কয়েকটি কবিতা

সালমা ইয়াসমিন নিতি 

 ছবি

ছবি তো নয় কেবল প্রতিকৃতি, স্মৃতি কি শুধুই যন্ত্রণার?
আঘাত কি জন্ম দেয় কেবল প্রত্যাঘাতের?
দেয়ালে টানানো পেইন্টিং, মোটা ফ্রেমের কালো চশমা, মুখে পাইপ
কেবলই কি একটি নাম?
না কি বিপ্লব এক !

বাঙালীর জাগৃতি, সত্যের নায়ক, লাল সবুজে আঁকা হৃদয়ের জামিন ।

“শেখ মুজিবুর রহমান” ।


নারী - ৫

সম্পদ না সম্পত্তি? ভালবাসার না কি ঘৃনার ?
নারী ভোগের না ত্যাগের?
দ্বিধা শংসয় সংকোচে, নারী কপ্পনার ফাঁনুসে
রংতুলি আর ক্যানভাসে, প্রবন্ধে -উপন্যাসে,
আন্দোলন আর আপোসে,

দুর্গম গিরি অভিযানে, ক্লান্তি আর শ্রান্তিতে
কন্যা জায়া জননী , সমাজের পতিত জমি।
চাও কি চোখের জল নাকি দ্রোহে কঠিন বল, তথা অগ্রগামী ।

আঘাত

আঘাত দিলে করবনা প্রত্যাঘাত?
পদাঘাতে কখনো হবনা আড়ষ্ট, আহত ?
বুটের লাথিতে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করবে পেটের নাড়িভুড়ি- করবনা তবু চীৎকার?
হবেনা রক্তক্ষরণ?

আমিতো একবিংশ শতাব্দীর এই যুগের সর্বংসহা আধুনিক মানুষ।
সুখে প্রাণ খুলে হাসিনা, উচ্ছসিত হইনা আনন্দে,
দুঃখে কাঁদিনা, অধিকারের প্রশ্নে করিনা লড়াই,
আমার সম্মান হানিকে মেনে নেই অবলীলায়,
অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখি তোষামুদিতার আভরনে।
আমার লজ্জা ঢাকি সনদপত্রের সীলমোহড়ে।

আমিতো সেই আমি নই-
যে নিজের অধিকার অর্জনে বুকের জামিন পেতে দেয় হায়েনার হা গ্রাসে ।
নিজ ভূ খন্ডকে আগলে রাখে হৃৎপিন্ডের রক্তস্রোতে।
কুন্ঠিত হয়না আত্মবিসর্জনে
প্রবল অস্তিত্বের টানে রিক্ত, নিঃস্ব ,
তবু অসম্মানের বদলা নেয়, বজ্রাঘাত হানে, অকুতোভয়ে ।


বোধন

১৩৫০ এর দুর্ভিক্ষ দেখেছ?
ক্ষুধার রাজ্যে মানুষে কুকুরে একই ডাষ্টবিনে খাবার কাড়াকাড়ি করে,
দেখনি?
তবুও আমরন হাহাকার, হাহাকার ক্ষুধার, সে ক্ষুধা তোমার লোভের, লাভের আর পরশ্রীকাতরতার।
১৯৪৫ এর হিরোশিমা দেখেছ? দেখেছো কি নাগাসাকি?
কি দম্ভ পারমানবিক অস্ত্রের, কি ভয়াবহ ধ্বংসের লীলাভূমি।
সভ্যতার সৃষ্টিই ধ্বংস করছে সভ্যতাকে অবলীলায়, দেখোনি?

তবুও প্রতিনিয়ত হেঁটে চলেছো এক ধ্বংস স্তুপের ওপর,
সে ধ্বংস তোমার মন, মনন আর মস্তিষ্কের।
’৬৯ এর ঢল দেখেছো? ’৮৮ ার প্লাবন?
হাতিয়া, সন্দীপ আর নীল পানিয়ায় জীবনের আর্তনাদ শুনেছো?
শুনেছো কি রোনাজারি?
সাপ মানুষ একই গাছের ডালে শেষ আশ্রয় খোঁজে। দেখোনি।

তবুও আমরণ এক কঠিন আর্তনাদ তোমার বুকে ঢল হয়ে নামছে ।
সে তোমার নৈতিকতা, তোমার বিবেক।
দেখেছো কি ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন?
’৬৯ এর গন অভ্যুথ্থান , ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ? দেখোনি?

তবুও অবিরাম আন্দেলিত হচ্ছে তোমার শিরা উপশিরার প্রতিটি রক্তকনিকা।
তোমার ধমনীতে বইছে এক ন্যায্য দাবীর তেজোদীপ্ত জিজ্ঞাসা।
সে দাবী তোমার জন্মের, রক্তের, তোমার চেতনার।

রায়ের বাজার বদ্ধভুমি দেখেছো ?
বস্তার পর বস্তা বোঝাই চিহ্নহীন মানুষের ছিন্নভ্ন্নি শরীর ?
দেখোনি ?
তবুও নাক সিঁটকাচ্ছো এক পাঁজা লাশের গন্ধে,
সে তোমার ভেতরেই গোটা তুমিত্বের মরণ।


সালমা ইয়াসমিন নিতি, এনজিও কর্মী, ঢাকা, বাংলাদেশ ।