বিবর্তনের আর্কাইভ
ভ্রান্ত ধারণা
প্রাকৃতিক নির্বাচন চক্রাকার যুক্তির উপর স্থাপিত- যারা বেঁচে থাকে তারা যোগ্যতম, আবার যোগ্যতমরাই বেঁচে থাকে।
১) প্রাকৃতিক নির্বাচন যোগ্যতমের বিজয়ের কথা বলে না, বলে জীবন সংগ্রামের (struggle for life) কথা। ‘যোগ্যতমের বিজয়’ এর প্রবক্তা ছিলেন হার্বার্ট স্পেনসার নামের এক দার্শনিক, যা ডারউইন প্রদত্ত বিবর্তন তত্ত্ব থেকে একেবারেই আলাদা (এ প্রসঙ্গে পড়ুন এখানে)।
২) প্রাকৃতিক নির্বাচন চক্রাকার যুক্তির উপর নির্ভরশীল নয়, অন্যান্য অনেক বৈজ্ঞানিক ধারণার মতোই প্রাকৃতিক নির্বাচন টিকে আছে অজস্র সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে কিংবা পরীক্ষালব্ধ পর্যবেক্ষণ এবং প্রমাণের ভিত্তিতে।
৩) বিবর্তনের ইতিহাসে ডাইনোসরের মত তথাকথিত ‘যোগ্যতমেরা’ অনেক সময়ই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কাজেই এর পেছনে কোন চক্রাকার যুক্তি নেই। বিবর্তনের ক্ষেত্রে গবেষকদের বেশ কিছু কাজই উল্লেখ্য যেখানে দেখানো হয়েছে যোগ্যতমেরা বিলুপ্ত বা ধ্বংস হতে পারে। যেমন,
- আলফেস হায়াতের প্রস্তাবনা অনুযায়ী প্রতিটি ব্যক্তির মত জীবজগতের বংশানুক্রমিক ধারাও (lineages) তারুণ্য, পূর্ণত্ব, প্রৌঢ়ত্ব এবং মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যায়। এই চক্রের শেষ দিকে তথাকথিত যোগ্যতমেরাই ধ্বংসের দিকে ত্বরান্বিত হবে[1]।
- অর্থোজেনেসিসের তত্ত্বানুযায়ী কিছু বিশেষ ঝোঁক একবার শুরু হলে সেটা বহমান থাকে, এমন কি সেটা ক্ষতিকর হওয়া সত্ত্বেও, এবং চলতে চলতে শেষ পর্যন্ত বিলুপ্তির পথে চলে যায়। যেমন, আইরিশ বৃহদাকার হরিণদের (Irish elks) কথা বলা যায়, যাদের ছিলো বিশাল বর্ণাঢ্য শিং, তারা বিশাল শিং-এর দৈর্ঘ্য আর ভারের চাপ সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত বিলুপ্তই হয়ে গেছে[2]।
- যখন কোন প্রজাতিকে ‘যোগ্য’ বলে বিবেচনা করা হয়, সেটি করা হয় একটি নির্দিষ্ট পরিবেশের কথা মাথায় রেখে। পরিবেশ বদলে গেলে কিংবা ভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সেটি আর যোগ্য হিসেবে বিবেচিত নাও হতে পারে। পরিবর্তিত পরিবেশ পূর্বেকার অনেক ‘অযোগ্য’ প্রজাতিকেই অভিযোজননের জন্য বাড়তি সুবিধা করে দিতে পারে[3]।
৪) ডারউইনীয় বিবর্তন অনুযায়ী যোগ্য মানে কেবল ‘বেঁচে থাকা’ নয়, বরং যে বৈশিষ্ট্যগুলো জিন-পুলে বাড়তি উপযোগিতা তৈরি করতে পারে, সেগুলোই। বন্য কুকুরের ক্ষেত্রে এর পরীক্ষণ-গত সত্যতা পাওয়া গেছে[4]। কাজেই আধুনিক বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী কে বেঁচে থাকলো বা না থাকলো সেটা বর কথা নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মে তথা জিন-পুলে কটটুকু অবদান রাখল সেটাই বড় কথা।
৫) ‘যারা লটারি জিতে তারা সৌভাগ্যবান, আবার সৌভাগ্যবানেরাই লটারি জিতে’ – এই বাক্যটিও আপাতঃ দৃষ্টিতে চক্রাকার যুক্তি বলে মনে হতে পারে। কিন্তু মনে হলেও সেটা বাস্তবতাকে ক্ষুণ্ণ করে না। এটা প্রাকৃতিক নির্বাচনের জন্যও সত্য হতে পারে।
[1] Alpheus Hyatt, On the paralellism between the different stages of life in the individual and those in the entire group of the molluscous order Tetrabranchiata. Memoirs Read Before the Boston Society of Natural History 1: 193-209, 1866.;
[2] Mark Isaak, The Counter-Creationism Handbook, University of California Press, 2007.
[3] Mark Isaak, The Counter-Creationism Handbook, University of California Press, 2007.
[4] A., I. J. Pole, Gordon and M. L. Gorman, African wild dogs test the 'survival of the fittest' paradigm. Proceedings of the Royal Society, Biological Sciences 270(Suppl. 1): S57, 2003.