অন্য কিছু। এই যে চেনার মধ্যে অচেনার মিশেল, শব্দে শব্দে এক আলো-আঁধারির জগৎ রচনা, এটাই কবিতা। তাই ‘বুকের আকাশে তাঁর গলে গলে ঝরে মেঘ’ আসলে এক বিষাদময় কান্নার অভিব্যক্তি মাত্র। তবে পাঠকভেদে এর অর্থবোধকতা বদলেও যেতে পারে। আবার একই পাঠকের মধ্যেও সময়ে সময়ে এই অর্থবোধকতা বদলাতে থাকে। অর্থাৎ পড়ামাত্রই তা ফুরিয়ে যায় না।
এই ফুরিয়ে না যাওয়াটাই ‘কবিতা’। পাঠকের হৃদয় মনে দোলা দেয়া বিচিত্র অনুভবের এক ভিন্ন জগৎ তৈরি করে দেন কবি তাঁর দৃশ্যের মধ্যে অচেনার মিশেলে এক আলো-আঁধারির মায়াবী জগৎ রচনা করে। কাব্যের ভাষায় এটাকেই ‘চিত্রকল্প’ বলা হয়। দৃশ্যের পেছনে অসংখ্য দৃশ্যের অবিরল আসা যাওয়ার এই চিত্রকল্পই কবিতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। এবং তখনই প্রশ্ন উঠে- কবিতা কী? কবিতা হচ্ছে ‘নির্বাচিত শব্দ বিন্যাস’, এক কথায় এমন উত্তর দেয়া গেলে ‘কবিতা কী’ এই অনিরূপিত বিষয়টি নিয়ে কবেই সব বিতর্কের অবসান হয়ে যেতো। কিন্তু আজতক তা সম্ভব হয় নি। কেননা পদ্য, গদ্য, ছড়া, এমন কি আমাদের চর্চিত ব্যক্তিগত চিঠিগুলোও নির্বাচিত কিছু শব্দের বিন্যাসই। ইংরেজ কবি ‘কোলরিজ’ বলেন- ‘কবিতা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ শব্দের শ্রেষ্ঠ ব্যুহ’। আবার ‘দান্তে’র ভাষ্যে- ‘সুরে বসানো কথাই কবিতা’। এদিকে কাব্যের নন্দনতাত্ত্বিকদের কথা হলো- ‘ভাব থেকেই কবিতার জন্ম ; কিন্তু নিছক ভাবালুতা কবিতা নয়।’ এই সবগুলো কথার ল.সা.গু হচ্ছে- শুধু শব্দ সাজানো নয়; শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে ভাবকে ধারণ করাই কবিতা। ‘ম্যাকলিশের’ একটি বিখ্যাত পঙক্তি রয়েছে- ‘কবিতা কিছু বোঝায় না/ কবিতা হয়ে ওঠে।’ বোঝাতে গেলে বাহুল্যদোষে সেটা আর কবিতা থাকে না। অর্থাৎ কবিতা শব্দে শব্দে অক্ষরে অক্ষরে অংকিত কোন চিত্র নয়, চিত্রকল্প। এই চিত্রকল্পকে বোঝাতেই জীবনানন্দ দাশ বলেন- ‘উপমাই কবিত্ব’। প্রকাশ-প্রকরণ ও বিষয়-প্রকরণের চমৎকারিত্বের পাশাপাশি চিত্রকল্পের ব্যবহারে যদি প্রতীকী ব্যঞ্জনা মূর্ত হয়ে ওঠে তবেই তা কবিতা। তার পরেও কবিতা কেন কবিতা, সব সময় ব্যাখ্যা সম্ভব নয়। উপলব্ধিজাত অভিজ্ঞতা দিয়েই তা বুঝে নিতে হয়।
ইচ্ছে হলেই কবিতা হয় না বা লেখা যায় না। এটি একটি স্বতঃস্ফূর্ত প্রণোদনা। তবে কবিতার বৈশিষ্ট্যগুলো যদি কবি ধারণায় না রাখেন বা এর জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতি ও নিরন্তর সাধনা না থাকে, কবিতার নাগাল পাওয়া কঠিন। তাই কবিতাতেই কবির পরিচয়। আর ‘কিশোর কবিতা’ হিসেবে যেসব কবিতাকে বুঝানো হয় তাতে কবিতার বৈশিষ্ট্যকে অক্ষুণœ রেখে কিশোর-মনের ভাবনাগুলোর মনস্তাত্ত্বিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া প্রতীকী ব্যঞ্জনায় সহজভাবে উপস্থাপন করতে হয়। এখানে ছন্দের বিষয়টিকেও মাথায় রাখতে হয়। এ কারণেই কিশোর কবিতা রচনা সবচেয়ে কঠিন ও সংবেদনশীল একটি নির্মাণকাজ।
এই যে কবিতা হয়ে ওঠা এবং হয়ে না ওঠার বিষয়, তা আরেকটু স্পষ্ট করা যেতে পারে কিছু উদাহরণ টানলে। যেহেতু আমাদের আলোচনাটি বৃত্তায়িত, তাই গুটিকয়েক রচনা নির্বাচন করতে চাই যেখানে একই কবির উভয় নমূনা পাশাপাশি রেখে তুলনা করা যেতে পারে এবং যাদেরকে কিশোর সাহিত্যে বিশেষ করে কবিতা অঙ্গনে বর্তমান সময়ের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে কেউ কেউ বিবেচনা করেন, তাদের রচনা থেকে।
‘যখন পাখি বেঢপ সুরে ডাকিস/ পাখিরে তোর মন ভালো নেই বুঝি/ বৃক্ষ যখন ঝিম মেরে তুই থাকিস/ বুঝতে পারি মন ভালো নেই তোরও/..../ কঁকিয়ে উঠে বাজার করার থলে/ মন ভালো নেই হাটখোলা, বটমূলের/ যখন দেশের মন থাকেনা ভালো/ মন ভালো কি থাকতে পারে কারো? Ñ (মন ভালো নেই/ ফারুক নওয়াজ)।
পাখির বেঢপ সুরে ডাকা, ঝিম মেরে থাকা বৃক্ষ বা কঁকিয়ে উঠা বাজার করার থলের মন ভালো না থাকার ব্যবহারিক বাস্তবতা মিশিয়ে গোটা কবিতা জুড়ে অদ্ভুত দক্ষতায় যে রূপকল্প সৃষ্টি করা হয়েছে এক কথায় চমৎকার। পাওয়া না পাওয়ার দ্বন্দ্বক্ষুব্ধ নিরেট বাস্তবতায় সে ব্যক্তিমনের অনুভূতির রঙেই নিজস্ব নিসর্গও রঞ্জিত হয়ে ওঠে। এর বিষয় প্রকরণ, ছন্দের ব্যবহার ও চিত্রকল্পময়তা বিবেচনায় এটি একটি হয়ে ওঠা সার্থক কবিতার খুব উজ্জ্বল উদাহরণ। পাশাপাশি একই কবির ‘খোকা আছে অন্তরে’ শিরোনামের রচনাটি প্রথম পঙক্তিগুচ্ছেই কল্পচিত্রের ভুল ব্যবহারের কারণে কবিতা তো হলোই না, পদ্যের ব্যাকরণও ঠিক থাকে নি। যেমন- ‘যখন সন্ধ্যা গিয়ে রাত্রি আসে-/ ওঠে তারা ফুটফুটে নীল আকাশে/ চাঁদ হাসে নীলিমার নীল কিনারায়;/ তখন খোকার কথা মনে পড়ে যায়!/...... (খোকা আছে অন্তরে/ ফারুক নওয়াজ)। দৃশ্য বর্ণনায় রাতের আকাশ যে কখনোই নীলরঙা হয় না এ বিষয়টা বিস্মৃত হয়ে কচি ফুটফুটে তারা আর চাঁদকে যেভাবে হাসিয়েছেন তাতে সব ছাপিয়ে কবির অমনোযোগিতাই প্রকাশ পেয়েছে বেশি।
একই ভাবে সুজন বড়–য়াকে আমাদের কিশোর কবিতার অন্যতম প্রতিনিধিত্বশীল কবি। ‘আকাশটা আর নীল মোটে নয়, রঙ যে কেমন লালচে,/ কেউ যেন ঠিক গোপন হাতে আগুন তাতে ঢালছে ;/ নাকি আগুন চাষ করেছে রোদের চাষী সূর্য/ দুপুরগুলো ঝাঁ ঝাঁ করে বাজায় যেন তূর্য,/... (বোশেখ/ সুজন বড়–য়া) কবিতার উজ্জ্বল পঙক্তির উদাহরণ এটি। বিশেষ করে রোদের চাষী সূর্যের আগুন চাষ এবং বোশেখের নীরব দুপুরকে ঝাঁ ঝাঁ করে তূর্য বাজানোর অভাবনীয় চিত্রকল্প আঁকায় অভূতপূর্ব দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি। বলা চলে ঈর্ষণীয়। পাশাপাশি আবার তাঁরই রচিত বিবৃতিধর্মী সাধারণ একটি পদ্যের নমূনা- ‘তুমি থাকো পাঁচ তলাতে, আমি গাছতলাতে,/ আমার হাতে কাস্তে-কোদাল, কলম তোমার হাতে,/ রাখাল মুটের কাজ করে যাই হয়তো তোমার ঘরে/ আর তুমি যাও ইশকুলে সেই লাল টয়োটা চড়ে/..... (আমারও স্বপ্ন আছে/ সুজন বড়ুয়া)।
শিশুসাহিত্যে নিবেদিতপ্রাণ কর্মী রাশেদ রউফের কবিতার বৈশিষ্ট্যময় কিছু কিছু পঙক্তি সত্যি নজর কাড়ে, যেমন- ‘আমি তখন ঘাস হয়ে যাই অথবা হই নদী/ কেই দেখেনা ঢেউ খেলে ঠিক ছুটছি নিরবধি/... (দুরন্ত সম্রাট/ রাশেদ রউফ)। এই পঙক্তিগুলোর মতো তাঁর নজরশৈলী ঋদ্ধ হলে অনেক অসফল বিবৃতিধর্মী পদ্যকে কবিতা ভেবে আত্মতৃপ্ত হবার বিড়ম্বনায় তাঁকে পড়তে হতো না। উদাহরণ- ‘চেরাগী পাহাড় পেছনে রেখে সে এগিয়েছে সম্মুখে/ দেখে শত লোক জড়ো হয়ে আছে ডিসি পাহাড়ের বুকে,/ পাহাড়ের বুকে উৎসুকে তারা উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা/ সেই উচ্ছ্বাস খোকনের ছোট মনকে দিয়েছে নাড়া।/... (ডিসি পাহাড়ের বুক/ রাশেদ রউফ)। বিবৃতির মধ্যেও কিশোর সাহিত্যের কর্মী রাশেদ রউফ হয়তো ভুলেই গেছেন যে, খোকনেরা যত ছোটই হোক, মনটা তাদের ছোট হয় না। অথবা শিশু কিশোরদের সীমাহীন কৌতূহলী মনকে একজন কবি হিসেবে কখনো ছোট করে আঁকতে নেই।
দীর্ঘদিন যাবৎ শিশু কিশোর উপযোগী সাহিত্যে রহীম শাহ নিজেকে নিবেদিত করে রেখেছেন। কিশোর কবিতার নমূনা খুঁজতে গিয়ে আলোচনাকারের নজরে যে রচনাটি তাঁর অন্যান্যগুলোর তুলনায় ভালো মনে হয়েছে তাও কবিতার বৈশিষ্ট্য পায় নি। অতএব উত্তীর্ণ হতে না পারার দুঃখজনক উদাহরণ দিয়েই এ আলোচনার যতি টানবো। ‘আমি যখন নদীর তীরে যাই বেড়াতে ভোরে/ তখন নদীর কান্নাকাটির শব্দ শুনি জোরে ;/ কাশের বাগান লোপাট করে বলি, কি চাও নদী?/ আমার দিকে তাকিয়ে নদী বইছে নিরবধি,/..... (নদী নিয়ে আকাশ নিয়ে/ রহীম শাহ)। রহীম শাহ নদীর কান্নাকাটি শুনলেও আমরা কিন্তু আন্তরিকতার ছোঁয়াবিহীন তাঁর রচনাগুলোর কান্নাকাটিই শুনছি। নবায়নযোগ্যতার অভাবে আরো অনেকের লেখাতেই এই যতিহীন কান্নার আওয়াজ বাড়ছে শুধু। পাঠকরা চূড়ান্ত বিরক্ত হবার আগেই আমাদের কি আবারো নিবিড়ভাবে ভাবা উচিৎ নয়- সৃষ্টিযন্ত্রনায় কান্না পেলে কাঁদতে হয়, কিন্তু কী ভাবে কাঁদবো?
[ছোট কাগজ ‘পান্সি’/ ১ম বর্ষ ১ম সংখ্যা/ ডিসেম্বর ২০০৭]