কবিতার ভাষান্তর, আদৌ কি অনুবাদ সম্ভব ?

রণদীপম বসু   

(১) 

 কবিতা কেন কবিতা, তা নিয়ে কাব্য-সাহিত্যের নন্দনতত্ত্বে বিস্তর আলোচনা বাদানুবাদ হয়েছে, হচ্ছে এবং আগামীতেও হবে সাহিত্যের বিচিত্র প্রবাহে নিত্য-নতুন বৈচিত্রের  জন্যেই এর আবশ্যকতা অনস্বীকার্যকিন্তু কবিতার ভাষান্তর বা অনুবাদ আদৌ সম্ভব কি না, এ প্রসঙ্গ চলে এলে কবিতা কী’, সে প্রসঙ্গও এড়িয়ে যাওয়ার আর উপায় থাকে নাতাহলে কবিতা কী

কবিতা কী ? নানা মুনির নানা মতে হাবুডুবু খেতে খেতে শেষ পর্যন্ত কবিতা যে আসলে শিল্পোপলব্ধির এক মায়াবী রসের নাম, তা আর বুঝতে বাকী থাকে না কাব্যরসে নিমগ্ন রসজ্ঞরা বলেন - ভাব থেকেই কবিতার জন্মকিন্তু ভাবতো একটা বিমূর্ত ধারণা মাত্রআর যেহেতু কবিতা হচ্ছে একপ্রকার শব্দশিল্প, তাই আমরা বলতে পারি ভাবযুক্ত শব্দরচনাই কবিতাআবার শব্দই যেহেতু ভাবের মাধ্যম এবং অর্থহীন বা ভাবহীন কোন শব্দ বাস্তবে অস্থিত্বহীন, তাই শব্দ মাত্রেই কোন না কোন বস্তু বা ভাবের প্রতীকী প্রকাশতবু মালার্মে কথিত শব্দই কবিতা সংজ্ঞাটিকে ভাবগত অর্থে মেনে নিলেও কবিতার পরিপূর্ণ সংজ্ঞা আদতে তৈরি হয় না এজন্যেই ইংরেজ কবি কোলরিজের শ্রেষ্ঠ শব্দের শ্রেষ্ঠ বিন্যাস সংজ্ঞাটিকে অধিকতর অর্থবহ মনে হয়কিন্তু এখানেও বিপত্তিটা দেখা দেয় কবিতার সাথে একটা চমকার সফল গদ্যের পার্থক্য নিরূপন করতে গিয়েকিন্তু দান্তে যখন বলেন Ñ‘সুরে বসানো কথাই হলো কবিতা তখন কি সংগীত প্রাধান্য কবিতাকে আলাদাভাবে বিশিষ্ট হতে দেয়? এদিকে ছন্দ-অন্ত-প্রাণ কবি বলেই হয়তো শঙ্খ ঘোষের ছন্দে সমর্পিত শব্দেরই নাম কবিতা কথাটিকে মেনে নিতে গেলেও প্রশ্ন ওঠে - তবে ছড়া বা পদ্য কেন কবিতা নয়? তাই বুঝি শেষ পর্যন্ত আমাদের অগতির গতি রবীন্দ্রনাথেই ফিরে যেতে হয়Ñ‘রূপের মধ্যে অরূপের সন্ধানই কবিতাএটাকেই যথার্থ সংজ্ঞা বলে মনে হয় প্রয়োজনীয় শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে যে অপরূপ শব্দচিত্র বা দৃশ্য আঁকা হয় তার মধ্যে অরূপের সন্ধান অর্থা অন্তর্গত অনুভূতির রসে ভিন্ন কোন অর্থের আবহ তৈরি করাকে কবিতা বলা যায়

কিন্তু আমাদের অর্থময় চেনা জগতের বাস্তব শব্দ দিয়ে তো আসলে  অবাস্তব কিছু নয় বরং আমাদের চেনা দৃশ্য বা বাস্তব আদলই তৈরি করা যায়তাই এ বাস্তবতাকে তীর্যকভাবে দেখার প্রয়োজনেই চলে এলো প্রতীক উপমা রূপক ইত্যাদির আলংকারিক ব্যবহারের মাধ্যমে চিত্রকল্প সৃষ্টির এক শিল্পীত প্রবণতা সেজন্যেই জীবনানন্দ দাশের কথায় উপমাই কবিতা বলতে মূলত কবিতার চিত্রকল্পতাকেই বুঝানো হয়ে থাকেএভাবে যথাযোগ্য শ্রেষ্ঠ শব্দগুলোকে শ্রেষ্ঠ বিন্যাসের মাধ্যমে যে অপরূপ শব্দশরীরী চিত্রটা তৈরি হয়ে যায় তাও যখন প্রকাশের বর্ণনাময় আতিশয্যে রহস্যবিহীন, নিরাভরণ ও দৃশ্যমান হয়ে ওঠে তখন রূপকল্পের দ্যোতনাময় মায়াবী চাদরে জড়িয়ে তাকে করে তোলা হয় চেনা অচেনার মিশেলে গড়া আধা-বাস্তব আধা-কল্পনার এক স্পন্দনশীল মূর্তিএটাই কবিতা আক্ষরিক ব্যাখ্যাযোগ্যতার গভীরে ক্রিয়াশীল অন্য এক উপলব্ধির অর্থময় অনুভব পাঠকমনের সৃজনশীল কল্পনাও এখানে ক্রিয়াশীল হবার বিষয়নিষ্ঠ সুযোগ পেয়ে  যায়সে রচনা তখন আর স্রষ্টা বা কবির একার থাকে না, পাঠকের স্বতস্ফূর্ত অন্তর্ভূক্তি একে নিয়ে যায় রসঘন এক ব্যাখ্যাহীন পরিতৃপ্তির     অন্তর্গত জগতেএবং তখনই একটি সার্থক কবিতা প্রকৃতই কবিতা হয়ে ওঠেএখানে আর বুঝানোর কিছু থাকে না, বুঝে নিতে হয়; ম্যাকলিশের সেই বিখ্যাত পংক্তির মতোই কবিতা কিছু বোঝায় না/ কবিতা হয়ে ওঠেকেননা বুঝাতে গেলে সে যে আর কবিতাই থাকে নাএই উপলব্ধিজাত বিস্ময় থেকেই বুঝি রবার্ট ফ্রস্টও উচ্চারণ করেন সেটুকুই বিশুদ্ধ কবিতা, যার অনুবাদ সম্ভব নয় 

অতএব অনুবাদের বিষয়টিও চলে এলো এখানে রবার্ট  ফ্রস্টের এই চুম্বক মন্তব্যেই কবিতার অনুবাদের ক্ষেত্রে অনিবার্য যে সীমাবদ্ধতা তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে প্রতিটি ভাষায়ই তার নিজস্ব যে শব্দ-সম্ভার, প্রতিটি শব্দেরই একেকটা নিজস্ব আকাশ থাকে ব্যঞ্জনার মেঘে মেঘে ঋতুর বৈভব নিয়ে শব্দের এ আকাশ তার বিচিত্র আবেদনে অনন্ত ব্যাপ্তি আর গভীর আবেশ ছড়িয়ে উড়তে থাকে ভাষার আবহমান মনোজগতেএ আকাশের ব্যঞ্জনা উপলব্ধি করতে সক্ষম তারাই, যারা এর ছায়ার সন্তানএটা কি অনুবাদে সম্ভব

শব্দের অনুবাদ হতে পারে, ভাবের দ্যোতনার অনুবাদ কীভাবে সম্ভব ? অক্ষরের অনুবাদ হয়, কিন্তু এর দৃশ্যমান আকারের অদৃশ্য অলৌকিক প্রভাবের অনুবাদ কি অকল্পনীয় নয় ? বাক্যের শরীরী অনুবাদ হয়, বাক্যের গভীরে যে বহমান সংস্কৃতির শতদ্রু ধারা, তার অনুবাদ আদৌ সম্ভব কি ? শব্দের সেই আকাশটাই তো বদলে যায় ! তাই ভাষান্তরে অনুদিত কবিতা হচ্ছে কবিতার মমীটাই কেবল, প্রাণহীন, নিথর ! প্রাণের স্পন্দন তার রয়ে যায় অন্যখানে, অন্য কোন আকাশের ছায়ায় নাড়িছোঁয়া মৃত্তিকার গভীরে ! 

আমার ছোট্ট যে অভিজ্ঞতাটুকু এ প্রসঙ্গে জড়িয়ে আছে, তাও এই উপলব্ধিরই সমার্থক 

(২) 

২৬ জানুয়ারি ২০০৭একুশে বইমেলা শুরুর তখনো সপ্তা খানেক বাকি মোবাইলটা বেজে ওঠলো।  অচেনা নম্বরঅন করতেই ওপাশ থেকে অপরিচিত কণ্ঠ ভেসে এলোহ্যালো, আমি ওবায়েদুল্লাহ্ মামুন, আপনি কি রণদীপম বসু ? জ্বীজয়দুল ভাইয়ের থেকে (ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমীর সভাপতি, কবি ও ছড়াকার) আপনার নাম্বার নিয়েছিঐতিহ্যথেকে তিতাস ছবি ও কবিতায় নামে আমার একটি ফটো-এ্যালবাম বেরিয়েছেএটাতে দুবাংলার ষোলজন কবির তিতাসকে নিয়ে ষোলটি কবিতা অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে ; তার মধ্যে আপনার একটি কবিতাও রয়েছে, কবীর স্যারের (জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী) ইংরেজি অনুবাদসহ আগামীকাল বেঙ্গল গ্যালারীতে প্রকাশনা উসব বিকেল চারটায়কবীর স্যার, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, সুবীর দা (সুবীর চৌধুরী), হাসনাত আব্দুল হাই, মিঠু ভাই (শিল্পী খালিদ হাসান মিঠু, বেঙ্গল গ্যালারীর সত্ত্বাধিকারী), নাঈম ভাই (ঐতিহ্যের প্রকাশক মোঃ আরিফুর রহমান নাঈম) সহ অনেকেই আসবেনআপনি কি আসতে পারবেন ? তাঁর একটানা ছুঁড়ে দেয়া কথার জবাবে কৃতজ্ঞ-সম্মতি জানিয়ে দিলামকিন্তু ওবায়েদুল্লাহ মামুন নামের কাউকে আগে থেকে চিনতাম কি না, মনে করতে পারলাম না 

সাহিত্যে নদীর প্রাসঙ্গিকতা দীর্ঘকালীন ; দেহের সাথে আত্মার মতোই ওতপ্রোত বিশ্বসাহিত্যে বহু বিখ্যাত গ্রন্থের নামেও মিশে আছে নদীর নামযেমন মিখায়েল শোলোকভের  অ্যাণ্ড কোয়ায়েট ফ্লোজ দি ডন, মার্ক টোয়েনের লাইফ অন দি মিসিসিপি, লিলিয়ান হেলম্যানের ওয়াজ অন দি রাইন ইত্যাদিবাংলা সাহিত্যে আবু জাফর সামসুদ্দিনের পদ্মা মেঘনা যমুনা, আলাউদ্দিন আল আজাদের কর্ণফুলি, প্রমথ নাথ বিশীর পদ্মা, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি, বিভুতি ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইছামতী, সুবোধ বসুর পদ্মা প্রমত্তা নদী, সমরেশ বসুর গঙ্গাআর ভূমিদস্যুদের কালো থাবায় এখনকার অপসৃয়মান মৃত নদী তিতাস অদ্বৈত মল্লবর্মনের তিতাস একটি নদীর নামে তো অমর হয়ে আছে কবিতায়ও নদীর উপস্থিতি ভুরিভুরিকিন্তু গ্রন্থভূক্ত আলোকচিত্রে

নিউ ইয়র্ক প্রবাসী সৃজনশীল আলোকচিত্র শিল্পী ওবায়েদুল্লাহ মামুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মসূত্রেই তিতাস প্রেমিকতাঁর আলোকচিত্রে তিতাস নদী এবং তার বুকে ও চারপাশে চলমান জীবনের বাস্তবতার সঙ্গে কল্পনা ও শৈল্পিক নৈপুন্যের যে চমকার সমন্বয় ঘটেছে, ছবির কম্পোজিশান, পার্সপেক্টিভ ও আলো-ছায়ার মায়াবী পরিবেশন দেখলেই তার দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা স্বচ্ছ হয়ে যায় বাংলাদেশের অনেক নদীর মতোই অযত্ন অবহেলায় অকৃতজ্ঞ কৃতঘ্ন মানুষের হাতে এখনকার মৃত তিতাসও একদিন হারিয়ে যাবেএই বেদনা বোধ থেকেই মামুন তিতাসকে তার বুকের জমিনে চিরস্থায়ী করার প্রয়াস নিয়েছেন 

ওবায়েদুল্লাহ মামুনের সাথে এর আগে পরিচিত হবার সুযোগ হয়নি আমার২৭ জানুয়ারি ২০০৭ এ বেঙ্গল গ্যালারীতে তিতাস ছবি ও কবিতায়’-এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে গিয়ে তাঁর পরিচয় ও অবস্থান সম্পর্কে আলোচকদের বক্তব্য থেকে অবহিত হয়ে তাঁকে আর আমার সেই প্রশ্নটি করার সাহস হয়নি- তিতাসের মুখ কবিতাটি তিনি কোত্থেকে পেলেনআমাকে নিঃস্ব করে দিয়ে হারিয়ে যাওয়া সেই ডায়েরীর অন্যতম এই কবিতাটি আমার প্রকাশিত অদৃশ্য বাতিঘর বইয়ে নেইহতে পারে পুরনো কোন পত্রিকা বা ম্যাগাজিন থেকে এটি সংগ্রহ করেছেনমামুন বর্তমানে দুগ্যাল ভিজ্যুয়াল সলিউশানস নিউ ইয়র্কের ম্যানেজার, উদীচী স্কুল অব আর্টস এর ফটোগ্রাফিক ইনস্ট্রাক্টর এবং এএম এশিয়া এণ্ড কমিউনিক্যাশন্স ইউএসএ-র ডিরেক্টরযিনি আগেপরে একাধারে বাংলাদেশ ও আমেরিকার অনেকগুলো সম্ভ্রান্ত ফটোগ্রাফিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসীন, তাঁকে প্রশ্ন করবো কী, আমিই বরং কৃতজ্ঞ যে আমার একটি হারানো কবিতা ফিরে পেলাম তাঁর মাধ্যমেতদুপরি মূল কবিতাটির সাথে কবীর চৌধুরীর মতো ব্যক্তিকে দিয়ে ইংরেজীতে অনুবাদ করিয়ে চমকার ফটোগ্রাফিক্সের মিশেলে তা প্রকাশ করে ছড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বে, এই আবেগেই তো উদ্বেল আমিকিন্তু মূল কৌতূহলই ছিলো আমার নিজের কোন কবিতার  এই প্রথম ভাষান্তরে কবিতা কতটুকু কবিতা থাকে তা যাচাই করা 

আমাদের অনুবাদ সাহিত্যে শ্রদ্ধেয় কবীর চৌধুরীর অভিজ্ঞতা প্রজ্ঞা ও যোগ্যতায় কারো কোন সন্দেহের অবকাশ নেইকিন্তু মানেই তো যা অনুবাদযোগ্য নয়তিনি নিজেই বলেন- কবিতার কখনো অনুবাদ হয় নাতবু তিনি না করলে এই সুন্দর অনুবাদটুকুই বা কই পেতাম আমি ! তাঁর প্রতি আমার বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা 

মূলত কবিতার কতটুকু অনুবাদ করা সম্ভব ? আগ্রহী পাঠকের বিজ্ঞ বিবেচনা ও কৌতূহল নিবৃত্তির লক্ষ্যে কবীর চৌধুরী অনুদিত ইংরেজি অনুবাদটি মূল কবিতাসহ নীচে উপস্থাপন করা হলোএ থেকেও একটা ধারণা আমরা পেয়ে যেতে পারি 

 

                    তিতাসের মুখ 

                              - রণদীপম বসু 

 কালিন্দীর কালোতলে শুয়েছিলো

 স্বপ্নের বিপুল কণা,

 উসরণের অন্ত্যেস্বরি ব্যথায় কখোন কিভাবে জানি

 তিতাসের তীর হয়ে ছুটে গেছে নিরুদ্দেশ-

 গভীর সন্ধানে কোনো

 হয়তো বা ছুঁয়ে দিতে নীলিমার কোণ-

 যুগল মিলনে ভেসে বুঝে নিতে

 আকাশ গংগার সাথে তিতাসের বুকের দোলায়

 ভিন্নতা কোথায়

 

 বেহুলার ভাসানে চড়ে একদিন

 গাঙুড়ের জলে

 স্বপ্নস্বর লখীন্দর গিয়েছিলো এমনি করে ভেসে;

 তিতাসের কোল বেয়ে আজো কতো লখীন্দর ভাসে-

 বেহুলারা নেই আর

 কপালে রাখে না কেউ বরাভয়ি প্রতিশ্রত হাত

 না ফেরার কষ্ট বুকে উসারিত দৃষ্টিরা সব

 চেয়ে রয় উর্ধ্বলোকে-

 এবং অপূর্ব বিস্মরণে কাঁপে !

 চিত্রল ঝিনুকের মতোন আকাশ গংগার বুকে মহা লগনের

 স্রোত-

 ছুটে চলে যেনো কোন্ মহেন্দ্র তৃষায়

 

 লখীন্দর ভেসে যায়,

 ভাসতে ভাসতে আকাশ গংগায় দেখে

 বহমান তিতাসেরই মুখ। 

 

 

The face of Titash 

 -Ranadipam Basu

 (Translated by: Kabir Chowdhury) 

 A huge grain of a dream lay

 on the dark bottom of Kalindi.

 One didn’t know how and when,

 hurt by the pain of awakening,

 it rushed forward and touched the bank of Titash

 looking for something deep.

 Perhaps it wanted to caress a corner of the sky,

 perhaps by merging with it,

 it wanted to find out how the river of the sky

 and the water of the Titash differed

 from one another in their heartboats.

 

 One day Lakhindar had floated

 down the waters of Gangoor

 on Behula’s boat.

 Today many Lakhindars float on Titash’s water

 but the Behulas aren’t there any more.

 Today no one places her hand

 on Lakhindar’s forehead

 and promises him peace and safety.

 

 On the immense sky that looks

 like a painted shell

 a peaceful current of auspicious time

 rushes forword, thirsty for a divine moment.

 Lakhindar floats on and sees

 in the river of the sky

 the floating Titash’s face. // ##

…..        …..         …..