বিবর্তনের আর্কাইভ
ভ্রান্ত ধারণা
মাইক্রোবিবর্তন এবং ম্যাক্রোবিবর্তন সম্পূর্ণ আলাদা
কিংবা
প্রাকৃতিক নির্বাচন মাইক্রোবিবর্তন ব্যাখ্যা করতে পারে, কিন্তু নতুন প্রজাতি এবং উঁচু শ্রেণীর প্রাণীর উৎপত্তি ব্যাখ্যা করতে পারে না।
১) মাইক্রোবিবর্তন এবং ম্যাক্রোবিবর্তনকে আলাদা নামে চিহ্নিত করা হলেও তারা আসলে আলাদা কিছু নয়, কারণ তাদের প্রক্রিয়া একই রকমের[1]। যে ফ্যাক্টরগুলোর প্রভাবে এই (দু-ধরনের) বিবর্তন হয় সেগুলো হল -
- প্রাকৃতিক নির্বাচন
- জিন মিউটেশন
- ক্রোমোজম মিউটেশন
- জেনেটিক রিকম্বিনেশন
- জেনেটিক ড্রিফট
- এবং অন্তরণ
কেবল পার্থক্য এই যে, মাইক্রবিবর্তন খুব কম সময়ের মধ্যে ঘটে আর ম্যাক্রোবিবর্তন ঘটতে তুলনামূলকভাবে সময় লাগে বেশি।
২) মাইক্রোবিবর্তন যে হয় তা বিবর্তনবিরোধী সৃষ্টিবাদীরাও এখন স্বীকার করেন[2]। মাইক্রোবিবর্তনের ফলে উপপ্রজাতি পর্যন্ত বা প্রজাতির অধঃস্তন ট্যাক্সাগুলো গঠিত হয়। আর বিবর্তন যখন উপ-প্রজাতির স্তর অতিক্রম করে প্রজাতি পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন তাকে বলে ম্যাক্রোবিবর্তন। এতেও পূর্বোক্ত ফ্যাক্টরসমূহই কাজ করে[3]।
৩) প্রকৃতিতে মাইক্রো-বিবর্তন ঘটতে দেখা গেলেও ম্যাক্রো-বিবর্তন ঘটার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না -এই (কু)যুক্তিটি বিবর্তনবাদের বিরোধীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়, তারা সুযোগ পেলেই এই ব্যাপারটাকে সামনে নিয়ে আসেন। শুধুমাত্র বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তারা এটা বলেন বললে বোধ হয় পুরোটা বলা হয় না। ম্যাক্রো-বিবর্তনের ব্যাপারটা ঠিকমত বুঝে ওঠার জন্য বিবর্তনবাদের গভীরে যতটুকু ঢোকা দরকার সেটা তারা করেন না, কিন্তু তারা জানেন যে, ম্যাক্রো-বিবর্তনের মাধ্যমে পূর্বসুরী প্রজাতি থেকে নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটতে হাজার, লক্ষ, কোটি বছর লেগে যেতে পারে। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়াটি চোখের সামনে ঘটতে দেখা যায় না, তাই এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব সহজেই সংশয় সৃষ্টি করা সম্ভব - আর সেটারই সুযোগ নেন তারা[4]।
৪) মাইক্রোবিবর্তন এবং ম্যাক্রোবিবর্তনের বহু সাক্ষ্য-প্রমাণ বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই আমাদের দিয়েছেন (পড়ুন - 'বিবর্তনের পক্ষে কোন সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি' - এই দাবীর উত্তর), কাজেই এ নিয়ে বিতর্ক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত কিংবা অজ্ঞতা।
[1] Mark Isaak, The Counter-Creationism Handbook, University of California Press, 2007
[2] Mark Isaak, The Counter-Creationism Handbook, University of California Press, 2007, page 89
[3] ড. ম. আখতারুজ্জামান, বিবর্তনবিদ্যা, বাংলা একাডেমী (১৯৯৮); ২য় সংস্করণ, হাসান বুক হাউস (২০০৪)
[4] বন্যা আহমেদ, বিবর্তন সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো, বিবর্তনের পথ ধরে, ২০০৭ (পরিমার্জিত সংস্করণ ২০০৮), পৃঃ ২২০