ওরা মানুষ ছিলো না

রণদীপম বসু 



তাঁকে হত্যা করার আগে
একটুও কেঁপে উঠেনি ওদের হৃদয়
কেনো না ওরা তো মানুষ নয়
মানুষ ছিলো না কোনোদিন


তাঁর ভালোবাসায় উপচে পড়া বুকে
বুলেটের নির্দয় নগ্নতাকে তাক করার আগে
দ্বিধান্বিত হয়নি একবারও তাদের হিংস্র নখর
কারণ, ওরা মানুষ ছিলো না কখনোই
মানুষের কোনো নখর থাকে না,
মানুষের গর্বিত আঙুলে জড়ানো থাকে মোহন স্নিগ্ধতা

ঘাতকেরা মানুষ হয় না কখনো
ঘাতকের কোনো জাতিসত্তা নেই…!

 

কালান্তক শবদেহ

রণদীপম বসু 



এই শবদেহ নিয়ে কোথায় যাবে তুমি ? পোড়াবে ?
আজন্ম বিষের জ্বালা অন্তর্লীন দ্রোহ হয়ে
যে নাকি নিজেই এক হয়ে গেছে প্রজ্জ্বলিত শিখা
আগুনের সাধ্য কি পোড়ায় তাকে !
কেবল বিষের বিষে ছেয়ে যাবে তোমাদের নিঃশ্বাসী আকাশ
লুটানো পাখিদের গাছেদের পত্রহীন অভিশাপে
পুড়ে যাবে সব যতো স্বপ্নের বসত।
এই দেহ ছুঁয়ে যাবে এতো বেশী দীর্ঘ নয় আগুনের হাত।

এই শবদেহ নিয়ে কোথায় যাবে তুমি ? কবর দেবে ?
মাটিকেই জিজ্ঞেস করো-
অন্তহীন প্রত্যাশার বিপন্ন অক্ষর বুকে প্রতীক্ষায়
যে নাকি তিলে তিলে হয়ে গেছে প্রত্নময় অনঙ্গ শরীর
মৃত্তিকা কি করে গলাবে তাকে ?
মাটিও নেতিয়ে যাবে দীর্ঘতম প্রতীক্ষার তাপে।

কুলপ্লাবী স্রোতে জলে
নদীও পারে না নিতে একপেশে বিষাদের ভার ;
যে সুখ আসেনি ফিরে যে প্রেম থাকেনি ছুঁয়ে
আর কোনো বুক জুড়ে যে কষ্ট কখনো বাজেনি সুরে
সেই শোক শিলাদেহে নিরন্তর গেঁথে আছে দুর্বহ ভারে।
এই শবদেহ নিয়ে কোথায় যাবে তুমি ?
কতোকাল বইবে এই দুর্বহ পাথর ?
তার চেয়ে খুঁজে দেখো সে-ই কোনো প্রিয়তম মানুষেরই বুক-
নিমেষেই মিশে যাবে তাতে
যেভাবে মিশে থাকে রক্তের ভেতরে জাগা রক্তাক্ত শপথ !