বিবর্তনের আর্কাইভ
ভ্রান্ত ধারণা
বিবর্তন যৌনতা বা সেক্সের উদ্ভবকে ব্যাখ্যা করতে পারে না
বেশ কয়েকটি বিষয়কে ‘সেক্স’ এর উদ্ভবের কারণ হিসবে ধরা যেতে পারে।
১) যদি অযৌনপ্রজনের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি হতে থাকে, তাহলে জনপুঞ্জে কোন ভ্যারিয়েশন থাকে না। ফলে কোন এক সময় বাজে মিউটেশনের ফসল হিসেবে কোন একটায় মড়ক লাগলে পুরো প্রজাতিতে তা ছড়িয়ে পড়বে আর প্রজাতি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। পরীক্ষায় দেখা গেছে যে এই ব্যাপারটা অনেক ক্ষেত্রেই সত্য।
২) যৌন প্রজনন জীবজগতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জেনেটিক প্রকরণ বা ভিন্নতা তৈরি করে বলে মনে করা হয়, যা বিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি[1]। এর ফলে জনপুঞ্জে উন্নত বৈশিষ্ট্যের বিস্তার ঘটে।
৩) যৌন প্রজনন প্রজন্মে খারাপ মিউটেশনেরর লোড কমিয়ে আনে[2]।
৪) বিভিন্ন প্যারাসাইটিক আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়[3]।
যৌনতার উৎপত্তি হয়েছে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন বছর আগে। এর উৎপত্তির কারণ নিয়ে নানা মুনির নানা মত আছে[4]। এর মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী একটি অনুকল্প হল রেড কুইন প্রকল্প[5]। অনুকল্পটি নিয়ে অল্প কথায় বলতে গেলে বলা যায় - যৌনসঙ্গমের মাধ্যমে যে সন্তানটি শেষপর্যন্ত উৎপন্ন হয়, ব্যক্তিগত স্তরে তার জিনের গঠণ তার বাবা-মার জিনের গঠণের মিশ্রণ হয়। এতে করে কোন জীবাণু তার বাবা-মাকে আক্রান্ত করতে পারলেও তাকে আক্রান্ত করতে বেগ পেতে হয়। একটা অনেকটা ব্যাংক ভল্টের পাসওয়ার্ডের মতো। পাসওয়ার্ড সবসময় অপরিবর্তিত রাখলে যেকোন চোর কোন এক সময় পাসওয়ার্ডটি হ্যাক করে ফেলতে পারে। কিন্তু পাসওয়ার্ড সবসময় পরিবর্তন করলে তস্করের পক্ষে পাসওয়ার্ড হ্যাক করা কঠিন হয়ে পড়ে। সেক্স ব্যাপারটিও যৌনপ্রজ প্রাণীদেরও একই ধরণের নিরাপত্তা প্রদান করে। যৌনতার কারণে জিনমিশ্রণের ফলশ্রুতি হিসেবে আমাদের (অর্থাৎ যৌনপ্রজ প্রাণীদের) শরীরের পাসওয়ার্ড বারংবার পরিবর্তিত হতে থাকে, একারণে জীবাণুর পক্ষে আমাদের শরীরের প্রতিরোধ হ্যাক করা কঠিন হয়ে পড়ে। ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হ্যান্স ব্রিমারম্যান তার গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, যৌনতার উদ্ভব ছাড়া দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হতে পারতো না[6]। রেডকুইন তত্ত্ব অনুযায়ী যৌনতার উদ্ভবের কারণ ওটাই, এবং তা বিবর্তন তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
মুক্তমনায় প্রাসঙ্গিক প্রবন্ধ:
বিবর্তনের ধারায় লিঙ্গের আবির্ভাব: বেঙ্গলেনসিস
[1] Wuethrich, Bernice, 1998. Why sex? Putting theory to the test. Science 281: 1980-1982.
[2] Davies, E. K., A. D. Peters and P. D. Keightley, 1999. High frequency of cryptic deleterious mutations in Caenorhabditis elegans. Science 285: 1748-1751.
[3] Sá Martins, J. S., 2000. Simulated coevolution in a mutating ecology. Physical Review E 61(3): R2212-R2215.
[4] Barton, N. H. and B. Charlesworth, 1998. Why sex and recombination? Science 281: 1986-1990.