বিবর্তনের আর্কাইভ
ভ্রান্ত ধারণা
বিজ্ঞান ও ধর্ম সাংঘর্ষিক নয় বরং একে অপরের পরিপূরক
প্রতিটি যুগে খুব ফলাও করে ধর্ম-বিজ্ঞানের সমন্বয় কিংবা সম্প্রীতির কথা বলা হলেও বিজ্ঞান এবং ধর্মের দ্বন্দ্বযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাস কারো অজানা নয়[1] । খ্রীষ্টজন্মের পাঁচশ বছর আগে পিথাগোরাস, এনাকু সিমন্ডের মত অনুসন্ধিৎসু দার্শনিকেরা জানিয়েছিলেন পৃথিবী সূর্যের একটি গ্রহমাত্র, সূর্যকে ঘিরে অন্য সকল গ্রহের মত পৃথিবীও ঘুরছে। ধর্মবিরোধী এই মতামত প্রকাশের জন্য এদের অনেককেই সে সময় সইতে হয়েছিল নির্যাতন। এই ‘কুফরি’ মতবাদকে দুই হাজার বছর পরে পুস্তকাকারে তুলে ধরেছিলেন পোল্যান্ডের নিকোলাস কোপার্নিকাস। বাইবেল বিরোধী এই সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্ব প্রচারের জন্য কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও আর ব্রুনোকে কিরকমভাবে অত্যাচারের স্টিমরোলার চালানো হয়েছিল সে এক ইতিহাস। ব্রুনোকে তো পুড়িয়েই মারলো ঈশ্বরের সুপুত্ররা। তারপরো কি সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর ঘোরা ঠেকানো গেল?
শুধু ব্রুনোই নন, তার সমসাময়িক লুচিলিও ভানিনি, টমাস কিড, ফ্রান্সিস কেট, বার্থৌলোমিউ লিগেট সহ অনেককেই ধর্মান্ধদের হাতে নিগৃহীত এবং নির্যাতিত হয়ে নিহত হতে হয়। খ্রীষ্টের জন্মের চারশ পঞ্চাশ বছর আগে এনাক্সোগোরাস বলেছিলেন চন্দ্রের নিজের কোন আলো নেই। সেই সঙ্গে সঠিক ভাবে অনুসন্ধান করেছিলেন চন্দ্রের হ্রাস বৃদ্ধি আর চন্দ্রগ্রহণের কারণ। এনাক্সোগোরাসের প্রতিটি আবিস্কারই ছিল ধর্মবাদীদের চোখে জঘন্য রকমের অসত্য। ঈশ্বর বিরোধিতা, ধর্ম বিরোধিতা আর অসত্য প্রচারের অপরাধে দীর্ঘ আর নিষ্ঠুর নির্যাতনের পর তাঁকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হয়। ষোড়শ শতকে সুইজারল্যান্ডের বেসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন শাস্ত্র এবং ভেষজবিদ্যার অধ্যাপক ফিলিপ্রাস প্যারাসেলসাস ঘোষনা করলেন- মানুষের অসুস্থতার কারণ কোন পাপের ফল কিংবা অশুভ শক্তি নয়, রোগের কারণ হল জীবাণু। ওষুধ প্রয়োগে জীবাণু নাশ করতে পারলেই রোগ ভাল হয়ে যাবে। প্যারাসেলসাসের এই ‘উদ্ভট’ তত্ত্ব শুনে ধর্মের ধ্বজাধারীরা হা রে রে করে উঠলেন। সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক ধর্মবিরোধি মতবাদ প্রচারের জন্য প্যারাসেলসাসকে হাজির করা হয়েছিল ‘বিচার’ নামক এক প্রহসনের মুখোমুখি। ধর্মান্ধ বিচারকেরা ব্রুনোর মতই প্যারসেলসাসকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করেছিলো। প্যারাসেলসাসকে সেদিন জীবন বাঁচাতে মাতৃভূমি ছেড়ে পালাতে হয়েছিলো। অত্যাচার আর নির্যাতন শুধু খ্রীষ্টানদের একচেটিয়া ভেবে নিলে ভুল হবে - আজকে মুসলিমরা ইবনে খালিদ, যিরহাম, আল দিমিস্কি, ওমর খৈয়াম, ইবনে সিনা, ইবনে বাজা, আল কিন্দী, আল রাজি কিংবা ইবনে রুশদের মত দার্শিনিকদের জন্য গর্ববোধ করে – কিন্তু সে সব দার্শনিকদের সবাই তাদের সময়ে বৈজ্ঞানিক সত্য কিংবা মুক্তমত প্রকাশের কারণে মৌলবাদীদের হাতে নিগৃহীত, নির্যাতিত কিংবা নিহত হয়েছিলেন।
আজকের দিনের পরিবর্তিত পরিবেশে বিজ্ঞানীদের উপর এত ঢালাওভাবে অত্যাচার করা কিংবা ডাইনী পোড়ানোর মত তাদের পুড়িয়ে মারা না গেলেও ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের দল সু্যোগ পেলে এখনো বিজ্ঞানের অগ্রগতি ঠেকাতে মুখিয়ে থাকে। যখনই বিজ্ঞানের কোন নতুন আবিস্কার তাদের নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত বিশ্বাসের বিপরীতে যায়, খোদ বিজ্ঞানকে ফেলে দিতে চায় আস্তাকুঁড়ে। তাতে আবশ্য লাভ হয় না কিছুই। অযথা গোলমাল বাধিয়ে নিজেরাই বরং সময় সময় হাস্যাস্পদ হন। অধিকাংশ ধার্মিকেরাই এখনো বিবর্তন তত্ত্বকে মন থেকে মেনে নিতে পারেন নি কারণ ডারউইন প্রদত্ত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের অবস্থান ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত সৃষ্টির কল্পকাহিনী গুলোর একশ আশি ডিগ্রী বিপরীতে। এখনো সুযোগ পেলেই ধর্মান্ধ মোল্লার দল প্রগতিশীল দার্শনিক, বিজ্ঞানী কিংবা সাহিত্যিকদেরকে ‘মুরতাদ’ আখ্যা দেয়, চাপাতি দিয়ে কোপায় কিংবা দেশ থেকে নির্বাসিত করে। এ তো গেল আমাদের মত দেশগুলোর অবস্থা। তথাকথিত ‘উন্নত বিশ্বে’ এখনো অশিক্ষিত আর অর্ধশিক্ষত পাদ্রী আর মোল্লারা উপযাজক সেজে বিজ্ঞানীদের পরামর্শ দিতে আসে বিজ্ঞানীদের কোন গবেষণা নৈতিক, আর কোনটা অনৈতিক; কিংবা দাবী তূলে বিজ্ঞানের পাঠ্যসূচীতে বিবর্তনের পাশাপাশি ‘ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন’ কিংবা সৃষ্টিতত্ত্বের গালগপ্পগুলো অন্তর্ভুক্ত করার। কিন্তু এ ধরণের দাবী মোটেই যৌক্তিক নয়।
২০০৯ সালে মুক্তমনার পক্ষে থেকে একটি ই-সংকলনের জন্য লেখা আহ্বান করা হয়েছিল। সংকলনটির শিরোনাম ছিল 'বিজ্ঞান ও ধর্ম সঙ্ঘাত নাকি সমন্বয়?' (বইটি ২০১২ সালে অঙ্কুর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিতব্য)। এই সংকলনের মাধ্যমে বাংলায় প্রথমবারের মতো বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যকার সম্পর্ক খোঁজা, জানা এবং বোঝার একটি চেষ্টা করা হয়েছে। সন্দেহ নেই, বিজ্ঞান এবং ধর্ম – দুটোর প্রভাব এবং গুরুত্ব আমাদের জীবন এবং সংস্কৃতিতে অপরিসীম। কিন্তু এদের মধ্যে সম্পর্কটি ঠিক কেমন?
অধিকাংশ লেখকই সংকলনটিতে মত দিয়েছেন বিজ্ঞান এবং ধর্মের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে, এবং তা খুব স্পষ্ট। বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সমন্বয়ের প্রচেষ্টাকে লেখকেরা অর্থহীন এবং বিভ্রান্তিকর বলে রায় দিয়েছেন। তারা যৌক্তিকভাবেই মনে করেন, ধর্মের অনেক প্রাচীন ব্যাখ্যা এবং অভিমতকে বিজ্ঞান যুগে যুগে ভুল প্রমাণ করেছে বহুবার। এর মধ্যে পৃথিবীর বয়সের ভ্রান্ত অনুমান, ভু-কেন্দ্রিক তত্ত্ব, আত্মার অনুমান, সৃষ্টিতত্ত্বের নানা কেচ্ছা-কাহিনীসহ অনেক কিছুই আছে। এ বিপুল মহাবিশ্বকে ঘড়ির সাথে তুলনা করাকে তাঁরা অতি সরলীকরণ এবং ভ্রান্ত মনে করেন। তাঁরা মনে করেন, আধুনিক বিজ্ঞানের অনেক তত্ত্বই কোন কারিগর ছাড়া মহাবিশ্বের অস্তিত্বকে আজ ব্যাখ্যা করতে পারে। মহাবিশ্বের কারিগরের ধারণাকে তারা দার্শনিকভাবেও ভ্রান্ত বলে তারা মনে করেন, কারণ সব কিছুর পেছনে একজন কারিগর থাকলে, সেই কারিগর কোত্থেকে উদ্ভুত হল সেটাও তো বলতে হবে। তারা আরো মনে করেন, ধর্মগ্রন্থগুলোতে কোন আধুনিক বিজ্ঞান নেই, বরং আছে আধুনিক বিজ্ঞানের নামে চতুর ব্যাখ্যা এবং গোঁজামিল। সেজন্যই, ধর্মের কাছে বিজ্ঞানের কখনো দারস্থ হতে হয় না, বরং ধর্মবাদীরাই আজ প্রতিটি বৈজ্ঞানিক আবিস্কারের পর নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থের সাথে জুড়ে দিতে মুখিয়ে থাকে। কারণ ধর্মবাদীরা জেনে গেছে, ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান ঠিকই টিকে থাকতে পারবে, কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান ছাড়া ধর্মগুলো বেঁচে থাকার আর কোন অক্সিজেন খুঁজে পাচ্ছে না। অধ্যাপক ইরতিশাদ আহমদ তার ‘বিজ্ঞানমনস্ক ধারা ধর্মাচ্ছন্ন স্রোতে’ নামক চমৎকার প্রবন্ধটিতে বলেন[2],
বিজ্ঞানমনস্ক মানুষেরা বিজ্ঞানকে কখনোই ধর্ম বানাতে চাননা, কিন্তু সমন্বয়পন্থী ধর্মাচ্ছন্নরা ধর্মকে সবসময়েই বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ করতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাই ধর্ম আর বিজ্ঞানের দ্বন্দ নিয়ে বিজ্ঞানমনষ্করা খুব একটা বিচলিত নন, বরং ধর্মাচ্ছন্নদেরই এ নিয়ে বেশী হইচই করতে দেখা যায়। এই দু’এর মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজনও ধর্মের প্রবক্তারাই অনুভব করেন বেশী। ধর্মবাদীরাই ধর্মকে বিজ্ঞানের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, বিজ্ঞানমনস্করা নয়। রাসেলের ভাষায়, “বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষেরা মানে না, গুরুত্বপূর্ণ কিংবা কর্তৃত্বসম্পন্ন কেউ বলেছে বলেই কোন কিছু মেনে নিতে হবে – বরং ঠিক উল্টোটা, সাক্ষ্যপ্রমাণ ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে যা জানা যায় শুধুমাত্র তাকেই তারা সত্য বলে মেনে নেয়। এই ‘নতুন’ পদ্ধতির অভুতপূর্ব সাফল্য – তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক উভয়বিধ – ধর্মবাদীদের বাধ্য করে ধীরে ধীরে বিজ্ঞানের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে”।
পাশ্চাত্যের ধর্মবেত্তারা বলে বেড়ান আজকের আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভব হয়েছিলো ইউরোপে, খ্রিস্ট ধর্মের হাত ধরে। উদাহরণ হিসেবে দেখান, গ্যালিলিও (মৃত্যু ১৬৪২) ও আইজাক নিউটনের (মৃত্যু ১৭২৭) মতো প্রথম দিগকার খ্যাত নামা বৈজ্ঞানিকদের যারা ধার্মিক ছিলেন। অবশ্যই! গ্যালিলিও ও ব্রুনো (মৃত্য ১৬০০) এর জীবন কাহিনি আমাদের বর্ননা করে, ধার্মিক হওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথও তাদের সামনে খোলা ছিলোনা। তারপরেও তারা ধার্মিকদের রোষানল থেকে রেহাই পেলেন কই?
বিজ্ঞান ও ধর্মের সহস্রবছর ধরা চলা সংঘর্ষের পুংখানুপুংখ বিবরণ পাওয়া যায় ঊনিশ শতকে প্রকাশিত দুইটি বইঃ J.W. Draper এর "History of the Conflict between Science and Religion (1873)[3] ” এবং Andrew Dickson White এর "History of Warfare of Science with Theology (1896)[4]” এ। এরপর থেকেই দীর্ঘদিনের এই প্রাচীনতম সংঘাতের বর্ণনা ধীরে ধীরে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে[5]। বর্তমানে বিজ্ঞান এবং ধর্মের সংঘর্ষ মোচনে বিলিয়ন ডলার খরচ হলেও বিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে এসে সেই সাম্যবস্থা একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়ে, মনে করিয়ে দেয় প্রাচীন সেই প্রবাদ- উলু বনে মুক্তা ছড়ানোর কথা।
মুসলমানদের মধ্যে বিবর্তন বিশ্বাসের হার এক শতাংশও হবেনা, যদিও আমাদের হাতে কোন পরিসংখ্যান নেই, কিন্তু সমস্ত মুসলিম প্রধানদেশগুলোতেই হারুন ইয়াহিয়া আর জাকির নায়েকের বিবর্তন সম্বন্ধে ভুল বক্তব্য সম্বলিত সিডি এবং বইয়ের যেভাবে প্রচারণা চলে তা রীতিমতো আতঙ্কজনক। মুসলিম সাহিত্য, মুসলিম অনুষ্ঠান এবং বর্তমান সময়ের আলোচিত মুসলিম স্কলারদের বক্তব্যে বিবর্তন সম্পর্কে মুসলমানদের রায় সহজের অনুধাবন করা যায়। মুসলমানরাও খ্রিস্টান এবং ঈহুদীদের মতো বিশ্বাস করে থাকে আদম এবং হাওয়া থেকেই সৃষ্টি হয়েছিলো মানব জাতির। বাকি সকল জীবিত প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে এই মানুষদের খেদমত করার জন্য। বিবর্তন নিয়ে আলোচনা নয়, মশা- মাছি বা সমুদ্রের পাদদেশে শিলালিপিতে অবস্থিত এককোষী ব্যাকটেরিয়া সদৃশ স্ট্রমেটালাইটস কেমন করে মানুষের খেদমত করতে পারে সে সন্দেহ দূরীভূত করার ক্ষেত্রেই মুসলিম স্কলাররা বেশি মনোযোগী। ক্ষেত্র বিশেষে তারা বিবর্তন বিরোধী বক্তব্য দিয়ে থাকেন অবশ্য। এবং তাদেরই একজনের বক্তব্যের খণ্ডন করা হয়েছে অবিশ্বাসের দর্শন বইয়ের "এই সুন্দর ফুল, সুন্দর ফল, মিঠানদীর পানি” অধ্যায়ে।
খ্রিস্টানদের বিবর্তন সম্পর্কে ধারণা নিয়ে রয়েছে পরিসংখ্যান। ২০০৬ সালের পিউ সার্ভে থেকে জানা যায়, খ্রিস্টান গ্রুপ হোয়াইট ইভানজেলিকালসদের ৬৫ ভাগ মনে করে মানুষ সহ পৃথিবীর সকল জীবিত প্রাণী বর্তমানে যেমন দেখা যায় ঠিক তেমন ভাবেই সৃষ্টি করা হয়েছিলো। অপরদিকে মেইনল্যান্ড প্রটেস্ট্যানসদের মধ্যে ৬২ ভাগ বিবর্তনকে সত্য বলে মনে করে, যাদের মধ্যে মাত্র ৩১ ভাগ প্রাকৃতিক নির্বাচনকে বিবর্তন হবার কারণ হিসেবে দেখে, ২৬ ভাগ মনে করে ঈশ্বর বিবর্তন ঘটিয়েছেন। বিবর্তনের কারণ হিসেবে ডারউইন/ ওয়ালেস প্রস্তাবিত প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব আজকে প্রাণীবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান সহ অসংখ্য বৈজ্ঞানিক শাখার মূল কাঠামো।
ক্যাথোলিক চার্চ অফিসিয়ালি বিবর্তনকে সঠিক বলে রায় দিয়েছে। একই সাথে প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বকেও সঠিক বলে তারা মানে যদিও মনে করে প্রাকৃতিক নির্বাচনের পেছনে রয়েছে ঈশ্বরের হাত। তারপরও ৩৩ ভাগের মতো ক্যাথলিক মনে করে জীবিত কোন প্রানী বিবর্তনের মাধ্যমে আসেনি। ৬৯ ভাগ মনে করে সময়ের সাথে সাথে প্রাণী বিবর্তিত হয়েছে, যাদের মাঝে ২৫ ভাগ কারণ হিসেবে প্রাকৃতিক নির্বাচনকে সত্য বলে মানে। সুতরাং চার্চ যত যাই বলুক না কেন, দেখা যাচ্ছে বিবর্তনকে স্বীকার করে নেবার মতো মানসিক অবস্থায় ক্যাথলিকরা এখনও পৌঁছায় নি।
অন্যদিকে গত শতাব্দীর অসংখ্য খ্যাতনামা বিজ্ঞানী নিজেদের নাস্তিকতা প্রকাশে দ্বিধা বোধ করেননিঃ স্টিফেন ওয়াইনবার্গ, স্টিফেন পিনকার, জেমস ওয়াটসন, ফ্রান্সিস ক্রিক, কার্ল সাগান, রিচার্ড ফাইনম্যান, এডওয়ার্ড ও উইলসন, সর্বোপরি আলবার্ট আইনস্টাইন এবং স্টিফেন হকিং। ১৯৯৮ সালে নেচার পত্রিকার এক প্রবন্ধে এডওয়ার্ড লারসন ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস এর ৫১৭ জন সদস্যের উপর করা এক জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেন। সেখানে দেখা যায়, সাত ভাগ সদস্য আব্রাহামিক ঈশ্বরে বিশ্বাসী, ৭২.২ ভাগ অবিশ্বাসী এবং ২০.৮ ভাগ "অজ্ঞেয়বাদী”[6]! অর্থাৎ পৃথিবীর অধিকাংশ খ্যাতনামা বিজ্ঞানীই ঈশ্বরকে প্রকাশ্যে কিংবা নীরবে পরিত্যাগই করেছেন।
* এই দাবীর উত্তরটি অভিজিৎ রায় এবং রায়হান আবীরের ‘অবিশ্বাসের দর্শন’(শুদ্ধস্বর, ২০১১) গ্রন্থ হতে সংকলিত।
[1] অভিজিৎ রায় এবং রায়হান আবীর, অবিশ্বাসের দর্শন, শুদ্ধস্বর, ২০১১
[2] ইরতিশাদ আহমদ, বিজ্ঞানমনস্ক ধারা ধর্মাচ্ছন্ন স্রোতে, বিজ্ঞান ও ধর্ম : সংঘাত নাকি সমন্বয়? মুক্তমনা ই-বুক, (অঙ্কুর প্রকাশনী, প্রকাশিতব্য ২০১১)
[3] Jhon William Draper, History of the Conflict between Religion and Science , London: Watts & CO., 1873।
[4] Andrew Dickson White, A History of the Warfare of Science with Theology in Christendom , New York: D. Appleton & CO.,1896
[5] Paul Kurtz, ed., Science and Religion: Are the Compatible?, Prometheus Books , 2003
[6] Edward J. Larson, Leading scientists still reject God, Nature, Vol. 394, No. 6691, p. 313 (1998) , Macmillan Publishers Ltd.; online: