বিজয়
রিফাৎ আরাচৈত্রের টানা দুপুরটা বিকেলের দিকে গড়াতেই পায়ে পায়ে নিচে নেমে এলো শামা। হোস্টেল ভবনের সামনের বাগানটার পাশ দিয়ে সবুজ ঘাসের ওপর পা ফেলে বেশ দ্রুত শান বাঁধানো পুকুর ঘাটটার কাছে পৌঁছে গেল সে। নাহ্ এখনো কেউ আসেনি। তবুও দুষ্টুমি মাখা চোখে ঘাটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শতবর্ষী বিশাল বটের চারপাশটা সন্তর্পনে ঘুরে এলো। না, কেউ লুকিয়ে নেই। তার মানে ওরা এখনো আসেনি। ওরা মানে শামার চার বন্ধু- তুতুল, প্রীতি, হিমি আর সোমা। সাধারণত যে আগে আসে সে দুষ্টুমী করে গাছের কোটরে লুকিয়ে থাকে। কখনো কখনো হঠাৎ লাফ দিয়ে সামনে এসে বন্ধুকে ভয় দেখায় তারপর দুজনই হাসিতে ভেঙে পড়ে।
গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে মাঠের পুব পাশের হোস্টেল ভবনটির দিকে তাকায় শামা। দোতলায় বারান্দায় দু একজনকে হাঁটাহাঁটি করতে দেখা যাচ্ছে। সবাই উঠতে শুরু করেছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই মাঠে নামবে সবাই। লাল নীল রঙে ভরে যাবে মাঠ। খেলতে নামবে সবাই। শামার বন্ধুরাও নেমে আসবে। হোস্টেলের নিয়মই হচ্ছে শীতের দিনে চারটা আর গরমের দিনে পাঁচটায় মাঠে নামবে সবাই। শামা অপেক্ষা করে তার বন্ধুদের জন্য। কিন্তু ওরা একেকজন যা ঘুমকাতুরে। শামা দুপুরে ঘুমায় না। গল্পের বই পড়ে। এটা ওটা টুকিটাকি কাজ করে। কখনো ছবি আঁকে। তারপর সময় হয়ে আসতেই চলে আসে এখানে। হোস্টেলের এই শান বাঁধানো পুকুর ঘাট আর এই বিশাল বটের তলাটা শামা আর তার বন্ধুদের খুব প্রিয় জায়গা। অসংখ্য ঝুরি নামানো ঘন পাতা সন্নিবিষ্ট গাছটির বিস্তৃত ছায়ায় বসে গল্প করতে করতে ওদের বিকেলটা কেটে যায়। শেষ বিকেলের দিকে শুরু হয় পাখিদের ওড়াউড়ি। অসংখ্য পাখি এই বটের ডালে আর কোটরে রাত্রিবাস করে। সন্ধ্যে বেলাটা তাই এখানে পাখিদের যেন মেলা বসে। কিচির মিচির শব্দের একটা কলতান সৃষ্টি হয়। একবার শহর থেকে শামার এক বন্ধু শম্পা বেড়াতে এসে পাখির কিচির মিচির শুনে অবাক হয়ে বলেছিলো, কিরে শামা, এ যে দেখি পাখির রাজ্য!
শামা উপরের দিকে তাকায়। অজস্র ডাল আর পাতায় দিনের প্রখর আলোতেও গাছের মাথায় একটা আবছা অন্ধকার জমাট বেঁধে আছে। এই ছায়া ছায়া ঘাসে ঢাকা মাটিতে বসলে দারুন খরতাপেও শরীর মন জুড়িয়ে যায়। হোস্টেলের বিভিন্ন বয়সী মেয়েদের আগমনে এতক্ষণের ফাঁকা মাঠটা আস্তে আস্তে ভরে যাচ্ছে। যারা খুব ছোট তারা দৌড়াচ্ছে এদিক-ওদিক। মাঠের দক্ষিণ পাশে গেম্স টিচার সিক্স থেকে এইটের ছাত্রীদের নিয়ে ভলিবল খেলার আয়োজন করছেন। দু’একজন ইতি-উতি দড়িলাফ খেলছে। শামা ঘড়ির দিকে তাকালো। পাঁচটা সতের। কি ব্যাপার, ওরা এখনো আসছে না কেন? গাছতলা থেকে একপা দু’পা করে পুকুর ঘাটের শান বাঁধানো বেন্চিটায় এসে বসলো সে। আহ্ রোদের তাপে শানটা তপ্ত হয়ে আছে। শরীরে ছ্যাঁকা লাগছে। অথচ এর থেকে পাঁচহাত দূরে গাছের তলাটায় কি ঠান্ডা! না, এখানে বসা যাবে না।
আবার গাছের তলায় ফিরে যেতে যেতে দেখল তুতুলরা আসছে। চারজনই এক সাথে। শামা হাতের তালু দুটো মিলিয়ে চোঙ বানিয়ে ডাক দিল- এই প্রীতি, সোমা, তুতুল, হিমি তাড়াতাড়ি আয়। ডাক শুনে চারজনই একসাথে ছুট লাগাল। কাছে এসে হিমি বলল, কিরে তুই এলি আর আমাদের ডাকলি না!
- আমি ভেবেছিলাম তোরা হয়তো আমার আগেই এসে পড়েছিস। প্রীতিকে অবশ্য ইচ্ছে করেই ডাকিনি। যেভাবে ঘুমাচ্ছিলি ডাকতে মায়াই লাগছিল। বলতে বলতে হিমির কাঁধে ঝোলানো ব্যাগটার দিকে চোখ যায় শামার।
- কিরে হঠাৎ ব্যাগ কাঁধে? কী আছে ওটাতে?
- হুঁ হুঁ! বলবো না! সারপ্রাইজ আছে!
প্রীতির কথা শেষ হওয়ার আগেই বাকি তিনজন সারপ্রাইজিং বস্তুটার আকর্ষণে ব্যাগের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা হিমি বন্ধুদের টানাটানিতে ধুপ করে মাটিতে বসে পড়ল। তারপর ব্যাগ খুলে বের করল চকোলেটের সুদৃশ্য একটি প্যাকেট।
- ওয়াও! এ যে দেখি বিদেশী চকোলেট। কোথায় পেলিরে হিমি?
- ছোটমামা এসেছেন ইংল্যান্ড থেকে। আমার প্যাকেটটা নানু ক্যুরিয়ার করে পাঠিয়েছেন। আজ দুপুরেই পেয়েছি।
- কতদিন থাকবেন মামা? তোকে দেখতে আসবে না?
- আসবে আসবে।
‘ধুর, এত দেরি করছিস কেন? আগেতো চকোলেট খাই’ বলতে বলতে হিমির হাত থেকে ছোঁ মেরে প্যাকেটটা নিয়ে দাঁতে কেটে খুলতে শুরু করে প্রীতি। প্যাকেট খুলে সবার হাতে চকোলেট দিয়ে প্যাকেটটা আবার হিমিকে ফিরিয়ে দেয়।
- আমাদের ভাগ আমরা নিলাম। বাকিটা তোর। আফটার অল তোর ছোটমামা এনেছে তুই তো একটু বেশি খাবি তাই না?
হিমি রেগে যায়। ‘আমি তোদের ফেলে কখনো খাই?’
- ‘সরি, সরি রাগ করিস না। আমরাও আবার খাব’ বলতে বলতে মোড়ক খুলে একটা চকোলেট হিমির মুখে ঢুকিয়ে দেয়। হিমি হেসে ওঠে।
নিজের কোলের ওপর রাখা চকোলেট থেকে একটার মোড়ক খুলতে খুলতে কিছুটা আনমনা হয়ে যায় শামা। হাত দুটো শ্লথ হয়ে আসে। আহা হিমির মত ওর যদি একটা মামাও থাকত। আশ্চর্য এই পৃথিবীতে আপন বলতে শামার কেউ নেই। এ বিশাল পৃথিবীতে সেই শুধু একা। আর আছেন মাহমুদ কাকা। বাবার মামাতো ভাই যিনি শামাকে এখানে রেখে গেছেন। বছরে দু একবার আসেন। দেখে যান। অথচ এই মাত্র ক’বছর আগে শামার সব ছিল। তারপর শামার চোখে ভেসে উঠে পাঁচ বছর আগের সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি। মামা এসেছিলেন বিদেশ থেকে। মায়ের একমাত্র ভাই। মা কি যে খুশিতে ছিলেন। বার বার বলতেন, ‘এবার আসাদের বিয়ে দেব’। নানা-নানু ছিল না। তাই ছোট ভাইটা ছিল মায়ের প্রাণ। ময়মনসিংহ থেকে ওরা ঢাকা গিয়েছিল মামাকে রিসিভ করতে। শামা তখন ক্লাস ফাইভে। ছোট ভাই অয়ন স্কুলে যায় না। অনেক অপেক্ষার পর মামার প্লেনটা যখন বিমান বন্দরের মাটি ছুঁয়েছিল তখন শামাদের সে কি আনন্দ। তারপর মামাকে নিয়ে সেদিনই ওরা ময়মনসিংহে ফিরে যাচ্ছিল। হঠাৎ ওদের মাইক্রোটার সামনে আজরাইলের মত একটা ট্রাক আছড়ে পড়ল।
তারপর আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরেছে তখনো শামা জানে না বাবা-মা, মামা এমনকি ছোট ভাই অয়ন যে ছিল শামার সবচেয়ে আদরের, তারা কেউ নেই। আশ্চর্য শুধু শামাই বেঁচে রইল এবং তার আঘাতও তেমন গুরুতর নয়। তখন বাবার মামাতো ভাই মাহমুদ কাকা শামাকে তাঁর বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন। শেষে শামার স্কুলের হেডমিস্ট্রেস আপার পরামর্শে এখানে রাখার ব্যবস্থা করেন। সেই থেকে শামা এখানেই আছে। হোস্টেলই তার ঘর-বাড়ি।
- কিরে শামা, আবার কী ভাবছিস? আচমকা একটা ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করল প্রীতি। স্মৃতি থেকে বর্তমানে ফিরে এল শামা। চোখের কোণে জমে ওঠা জল মুছতে ওড়নার খুঁটে চোখ চেপে ধরল।
- এই শামা, শামা আবার তুই ভাবতে বসলি। আমাদের দিকে দ্যাখ। আমাদের কি দুঃখ নেই?
হ্যাঁ, এখানে যারা থাকে তাদের সবারই দুঃখ আছে। এটা স্বজন হারানো দুঃখী মেয়েদের আশ্রয় সদন। কিন্তু শামার মতো দুঃখী এখানেও আর নেই। বন্ধুরা তাই শামাকে বেশি ভালবাসে। ভালবেসে ওর সব দুঃখ ভুলিয়ে দিতে চায়। এবার হিমি একটা চকোলেট খুলে শামার মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে বলে, ‘চল ঘাটে যাই’।
- ‘না রে, এখানে ভালো লাগছে’। বন্ধুরা জানে এ জায়গাটা শামার খুব প্রিয়। এই বিশাল বটের ছায়ায় বসে ও বই পড়ে, ছবি আঁকে। ক্লাস এইটে থাকতে এই বটগাছ আর ঘাটের ছবি এঁকেই স্কুলের ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় ও প্রথম হয়েছিল। সেই ছবিটা স্কুলের ডিসপ্লে বোর্ডে এখনো টাঙানো আছে। হেডস্যার ছবিটির খুব প্রশংসা করেছিলেন। ‘আহা, বেচারির কেউ নেই’। চার বন্ধুই মনে মনে ভাবল। পরক্ষণেই চারজন প্রায় একসঙ্গে বলে উঠল, মন খারাপ করিস না তো শামা। আমরা পাঁচজন চিরদিন বন্ধু হয়ে থাকব। নাইবা থাকল আমাদের বাবা-মা।
আসলে তাই। এখানে যারা আসে তাদের প্রায় সবারই হয় বাবা নেই নয় মা। অনেক আগে সেই ১৯৫৩ সালে এই শহরের একজন দানশীল মানুষ নিজের জায়গায় অনাথ মেয়ে শিশুদের জন্য এই আশ্রয় সদনটি গড়ে তুলেছিলেন তাঁর মায়ের নামে। কারণ তাঁর মা ছোটবেলায় পিতৃ-মাতৃহীন হয়ে অন্যের আশ্রয়ে বড় হয়ে ছিলেন। আবার অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়ে তিনি নিজেও অনেক কষ্ট করে জীবনে বড় হয়েছিলেন। তাঁর সে কষ্ট আর সংগ্রামের জীবনে তাঁকে নাকি সাহস যোগাতেন মা। তাই মায়ের স্মৃতি মনে রেখেই সারাজীবন তিনি নিজের সম্পত্তি দান করে গেছেন স্কুল, হাসপাতাল আর অনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠায়। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানীদের হাতে শহীদ হয়েছিলেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার তাঁর সকল প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেয়। প্রতিবছর ২১ সেপ্টেম্বর হোস্টেলের মেয়েরা তাঁর শহীদ দিবস পালন করে। হোস্টেলের সুপার আপার অফিস রুমে তাঁর একটা বড় ছবি টাঙানো আছে। কোন কাজে সেখানে গেলে ওরা সবাই ছবিটা দেখে আর বিস্ময়ে অভিভূত হয়। শামার ইচ্ছে ছবি আঁকায় আরো হাত এলে তাঁর একটা স্কেচ করে নিজের ঘরের দেয়ালে সাজিয়ে রাখবে। আহা! এই মানুষটি না থাকলে ওরা এত নিরাপদ আশ্রয় কোথায় পেত!
সূর্যটা আকাশে লাল আবীর ছড়িয়ে আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছে। শামা ঘড়ি দেখল। ছটা দশ, এবার ঊঠতে হবে। পাখিগুলো সারা শহর ঘুরে দিনের শেষে দলে দলে ফিরে আসছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওদের কিচির মিচির শব্দে একটা আশ্চর্য কলতান সৃষ্টি হবে। তারপর সন্ধ্যা আরও ঘন হয়ে এলে সব চুপচাপ।
- ‘এই চল, আর কিছুক্ষণ থাকলে পাখিগুলো আমাদের মাথাকেই তাদের বর্জ পরিত্যাগের উত্তম স্থান হিসেবে বেছে নেবে’। বিষন্নতা হালকা করতে শামা বলে এবং বলতে বলতে বন্ধুদের ধাক্কা দেয়। সবাই উঠে পড়ে। রুমে গিয়ে রেডি হয়ে সবাইকে প্রার্থনা কক্ষে যেতে হবে। প্রার্থনা শেষে সান্ধ্যকালীন সমাবেশ। সমাবেশে সবার নাম ডাকা হবে। তারপর হোস্টেল সম্পর্কিত কোন নির্দেশ থাকলে সুপার আপা সবাইকে তা জানিয়ে দেবেন। সবার সুবিধা-অসুবিধাও জানতে চাইবেন।
আজও নামাজ শেষ হলে ওরা বসে রইল। সুপার আপা উঠে দাঁড়ালেন। ‘শোন মেয়েরা’ - মেয়েরা উৎকর্ণ হলো। ‘তোমাদের জন্য একটি নোটিশ এসেছে। আমি পড়ছি তোমরা মন দিয়ে শুনবে। হোস্টেলে অবস্থানরত সকল ছাত্রীকে জানানো যাচ্ছে যে, করুণাময়ী আশ্রয় সদনের পার্শ্বে পুকুর পাড়ে অবস্থিত বটবৃক্ষটি কর্তৃপক্ষ বিক্রি করে দিয়েছেন। আগামী শুক্রবার গাছ কাটার জন্য লোক আসবে। এই বুবৃহৎ গাছটি কাটার সময় আপাতত কয়েকদিন ছাত্রীদের পুকুর ঘাটে বা গাছের আশে পাশে যেতে মানা করা হচ্ছে। বিশেষত বড়রা লক্ষ্য রাখবে যাতে ছোটরা কেউ গাছটির আশে পাশে না যায়’।
ঘরে বাজ পড়লেও বোধ হয় এতটা অবাক হত না শামা। কিন্তু মনে হচ্ছে মাথায় বাজ পড়েছে। এরই মধ্যে ফিসফাস গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে। কারো মুখে আহা ইস্ শোনা যাচ্ছে। সুপার আপা আবার সবাইকে সাবধান থাকতে বলে তাঁর জন্য নির্ধারিত দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। সবাই উঠে দাঁড়ালো এবং কক্ষ জুড়ে একটা শোরগোল পড়ে গেল।
- ইস্, এত পুরনো গাছটা কেটে ফেলবে!
- এই শামা আপু, প্রীতি আপু তোমাদের মজা করার জায়গাটাতো গেল।
- আহারে বটের ঝুরিতে ঝুলে দোল খাওয়ার দিন শেষ।
শামা এতক্ষণ কোন কথা বলেনি। বারান্দায় এসে রেলিং ধরে জটলা পাকালো ওরা পাঁচজন। না, এ হতে পারে না। আমি দেব না গাছ কাটতে। কিছুতেই দেব না। বলতে গিয়ে মুখটা প্রতিজ্ঞায় দৃঢ় হয়ে ওঠে শামার। বন্ধুরা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে।
রাতে ডাইনিং-এ গিয়ে ভাত নাড়াচাড়া করে উঠে এল শামা। কিছুতেই গলা দিয়ে ভাত নামছে না। কেবলই গাছটার কথা মনে হচ্ছে। এত বড় শতবর্শী গাছটা কেটে ফেলবে? অথচ সারা শহরের সবাই জানে এই শহরের সবচেয়ে পুরোনো গাছ এটা।
বিছানায় শুয়েও ঘুম আসেনা শামার। এপাশ ওপাশ করে। মা-বাবার কথা মনে হয়। ছোটভাই অয়ন আর মামা। ডুকরে কান্না আসে। ‘কেউ নেই। কেউ নেই আমার। শুধু ঐ গাছটা ছিল যে ছায়া দিত, মায়া দিত’। কান্না সামাল দিতে বালিশে মুখ গুঁজে শামা। পাশের খাটে প্রীতি। ছটফট করতে করতে এক সময় ঘুম ঘুম তন্দ্রা আসে।
- শামা শামা
- কে, কে ডাকে?
- আমি। আমি শতবর্ষী বটবৃক্ষ। একটু বাইরে এসো শামা।
শামা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। চৈত্রের পূর্ণিমায় পৃথিবীতে আলোর প্লাবন। চারপাশ নিস্তব্ধ। শামা মাঠ পেরিয়ে গাছটার নিচে এসে দাঁড়ায়। এই জায়গাটা ঘন অন্ধকার। চারপাশে আলোর সমুদ্রে বৃত্তাবদ্ধ অন্ধকার। কিন্তু শামার ভয় করে না। গাছের তলায় যেতে গাছটা যেন ফিসফিসিয়ে কথা বলে ওঠে, আমি তোমাকে ডাকছিলাম শামা। ওরা আমাকে কেটে ফেলবে। অথচ দেখ আমি কখনো কারও ক্ষতি করিনি। আর আমি মরে গেলে ওরা কোথায় যাবে? দেখ, চেয়ে দেখ তোমার চারপাশে। শামা অবাক হয়ে গেল- ওর চারপাশে চাঁদের আলোয় দাঁড়িয়ে আছে অজস্র চড়ুই, শালিক, দোয়েল, কোয়েল আর টুনটুনি।
- তুমি ওদের বাঁচাও শামা। তুমি না ওদের ভালবাস।
- হ্যাঁ আমি ওদের বাঁচাবো। যেভাবে হোক বাঁচাব, বাঁচাব।
- কিরে শামা অনেকক্ষণ ধরে গোঁ গোঁ শব্দ করছিস। বোবা ভূতে ধরেছে নাকি? বলতে বলতে শামার গায়ে জোরে ধাক্কা দেয় প্রীতি।
ধড়ফড় করে উঠে বসে শামা। জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। ভোর হয়েছে। ভোরের বাতাসে বটের পাতা ঝিরি ঝিরি কাঁপছে। শামার মনে হলো বটগাছ আবারে তাকে সেই কথাগুলো বলছে। মুখ হাত ধুয়ে এসে প্রীতিকে ডাকে শামা, শোন প্রীতি। হিমি সোমা আর তুতুলকে ডেকে আন।
ওরা এলে পাঁচজনে মিলে পরামর্শ করে। তারপর সিদ্ধান্ত হয় সুপার আপার কাছে যাবে। অফিস রুমে বসা ছিলেন সুপার আপা। সাতটায় পুরো হোস্টেল একবার ঘুরে গেটের কাছে অফিস রুমের বারান্দায় দাঁড়ান আপা। তারপর স্কুলের গাড়িতে সবাই উঠে গেলে অফিসে এসে বসেন।
- আসতে পারি আপা?
- কী ব্যাপার তোমরা স্কুলে যাওনি? কই আমার কাছে তো কোন পারমিশান নাও নি। কী হয়েছে তোমাদের? পাঁচজন নিশ্চয় একসঙ্গে অসুস্থ নও।
- জ্বি না আপা। আমরা সবাই ভাল আছি।
- তা হলে? ঈষৎ বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে আবারও প্রশ্ন করেন সুপার।
এবার শামা এগিয়ে গেল।
- আসলে আমরা আপনার কাছে একটি আবেদন নিয়ে এসেছি।
- কী?
- আমরা বটগাছটি কাটতে দেব না।
- কী বলছ? এটা সরকারের হুকুম। কর্তৃপক্ষ কাটবেন। আমরা দেয়া না দেয়ার কে?
- তবুও আপনি একবার বলুন। এত পুরোনো গাছটা, শহরের একটা বিখ্যাত গাছ আমরা এভাবে কাটতে দেব না।
- তোমরা কি পাগল হয়েছ, শামা। যাও, এখনো সময় আছে স্কুলে যাও। আমি রাবেয়াকে ডেকে দিচ্ছি। সে তোমাদের পৌঁছে দেবে। তোমরা খুবই অন্যায় করেছ।
- রাবেয়া আপুকে নিয়ে আমরা এখনই স্কুলে যাবে। কিন্তু আপনি যেভাবে হোক গাছটা কাটতে দেবেন না।
- কী যে বল তোমরা। আমার সে ক্ষমতা থাকলে তো। যাও যাও এখন স্কুলে যাও।
স্কুলে যাবার পরও শামার মন ভালো হয় না। ক্লাসের অন্যরা জানতে চাইলে প্রীতি তুতুলরা বলল বটগাছটার জন্য ওদের মন খারাপের কথা। তবে শামা গাছটাকে বেশি ভালবাসে তাই ওর মন বেশি খারাপ।
- ‘আসলেই তো। এত পুরোনো আর এত বড় গাছটা কেটে ফেলবে! আমার আব্বু বলেন, এই গাছটা নাকি শহরের সবচেয়ে পুরোনো গাছ’। ক্লাসের টুম্পা বললো। কিছুক্ষণের মধ্যে পুরো স্কুলে কথাটা ছড়িয়ে পড়লো। উপরের ক্লাসের মেয়েরা ছুটে আসতে লাগল শামা-প্রীতির কাছে। সবার মুখে একটাই কথা- ইস্, এত বড় আর এত পুরোনো গাছটা কেটে ফেলবে! শামা কারো সাথেই কথা বলে না। মনের ভেতর তার হাজারো ভাবনার তোলপাড়। বার বার কাল রাতের স্বপ্নটা মনে পড়ছে।
স্কুল থেকে ফিরে গেট দিয়ে ঢুকতেই ওদের চোখে পড়ল গাছ কাটার বেশ কিছু সরঞ্জাম। বিশেষত হাঙরের দাঁতের মত করাতটার দিকে চোখ পড়তে শিউরে উঠল শামা। ভয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি পা চালাল হোস্টেলের দিকে। দুপুর বেলা সবাই যখন বিশ্রামে তখনও শামার স্বস্তি নেই। জানালা দিয়ে সে বার বার গাছটার দিকে তাকায়। কাল থেকে গাছটা ওখানে থাকবে না। একটা দুটো করে ডাল কেটে তাকে পঙ্গু করা হবে। তারপর- না আর ভাবা যায় না।
শামা উঠে দাঁড়ালো। তেতলার দক্ষিণের শেষের ঘরটার সামনে এসে থমকে দাঁড়ালো কিছুক্ষণ। খুক্ খুক্ করে একটা কাশি দিল। আর তক্ষুণি ভেতর থেকে প্রশ্ন এল
- কে?
- আমি আপা, আমি শামা।
- কি, কিছু বলতে এসেছ?
- জ্বি আপা।
- ভেতরে এসো।
একটু ইতস্তত করে স্যান্ডেল জোড়া খুলে শামা ভেতরে ঢুকে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে রইল।
- কী বলবে বল।
- আপা, আপা গাছটা- বলতে বলতে শামার গলাটা ধরে এল। সুপার আপা তাকিয়ে দেখলেন শামা কাঁদছে। এতক্ষণ বিছানায় বসেই কথা বলছিলেন। এবার দ্রুত উঠে এসে শামাকে জড়িয়ে ধরলেন। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বিছানায় এক পাশে এনে বসিয়ে দিলেন।
আপার আদরে এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল শামা।
- আপা, এত সুন্দর গাছটা কেটে ফেলবে। আপনি বাধা দিন আপা।
আপা এবার হাসলেন। ম্লান হাসি। তারপর শামার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
- শামা তোমরা জাননা। আমিও এই হোস্টেলে বড় হয়েছি। এই গাছটাকে ঘিরে আমারও অনেক স্মৃতি। কিন্তু আমি তো এখানেই চাকরি করি। আমার তো অনেক ক্ষমতা নেই। থাকলে অবশ্যই বাধা দিতাম। শতবর্ষী এই গাছটা এই শহরের একটা ঐতিহ্য। আমারও খুব কষ্ট হচ্ছে শামা। তবুও আমাদেরকে এটা মেনে নিতে হবে।
- না, আমরা অবশ্যই কিছু করব। বাধা দেব।
আপা হাসলেন, কিছু বললেন না। একটু শান্ত হয়ে শামা উঠে দাঁড়াল, আসি আপা।
বিকেলে মেয়েরা মাঠে নামলে সবার মধ্যে একটা কানাকানি পড়ে গেল। দেখা গেল একজন ছুটে যাচ্ছে আরেক জনের দিকে। তার কানে কানে কিছু বলতে সে মাথা নেড়ে সায় দিচ্ছে। তারপর সেও ছুটে যাচ্ছে আরেকজনের কাছে। গাছ কাটার যন্ত্রপাতির জন্য ঘাটে না গিয়ে শামাদের দল আজ সিঁড়ির পাশে কৃষ্ণচূড়ার নিচে বসেই কাটিয়ে দিল। কিন্তু শুধু বসে নেই। নিজেরা কথা বলছে, ছোটদের ডাকছে। ডেকে ডেকে কিছু একটা বুঝিয়ে দিচ্ছে।
আজ শুক্রবার। সকালের নাস্তা সেরে ছাত্রীরা সবাই যে যার ঘরে বসে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। সামনে বই খোলা। কিন্তু ওদের কারো পড়ায় মন নেই। এমন সময় আয়া পরীবানু এসে লাইব্রেরির দরজায় দাঁড়িয়ে ফিস ফিস করে বলল- আপারা, গাছ কাটতে আইছে।
শামা, প্রীতি, তুতুল, হিমি, সোমা সবাই একসঙ্গে উঠে দাঁড়ালো। তুতুল আর হিমি উঠে গেল দোতলায়। শামা, প্রীতি, সোমা বটগাছের দিকে পা বাড়ালো।
কিছুক্ষণ পর দেখা গেল হোস্টেলের মেয়েরা সারিবদ্ধ হয়ে গাছটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। লম্বা লাইনটা গাছের কাছাকাছি গিয়ে বৃত্তাকার হয়ে গেল। হাতে হাতে ধরাধরি করে গাছটাকে ঘিরে ওরা দাঁড়িয়ে গেল। শামারা পাঁচজন এগিয়ে গেল গাছ কাটতে আসা লোকগুলোর দলনেতার দিকে।
- ‘আংকেল, এ গাছ আমরা কাটতে দেব না। আপনারা চলে যান’। শামা লোকটাকে বললো। দলনেতা ঠিকাদার এতক্ষণ ব্যাপারটা বুঝতে পারছিলেন না। এবার তার কাছে বিষয়টা পরিষ্কার হলো। তিনি রেগে চিৎকার করে উঠলেন।
- এই গাছ আমি কিনে নিয়েছি। বাধা দেওয়ার তোমরা কে?
শামা চিৎকার করে উঠল,
- এ গাছ আমাদের। আমরা আপনাকে কাটতে দেব না।
মেয়েগুলোর দিকে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রাগে গজ গজ করতে করতে লোকটা মোবাইল ফোনে ফোন করতে শুরু করলো,
- স্যার মহা ঝামেলা। স্যার আপনি আসেন। মেয়েরা গাছ কাটতে দিচ্ছে না। আমি এতগুলো টাকা দিয়ে গাছ কিনেছি। আমার লোকজন এসে গেছে। কী বললেন স্যার? আপনি আসতেছেন, আচ্ছা! তাড়াতাড়ি আসেন স্যার।
কিছুক্ষণের মধ্যেই জেলা প্রশাসক এবং জেলার বন বিভাগের কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি জিপ হোস্টেলের গেটে এসে গেল। এরই মধ্যে স্কুলের হেডস্যার থেকে শুরু করে স্যার-ম্যাডামরা অনেকে এসে গেছেন। এসে গেছে শামাদের স্কুলের অনেক ছাত্রী। ছাত্রীরা এসে বটগাছকে ঘিরে থাকা বৃত্তে বন্ধুদের পাশে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।
সুপার আপা ও অন্যদের নিয়ে হেডস্যার জটলা করছেন। তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ়! হেডস্যারের একবার ইচ্ছা হল তিনিও মেয়েদের হাত ধরে দাঁড়িয়ে যাবেন। সত্যিইতো এত পুরনো আর বিশাল গাছটা কেটে ফেললে জায়গাটার সৌন্দর্যই নষ্ট হয়ে যাবে। অথচ বিদেশীরা কত যত্ন করে এসব সংরক্ষণ করে। আমাদের মানসিক দৈন্য ক্ষমার অযোগ্য।
হেডস্যার জেলা প্রশাসককে অভ্যর্থনা জানাতে এগিয়ে গেলেন। জেলা প্রশাসক একটা হ্যান্ড মাইক নিয়ে মেয়েদের বললেন, গাছটি সরকারী সম্পত্তি। সরকার বিক্রি করেছে। এটা কাটতে দিতে হবে মা-মণিরা।
- না, গাছটা আমাদের। এই গাছ আমরা আমাদের জীবন থাকতে কাটতে দেব না।
যেন সমুদ্রের গর্জন। জেলা প্রশাসক থমকে গেলেন। ঠিকাদার আবার ছুটে এলেন।
- স্যার গাছটা আমি নিলামে কিনেছি স্যার। মেয়েগুলো পাগলামী করছে। আপনি পুলিশ এনে ওদের সরিয়ে দিন। পুলিশের ভয় দেখান স্যার।
জেলা প্রশাসক বুঝতে পারছেন না কী করবেন। তিনি হেডস্যার, সুপার আপা ও তাঁর সঙ্গীকে নিয়ে সুপারের অফিস রুমে ঢুকলেন। চেয়ারে বসতে বসতেই তিনি বিরক্ত স্বরে হেডস্যারকে প্রশ্ন করলেন,
- মেয়েগুলোকে ক্ষেপালেন কেন আপনারা? অযথা একটা সমস্যা তৈরি হল।
- আমরা ক্ষেপাব কেন? আমরা সরকারের চাকরি করি, আমাদের সে সুযোগ কোথায়?
- তাহলে ওরা এমন করছে কেন?
- ‘সত্যি কথা বলতে কি স্যার, গাছটা কাটা হবে নোটিশটি শুনেই হোস্টেলের মেয়েরা অবাক হয়েছে। কিন্তু মেয়েরা যে এভাবে গাছটাকে বাঁচানোর প্রতিজ্ঞা করে বসে থাকবে এটাতো স্বপ্নেও ভাবিনি’। সুপার বললেন।
- এখন কী করা যায়? আচ্ছা আরেকবার চেষ্টা করে দেখি মেয়েগুলোকে গাছের কাছ থেকে কীভাবে সরানো যায়- বলে রুম থেকে বেরিয়ে এলেন জেলা প্রশাসক। তাঁর পেছনে অন্যরা সবাই।
বাইরে এখন আগুন ঝরছে। চৈত্রের সূর্যটা যেন উপুড় হয়ে গনগনে আগুন ঢালছে মেয়েদের মাথায়। কিন্তু ওরা নিশ্চল দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিজ্ঞায় পাথর একেক জন। জেলা প্রশাসক থমকে যান কিছুক্ষণ। তারপর হ্যান্ডমাইকটা নিয়ে মেয়েদের সরে যেতে বলেন।
মেয়েরা সরে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। জেলা প্রশাসক অবাক হয়ে এক এক করে দেখতে থাকেন প্রতিটি মেয়েকে। গরমে ঘেমে অনেক জনের মুখ টকটকে আগুন রং হয়ে গেছে। দৃষ্টি ঘুরতে ঘুরতে এক জায়গায় এসে চমকে যান তিনি। এ কী দেখছেন? কাকে দেখছেন? তার অতি আদরের মিতুল বন্ধুদের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নিজেকে পরাজিত সৈনিকের মত মনে হচ্ছে। কেমন যেন অসহায় লাগে। এদিক ওদিক তাকান। গেটের দিকে চোখ পড়ে। সেখানে লম্বা লাইন। এখনও দলে দলে মেয়ে আসছে। যে আসছে সেই হাত ধরে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে বৃত্তে।
- তাহলে কি আমরাই ভুল করছি? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করেন জেলা প্রশাসক। এই শিশুরা একটা শতবর্ষী বৃক্ষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিজেদের সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রতিরোধ গড়ছে- আর আমরা?
গাছ কাটতে আসা শ্রমিকেরা গেটের পাশে জারুল গাছটার নিচে জটলা করছে। তাদের চোখেও বিস্ময়। এমন তাজ্জব ব্যাপার তার আর দেখেনি। ওরা গাছটার দিকে তাকায় তারপর বলাবলি করে, আসলেই এই গাছটা কাটলে শহরের পাখি গুলান রিফ্যুজি হইয়া যাইব।
ঠিকাদারের মাথা এলোমেলো হয়ে যায়। সে আবারও ছুটে আসে জেলা প্রশাসকের কাছে।
- স্যার, পুলিশ আনেন স্যার। সব ঠিক হয়ে যাবে।
- থামুন। জেলা প্রশাসক গর্জে উঠলেন।
- যান। চলে যান আপনি আপনার লোক নিয়ে। আমি ঢাকায় ফোন করছি। আপনি টাকা ফেরৎ পাবেন। গাছটা কাটা যাবে না।
মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়লো কথাটা। গাছ কাটা হবে না। এতক্ষণ হাত ধরে থাকা মেয়েরা এখন আনন্দে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরছে। মিতুল দল থেকে ছুটে বেরিয়ে এসে বাবার সামনে দাঁড়ালো। ‘তুমি খুব ভালো আব্বু’ - বলতে বলতে আবেগে কেঁদে ফেলল। আব্বু হেসে ফেলেন, ‘আমাকে হারাতে পারলে না তো, মামণি’।
সুপার আপা ছুটে যান মেয়েদের কাছে। শামাকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। শামা উপরের দিকে তাকায়। বটের পাতায় রোদের ঝিলিমিলি। গাছটাও যেন হাসছে। ওদের বিজয় দেখছে।
রিফাৎ আরা। চট্টগ্রাম শাহীন কলেজের বাংলার অধ্যাপক।