ঘুমন্ত-রূপসী নারীবাদ বনাম ছিন্নশির-সন্ত নারীবাদ ১
মূল : ডেনিয়েল এমনিয়াস, অনুবাদ : স্বপন বিশ্বাস১৯৬৩ সালে বেটি ফ্রাইড্যান আমেরিকান মেয়েদের উদ্দেশ্য করে বললেন, তারা হচ্ছে দুর্বল শাবকের মতো- তাদের বেড়ে ওঠা উচিৎ এবং পুরুষদের মতো তাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিৎ। তারা “কখনই অনুভব করেনি যে সত্যিকার অর্থে তারা কোন উদ্যোগ গ্রহণ করছে।” আমেরিকান গৃহবধু নিজেকে “অলস, অবহেলার পাত্র ও দোষী অনুভবে তটস্থ মনে করে কেননা করার মতো পর্যাপ্ত কাজ তার হাতে নেই। তিনি আরো বললেন, “একটি উল্লেখযোগ্য নারী পত্রিকার মহিলা সম্পাদক মনে করেছিল যে আমেরিকান গৃহবধূরা হন্যে হয়ে কিছু একটা খুঁজে বেড়াচ্ছে যা দিয়ে তাদের নিজস্ব চৌহদ্দির বিস্তার ঘটানো সম্ভব। সম্পাদক ক’মাস ধরেই পত্রিকাটিতে (ঘর পেরিয়ে বাইরে) বহির্মুখী কিছু নতুন ধারণা প্রবর্তনের ব্যাপারে তার পুরুষ সহকর্মীদের পটাতে চেষ্টা করেছেন। “আমরা তার বিরুদ্বাচারণ করেছি। মেয়েরা এখন নিজেদের জীবনে ভাবনার জগত থেকে এতটাই বিছিন্ন যে, তারা সেটা মেনে নিতে পারেনি।”- বললেন সেই পুরুষ লোকটি যিনি সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে প্রধান ব্যক্তি। সম্ভবত এটি জিজ্ঞেস করা অপ্রাসঙ্গিক- কে তাদের বিছিন্ন করেছে? সম্ভবত নারীবাদী ফ্রাঙ্কেনস্টাইনদের নিজেদেরই সৃষ্ট নারীবাদের দৈত্যকে অবরোধ করবার আর কোন শক্তি তাদের অবশিষ্ট নেই।
আমি এই ভাবমূর্তি তৈরীতে সহায়তা করেছি। তাল মিলিয়ে চলার জন্য আমি আমেরিকান নারী সমাজকে গত পনের বছর ধরে লক্ষ্য করছি। কিন্তু আমার অস্বীকার করার উপায় নেই যে অভিজ্ঞতা খুবই তিক্ত। এটি কোন নির্দোষ ভাবমূর্তি নয়। এর ফলে যে ক্ষতি সংঘটিত হচ্ছে তার কোন মনোবৈজ্ঞানিক পরিভাষা আজও তৈরী হয়নি। কিন্তু কি ঘটে যখন নারীরা এমন একটা ভাবমূর্তিতে বসবাস করে যা তাদের মনকে করে অস্বীকার?
“নারীর ভূমিকা” নামক এই জেনেরিক শব্দটিতে গূঢ় অর্থ ও পবিত্রতা আরোপ করে, উপযোগিতাবাদ (functionalism) আমেরিকার নারীদের ঘুমন্ত রূপসীর ন্যায় স্থবির করে রেখেছে। তারা রয়েছে সেই কামিনীমোহন রাজকুমারের অপেক্ষায় যাদুবৃত্তের চারপাশে ধাবমান দুনিয়ায় সোনার কাঠি নিয়ে এসে, যে তাদের জাগিয়ে তুলবে।
“এর শেষ কোথায়?” মিস ফ্রাইড্যান জানতে চান :
আমি মনে করি এর কোন শেষ নেই, যদি গৃহবধূ ভূমিকার শূন্য কলস নারীবাদী রহস্যের আবরণে ঢাকা থাকে; যদি উদ্যোগী মেয়েরা তাদের নিজস্ব বিকাশ কোন অঙ্গীকার ছাড়াই কৌশলে এড়িয়ে যায়। আমরা বহুদিন ধরে সেইসব মায়েদের দোষ ধরছি বা দয়া দেখাচ্ছি, যারা তাদের বাচ্চাকাচ্চাদের খাবার মুখে তুলে দেয়, যারা প্রগতিশীল আমানবিকীকরণের (progressive dehumanization) বীজ বুনে কেন না তারা কখনো নিজেরাই পূর্ণ মানবিকতায় বিকাশ লাভ করেনি। মায়েদেরই যদি দোষী মনে করা হয় তাহলে এখনই কি প্রকৃত সময় নয় বিদ্যমান প্যাটার্ন ভেঙ্গে ফেলার ? সময় কি নয় জাগিয়ে দেওয়া সেইসব ঘুমন্ত রূপসীদের যারা নিজেদের জীবনের দায়িত্ব নিয়ে বেড়ে ওঠবে? আসলে কোন রমণীমোহন রাজকুমার বা থেরাপিস্ট নেই যে এই বাধ ভেঙ্গে দেবে। এটি সমাজের দায়িত্ব এবং শেষতক, প্রতিটি স্বতন্ত্র নারীর কর্তব্য বৈকি! মেয়েদের শক্তির দিকটা নয়, দুর্বলতা হচ্ছে দোষের আকর। তাদের অক্রিয় শিশুসুলভ নির্ভরতা ও অপরিপক্কতাকে মেয়েলি বলে ভুল করা হয়। আমাদের সমাজ ছেলেদের সর্বতোভাবে বেড়ে ওঠবার বিকাশের বাধা ও যন্ত্রণা সহ্য করার ও কাজ করে সামনে এগিয়ে চলার জন্য সবরকম চেষ্টা করে। কিন্তু কেন মেয়েদের বেলায় গড়ে তুলবার বা আপন স্বত্ত্বা অর্জনে তেমন নজর দেয়া হয় না!
নারীবাদী রহস্যের অন্তরালে, মেয়েলীপনা ও মানবিকতার মাঝামাঝি ভুলভাবে কুঁড়িয়ে লওয়া এক অর্থহীন ডিলেমায় নারী ভুগছে- তার স্বত্ত্বা অর্জিত হলেই কেবল অর্থহীন এ সঙ্কটের অবসান ঘটতে পারে।
মিস ফ্রাইড্যান ১৯৬৩ সালে মেয়েদের যেমন দেখেছেন :
আমি যেসব নারীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি, জেনেছ- তাদের কাছে বড় কিছু আশা করা হয়নি।
সমাজ, মেয়েদের কাছে আশা করে খুব কম।
আপনি দেখবেন, তারা অন্য মেয়েদের সঙ্গে চা-পান, গল্পগুজব করে বা বাচ্চাদের খেলা দেখে সময় কাটাচ্ছে কেননা একাকী হওয়া, টিভি দেখা বা বই পড়া তাদের ধাতে সয় না।
আর আমি বলেছি, গৃহবধূর ভূমিকার অসারতাই হচ্ছে নারীবাদ ও মেয়েদের হতাশার উভয়েরই মূল কারণ। “পেশা : গৃহবধূ” সত্যিকার চ্যালেঞ্জধর্মী কাজের (পর্যাপ্ত) বিকল্প নয়; কিন্তু সমাজে এর অর্থকরী গুরুত্ব রয়েছে ... গৃহকর্মে নিয়োজিত সিংহভাগ শ্রমশক্তিই হচ্ছে বাড়তি ও অপ্রয়োজনীয়। মিস ফ্রাইড্যানের ঘুমন্ত-রূপসী নারীবাদ আমেরিকান মেয়েদের কাছে সমাদর পায়নি কেননা এটি সত্যের খুব কাছাকাছি এসে গিয়েছিল। ঘুমন্ত-রূপসী সমাদর পায়নি কেননা এটি মেয়েদের চড়ে খাওয়ার অভ্যেসের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অনেকে ধরে নিয়েছেন যে মিস ফ্রাইড্যান মেয়েদের যা বলছেন, মহড়া বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্লেবয় একই সময়ে ছেলেদের সে কথা বলেছে :
ইঁদুর দৌড়ে ক্লান্ত?
বাধা-ধরা কাজে বিতশ্রব্ধ?
বেশ, তাহলে...কি করে তুমি $৮,০০০, $২০,০০০, $৫০,০০০ এবং তারও বেশি বানাতে চাও ...অবসর সময়ে বাড়িতে কাজ করে? বিক্রি করা নেই কিংবা গাড়ীঘোড়া চড়া নেই- নেই টাইম কার্ড পাঞ্চ করার ঝামেলা!
নিজেই হও নিজের বস!!!!
হ্যাঁ, নিশ্চিত জীবনভর আয়। উপার্জন তোমার হাতে সহজ, কাজের চাপ তেমন নেই, খণ্ডকালীন কাজ প্রতিদিন যখন যেমন খুশীমতো করতে পারো!...আমেজে, টিভি দেখে, কার্ড খেলে বা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মেলামেশা করে... অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে কিন্তু এই অফার সম্পূর্ণ আইনসঙ্গত । ৪০ মিলিয়নেরও বেশী আমেরিকান ইতোমধ্যে এই কাজে নিয়োজিত। মিস ফ্রাইড্যানের মতে এই ৪০ মিলিয়ন আমেরিকান হচ্ছে গৃহবধূ যাদের সম্পর্কে ‘সমাজ, মেয়েদের কাছে আশা করে খুব কম’ বক্তব্যটি প্রযোজ্য।
মজার ব্যাপার এই যে জনপ্রিয় আন্দোলনে বেমানান হওয়ায় নারীবাদীরা প্লেবয়/ নারীবাদী গূঢ়রহস্য/ ঘুমন্ত-রূপসী চাল পরিত্যাগ করে। ফলস্বরূপ এসব ভাবনা আজ লুপ্ত হয়েছে। ষাট-উত্তর নারীবাদী সাহিত্যে কর্মক্লান্ত স্বামীদের দ্বারা প্রশ্রয়কৃত অলস যৌন-খেলনা পুতুল-গৃহবধূরা অনুপস্থিত। ঘুমন্ত-রূপসীর জায়গা নিয়েছে ছিন্নশির সন্ত; অনুতাপহীন, অমানবিক, হিংস্র, দুঃখবাদী, শোষণকারী, নিষ্ঠুর সুরাপায়ী পুরুষ স্বেচ্চাচারী, পশু, বিবাহ-উত্তর ধর্ষণকারীদের দ্বারা ঘুমন্ত-রূপসী হলো উৎপীড়িত, নির্যাতিত, মগজ ধোলাই, মার খাওয়া, দাসত্বপ্রাপ্ত, শোষিত, ক্রুশবিদ্ধ শরবিদ্ধ, ভাঙ্গা ও মচকানো, চাবকানো, চেপ্টা ও গলায় দড়ি।
তথাপি মনে রাখা প্রয়োজন নারীবাদের শুরুটা হচ্ছে ‘মেয়েদের কাছে সমাজ বড় কিছু আশা করেনি-বরং আশা করেছে খুবই কম’ এই দাবীর ভিত্তিতে। ১৯৬৩ সালের দিকে প্রাক্তন স্ত্রীরা প্রাক্তন-স্বামীদের কাছে ভাতা দাবী করলে মনে করা হতো অবমানাকর। কিন্তু আজ নারীবাদীদের দাবী “পাশে দাঁড়ানোর নীতিমালা যার কি না লক্ষ্য তালাকের পরে দু’পক্ষের জীবনযাত্রার মানে সমতা আনা এবং সেই তালাকপ্রাপ্তা মেয়েদের বাকী জীবন তাদের স্বামীর আয়ে ভাগ বসাবার অধিকার অর্জনসহ সমমানের জীবন-যাপন” যাতে করে, পুরুষ লোকটি আর এখন স্বামী না হওয়া সত্ত্বেও, কিংবা বেটি ফ্রাইড্যান ভাতা গ্রহণের ব্যাপারে স্ত্রীলোকদের লজ্জিত হওয়ার অপবাদ মাথায় নিয়েও, তুচ্ছ সব অতীত সেবার জন্য পুরুষরা ভর্তুকি প্রদান যেন অব্যাহত রাখে।
ঘুমন্ত-রূপসী প্রচার প্রপাগান্ডায় ভাতা-গ্রহণ যে অবমাননাকর, তা সুস্পষ্ট। কিন্তু ছিন্নশির-সন্ত নারীবাদে ‘ভাতার অবমাননাকর’ পরিবর্তিত হয়ে ‘অবমাননার ভাতা সম্মানজনক’ রূপ নিয়েছে। ১৯৭৪ সালে ফ্রাইড্যান লিখেছেন, ভাতা? ওটি ভুলে যাও-এটি একটি যৌন ধারণা এবং নারীর সম-অধিকার আন্দোলনে এর কোন যোগসূত্র নেই। কিন্তু পূর্ববর্তী পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন :
সেই সময়ে আমরা নীতিবোধ নিয়ে তটস্থ ছিলাম। ‘নীতিবোধ মানে, অধিকার ও সুযোগের সমতার অর্থ হচ্ছে দায়িত্ববোধের সমতা। সুতরাং ভাতার প্রশ্নটি অপ্রাসঙ্গিক-এবং আমরা বুঝতে পারিনি যে ফাঁদে পা ফেলছি। এই ফাঁদে পা দিয়েছে মিলিয়ন না হলেও সহস্র, শত সহস্র নারী। তারা নিখুঁত তালাক আইনের মুখোমুখী যেখানে আইন আলোর মুখ দেখার আগেই তালাক কার্যকরী-অর্থ-সহায়তা দেয়ার নাম-গন্ধ নেই [পড়ুন-ভাতা অনুপস্থিত] কিংবা সম্পত্তি বন্টনের নেই কোন নিশানা-তালাকের ক্ষেত্রে নারী তার নিজস্ব অধিকারেই বুড়ো বয়সে সামাজিক নিরাপত্তার জন্য বীমা ও ভাতা পেয়ে যাওয়া উচিত [পড়ুন: ভাতা? হ্যাঁ] ... রক্ষণাবেক্ষণ, পুনর্বাসন, ভাতা যে নামেই বলা হউক না কেন [পড়ুন : ভাতা? হ্যাঁ] বহু তালাকপ্রাপ্তা নারীর ক্ষেত্রে শিশুদের ব্যয় নির্বাহের জন্য এটি অত্যাবশ্যক।
ঘুমন্ত-রূপসী নারীবাদে এটা খুবই স্বাভাবিক যে গ্লোরিয়া স্টেইনেম-এর মতো নারীবাদীরা বিয়েকে ‘বেশ্যালয়’ বলে বিদ্রƒপ করে। কিন্তু ছিন্নশির-সন্ত নারীবাদী ফ্লো কেনেডি এতে একমত নন : বেশ্যা তার দেহ বিক্রি করে না, ভাড়া দেয়। গৃহবধূরা বিয়ের পরে দেহ বিক্রি করে-তারা নিজেদেরকে ফিরিয়ে নিতে অক্ষম...এবং অধিকাংশ আদালত, স্বামীর জোরপূর্বক যৌনমিলনকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করে না।
এখন তারা তাদের দেহ ফিরিয়ে নিতে সক্ষম এবং তারপরও আছে বিনে পয়সায় অন্যের ঘাড়ে চড়ার সুবিধা। কোন প্রতিদান ছাড়া কারুর কাছ থেকে টাকা নেয়াকে ডাকাতি বলে অভিহিত করা যায় কিন্তু ছিন্নশির-সন্ত নারীবাদ একে নারীর মর্যাদা পুনরুদ্ধার বলে মনে করে। যতক্ষণ পুরুষের পকেট থেকে নারীর পকেটে অর্থপ্রবাহ অব্যাহত থাকে, যতক্ষণ স্টেইনেমের ‘বেশ্যালয়’ গতস্য এবং সেবাপ্রদান অনাবশ্যক মনে করা হয়, তারা এক পায়ে খাড়া যে ওটাকে ভাতা না বলে অন্য কিছু বলা। এতে নারী, পুরুষের নিকট থেকে অর্থ আদায়ের অপবাদ থেকে রেহাই পাবে না। গমর্যার মেয়রের সডম২ ও সানফ্রান্সিসকোর নৈতিক অধপতনকে নিন্দা (condemn) করার মতো, দুই ডলারের বারবণিতা সিকি ডলারের বারবণিতাকে দাম কমিয়ে পেশাকে নীচে নামানোর জন্যে ভর্ৎসনা করার মতো-তারা এসকল বিষয়কে সামনে নিয়ে এসেছে।
“সমাজ মেয়েদের কাছে আশা করে খুব কম।” এ হচ্ছে ঘুমন্ত-রূপসী নারীবাদ যেখানে মেয়েদের নাখোশ করে বলা হচ্ছে ওই খামচাখামচি বন্ধ করে ঘর থেকে বের হয়ে পুরুষদের মতো কাজে নেমে পড়তে। এক দশক পরে চিন্নশির-সন্ত নারীবাদ দেখছি আÍসত্ত্বা ও সত্যিকার মানবতা অন্বেষায় নিবেদিত, দাবী তুলছে তারা নিপীড়িত এবং ধরণীর সবচে দুর্দশাগ্রস্থ প্রজাতি ও ক্রুশবিন্দ নগ্ন-নারীর আদলে পুরুষকে বলতে চাচ্ছে মিস ফ্রাইড্যান কর্তৃক ঘৃণিত সেই সামান্য গৃহকর্মের অর্ধেকটুকু না করাটাও কতটা নির্যাতনমূলক ছিল। ইধিহধ ভরসনড়! পুরুষরা বড্ড খারাপ! ততদিনে ১৯৬৩ সালের প্রশংসিত ও উত্তীর্ণ, পরভুক নারীর চলার সঙ্গী পুরুষের নতুন খেতাব মিলেছে-নারী বিধ্বংসী বন্য পশু :
স্ত্রী নির্যাতনের শিকড় আমাদের সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত।
ওল্ড টেস্টামেন্টে পিতৃপুরুষরা সম্পূর্ণ ইচ্ছেকৃতভাবেই নিজেদেরকে নারী দৈবশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছেন। অভিপ্রায় হচ্ছে দেবী ধর্ম ও আমাদের সকলের অন্তরে বিদ্যমান দেবীকে ধ্বংস করা। এ কারণেই রজ:স্বলা জরায়ুকে বলা হয়েছে পিতৃতান্ত্রিক শয়তান-ভাল নারী বলতে বোঝায় গর্ভবতী নারী ইত্যাদি। তাছাড়া তিন শ’ বছরেরও বেশী পুরনো ইউরোপীয় খ্রীস্টানদের ডাইনী-শিকার কার্যত ৯ মিলিয়ন রজঃস্বলা নারী খুন। ধাত্রীবিদ্যায় প্রাকৃতিক চন্দ্র-কলা, সম্মোহন, উপশম, জলছিটান, বনৌষধি ও ড্রাগ ব্যবহার, স্বপ্ন-বিষয়ক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যৌনানন্দ ইত্যাদির নামে মহিলাদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে।
সম্ভবত সবচে পীড়াদায়ক ব্যাপার হলো, গৃহবধূর কাজকর্ম চাকর-বাকরের কাজের অনুরূপ হলেও স্বামীর সঙ্গে কোন নারীর আর্থিক লেনদেন পদমর্যাদায় নিচের সিঁড়িতে দণ্ডায়মান দাসদের চেয়েও নিুমানের।
বাইবেলকে যদি নীতিকথা বিষয়ক সামাজিক সাহিত্য হিসেবে পড়া হয়, তাহলে দেখা যাবে ওখানে দেবীর অনুপস্থিতি হচ্ছে একক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পুরুষরা একপ্রকার সামাজিক নির্দেশ তৈরী করবার জন্যে বহু শতাব্দীব্যাপী লিখন ও পুনর্লিখনের মাধ্যমে একটি ধর্মীয় দলিল প্রতিষ্ঠা ও তা ঊর্ধ্বে তুলে ধরার সহজ কাজ সম্পন্ন করেছে। প্রতীকীভাবে, অফিসিয়ালি জারিকৃত পবিত্র গ্রন্থে দেবীর অনুপস্থিতি মানে হলো-পুরুষ কর্তৃক অন্যায়ের প্রতিশোধ ও নারীদের রক্ষার্থে স্বর্গীয় শক্তির অনুপস্থিতি।
আমরা যেমন দেখেছি, এটা কাকতালীয় ব্যাপার নয় যে, প্রাচীন বিশ্বে সর্বত্রই পুরুষের প্রাধান্য বিস্তার-মানবসমাজকে শান্তিপূর্ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ পন্থায় সংগঠিত করার বদলে নিষ্ঠুর ও লোভী পুরুষ শাসিত যাজকতন্ত্র ও উগ্র কানুনের প্রতিষ্ঠা ... একই সময়ে কি যুদ্ধে, কি পাশবিক শাস্তিতে কিংবা নারী ও শিশুর ওপর পুরুষের সর্বময় কর্তৃত্ব অর্জনের মহড়ায় হত্যাযজ্ঞ বা হামলা চালিয়ে রক্তপাত ঘটানো এ যেন মামুলী ঘটনায় পরিণত হয়েছে... এবং এভাবে প্রথমে মেসোপটমিয়া ও কানান ও পরে পবিত্র নগরী জুদাইয়া ও ইসরায়েল-এ সমর সজ্জা কতৃত্ববাদী নিয়ম-নীতি ও নারীকে দাবিয়ে রাখা ইত্যাদি হয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন আধিপত্যবাদী নৈতিকতা ও সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এ কেমন সমাজ যেখানে দু’জন মহিলার প্রেম ও øেহকে নষ্টামি (perverse) মনে করা হয় অথচ নারীর প্রতি পুরুষের পাশবিকতাকে ফায়দা লুটার জন্য পাকাপোক্ত করা হয়...এ কেমন সমাজ যেখানে দু’জন মহিলার বন্ধনের বিষয়টি কোর্টের এক্তিয়ারভুক্ত নয়। অথবা কোনরকম প্রতিরোধ ব্যাতিরেকেই একজন স্বামী তার স্ত্রীকে দরমুজ (batter) ও ধর্ষণ করতে পারে? এটি হচ্ছে পর্ণতান্ত্রিক সমাজ। আমেরিকা পর্ণগ্রাফিক পিতৃপুরুষের নাম।
পুঁজিবাদের মত্তকা মেলে, নারী দাসত্বের পর্যায়ে নেমে যায়।
পুরুষ নারীকে ঘৃণা করে, একি আর এমন অবাক কিছু নাকি? কি আর এমন অবাক কাণ্ড যে তারা আমাদের পিটায়, দেহ ছিন্নভিন্ন করে বা পা পিষে মেরে ফেলে? আমি অনুমান করছি তারা আমাদের ক্ষমা করে না কারণ আমরা জেদী অস্তিত্ব দিয়ে ক্রমাগতই মনে করিয়ে দিই কি করে তারা গত ৫০০০ বছর ধরে ধর্ষণ, মারপিট, প্রতারিত, বঞ্চিত, বিকলাঙ্গ ও হত্যা করেছে আমাদের।
পুরুষের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগের একটি হলো-পুরুষ নিজের পশুত্ব অস্বীকার করে। আইরিন গ্রীন হচ্ছেন মিনেসটা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেক্সুয়াল ভায়লেন্স প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক। তার কাছ থেকে শুনুন কেন পুরুষের বিরুদ্ধে নারীর অভিযোগ সর্বদাই বিশ্বাস করা উচিত :
নারীর বাস্তবতাকে আমরা সম্মান করি। যে সমাজে মেয়েরা প্রায়শ নির্যাতিত হয়েও পুরুষের আস্থা ও সমর্থন আদায়ের পরিবর্তে দোষী সাব্যস্থ হয়, সেখানে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে তাদের একটি নিরাপদ স্থান থাকা প্রয়োজন যেখানে তাদেরকে বিশ্বাস করা হবে... কেননা আমাদের দর্শনের মৌলিক নোঙ্গর হচ্ছে প্রত্যেক নারীর বাস্তবতায় একে অপরকে সমর্থন ও বিশ্বাস করা। আমরা হয়তোবা শ’য়ে একটি এমন ঘটনার সম্মুখীন হতে পারি যা গল্প হিসেবে পুরো বা আংশিকভাবে প্রশ্নসাপেক্ষ। যেহেতু মিথ্যে রিপোর্ট হওয়ার দৃষ্টান্ত খুবই বিরল, একটি ঘটনা পুরোপুরি সত্য নাও হতে পারে-এই ক্ষুদ্র সম্ভাবনার ঝুঁকি না নিয়ে বিশ্বাসের দিকে অবস্থান নিয়ে ভুল করাটাই বরং অধিকতর সম্মানজনক। পেশাজীবীর দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক ও দরকারি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ব্যক্তি নারী ও তার বাস্তবতাকে সমর্থন করা-তাকে অস্বীকার করা বা অবিশ্বাস করা নয়।
নারীবাদী মেরী ডেলি প্রদত্ত ছিন্নশির-সন্ত নারীবাদের সারমর্ম :
... বেঁচে আছে নারীর দেহ ও মন ভক্ষণ করে, চুষে নিচ্ছে শক্তির নির্যাস নারীর মৃত্যুর বিনিময়ে। ড্রাকুলার ন্যায় পুরুষরা নারীর রক্ত খেয়ে বাঁচে...পিতৃতান্ত্রিক পুরোহিতরা দেহটা ভক্ষণ করেছে ও পান করেছে বলির-পাঠা সেই নারীর রক্ত কিন্তু তারা জানার প্রয়োজন মনে করেনি-বলির পাঠা কারা, যাদের রক্ত এই পরভুকদের বাঁচিয়ে রেখেছে।
পুরুষদের নারী-রক্ত পানের অতৃপ্ত লালসা সহস্র বছর ধরে অব্যাহত আছে-এ কেবল এশমুখি রক্তধারা যা রক্ত পিপাসু দানবের শিরা ও ধমনীতে প্রবহমান। পুরুষ যন্ত্র এখন তার নোংরা জীবন কেবল গণহত্যার মাধ্যমে সক্রিয় রাখতে সক্ষম। এ যন্ত্র যদি কোন স্বপ্ন দেখে, তবে তা মহামৃত্যু বা মৃত্যু-যজ্ঞের কল্পনায় পরিপূর্ণ। রক্তভুকের এমনকি রক্ত নিয়ে কথা বলারও দরকার নেই। সে কেবল পান করে যাচ্ছে রক্ত উচ্চতর গণিতের মাধ্যমে যা পরিমাপযোগ্য। স্পষ্টতই পুরুষ, নারীর প্রাণশক্তি নিঃশেষ করার জন্যে দায়ী।
পুরুষের বাড়াবাড়ির এই আতঙ্ক নারীর গণসংযোগ প্রচেষ্টার অংশবিশেষ, নারীবাদীদের দীপ জ্বালিয়ে শোভাযাত্রা করে রাত্রি অপহরণ করার মতো। ড: কার্ল মেনিঙ্গারের মতে, একজন নারী যদি মনোরোগবিদের কাছে তার পুরুষের নিষ্ঠুরতা নিয়ে অভিযোগ করে তাহলে এক ডজন নারী তুলে ধরে পুরুষের দুর্বলতা, নির্ভরতা ও যৌন-অসারতা... আরেক ডজন চায় তাদের পুরুষরা আরও কর্তৃত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী হোক যেন তার কম কিছু নয়।
আরেকটি বিষয় হলো আন্তঃপ্রজন্ম (intergenerational) দৃষ্টিকোণ। জেলেস ও স্ট্রস-এর মতে, বিকৃতি ও নির্যাতনের মধ্যে বেড়ে ওঠা শিশুরাই যে বিকৃত ও নির্যাতনকারী হবে এটা উপকথা মাত্র। তারা ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু-উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ এডওয়ার্ড জিগলারের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, বিকৃতির শিকার অধিকাংশ শিশুই বিকৃত পিতা-মাতা হয় না এবং সময় এসেছে আন্তঃপ্রজন্ম উপকথায় বিশ্বাস না করার। কিন্তু পরবর্তী পৃষ্ঠায় তারা গবেষক রোজম্যারী হান্টার ও ন্যান্সি কিলস্ট্রোমকে উদ্ধৃত করেছেন, যদি তারা (বিকৃতির শিকার শিশু যারা সুস্থ পিতা-মাতা হয়ে বেড়ে ওঠছে) দুর্ব্যবহারের বলি হয়েই থাকে, তাহলে পিতা-মাতা দু’জনের দ্বারা নয় বরং একজন অন্যায় করেছে, অন্য একজন দুঃসহ যন্ত্রণার সাগরে ভেসে থাকবার সহায়ক অবধায়ক (life raft) হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এর মানে শিশু যারা বিকৃতির মধ্যেও বেঁচে বর্তে বড় হয়ে সুস্থ পিতা-মাতা হয়েছে-তারা এসেছে পিতা-উপস্থিত এমন পরিবার থেকে; মাতা-পিতার পরিবার তাদেরকে রক্ষা করেছে। জেলেস ও স্ট্রস যেমন ভাবছেন নারীর উগ্র বিয়ের অবসানের জন্য অর্থনৈতিক সঙ্গতি থাকা উচিৎ। অবশ্য এমনতরো বিয়ের অবসান শিশুদেরকে তাদেও সুরক্ষাকারী পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে বরং বৈষম্যপূর্ণ ও শিশু বিকৃতির উৎস মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে ঠেলে দেয়। ১৯৮৯ সালে সেপ্টেম্বরে মিলওয়াকি কাউন্টির একজন সমাজ-সেবা অফিসার “এ. এফ.ডি.সি/শিশু বিকৃতি-বিষয়ক তথ্য” শিরোনামে একটি আন্তঃঅফিস নথি রচনা করলেন, যার একটি কপি ঞযব ঋধসরষু রহ অসবৎরপধ-এর সম্পাদকীয় অফিসে পাওয়া গেল। এতে দেখা যায় সেই কাউন্টির শিশু বিকৃতি ও অবহেলার ১০৫০টি ঘটনার ৮৩ শতাংশই ঘটেছে সেইসব পরিবারে যারা Aid to Families with Dependent Children (পড়ূন : মহিলা কতৃত্বধারী পরিবার) পেয়ে থাকে। জেলেস ও স্ট্রস বলেছেন, “১৯৭৫-১৯৮৫ সময়কালে বিবাহিত মহিলাদের কর্মসংস্থান দারুণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের নিজস্ব গবেষণায় পেয়েছি বিবাহিত নারীর কর্মসংস্থান স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার ক্ষমতার অসমতা দূরীকরণে সহায়তা করেছে এবং নারীকে উগ্র (violent) বিবাহ অবসানের জন্যে অর্থনৈতিক সঙ্গতি প্রদান করেছে।
অনুগ্র বিবাহ অবসানের ক্ষেত্রেও মওকা মিলেছে। অনুগ্র বিয়েতে স্ত্রী নির্যাতিত বা উৎপীড়িত হয়নি কিন্তু যৌন নিয়ম-কানুনের ব্যাপারে স্রেফ বিরক্ত ও ভারাক্রান্ত। বলা হচ্ছে যেইসব নিয়মকানুনের কথা যা পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা তার উপর চাপিয়ে দিয়েছে, পুরুষকে তার যৌন-প্রজনন জীবনে অংশগ্রহণ করার অনুমোদন দিয়েছে এবং তাকে মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিতর থেকে টেনে হেঁচড়ে বের করে এনে পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার ছদ্মাবরণে আড়াল করেছে।
এই কথাটি একটু ভিন্নভাবে বললে দাঁড়ায়-বিবাহিত নারীর কর্মসংস্থান বিয়ে টিকিয়ে রাখার মূলমন্ত্র পুরুষের অর্থ সঙ্গতি ও কর্তৃত্বকে অস্বীকার করে।
জেলেস ও স্ট্রস মনে করেন, উপরোক্ত কর্মসংস্থান দম্পতির দু’জনের মধ্যে শক্তির ভারসাম্যহীনতা শোধরাতে সহায়তা করে। তারা সমগ্র ছিন্নশির-সন্ত নারীবাদী প্রচার-প্রপাগাণ্ডাকে অতি সহজেই গ্রহণ করে এই মনে করে যে সমাজের বীরধর্ম বজায় রাখতে গিয়ে নারী উৎশৃঙ্খলার শিকার- ধারণাটি অতি প্রাচীন, প্রায় মেরী ওলেনস্টোনক্রাফ্ট-এর সময়কার। ১৮৫৪ সালে বারবারা লেই স্মিথ বডিশন “বিবাহিত নারী ও আইন” শিরোনামে একটি প্রচারপত্র লিখেন যেখানে পিতৃতান্ত্রিকতা সম্পর্কে বহুল পরিচিত অভিযোগগুলো তুলে ধরেন ঃ আইনের চোখে একজন পুরুষ লোক ও তার স্ত্রী মিলে একজন লোক; একক নারী হিসেবে সে তার সকল অধিকার হারাবে এবং তার অস্তিত্ব পতির অস্তিত্ত্বে পুরোপুরি বিলীন হবে। স্ত্রীর কার্যকলাপের জন্য পতি দায়ী; স্ত্রী স্বামীর নিরাপত্তায় বা বাতাবরণে বসবাস করে এবং স্ত্রীর অবস্থাটিকে ‘বাতাবরণ’ (coverture) বলে অভিহিত করা যায়।
নারীর দেহের মালিক তার স্বামী, সে আছে স্বামীর হেফাজতে। পতিধন যধনবধং পড়ৎঢ়ঁং রিটের মাধ্যমে তার অধিকার কার্যকর করতে সক্ষম। সন্তানরা থাকবে পিতার আইনী হেফাজতে। একই পিতার সারা জীবনব্যাপী এক দুগ্ধপোষ্য শিশু ছাড়া সন্তানদের ওপর মায়ের কোন অধিকার নেই, এবং পিতা তার ইচ্ছানুযায়ী সন্তানকে মায়ের নিকট থেকে নিতে পারে বা ত্যাজ্য করতে পারে।
পুরুষের অনুকূলে আইনের এই হেঁয়ালী আজ শুধু বিলুপ্ত হয়নি বরং গণেশ উল্টে গেছে কিন্তু এটি আজও নারীবাদী সাহিত্যে নর্তন-কুর্দণ করছে (চীনা মেয়েদের পা ছোট রাখতে কাঠের জুতো পরিয়ে রাখার মতো) শুধু এটুকু প্রমাণ করবার জন্য যে আজকের আমেরিকার নারীরা কতটা নির্যাতিত! লক্ষণীয় যে, ঊনবিংশ শতাব্দীর স্বামীরা স্ত্রীর নিকট থেকে সন্তানকে ছিনিয়ে নেয়ার ক্ষমতার অধিকারী হয়েও তারা তা করেনি। কিন্তু আজকের নারীরা স্বামীদের নিকট থেকে সন্তানদের নিজ হেফাজতে ফিরিয়ে নেয়ার অধিকারী এবং লক্ষ কোটি বিবাহের ক্ষেত্রে নারী তা করছে। যেসব বিয়েতে নারী তার অধিকার প্রয়োগ করে না সেখানেও নারীর এই ক্ষমতার হুমকিতে বিবাহ তাল মাটাল হয়ে পড়ে। জেলেস ও স্ট্রস এব্যাপারে অবগত আছেন তবুও তারা এমনভাবে কথা বলেন যাতে মনে হয় আইন স্ত্রী নয় স্বামীর অনুকূলে আছে। যে ‘ভারসাম্যহীনতা’ শোধরানোর প্রয়োজনের কথা বলা হচ্ছে হবে তার উল্টোটা; প্রয়োজন ব্যাপক পুরুষ-বিরোধী বা নারী-ঘেঁষা আইন ব্যবস্থা থেকে মুক্ত হওয়া যা কি না স্বামীকে প্রকৃতপক্ষে সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এবং প্রাক্তন পতিকে আক্ষরিক অর্থে দাসে পরিণত করে।
আজকের আইন ব্যবস্থা পরিবারকে সংহত করবার গুরু দায়িত্বটি পরিত্যাগ করেছে ও পরিবারের মূল শত্র“ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পরিবারে এমন ঘটনা ঘটতে পারে এবং তা ঘটে খুব দ্রুত ও অন্যায়ভাবে-এ থেকে ধরে নেয়া যায় যে ঊনবিংশ শতাব্দীর পুরুষ-ঘেঁষা অভিশপ্ত আইন ব্যবস্থাটি সঠিক ছিল। স্পষ্টভাবে বোঝা না গেলেও এতে মনে হয় নারী বিবাহ ও পরিবার পছন্দ করে না এবং তারা স্বেচ্ছায় এ’দুটো পরিত্যাগ করতে পারে যদি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা খারিজ হওয়ার ভয় না থাকে। নারীবাদী ক্যারোলিন হেইলব্র“ন লিখছেন, “কল্পনা করুন কোন নারী মঙ্গল গ্রহ থেকে ধরায় নেমেছে এবং তাকে মহিলাদের দ্বারা লিখিত সমসাময়িক উপন্যাসে মেয়েদের বিয়ের বর্ণনা পড়তে বলা হয়েছে; সে জিজ্ঞেস করতে পারে- কি করে এই ধরণীতে কোন ব্যক্তি এসকল আইনী প্রহসন নিয়ে বেঁচে থাকার প্রত্যাশা করে।”
তিনি একজন নারীকে উদ্ধৃত করেন যিনি শুধু ‘আমি একজন ব্যক্তি হয়ে ওঠার ব্যাপারে থোরাই কেয়ার করি’- এই যুক্তিতে ঊজঅ৩-এর বিরোধিতা করে।
ঊজঅ বুঝতে না পারলেও তিনি বুঝেছেন যে একজন ব্যক্তি হয়ে ওঠা ও স্ত্রী বনে যাওয়া-দু’টি একসঙ্গে যায় না।
সমসাময়িক পুরুষ কেন এ বিষয়টি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে?
ক্রিস্টোফার ল্যাশকে তিনি গালমন্দ করছেন কারণ তিনি (ল্যাশ) মনে হয় স্বীকার করছেন না যে পুরনো, ভালো জীবন-যাপন-তিনি (ল্যাশ), ইয়েটস্, থ্রিলিং, এবং আজকের সকল নতুন রক্ষণশীলরা যা ভেবে নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হন তা নির্ভর করছে আজকের নারী খাস যে জায়গায় অবস্থান করছে ঠিক সেই জায়গাটিতে, ন্যূনপক্ষে কল্পনায়, না দাঁড়িয়ে থাকবার ইচ্ছের ওপর ঃ ইঙ্গিত- ঘরে বসে থাকা। উদার বিশ্বের হাওয়া নিয়ে স্বামী-যোদ্ধারা এসে অভ্যর্থনা জানাবে বলে অপেক্ষা করার আর সময় নেই ... যে নারী ঘরে নিজেকে দুর্দশাগ্রস্থ মনে করে যখন কি না তার আকাক্সিক্ষত সবকিছুই থাকার কথা ছিল, সবকিছু মানে সব নারীই যা চায়- এই মেয়েকে কয়েক দশক আগে হলে, তার বিশ্লেষক (ল্যাশকে ইঙ্গিত করা হয়েছে) যৌনসুখ চরিতার্থ করার জন্যে ঘরে ঠেলে পাঠাত- এখন দেখা যাচ্ছে সে পুরষ সমাজে স্বীকৃত কিন্তু নারীসমাজে অপ্রচলিত এমনসব উন্নয়নের ধাপ অতিক্রম করছে ঃ ইঙ্গিত- বয়ঃসন্ধি। আমাদের সমাজে নারী রজ:স্বলা হলেও তার বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছেছে বলা যায় না কেননা তখনো সে নিজ স্বত্তার খোঁজ করে না, বরং খোঁজতে থাকে হবু স্বামীকে যার মধ্যে সে বিলীন হয়ে যায়। আÍ স্বত্ত্বার সন্ধান, ইবসেনের ‘এ ডল্স হাউস’-এ নোরার আÍ-সন্ধান যেমন, ঘটে বিবাহের গভীরে এবং প্রায়ই তা সশব্দে বন্ধ দরজার পেছনে বাচ্চা প্রজননে গিয়ে ঠেকে... প্রকৃত টেনশন হলো... পলায়নপর নারী ও পরিবার রক্ষায় সংগ্রামরত নারীর মধ্যে হয় আজ্ঞা নয় পরিবর্তন এ দু’টির একটিতে সাড়া দেয়ার দ্বন্ধ। এই দ্বন্ধেরই প্রকাশ মূলত আমাদের সমাজে। আরও স্পষ্টভাবে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে বিবাহে যেখানে পুরুষ কামনা করে আজ্ঞা আর নারী চায় পরিবর্তন। নারী যদি না জানে পরিবর্তনের ঠিক কোন্ দিকে সাড়া দিতে হবে তাকে, তাহলে তখন থেকেই বাজতে শুরু করে তার বিদায়-ঘণ্টা।
“কেন সমসাময়িক পুরুষ এ বিষয়টি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে”? নারী চায় না আইনী বিয়েটা তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হোক। নারীবাদী যৌন বিপ্লব হচ্ছে আইনী বিয়ে থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রচেষ্টা- অবশ্যই দেয় অর্থনৈতিক ও পদমর্যাদার সুবিধা ছাড় দিয়ে নয়।
ডঃ হেইলব্র“নের বক্তব্য সেনেকা ফল্স নারীবাদীদের অভিযোগের প্রায় কাছাকাছি। যেমন, চুক্তির ক্ষেত্রে, বিবাহ অন্তর্ভুক্ত, দ্বিতীয় পক্ষের সঙ্গে মেয়েদের ভূমিকা ছিল নৈতিকভাবে গৌণ......চুক্তির কোন মূল্যই ছিল না কেননা নারী ইচ্ছে করলেই তা ফিরিয়ে নিতে পারতো। এমন দায়িত্বহীনতা পুরুষ-ঘেঁষা আইনকে ন্যায্যতা প্রদান করে। ঊনবিংশ শতাব্দীর পুরুষ পুরুষ-পক্ষপাতদুষ্ট আইনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল- আজকের পুরুষরা যেমন করে থাকে। “সমসাময়িক পুরুষ কেন এ বিষয়টি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে?”
ডঃ হেইলব্র“ন বলছেন, “নারী আর ঘরে থাকছে না।” তারা যদি নিজেদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করতে না পারে বা তারা বিবাহের (নারীর জন্য) বিকল্প হিসেবে অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক বিবাহ-বিচ্ছেদকে বিশেষ নারীবাদী প্রোগ্রাম বলে বাস্তবায়িত করে এবং পুরুষের গলাকে বিয়ের গিলোটিনে ঢুকানোর প্ররোচনা দিয়ে আইন-প্রণেতাকে শিশু-কল্যাণ ভাতার জন্য কানুন সৃষ্টির চাপ দেয় তাহলে “বিবাহ-বিচ্ছেদের পরে দু’পক্ষের জীবনযাত্রার মানের সমতা বিধানের উদ্দেশ্য” সাধন হয়।
নারীর বিলম্বিত “বয়ঃপ্রাপ্তি” নিয়ে কথা বলছেন ডঃ হেইলব্র“ন। নারীর বয়ঃপ্রাপ্তি ও বেড়ে ওঠা থমকে গিয়ে বিবাহযোগ্যা ও নির্ভরশীল নারীর পতিগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা সামনে এসে পড়ে। কোন কোন ক্ষেত্রে নারী একটি বা দু’টি সন্তান নেয়ায় ইচ্ছেও পোষণ করতে পারে। বিলম্বিত বয়ঃপ্রাপ্তির “সূচনা হয় বিদায়ঘণ্টা বাজার প্রাক্কালে” (পড়ূন ঃ বিবাহবিচ্ছেদ) যখন নারী বিবাহ-চুক্তিকে অস্বীকার করে তার পরিপক্বতা প্রদর্শন করে। পুরুষ ও সন্তান অবশ্যই এই বিবাহ-চুক্তিরে ঢুরে বাঁধা যদিও তারা এবং ডঃ হেইলব্র“ন ও আইনী ব্যবস্থা এটিকে স্রেফ এক টুকরো কাগজ হিসেবে গণ্য করে।
“পুরুষ আশা করে আজ্ঞা আর নারী পরিবর্তন”। পুরুষের আকাক্সক্ষা পিতৃতান্ত্রিক পরিবার ব্যবস্থা; নারী আশা করে মাতৃতান্ত্রিক এবং কানুনহীন ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন যার মানে প্রস্তর যুগ এবং ঘেটো এবং ভারতীয় রক্ষণশীলতায় যে যৌন নৈরাজ্য বিদ্যমান ছিল সেখানে ফিরে যাওয়া। এর একমাত্র সম্ভবপর সমাধান হচ্ছে- নারীকে পরিপক্ব করে গড়ে তোলা এবং হয় পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুবিধাগুলো অর্জনে যৌন কানুনকে গ্রহণ করা অথবা কানুনসহ সব সুবিধা প্রত্যাখ্যান করা। সুসান ক্রেইন বাকোস লিখছেন, “আমার বিয়ের দিনের সবকিছু স্পষ্ট মনে পড়ছে... কি ভাবছিলাম যখন আমি শ্বেতশুভ্র রেশমী পোশাক ও আমার চারপাশে মাথা থেকে মেঝে অবধি আলুলায়িত ওড়নায় হাঁটছিলাম খিলানপ্রস্থ বারান্দা বরাবর : “না। কোনোভাবেই নয় এটি চিরকালের জন্যে, আমার সারা জীবনের ব্যাপার। কোনোভাবেই হতে পারে না।” আমি বলেছিলাম “আমি রাজি” কারণ এটাই হচ্ছে শ্বেতশুভ্র পোষাক পরিহিত তরুণী নারীর গির্জায় বেদির সামনে ঘোষণা করবার ঐতিহ্যবাহী রীতি। কিন্তু আমার মনে, ন্যূনপক্ষে, বিকল্প চিন্তা-চেতনাও খেলা করছিল।
এই হচ্ছে তার পরিপক্বতার প্রমাণ ঃ নারী বয়ঃপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে অতিক্রমণ করছে। এবং আইনী ব্যবস্থা তার সঙ্গে একমত যে তার প্রতিশ্র“তি ও বিবাহ-চুক্তি হচ্ছে শর্তহীন ঃ তার বিকল্প বেছে নেয়ায় অবস্থা বর্তমান। তফাত হচ্ছে পুরুষের পরিপক্বতা তার চুক্তিকে করে শর্তাধীন আর মিস বাকোসের পরিপক্বতা সমর্থন করে শর্তহীন চুক্তি। এই দু’রকম পরিপক্বতায় পার্থক্যের ফল হিসেবে ভিক্টোরিয়ান সমাজ ডিক্রি জারি করে যে “শিশুরা থাকবে পিতার আইনী হেফাজতে”-এবং একই কারণে, আমাদের সমাজেরও তাই করা উচিৎ।
“যখন আমি আর বিবাহিত নই”, মিস বাকোস বলছেন, “আমি কারা’র দর্শন মেনে চলাই সবদিক থেকে সহজ মনে করি ঃ পুরুষকে বিশ্বাস করো না, কেবল ওদের সঙ্গে বিছানায় যাও। বহু পুরুষের অভিজ্ঞতা আমাদের দু’জনকে একই স্পষ্ট উপসংহারে উপনীত করেছে ঃ সর্বদাই কাউকে না কাউকে পাচ্ছি নতুন, হয়তো অপেক্ষাকৃত ভালো, হয়তো বা অন্য কেউ যে আমাদের ভালবাসবে, তাহলে সম্পর্ক একঘেঁয়ে বা কঠিন বা খুব জটিল হয়ে গেলে সঙ্গের পুরুষটিকে পরিত্যাগ করছি না কেন? যা হোক এটি পুরুষের প্রাপ্য বটে! কেন আমরা একটি পুরুষে সীমাবদ্ধ থাকছি যখন মিলছে কাতারে কাতারে?
আমি বিবাহ-বিচ্ছেদ নিয়েছি যাতে আমি নারী প্রজন্মে মানে আমার প্রজন্মে শামিল হতে পারি। আমার প্রজন্ম হচ্ছে সেই প্রজন্ম যারা তাদের পথ খোলা রেখেছে, নিজের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে ও সেক্সকে বিবেচনা করছে প্রকৃতিদত্ত অধিকার হিসেবে। আমাদের প্রজন্মের পুরুষদের সঙ্গে একত্রে কাজ করার ক্ষেত্রে আমরা বুদ্ধিসত্তার পরিচয় দিইনি কিন্তু “আগে বাড়ো” এই নীতিতে আমরা রেখেছি বিস্ময়কর অবদান। আমরা জানি কি করে ভেঙে বেড়িয়ে আসতে হয়। আমাদের সংসার ভাঙা ও আগে বাড়ো সংগীত উচ্চগ্রামে আছে। সভ্য বিবাহবিচ্ছেদ নিশ্চিতভাবেই আমাদের উদ্ভাবন।
“কারা”-কে উদ্ধৃত করেন তিনি ঃ
“পুরুষ যখন অঙ্গীকার নিয়ে কথা বলে আমি সটকে পড়ি। অঙ্গীকার করা মানে বিবাহ এবং নারীর জন্যে বিবাহ মানে দাম্পত্যজীবনে পুরুষকে অত্যধিক অধিকার প্রদান করা। আমি আশ্বস্থ যে আমি ওটা করছি না এবং আমি আনন্দিত এই ভেবে যে আমরা এমন একটা সময়ে বসবাস করছি যখন একটি নারী আস্বাদন করতে পারে সেক্স, যতটুকু খুশি ততটুকু, বিবাহ ব্যতিরেকে। “অনেকটা অনিশ্চিতভাবে, কোন একদিন হয়তো সন্তান ধারণ ও একক মা হওয়ার কথাও ভেবেছি। সন্তান নেয়ার ব্যাপারটি বাদ দিইনি, বাদ দিয়েছি বিবাহ।”
আমরা বেছে নিয়েছি সেক্স, বিবাহ নয়।
বিবাহ মানে পুরুষকে দায়িত্ব ও একটি অর্থবহ প্রজনন ভূমিকা প্রদান করা। এবং এইসব মেয়েরা পুরুষের চেয়ে কম দায়িত্ববান হতে পারে না... মনে রাখা ভালো যে শিশু লালনের জন্য অর্থযোগান পুরুষের দায়িত্ব। তারা ধীরে ধীরে ফিরে আসতে চায় অযাচিত যৌনাচারে, বিনোদনমূলক সেক্স, মাতৃত্ব ও মাগনা খাওয়া ইত্যাদিতে - অনেকটা রেড ইন্ডিয়ান রক্ষণশীলতার সুযোগপ্রাপ্ত বান্দী ও ঘেটোদের কল্যাণভাতা প্রাপ্ত নেত্রীদের মতো।
বেটি ফ্রাইড্যান ১৯৬৩ সালে নারীর পরাশ্রয়িতার প্রতি যে অবজ্ঞা প্রকাশ করেছিলেন, তার স্থানটি দখল করেছে পুরুষের পরাশ্রয়িতা- ক্ষতিপূরণের দাবি যা মিস ফ্রাইড্যান কখনো ইঙ্গিতও দেননি পর্যন্ত। ডঃ ডেলি বলছেন, সবকিছুতে স্রেফ সমতাকরণের দাবি উত্থাপন করার মানে এই নয় যে তাৎক্ষণিকভাবে “গিভ অ্যান্ড টেক” কার্যকরী হবে। ভাবখানা এই যারা নিজের জীবনে বঞ্চিত হয়েছে তাদেরও উচিত “ফিফটি-ফিফটি ভিত্তিতে দেয়া।” যেহেতু পুরুষকে যা দিতে হবে বৃহৎ অর্থে তা নারীর নিকট থেকে শোষে নেয়া হয়েছে, সমান কিন্তু বিপরীতমুখী সামাজিক অবস্থান থেকে “গাঢ়ত্বের সমতা-বিধান” যেন কল্পনা করা দুষ্কর। সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার পর্যায়ে যা ঘটা প্রয়োজন তা হলো সৃজনশীল ন্যায়-বিচার। এটা ঠিক দাবিকৃত কোন সরল লেনা-দেনা নয় বরং সম্পর্ক পুনঃস্থাপন। পুরুষের জন্য এটা অবাস্তব যে তার চুরি যাওয়া বিশেষ অধিকার সে বদান্যতা হিসেবে পরিত্যাগ করবে। পুরুষের জন্য এও অবাস্তব যে ক্রোধ সহকারে সে প্রতিবাদ করবে যখন নারী তার নিজের চুরি যাওয়া ক্ষমতা ও সত্ত্বা ফিরে পাওয়ার কথা তুলছে।
ছিন্নশির-সন্ত নারীবাদের মূল ইস্যুটি হচ্ছে “নারী ও শিশু”-দের বিরুদ্ধে পরিচালিত পুরুষের গার্হস্থ্য উগ্রতা সম্পর্কে ক্রমাগত অভিযোগ করে যাওয়া। “নারী ও শিশু”-এ দু’টিকে একত্রে জড়ানোর ফলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে উগ্রতার হোতারা হচ্ছে (কে-ই বা আর হবে?) স্বামী ও পিতা। ঘটনাদৃষ্টে মনে হয়, পারিবারিক উগ্রতার জন্য পিতার চেয়ে মাতাই বেশি দায়ী। লস এঞ্জেলেস টাইম্স-এর লেখক ক্যারল ম্যাক্গ্র-এর উদ্ধৃতি অনুযায়ী-পুলিশ গ্লোরিয়া বার্গাস এর মতে, “শিশুরা বেড়ে ওঠার সময় দেখছে মা-কে পিটিয়ে বাবা বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। তাহলে কি ঘটছে? তারা বড় হয়ে তাদের বউদের পিটায় বা অন্য ধরনের উগ্রতায় হাত পাকায়। “ম্যাক্গ্র বলছেন, “বিশেষ করে, ভুক্তভোগী, যারা আরো বেশি উগ্রতার ভয়ে তটস্থ, তারা তাদের স্বামী বা আÍীয়দের ধরিয়ে দেবে না। এবং অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বার্গাস বলেছেন, তারা স্বামীদের সঙ্গে একযোগে আক্রমণ করেছে পুলিশকে যারা তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছিল।”
চেপে রাখা সত্য এই যে “ভুক্তভোগীরা” হচ্ছে নারী এবং “আÍীয়” বা “সঙ্গী” হচ্ছে পুরুষ। কিন্তু নারীর মতো পুরুষের মধ্যেও বহু ভুক্তভোগী আছে এবং পুলিশের নাক গলানো থেকে “সঙ্গী”কে রক্ষা করার হোতা হচ্ছে প্রায়শ নারী। বালকরা (মা কর্তৃক) বালিকাদের চেয়ে দ্বিগুণ নির্যাতনের শিকার। শিশুদের নিরাপত্তার ব্যাপারটি মাথায় না নিয়ে প্রায়শ পুরুষ উগ্র নারীর সঙ্গে বিয়েতে আবদ্ধ থাকে; বিবাহ-বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে শিশুদের মায়ের একক হেফাজতে ছেড়ে দেয়া হয়।
ব্রিটিশ নারীবাদী লিন সেগাল এসকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে মৃদু প্রতিবাদ নথিবদ্ধ করেন। তিনি অভিযোগ করেন যে সমসাময়িক নারীবাদ “নারীর উৎকর্ষতর গুণ ও আধ্যাধিকতা মহানন্দে পুজো করে এবং ‘পুরুষের’ উগ্রতা ও কূটকৌশল নিয়ে চিৎকার চেচামেচি করে। ‘নারী’র এধরনের মহানন্দ ও ‘পুরুষ’-কে বাতিল ঘোষণা আমার মতো বহু নারীবাদীর মনেও ভয় ও সন্দেহের সৃষ্টি করে। আমাদের মনে আছে যে নারীর বিশেষ প্রকৃতির নিগূঢ় রহস্যকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য আমরা নারী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলাম। সেগালের বইয়ের মোড়কে লিখা হয়েছে, “তিনি নতুন রহস্যেদ্ঘাটনমূলক নারীবাদের সূচকের বিরুদ্ধে তর্ক করেছেন- প্রবক্তাদের কয়েক জন হলো মেরি ডেলি, এন্ড্রিয়া ডরকিন এবং ডেইল স্পেনডার- যার বিষয়বস্তু হলো আতঙ্ক, লোভ ও উগ্রতার মধ্য দিয়ে পুরুষ নারীকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং কেবলমাত্র সেই নারী তার বৃহত্তর মানবতার গুণের মাধ্যমে এ ধরণিকে সামাজিক পরিবেশ ও পারমাণবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে সক্ষম।” এখন সেগাল লিখছেন, “ভিক্টোরিয়ান ভদ্রলোকদের ন্যায় রবিন মরগ্যান, এণ্ড্রিয়েন রিচ, সুসান গ্রিফিন, জুডিথ আরকানা, মেরী ডেলি, ডেইল স্পেনডার ও তাদের বহু অনুসারী উপরোক্ত মতকে বিনা বিচারে স্বীকার করে নিয়ে নারীর উচ্চতর মানবতাবাদ, শান্তিবাদ, প্রতিপালন ও আধ্যাতিক উন্নয়নের গুণকীর্তন করেন। রবিন মরগ্যান বলেন যে, কেবলমাত্র নারী এ পৃথিবীতে ভবিষ্যৎ জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পারে। মরগ্যান এবং আমেরিকার ‘নিউ রাইট’ সংগঠন ও ব্রিটেনের নারীবাদ বিরোধী রক্ষণশীলরা প্রায় একই কথা ব্যক্ত করেছেন। নারী পারমাণবিক অস্ত্রের দুঃস্বপ্ন থেকে বিশ্বকে রক্ষা করতে পারে- এসব অস্ত্র “পুরুষের প্রেরণা ও যৌনতা”র অনিয়ন্ত্রিত শক্তির বহিঃপ্রকাশ--নারী তার নারীবাদী মননের শক্তি ও মাতৃ-দরদের শক্তির মাধ্যমে বাঁচাতে পারে বিশ্বকে।
সেগালের মতামত হচ্ছে সংখ্যালঘুর মতামত। রবার্ট ব্রিফল্ট যেমন বলছেন, “প্রতিরোধী ও বিদ্রোহী মনোভাব লক্ষ করা যায় কেবল সেইসব নারীদের মধ্যে যারা দখল করে আছে যথেষ্ট সুবিধাজনক ও প্রভাব সৃষ্টিকারী কর্ম-পদবী; যেখানে তাদের পদমর্যাদা সত্যিই খুব পিষ্ট, বিদ্রোহী ভাব পরিলক্ষিত হয় না সেখানে।” আজকের নারীবাদীরা কর্মক্ষেত্রে সুবিধা ও উচ্চ মর্যাদার আসনে উপনীত আছেন এবং তারা জানে যে এই মর্যাদা কেবলমাত্র ততক্ষণ নিরাপদ যতক্ষণ আম-জনতা “দানবীয় পুরুষের মিথ”-এবং নারী হচ্ছে নির্যাতনের শিকার- কথাটি বিশ্বাস করে।
ছিন্নশির-সন্ত নারীবাদীদের পুরুষের পশুত্ব সম্পর্কে অনেক কিছুই বলার আছে কিন্তু মিস ফ্রাইড্যান ১৯৬৩ সালে যা বলেছিলেন সে বিষয়ে চুপচাপ ঃ “এমন একটি সমস্যা যার কোন নাম নেই”। চিকিৎসাবিজ্ঞানে মানসিক অবসাদের আরেক নাম এসেডিয়া। এসেডিয়া হচ্ছে আধ্যাতিক সমস্যা কিন্তু মিস ফ্রাইড্যানের মতো বস্তুবাদী নাম না জানা সমস্যাটিকে গ্রহণ করে অর্থনৈতিক বা পেশাগত সমাধান দিতে পারেন যার নাম হচ্ছে যুৎসই কর্মজীবন। তিনি ভুল বোঝেছিলেন “এমন একটি সমস্যা যার কোন নাম নেই”-আশীর্বাদ হিসেবে নয়, অভিশাপ হিসেবে। এতে এই ইঙ্গিতই পাওয়া যায় যে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত নারী, যাদের সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, আধ্যাতিক মাত্রা-জ্ঞানে পিছিয়ে ছিল। যিশু বলেছেন, “তারা আশীর্বাদ পুষ্ট যারা স্বর্গরাজ্যের কথা ভেবে আধ্যাতিক প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন, স্বর্গ তাদের।” নারী যারা নাম না জানা সমস্যায় ভুগছেন তাদের অন্যান্য সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তারা সৌভাগ্যবান যে ওগুলো পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সমাধান করা গেছে। যে এসেডিয়ায় তারা ভুগছিলেন ওটা “আকাঙক্ষা পিরামিডের৪” একেবারে শীর্ষস্থানীয় সমস্যা। মিস ফ্রাইড্যান লিখছেন, “কেবলমাত্র সম্প্রতি আমরা এই সত্য মেনে নিয়েছি যে পুরুষের মধ্যে (একইভাবে নারীর ক্ষেত্রেও) বিরাজ করে এক ধরনের ক্রমবিকাশমূলক স্কেল বা আকাক্সক্ষা পিরামিড যা শুরুতে প্রবৃত্তি (পশু-প্রবৃত্তির সমার্থক) ও পরে মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রে আকাক্সক্ষার আরো উচ্চতর ধাপ অবধি বিস্তৃত। পিরামিডের উচ্চতর ধাপে রয়েছে জ্ঞানান্বেষণ ও আÍ-বোধন আÍ-উন্মোচন-এগুলোও মানব জ্ঞানের প্রেক্ষিতে প্রবৃত্তিমূলক। জৈবিক ক্ষুধা যেমন খাদ্য, সেক্স ইত্যাদির নিবৃত্তি হলে মানুষ উচ্চতর ধাপের আকাক্সক্ষাগুলো যেমন জ্ঞানান্বেষণ ও আÍ-বোধনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। যে পুরুষ তীব্র ও বিপজ্জনকভাবে ক্ষুধার্ত, তার খাদ্য ব্যতীত আর কিছুতে উৎসাহ নেই।” কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে কি ঘটে যখন যথেষ্ট খাদ্য মজুদ আছে এবং সময়ানুক্রমে তার উদর পরিপূর্ণ? তৎক্ষণাৎ তার উচ্চতর ধাপের আকাঙক্ষার জাগৃতি ঘটে ও তা জৈবিক ক্ষুধার বাইরে গিয়ে দেহের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে।
এক অর্থে উদ্ভুত এই আকাক্সক্ষা পিরামিড জৈবিক পর্যায় থেকে সরে গিয়ে আরও সামনে এগোয় যা বস্তুগত পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল, এবং যার প্রবণতা হচ্ছে অপেক্ষাকৃত পরিবেশ-নিরপেক্ষ পর্যায়ের দিকে, আরও এবং আরও বেশি আÍ-প্রত্যয়মুখী। কিন্তু কোন পুরুষ নিুতর আকাক্সক্ষা ধাপেও আটকে যেতে পারে; উচ্চতর আকাক্সক্ষায় হতে পারে বিভ্রান্ত বা তা খাবি খেতে পারে পুরনো ধ্যান-ধারণায় এবং হয়তো বা কোন কালেই তাদের জাগৃতি ঘটে না।
মিস ফ্রাইড্যান অভিযোগ করেন যে “আÍ-উন্মোচনের” আকাক্সক্ষাকে “যৌন আকাক্সক্ষা” বলে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে যাকে তিনি বলতে চাচ্ছেন “সংক্ষেপিত ব্যাখ্যা” (বীঢ়ষধহধঃরড়হ নু ৎবফঁপঃরড়হ)। কিন্তু নাম না জানা এক সমস্যার সমাধানকল্পে তিনি তার পাঠকদের যে যুৎসই চাকুরি জীবন গড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, তা-ও সমভাবে হ্রস্বীকৃত ব্যাখ্যা, সমভাবে “উন্নতি এড়ানোর কৌশল (বাধংরড়হ ড়ভ মৎড়ঃিয )”, সমভাবে অসন্তোষজনক যা অগণিত মোহমুক্ত নারীবাদী বই যেমন অ খবংংবৎ খরভব, টহহবপবংংধৎু ঈযড়রপব, ঞযরং ডধংহ’ঃ ঝঁঢ়ঢ়ড়ংবফ ঞড় ঐধঢ়ঢ়বহ, ঞযব উরাড়ৎপব জবাড়ষঁঃরড়হ, গড়ঃযবৎং ড়হ ঞৎরধষ ইত্যাদিতে দেখানো হয়েছে।
আমেরিকান গৃহবধূদের পরজীবীতায় ঘৃণা প্রকাশ করে তিনি প্রস্তাব করলেন তাদেরকে “পূর্ন ক্ষমতায় বিকশিত” হয়ে গড়ে ওঠতে, গণহারে তৈরি করতে শেক্সপীয়র, দ্যা ভিঞ্চি, লিংকন, আইনস্টাইন, ফ্রয়েড, টলস্টয়ের মতো “আÍ-উন্মোচন কারী” মানুষ। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষাবিদ, পিতা-মাতা, মন্ত্রী, পত্রিকা সম্পাদক, মেনিপুলেটর, পরামর্শক কর্তৃক গণ-উদ্যোগ ও একটি “নারীর জন্য এও৫ বিল” ঃ
নারীর জন্য এখন প্রয়োজন এও বিলের সমতুল্য একটি জাতীয় শিক্ষা কর্মসূচি সেখানে তারা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে শিক্ষা চালু রাখবে বা পুনরায় পড়া শুরু করবে... এবং পেশাগত জীবনে জ্ঞানের ব্যবহার কল্পে নিজেদেরকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করবে। এই বিল উপযুক্ত নারীকে টিউশন ফি ও অন্যান্য খরচাবাবদ বাড়তি ভর্তুকি...বই, ভ্রমণ ও প্রয়োজনে গৃহস্থালি কাজেও অর্থপ্রদান করে সহায়তা দেবে। নারীর জন্য কি না মাগনা খাওয়ায় সুযোগ যারা “পেশাদার” হতে চায় এবং সেইসব লোকদের কাছে দাবি করে চড়া ফি যাদের আয়করের বদৌলতে আসছে সেই সুযোগটি। এই হচ্ছে মুক্তিপ্রাপ্ত গৃহবধূদের নিজ পায়ে দাঁড়ানোর নমুনা। কি করে এইসব নারীর “আন্তরিকতা” ও “সঠিক যোগ্যতা” মাপা সম্ভব? এটা করা সম্ভব স্পষ্টতই যদি তারা নিজেদেরকে আন্তরিক ও যোগ্যতাসম্পন্ন ঘোষণা করে-এই ভিত্তিতে এবং নারী যদি পেশাগত ও সংশ্লিষ্ট কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে রাজি থাকে। কথাটি ঘুরিয়ে বললে দাঁড়ায়, অলস গৃহবধূ যাদের, পতিধনের নিকট থেকে মাগনা খাওয়ার অভ্যাস এবং শহরতলির পদ্মভোজন ও একগামী বিবাহের ক্লান্তি যাদের মূল চালিকা শক্তি, তাদেরকে ওসব ছেড়ে আসতে হবে কলেজে এবং শুরু করবে ভর্তুকি নিয়ে অস্তিত্ত্ব টিকিয়ে রাখার নতুন জীবন- টাকাটা দেবেন সেইসব আয়কারদাতা যাদের সচ্ছলতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের (পড়ূয়া নারী) চেয়ে কম। আর এই ভর্তুকিতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে গার্হস্থ্য সহকারী নিয়োগ করার ফান্ড এবং গার্হস্থ্য সহকারীরা হলো সেইসব নারী যারা পেশাদার হতে যথেষ্ট আন্তরিক নয় কিন্তু তাদের প্রয়োজন মজুরির স্রেফ নিজস্ব পরিবারের ভরণপোষণ চালিয়ে যাবার জন্য। নিচের ধাপের এইসব সদস্যরা কলেজ পড়ূয়াদের উপচে পড়া সুবিধাটির ওপর বেঁচে থাকবে, মিস্ ফ্রাইড্যানের এলিটিস্টদের যা দেয়া হয়েছিল তার চেয়ে আরো মার্জিত......সমাজের সকল শ্রেণীতে যা সবচেয়ে কম মনোযোগ আকর্ষণকারী, অথবা প্রয়োজনে, গণসাহায্য। তাদের ভর্তুকিকে বলা হচ্ছে “বেপরোয়া প্রচণ্ড জরুরি” বিষয়। নারীর “মরিয়া প্রয়োজন” শিক্ষার জন্য এবং এই জাতির মরিয়া প্রয়োজন হলো সর্বপেশায় নারীর বুদ্ধিমত্তার ভাণ্ডার উন্মুক্ত করা- যা কি না এসকল জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করার সপক্ষে যুক্তিযুক্ত।
তাঁর সারা বই জুড়ে আমেরিকান গৃহবধূদের অপরিপক্কতা বিষয়ে কথা বলার পর মিস ফ্রাইড্যান তাদেরকে তুলনা করেন পুরুষ এও-এর সঙ্গে যারা কিনা “যুদ্ধে পরিপক্ব”, হিসেবটা এই যে “নারী যারা গৃহবধূ স্থগিতাদেশ আইনের সময়ে পরিপক্ব হয়েছেন, অনুরূপ কার্যক্রমেও তাদের লব্ধ অভিজ্ঞতাকে গণ্য করা যায়”...... নারীবাদী গূঢ় রহস্যের প্রভাবের কারণে, জনান্তরে তাদের শিশুসুলভ আচরণের প্রকাশ ঘটায় যদি “গৃহবধূ স্থগিতাদেশ আইন” (পড়–ন ঃ নারীবাদী গূঢ় রহস্য) পরিপক্বতায় প্রভাব-বিস্তারকারী হয়ে থাকে, তাহলে এটি কেন এক পরজীবীতা (স্বামীর ওপর) থেকে অন্য পরজীবীতা (আয়কর দাতার ওপর) স্থানান্তরের দাবির পরিবর্তে নারীকে “যৌন সুবিধা বা বাহানা ব্যতিরেকে” নিজের পায়ের ওপর দাঁড় করানোর নিশানা দেয় না? এও বিল প্রাক্তন সৈনিকদের কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়েছে- ওটা দেয়া হয়েছে সমাজের প্রতি বহু বছরের সেবা প্রদানের হেতু হিসেবে। মিস ফ্রাইড্যান নারীর জন্য একই রকম ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন কেননা “সমাজ মেয়েদের কাছে আশা করে খুব কম” এবং সে কারণে (মিস ফ্রাইড্যানের যুক্তি অনুসারে), শুধুমাত্র পতিধন কর্তৃক নাই-পাওয়া (ঢ়ধসঢ়বৎ) বা তুলু তুলু করার পরিবর্তে এইসব ঘুমন্ত রূপসীদের আরও খানিকটা তুলু তুলু করা উচিৎ- যা কিনা শেষ বিচারে তাদের স্বনির্ভরতা ও মর্যাদাকে অস্বীকার করে।
মিস ফ্রাইড্যানের গণ-উদ্যোগ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ঘুমন্ত-রূপসী নারীবাদকে একটি গণআন্দোলনে রূপ দেয়ার জন্য খুব দুর্বলভাবে গ্রহণ করা হয়েছিল। এতে টার্গেট করা হয় অভিজাত সংখ্যালঘু যাদের নঞ-আধ্যাতিক সমস্যার সমাধান হয়েছে এবং “সমস্যা যার কোন নাম নেই” এই ডাকে আধ্যাতিক সঙ্কট মোকাবিলায় মুখোমুখি হতে বলা হয়েছে। এই সঙ্কটকে একটি আধ্যাতিক সঙ্কট হিসেবে চিহ্নিত করার ব্যর্থতার কারণে সমাধান তো হয়নি বরং এটি কবরস্থ হয়েছে, “আকাক্সক্ষা পিরামিডের” নিচের ধাপের সমস্যা এসে জেকে বসেছে যেমন ঘর ভাড়া গ্যাস, জল ও বিদ্যুতের বিল পরিশোধ ও দায়িত্বহীন পুরুষের সঙ্গে ঘর সংসার করা ইত্যাদি। ইত্যাকার সব সমস্যা এসে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আজকের ছিন্নশির-সন্ত নারীবাদকে একটি গণ-আন্দোলন রূপে- এক প্রজন্ম আগে ঘুমন্ত রূপসী নারীবাদ যা করতে সক্ষম হয়নি।
নারী আন্দোলনের জন্য এখন সবচে ভালো কাজটি (যদি তা সম্ভব হয়) হলো পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের পুন:প্রবর্তন এবং আশা করা যায় যে এটি পুনরায় নারীর নিচের ধাপের আকাঙক্ষা মিটাবে ও তাদের ফিরিয়ে আনবে সেই জায়গাটিতে যেখানে বলা চলে “তারা আশীর্বাদপুষ্ট যারা আধ্যাতিক প্রেষণা অনুভব করে।” ধর্মগ্রন্থকে পরিপূর্ণ হতে দাও। যে পিতৃতন্ত্র নারীকে এতদূর এগিয়ে দিয়েছে তা শেষতক তাদেরকে মোক্ষ অভিজ্ঞতায় সবটুকু পথ বয়ে নিয়ে যেতে অক্ষম কিন্তু পিতৃতন্ত্রই ছিল সবচে ভালো বন্ধু- নারীর এযাবৎকালের সেরা প্রাপ্তি।
চিন্নশির-সন্ত নারীবাদীরাই এখন চড়ে খাওয়ার বিষয়টিকে দুর্দশা হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন, নারীবাদী জেসি বার্নার্ড যেমন বলেন, “নারীর অর্থনৈতিক নির্ভরতার বাড়তি বোঝা”। তিনি মনে করেন এই বোঝা “হালকা করতে হবে” কেননা পুরুষ ও নারীর মধ্যেকার মেল বন্ধন (ঁহরড়হ) যখন ভেঙে যায়, একজন শুধু সঙ্গীই হারায় না, হারায় বেঁচে থাকার অবলম্বনও- এটা কোন সুস্থ সম্পর্কের নমুনা হতে পারে না। এটি আদতে কোন সম্পর্কই নয় যা ভেঙে যায়; এবং ভেঙে যায় মূলত (নারীর নিজের প্রজনন নিয়ন্ত্রণে নারীর অধিকারের ওপর নারীবাদী/ যৌন বিপ্লবের প্রভাবকে ধন্যবাদ) বিবাহ শর্তহীন হওয়ার কারণে। নারীর “অর্থনৈতিক নির্ভরতার বাড়তি বোঝা” হওয়ায় কোন ভোগান্তি নেই; তারা চায় এটি (নির্ভরতা) ধরে রাখতে বা ফিরে পেতে...... বিয়ের বাধ্যবাধকতা যা এই বিষয়ের যাথার্থ্যতা প্রমাণ করে তার দিকে কোন গা না করেই। পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিবাহের মাধ্যমে নারী উপকৃত হয়েছে। পিতৃতন্ত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়ার যে নারীবাদী কর্মসূচি তাতেও সেইসব উপকারের কথা বলা হয়েছে তবে তা বিবাহের বাইরে থেকে অর্থাৎ, বিবাহ, পরিবার, পুরুষের ভূমিকা এবং সমগ্র পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে মাতৃতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। পিতৃতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনে পুরুষের শুধু একটি পথ খোলা আছে- তা হলো জোর দিয়ে বলা যে, বিয়ের বাইরে কোন মাগনা খাওয়া নেই এবং যৌন নীতিমালা মেনে নাও..... কোন খোরপোশ নেই, সন্তান-লালনের ভাতা নেই, হলফনামা নেই এবং নেই কোন তুলনাযোগ্য গুণাগুণ, কোটা নেই, নেই গন্তব্য ও টাইম-টেবল। স্বনির্ভর হওয়া মানে নির্ভরশীল না হওয়া।
একক মায়েদের ভোগান্তি...... বৃহৎ অর্থে যা আÍ-প্ররোচিত...... এখন মাগনা খাওয়ার সপক্ষে সবচে বড় যুক্তি বলে মনে হয় ঃ
কল্যাণভাতা ব্যবস্থার বদলে এমন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা উচিত যেখানে একক মাতা / পিতা হবে উপার্জনকারী কিন্তু সরকারের শিশু কল্যাণ ভাতার বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়া উচিৎ - এক্ষেত্রে অন্য পিতা / মাতার আয়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, এবং উচ্চস্তরের / সার্বিক শিশু যতœ ইত্যাদি বিবেচনায় এনে তালগোল পাকানো ঠিক হবে না।
ডধমবং উঁব খবংনরধহং হচ্ছে লেসবিয়ান নারীদের একটি স্বাধীন গ্র“প যারা ডধমবং ভড়ৎ ঐড়ঁংবড়িৎশ সংগঠনের মধ্যে থেকে বিশেষত ‘হেফাজত’ বিষয়ে কাজ করে। ডধমবং ভড়ৎ ঐড়ঁংবড়িৎশ হচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন- লড়াই করছে সকল নারীকে অর্থ পাইয়ে দেয়ার জন্য যাতে করে তারা স্বনির্ভর জীবন-যাপন করতে পারে।
বিচ্ছেদ প্রাপ্তা, আলাদা বসবাসকারী ও অবিবাহিত মায়েদের ও তাদের সন্তানদের প্রাপ্ত সুবিধাদিকে বিধবাদের দেয়া সুবিধাদির অনুরূপ করা সম্ভব- হয় সুবিধাদি বাড়িয়ে দিয়ে অথবা আয়-নির্বিশেষে একক মায়েদের কাছে সুবিধাদি পৌঁছে দিয়ে।
গ্র“প হিসেবে নারীর জন্যে-ভবিষ্যত যেন ধারণ করছে এক ভয়ঙ্কর নিরাপত্তাহীনতা ঃ আমরা ক্রমাগতভাবে আমাদের নিজেদের সম্পদের ওপর নির্ভরশীল কিন্তু যে সমাজ ও অর্থনীতি আমাদের কখনোই স্বনির্ভর ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ইচ্ছুক নয়, সেখানে অন্যের জন্যে রুটি রুজির স্বীকৃতি নিশ্চিতভাবেই আরো কম।
সত্য যে নারীর অতিমাত্রায় শিশুদের তত্ত্বাবধায়ক হওয়াই হয়েছে তাদের দ্বিতীয় স্তরের অর্থনৈতিক মর্যাদার মূল নির্ণায়ক। পিতা-মাতা দু’জনের পরিবারেই হোক বা একক পিতা/মাতার পরিবারেই হোক, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারী লালনপালন, দৈনন্দিন যতœাদি, নিজ হাতে শিশু বড় করে তোলা ইত্যাদি কর্ম করে থাকে।
স্বনির্ভর হওয়ার পথে নির্ভরশীল হয়ে পড়ার নারীবাদী দাবি আপাতদৃষ্টিতে আÍবিরোধী বলে প্রতীয়মান হবে যতক্ষণ না এর অন্তর্নিহিত ভাবটা বোঝা যায়, এটা হচ্ছে এইরকম: নারী যা চায় তা স্বনির্ভরতা নয় বরং আইন-কানুনের শিথিলতা। তারা আকুলভাবে ফিরে যেতে চায় “সেই রকম ভূমিকায় যা মিলিয়ন বছর পূর্বে আফ্রিকার তৃণভূমিতে বিদ্যমান ছিল।” শিথিল নিয়মকানুন হচ্ছে নারীবাদী/ যৌন বিপ্লব ব্যাখ্যা করার মূল ভাবধারা। তারা স্বনির্ভরতা বিষয়ে কথা বলতে পছন্দ করে কেননা এতে আÍ-অনুমোদনাÍক বীরত্ব প্রকাশ পায়- এবং বক্তব্য আন্তরিক এই অর্থে যে যখন তারা ধমরঃঢ়ৎড়ঢ়৬ লিখে অথবা কোন সম্মেলনে জমায়েত হয় এবং একে অন্যকে তীব্রভাবে আক্রমণ করার সময় নিজেদের চালাকি বুঝতে পারে। কিন্তু যখন কোন বাস্তবিক সুবিধা যেমন অর্থনৈতিক সুবিধার অবতারণা ঘটে, তারা বেছে নেয় নির্ভরতা। আরো বেশি নির্ভরতা...... আরো বেশি খোরপোশ, আরো বেশি শিশুকল্যাণ ভাতা, আরো বেশি শাসনতান্ত্রিক/ আমলাতান্ত্রিক/ আইনী বীরব্রত, আরো জ্বী-হুজুর আচরণ, আরো তুলনাযোগ্য উৎকর্ষ, আরো কোটা, আরো গন্তব্য ও টাইমটেবল, আরো বেশি পুরুষ বিরোধী বৈষম্য, আরো বেশি মাগনা.....যত বেশি ‘আরো’, তত ভালো। যদি মাগনা হয় তবে নারী এটি চায়। যা তারা চায় না সেটি হলো তাদের যৌনতা নিয়ে বিধি-নিষেধ/ কানুন যা পুরুষকে একটি স্থিতিশীল পরিবারের মধ্যে বসবাস করায় নিরাপত্তা প্রদান করে।
শিথিল বিধি বা কানুন অর্জনার্থে নারী ঘোষণা করছে ফ্যাশানদুরস্ত কর্মসূচি। দারিদ্র্য ও দৈনদশার মধ্যে নিজেদেরকে ছুড়ে দিচ্ছে এবং এর মধ্যে টেনে আনছে “তাদের” শিশুদের, ...... এবং প্রদর্শন করছে তার বিধেয়, তাদেরকে এসে রক্ষা করার প্রমাণ হিসেবে।
অনুবাদকের টীকা :
১. ঘুমন্ত-রূপসী নারীবাদ বনাম ছিন্নশির-সন্ত নারীবাদ (Sleeping Beauty Feminism Vs Slaughtered Saints Feminism, ড. ডেনিয়েল এমনিয়াস লিখিত The Garbage Generation পুস্তকের চতুর্থ অধ্যায়। মূল ইংরেজী লেখায় যথেষ্ট মুন্সীয়ানা আছে। ড. এমনিয়াস ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন; ২০০৩ সালে তিনি গতায়ু হয়েছেন। তার লেখা অন্যান্য বই : Case for Father Custody, Back to Patriarchy, Mystery of Macbeth, The Three Othellos ।
২. সডম ও গমর্যা : বাইবেলে বর্ণিত পাপ-পঙ্কিলে নিমজ্জিত দুটি নগরী ; লর্ডের নির্দেশে সালফার বৃষ্টি ঝরিয়ে নগরীদুটো ধ্বংস করা হয়।
৩. ঊজঅ হচ্ছে Equal Rights Amendment, Civil Rights Act, ১৯৬৪ ।
৪. Maslow’s Hierarchy of Needs বাংলায় নাম দিয়েছি ‘আকাক্সক্ষা পিরামিড’। মানব প্রেষণার তত্ত্ব। এই তত্ত্ব অনুসারে মানুষের আকাক্সক্ষা বা প্রয়োজনকে পিরামিডের বিভিন্ন ধাপ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে: পিরামিডের সবচে নিচের ধাপ হলো শারীরিক বা জৈবিক আকাক্সক্ষা যেমন, অক্সিজেন, জল, খাদ্য, সেক্স ইত্যাদি। পরবর্তী ধাপগুলো হচ্ছে সেইফটি বা নিরাপত্তা, সামাজিক আকাক্সক্ষা (যেমন স্নেহ ভালবাসা), আত্ম-সম্মান ও মর্যাদা, আত্মবোধন বা পূর্ণতা অর্জন এবং সর্বশেষ ধাপ হলো আত্ম-শ্রেয়তা বা তুরীয জ্ঞান অর্জন বা নিজ স্বার্থের গন্ডি অতিক্রম। বাংলায় প্রবাদ আছে, বসতে দিলে শুইতে চায়। সেইরকম মানুষের একটি চাহিদা পূরণ হলে সে পরবর্তী চাহিদার দিকে ধাবিত হয়।
৫. GI Bill - Government Issued Bill: প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট স্বাক্ষরিত Servicemen’s Readjustment Act of 1944, ‘GI Bill of Rights’ নামে সমধিক পরিচিত। এই আইনের অধীনে সার্ভিস সমাপনান্তে নাগরিক জীবনে প্রত্যাবর্তনের পর সৈনিকদের নানাভাবে সহায়তা করা হয়।
৬. Agitated propaganda ।