বাবু ও একটি বিড়াল ছানা

তাসরীনা শিখা 

আজকাল কোথাও গেলে একটি প্রশ্নের সম্মুক্ষীন হতে হয়, এত কম লিখছেন কেন? সে প্রশ্নের জবাব আমার কাছে নেইকি নিয়ে লিখবো? বেশ কিছুদিন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর চোখ ও মন নিয়োগ করে বড্ড বেশী  ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম রাজনৈতিক লেখা কি লিখা যায় না? অবশ্যই যায়কিন্তু আমার ঘরের মানুষটি রাজনৈতিক লেখা নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত থাকেন যে দুজনে মিলে রাজনীতির  গলাটিপে ধরতে চাই না তাছাড়া মনে হয় আজকাল আমার চিন্তার জগতে ভাবনার গতিতে একটা প্রাচীর তৈরী হয়েছে, আমি কোন ভাবেই যেন প্রাচীরটা টপকে এগোতে পারছি না 

কদিন থেকেই ভাবছি, আর বাস্তব ঘটনা নয় এবার গল্প লিখবোআমার পরবর্তী লেখাটি হবে গল্প, যার মধ্যে থাকবে সাহিত্য, থাকবে লেখকের কল্পনার রঙীন হাঁস, তুলির নানা রং, থাকবে সপ্নের অনেক কথাআজও ভাবছি একটা গল্প লিখবো 

গল্প লিখতে বসে সেই কার্টুনের কথা মনে পড়লোকি একটা কার্টুন, সেটা নিয়ে কি এত কিছুর কোন প্রয়োজন ছিল? এ ধরনের কার্টুনতো আগেও ছাপা হয়েছিল জামাতে ইসলামের পত্রিকায় প্রয়োজন ছিল কি তরুণ কার্টুনিষ্ট  আরিফ রহমানের গেফতার হওয়ার? জরুরী ছিল কি আলপিনের সহ সম্পাদককে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করার? কি কারনে মওলানা সাহেবদের নিয়ে মিটিংয়ে বসতে হবে এবং একে একটি ষড়যন্ত্র বলে আক্ষায়িত করতে হবে? পত্রিকার সম্পাদককেই বা কেন হাত জোর করে মাপ চাইতে হবে? প্রয়োজন হয়তো  কোন কিছুরই ছিলনা, তবু আমরা করি, নিজেকে নির্দোষ প্রমান করার জন্য আমরা জলাঞ্জলী  দেই নীতি আর্দশকে, আত্মসম্মান বোধও ধুয়ে মুছে ফেলি অপ্রয়োজনে আমরা অনেক লাফালাফি করি কিন্তু সত্যিকার প্রয়োজন যেখানে সেখানে আমরা চূপ করে থাকি 

ধর্মের মূলণীতি ঈমান অর্থ্যা বিশ্বাসআমাদের বিশ্বাস কি এতই হালকা যে সামান্য একটি কার্টুনে তা নষ্ট হবে? অবশ্য এধরনের ঘটনা আমাদের দেশে নূতন কিছু নয় বাংলাদেশের মানুষ দরিদ্র ও ধর্ম ভীরুধর্মের দোহাই দিয়ে আমরা অনেক কিছুই করি মানুষের মুখ বন্ধ করার এবং অহেতুক মানুষকে উতপ্ত করার এটি একটি উকৃষ্ট পন্থা যে ধর্ম নিরপেক্ষতার আর্দশে বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছিল তার অস্তিত্ব আজ আর নেইএখন নেতা নেত্রীরা ধর্মকে পূঁজি করে ভোট সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন 

যারা মানুষ খুনে সহায়তা করেছে, নারী নির্যাতনে ইন্ধন জুিগয়েছে, যার পুরটাই ধর্ম বিরোধী তারা এখনো ধর্মের ঝান্ডা উড়িয়েই নিশ্চিন্তে দিন কাটাচ্ছেআর তাদের মদদ জোগাচেছ যে যখন ক্ষমতায় থাকে তারাভোট এমনই একটা জিনিষ যার জন্য মানুষ নীতিচূত্য হয়, বারবার ওমরা করতে যেতে হয়, মাথায় টুপি পড়তে হয়, সব কিছুর পেছনেই ক্ষমতা ও ভোটের লোভযে মৌলবাদকে নিয়ে এত সমালোচনা এত লেখালেখি সেই মৌলবাদকে পকেটে রাখার জন্য আমাদের নেতা নেত্রীরা কোন কিছুতেই পেছপা হননা 

আমি আবারো আমার পরিকল্পনা থেকে সরে যাচিছআমি আজ বসেছিলাম একটি গল্প লিখবো বলে, কিন্তু কার্টুনিষ্ট আরিফ রহমানের জন্য ব্যথা, আলপিনের সহ সম্পাদক যিনি এতদিন যাব পত্রিকাটির পেছনে খেটে যাচিছলেন এক নিমিষেই তার চাকুরি শেষ এবং মতিউর রহমানের কাপুরুষতা দেখে আমার আর গল্প লিখা হলো নাবাইরে ভীষন সুন্দর আবহাওয়া, ফুরফুরে বাতাস মনকে কেমন উদাস করে দিচ্ছে সেপ্টেম্বরের শেষ প্রান্তে এসেও প্রকৃতি এখনো অপূর্ব সজীবমনটা ভালো করার জন্যই বেড়িয়ে পড়লামভাবলাম ফিরে এসে একটি গল্প লিখতে বসবোপার্কে কিছুক্ষন হেটে এক কোনার একটি বেঞ্চে বসে নানা রকম ফুল আর প্রজাপতির খেলা দেখছিলামকম বয়সী বাবা মারা এসেছে বাচ্চাদের নিয়ে খেলতে, কারো কারো সাথে আবার আদরের কুকুর বাচ্চাদের কোলাহলে ভরপুর পার্কটি বাচ্চাদের সাথে নিজেকে বেমানান মনে হচ্ছিল বলেই একটু দূরে বসে প্রকৃতির রূপ ও সতেজ বাতাস উপভোগ করছিলামমনটা ছুটে যাচ্ছিল বাংলাদেশে স্মৃতির পাতায় ভেসে আসছিল কত ছোটছোট ঘটনা।  কত ছোট বড় আনন্দ দুঃখএ জিনিষটা এত বছর প্রবাস জীবনেও আমি কাঁটাতে পারছিনাদেশে যখন অস্বাভাবিক, অশুভ ও অন্যায় কিছু ঘটে তখন মন ক্ষুব্ধ হয়মাঝে মাঝেই ভাবি দেশকে নিয়ে আর ভাববো নাকি হবে ভেবে, খামাখা এত কথা ভেবে নিজে কষ্ট পাওয়ার কি দায় পড়েছে আমারতারপরও ভাবি, দেশের কথা ভেবে আনন্দ পাই, কখনো দুঃখ পাই, ক্ষুব্ধ হই কখনোবা আবেগে অবিভুত হই 

এসব কথা যখন আপন  মনে ভাবছিলাম তখন ছোট একটা কোলাহল চোখে পড়লো যার মধ্যে রয়েছে একটি ছোট আকৃতির কুকুর ও একটি বিশাল কুকুর এবং দুই কুকুরের পাশে দাঁড়ানো তাদের মনিবরা তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছে একটি বাচ্চা মেয়েঘটনা কি দেখার জন্য পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম ঘটনাস্থলেতাদের কথাবার্তায় ঘটনা যেটা বুঝলাম সেটা হলো, ছোট্ট মেয়েটি তার কুকুটিকে নিয়ে খেলছিলমেয়েটি ছোট একটি বল ছুড়ে দিচ্ছিল কুকুরটিকে আর কুকুরটিও মুখে করে বলটি এনে দিচ্ছিল তার ছোট্ট মনিবটিকেতা দেখে মেয়েটি আনন্দে হেসে গড়িয়ে পড়ছিলএভাবে তাদের খেলা চলছিল কিছুক্ষনহঠা কোথা থেকে এক বিশাল হিংস্র চেহারার কুকুর গর্জণ করে তাদের মাঝে এসে দাঁড়ালো, তার পেছনে ছুটে এলো তার মনিবএই বিশাল কুকুরটির ঘেউ ঘেউ গর্জনে বাচ্চা মেয়েটি ভয়ে কেদেঁ ফেললো, লুকিয়ে গেল তার মার পেছনেআর ছোট কুকুরটিও ভয়ে সিটকে ঘাসের উপর শুয়ে গেলবিশাল কুকুরের মনিব ক্ষমা চাইলো ছোট কুকুরটির মনিবের কাছে, তাকে বুঝানোর চেষ্টা করলো তার কুকুরের মনোভাবতার বিশাল কুকুরটি সবসময়ই মনোযোগ আর্কষন করতে চায় মানুষের, চায় সবাই তাকে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করুকতাই ছোট মেয়েটি যখন খেলছিল তার কুকুরটির সাথে তখন সে ছুটে এসেছে তার মনোযোগ আর্কষন করতে, একটু আদর নিতেবিশাল কুকুরের মালিকটি অনুরোধ করলো ছোট মেয়েটিকে তুমি আমার এডওয়ার্ডের [কুকুরের নাম] মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও প্লিজ-দেখবে ও কেমন খুশি হয়ে যাবেমেয়েটি চোখে পানি নিয়ে তার মায়ের হাত ধরে কাঁপা কাঁপা হাতে কুকুরটির গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতে লাগলো আর সত্যিই বিশাল হিংস্র চেহারার কুকুরটি আনন্দে লেঁজ নাড়তে নাড়তে ঘাসের উপর শুয়ে পড়লো

ঘটনাটি দেখে ও শুনে আমার বাংলাদেশের চিএ মনে পড়লোমনে পড়লো বিড়ালের মালিক সেই বাচ্চা ছেলেটির কথা, মৌলভী সাহেবের ভয়ে যে তার বিড়ালের নাম বলেছিল --------বিড়ালআর করুনা অনুভব করলাম মতিউর রহমানের জন্য

----------------------------------------------------------------------------------------------

তাসরীনা শিখাঃ টরন্টো প্রবাসী লেখক