নাস্তিকতা নিয়ে কিছু ভুল ধারনা -১

মূলঃ স্যাম হ্যারিস
অনুবাদঃ
দিগন্ত সরকার 

অনুবাদকের কথা: নাস্তিকতা আর আস্তিকতা নিয়ে বেশ কিছু লেখা পড়ছি। সেদিন স্যাম হ্যারিসের একটা লেখা খুব ভাল লাগল। সাহস করে লেখাটা অনুবাদ করতে বসেছি। তার আগে ছোট্ট একটু প্রস্তাবনা। অনেকেই নাস্তিকতাকে দেশের ও সমাজের পক্ষে সর্বনাশা বলে মনে করেন। তার অনেকগুলো কারণও তারা দর্শান। যেহেতু আমাদের সমাজে সামগ্রিকভাবে ধার্মিক লোকের প্রাধান্য সেহেতু এই যুক্তিগুলো খন্ডানোর মত লোকজনের যথেষ্ট অভাব বলে মনে করি। যার ফলে, নিত্যনতুন অভিযোগ শোনা যায় নাস্তিকদের বিরুদ্ধে। এই নাস্তিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর অধিকাংশই এরকম - অমুকে নাস্তিক ছিল সে এই ওই করেছে, সুতরাং নাস্তিকেরা খারাপ। কিন্তু আরো দশজন নাস্তিক যদি উপকার করে থাকেন তাহলেও সে নিয়ে কোনো বিশেষ উচ্চবাচ্য নেই।

কিছুদিন আগেও এক ধর্মব্যবসায়ীর ভিডিওতে দেখলাম যে তিনি বলছেন নাস্তিকদের কোনো জীবনদর্শন থাকে না। যে জীবনদর্শন মানুষ ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে আয়ত্ত করে, বা যে আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা ধার্মিকেরা অর্জন করে থাকে - নাস্তিকেরা তাকে অপছন্দ করে। কিন্তু আমার বক্তব্য হল নাস্তিকেরাই প্রকৃত জীবন-দর্শন অর্জন করে থাকে। আস্তিকদের জীবন তো পরকালের জন্য প্রস্তুতি-মাত্র। তাহলে সে জীবনের মানে কি? যদি জীবন-দর্শনের মানে এই হয় যে নিজেকে পরলোকে ভাল অবস্থানের বা স্বর্গলাভের জন্য প্রস্তুত করা - তবে তাকে জীবন-দর্শন না বলে তো পরলোক দর্শনই বলা ভাল - তাই না? আর আধ্যাত্মিকতার সাথে ঈশ্বরে বিশ্বাস করার কোনো সম্পর্ক নেই। বুকভরা ভালবাসা, চমকে ওঠার আনন্দ, বিষাদভরা কান্না -এইসব আবেগও নাস্তিকদের আর দশটা মানুষের মতই থেকে থাকে। শুধু নাস্তিকেরা কোনো কাল্পনিক বা পূর্বপরিকল্পিত সর্বশক্তিমানের সাহায্য নেয় না সেই অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যার জন্য। তারা তাকে বাস্তবের সীমার মধ্যে রেখে পর্যবেক্ষণলব্ধ সূত্র থেকে ব্যাখ্যার চেষ্টা করে। এটাই পার্থক্য। তাই অভিজ্ঞতায় কোনো ভেদাভেদ নেই, বিভেদ শুধু আছে ব্যাখ্যায়।

মানুষের বোধশক্তির বাইরেও যে কিছু আছে - তা নিয়েও নাস্তিক আস্তিক বিবাদ দেখি। অনেক সময়েই আস্তিক ঈশ্বর-পন্থীরা দাবী জানান যে যেহেতু আমরা অমুক-তমুক জানি না, তাই আমাদের প্রচলিত ধারণা মেনে চলতেই হবে যতদিন না ওগুলো আবিষ্কার হয়। বকলমে বক্তব্য হল ঈশ্বরের অস্ত্বিত্ত্ব ভুল প্রমাণ করার দায়িত্ব নাস্তিকদেরই। সেখানে নাস্তিকদের অবস্থান অনেক সহজবোধ্য - তারা যেটা জানেননা - সেটাকে জানিনা বলতেই অভ্যস্ত। পরীক্ষার দ্বারা যা প্রতিষ্ঠিত হয় না, তারা তাকে মেনে নেন না। অন্যভাবে বললে - যেকোনো বিষয়ে নাস্তিকদের তিনরকম অবস্থান সম্ভব - ঠিক, ভুল ও জানিনা। কিন্তু আস্তিকদের ক্ষেত্রে - ঠিক আর ভুল। কারণ তাদের ঠিক-ভুলের গন্ডীটা কেটে দিয়ে যায় ধর্ম।

আমার আত্মীয়স্বজনের অনেকেই বলেন নাস্তিকেরা ধর্মকে ও তার অবদানকে তুচ্ছজ্ঞান করে। এটা আরো একটা ভুল ধারণা। ধর্মকে তুচ্ছজ্ঞান করা আর ঈশ্বরকে অবিশ্বাস করা একই ব্যাপার নয়। এটা সত্যি যে কোনো একটা বিশেষ ধর্মের সমস্ত কিছু নাস্তিকেরা মেনে চলে না, বরং নিজস্ব বিবেক বা চিন্তাই তাদের পরিচালিত করে। কিন্তু আমাদের সমাজে অনেক ভালো কাজের পেছনে যে ধর্মের বড় ভূমিকা আছে তাকে অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই। আবার উল্টোদিকে ধার্মিকেরা তাদের ধর্মের প্রতিটি পঙতিকে সঠিক ও নির্ভুল বলে দাবী জানিয়ে প্রতিনিয়ত নতুন ব্যাখ্যা এনে তার সত্যতা প্রতিষ্ঠার যে ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে - নাস্তিকেরা তা থেকে বিরত থাকে।

প্রচলিত আরেকটি ভুল ধারণা হল নাস্তিকতার সাথে বিজ্ঞানের কোনো সম্পর্ক নেই। কথাটা আক্ষরিক অর্থে সত্যি হলেও বাস্তবে এর ব্যতিক্রম খুব কমই দেখা যায়। আমেরিকা ও ব্রিটেন - এই দুটি দেশই বর্তমানের আধুনিক বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সবথেকে বেশী সাহায্য করছে। আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের মধ্যে ভোটে ৯৩%-ই দাবী জানিয়েছেন যে তারা নাস্তিক। যেখানে আমেরিকার জনসংখ্যার ৯০%ই আস্তিক। তাহলে, বিজ্ঞানী হওয়ার সাথে নাস্তিকতাবাদের সম্পর্ক খুবই গভীর – নব্বই শতাংশ আস্তিকের জনতা থেকে বিজ্ঞানীদের মধ্যে উলটো নব্বই শতাংশ নাস্তিক হওয়া এই দৃঢ় সম্পর্কেরই পরিসংখ্যান।

আমি ব্লগে সাধারণভাবে দেখে এসেছি অনেক ধার্মিকই নাস্তিক বলতেই হিটলার, স্ট্যালিন, মাও আর পল পটের মত দাম্ভিক ডিক্টেটরের কথাই বলে থাকেন। এখানে একটা ব্যাপার বলে রাখা ভাল, ব্যক্তির ব্যাপারে পরিসংখ্যান কখোনো সামগ্রিক পরিসংখ্যানের জায়গা নিতে পারে না। দক্ষিণ এশিয়ায় মহিলা রাষ্ট্রপ্রধানের সংখ্যা বিশ্বের অন্য জায়গার থেকে বেশী বলে দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েরা অন্য জায়গার থেকে বেশী অগ্রসর - এটাও যেমন ভুল ধারণা, তেমনই কয়েকজন বিচ্ছিন্ন নাস্তিক ডিক্টেটরের আচরণ থেকে বাকি নাস্তিক বিজ্ঞানীদের মাপা যায় না। নিজ দেশ বা জাতির শ্রেষ্ঠত্বে অন্ধ অনেক ডিক্টেটর যেমন অন্য দেশ বা জাতির ওপর অত্যাচার চালিয়েছেন তেমনই নিজ ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে অন্য ধর্মাবলম্বীদের ওপর অত্যাচারের নমুনাও ইতিহাসে কম কিছু নেই। তাই আলাদা করে নাস্তিকদের এ জন্য দায়ী করার কোনো কারণ দেখি না।

সবশেষে আসা যায় বিবেকের কথায়। এটা খুব প্রচলিত যে নাস্তিকেরা বিবেকদংশনে জর্জরিত হন না। কারণ নাস্তিকদের কাছে তাদের নৈতিকতার জন্য কোনো ভিত্তি নেই - আস্তিকদের কাছে ধর্মগ্রন্থ যেমন। এমন ভাব যেন - খুন, জখম বা ডাকাতির অভিযোগে যারা অভিযুক্ত হয় তারা অধিকাংশই নাস্তিক। বাস্তবে, যে নাস্তিকেরা কোনো বইকে ধর্মগ্রন্থ স্বরূপ গণ্য করে নিজ মত প্রতিষ্ঠা করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তারাই বরং অনৈতিক কাজ করে এসেছে। আস্তিকদের দাবীমত যদি ধর্মগ্রন্থই তাদের নৈতিকতার ভিত্তি হয় - তাহলে সময়ে সময়ে ধর্মগ্রন্থের ব্যাখ্যা পরিবর্তিত হয় কেন? কেনই বা সমস্ত ধর্মপরিচালিত সমাজেও দাসপ্রথা, জাতিভেদ আর লিঙ্গবৈষম্য জায়গা করে নেয়? নাস্তিকদের নৈতিকতার ভিত্তি মানুষের স্বতস্ফূর্ত বিবেক, যে পরিবেশে বড় হয় তার শিক্ষা আর জাতিগত চেতনা। তাই একই ধর্মের বিভিন্ন রূপ দেখা যায় বিভিন্ন অঞ্চলে। আমার নৈতিকতার একটা বড় ভিত্তি আছে আমাদের জিনে - তাই বিচ্ছন্নভাবে বা একাকী বেড়ে ওঠা মানুষও অনৈতিক না হতেই পারে - যতটা একজন তথাকথিত নৈতিক বা ধার্মিক মানুষ হতে পারে।

সামগ্রিকভাবে দেখলে ভাল আর খারাপ এই দুটো বিশেষণ নাস্তিক আর আস্তিকতার সাথে জুড়ে দেওয়াটা ঠিক নয়। ধর্মের অন্ধ সমর্থকেরা নিজের ধর্ম আর বিশ্বাস বাঁচিয়ে রাখতে সদা-সচেষ্ট বলে তারাই এই ভাল-খারাপ ধার্মিকতা দিয়ে বিচার করার স্কেলটা আবিষ্কার করেছেন। নাস্তিকেরা বেশী প্রশ্ন করে বলে দুর্নাম আছে। আমি নাহয় কয়েকটা প্রশ্নের উত্তরই দেবার চেষ্টা করলাম। আমার ব্যক্তিগত মতামতে মানুষকে বিচার করতে গেলে তার মানবিক গুণাবলীর দিকে তাকানোই ভাল - বিশ্বাস নিজস্ব। নাস্তিকদের ঈশ্বর-অবিশ্বাস যদি নতুন নতুন বিজ্ঞানের তত্ত্ব উদ্ভাবনে সাহায্য করে তাহলে ঈশ্বর অবিশ্বাস করে ক্ষতিটা কি হয়?


 

সাম্প্রতিক ভোটে আমেরিকায় অনেকবারই দেখা গেছে যে নাস্তিকতার সাথে কেমন একটা কলঙ্ক জড়িয়ে গেছে। নাস্তিকদের রাজনীতিতে তো আসাই উচিন নয় কারণ নিউসউইকের সার্ভেতে দেখা গেছে মাত্র ৩৭% আমেরিকান একজন যোগ্য নাস্তিক প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে। কারণ, নাস্তিকদের একদল হতাশ, বিবেকহীন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিমুখ এবং মহাজাগতিক পরম শক্তির প্রমাণ বিরোধী মানুষের গোষ্ঠী বলেই মনে করা হয়েছে। এখনও আমেরিকার মাটিতে ৮৭% লোক "কোনোদিনও ঈশ্বরের অস্তিত্বে সন্দেহ কিংবা অবিশ্বাস করে নি", আর মাত্র ১০% মানুষ নিজেদের নাস্তিক বলে মনে করেছে। এরই মধ্যে আবার নাস্তিকেরা দুর্নামের ভাগিদার। এই দুর্নামের মিথগুলোকে আরো একবার পর্যালোচনা করে দেখা দরকার, কারণ প্রায়ই দেখা যায় সমাজের সবথেকে বুদ্ধিমান ও বিজ্ঞানমনস্করাই নাস্তিক হয়ে থাকে।

১) নাস্তিকেরা মনে করে জীবন অর্থহীন

মজার কথা হল বরং ধার্মিকেরাই মনে করেন জীবন হল অর্থহীন আর কল্পনা করে নেন যে ইহজীবন শেষে পরলোকে গিয়ে তারা ইহজীবনের সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে তারা আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। বরং নাস্তিকেরাই স্থিরনিশ্চিত যে জীবন হল মূল্যবান। আর যেহেতু আমাদের ভালবাসার কিছুই চিরকাল থাকবে না, তাই তারা বিশ্বাস করেন যে এ জীবনে সব ভালবাসাই অর্থপূর্ণ।

২) মানবসভ্যতার ইতিহাসে সবথেকে বড় অপরাধগুলোর জন্য দায়ী হল নাস্তিকতা

আস্তিকেরা প্রায়ই দাবী করেন যে পল পট, স্ট্যালিন বা মাও সে তুং-এর হত্যালীলার কারণ তাদের নাস্তিকতা। ফ্যাসিজম আর কমিউনিসমের মূল সমস্যা তাদের ধর্ম-বিরোধিতা নয়, বরং তারা নিজেরাই একেকটা ধর্ম হয়ে উঠেছিল। এদের রাজত্ব তাই একরকমের অনমনীয় বিশ্বাসে চলেছে, আর প্রত্যেকের ব্যক্তিপূজায় বিশ্বাসী একদল মানুষের তাকে সমর্থন করেছে। এর সাথে বরং ধর্মে মহাপুরুষ-বন্দনার তুলনা করা যায়। আর এদের হাতে মারা গেছে যারা তাদের রাজনৈতিক শত্রু, জাতিগত ভাবে বিরোধী বা দেশের অন্ধ-উন্নতির পথে অন্তরায়। মানুষ যুক্তিবাদী হয়ে ওঠার কারণে কোনো সমাজই কোনোকালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

৩) নাস্তিকতা একটি অনমনীয় বিশ্বাস

আব্রাহামিক ধর্মগুলোর ধর্মগ্রন্থগুলোর দাবীমত সেগুলো কোনো না কোনো সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের লেখা এবং তাতে মানুষের প্রয়োজনীয় সব তথ্যই দেওয়া আছে। আর তাদের মতে, যারা এই তথ্যের বিরোধিতা করে বা এই দাবী অযৌক্তিক বলে মনে করে তারাই হল নাস্তিক। তাই এই সংজ্ঞানুসারে কাউকে নাস্তিক হতে হলে তার নিজের বিশ্বাসে অনমনীয় না হয়ে শুধু যুক্তিবাদী হলেই চলে। ঐতিহাসিক স্টেফান হেনরী রবার্টস একবার এক আস্তিককে লক্ষ্য করে বলেছিলেন - "আমার মনে হয় আমি আর তুমি দুজনেই নাস্তিক। তুমি যতগুলো ঈশ্বরে বিশ্বাস কর, আমি তার চেয়ে একটি কম ঈশ্বরে বিশ্বাস করি।   যখন তুমি বুঝে উঠতে পারবে যে তুমি কেন আর অন্যান্য (ধর্মের) সম্ভাব্য ঈশ্বরকে অস্বীকার করছ, তাহলেই তুমি বুঝতে পারবে কেন আমি তোমার (ধর্মের) ঈশ্বরকে অস্বীকার করছি"।

৪) নাস্তিকেরা বিশ্বাস করে মহাবিশ্বে সবকিছুই ভাগ্যক্রমে সৃষ্টি হয়েছে

এখন অবধি কেউই জানেন না ঠিক কি ভাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। আমরা স্থান-কালের সূচনা নিয়ে আদৌ আলোচনা করতে পারি কি না সে নিয়েও আমরা স্থিরনিশ্চিত নই। এই ভাগ্যক্রমে সৃষ্টির যুক্তিটা আসলে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের বিরুদ্ধে বারবার বলা হয়ে এসেছে। রিচার্ড ডকিন্স তার "দ্য গড ডিলিউশন" বইটিতে এই ভুল ধারণাগুলো খন্ডন করেছেন। যদিও আমরা এখনও জানি না আমাদের গ্রহের রসায়ন কিভাবে প্রাণের উদ্ভবে সাহায্য করেছিল, কিন্তু আমরা জেনে গেছি যে আমাদের এই জৈববৈচিত্র্য ভাগ্যক্রমে আসে নি। বিবর্তনের মূল স্তম্ভ হল হয়ত ভাগ্যক্রমে ঘটা কিছু মিউটেশন আর তার পরে প্রাকৃতিক নির্বাচন। ডারউইন এই প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বের নামকরণ করেছিলেন কৃত্রিম নির্বাচনের সাথে এর সাদৃশ্য থেকে। কৃত্রিম নির্বাচনে পালিত পশুর ওপর এই নির্বাচন চালানো হয় - যার ফলে আরো ভাল উৎপাদনশীল পালিত পশু পাওয়া যায়। এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ নন-র‌্যান্ডম এবং নির্দিষ্ট অভিমুখেই এগোয়।

৫) নাস্তিকতার সাথে বিজ্ঞানের কোনো সম্পর্ক নেই

কিছু কিছু বিজ্ঞানীর মত বিজ্ঞানী হয়েও ধার্মিক হওয়া সম্ভব কিন্তু এটা মেনে নিতেই হবে বিজ্ঞানমনস্কতা ধর্ম থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে দেয়। আমেরিকার জনগণের কথাই ধরা যাক। অধিকাংশ সার্ভেতেই দেখা গেছে যে প্রায় ৯০% জনগণই ঈশ্বর-বিশ্বাসী, আবার ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের ৯৩% বিজ্ঞানীই ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না। বিজ্ঞানীরা তো সাধারণ জনগণেরই অংশ। এর মানে বিজ্ঞানচিন্তা তাদের নাস্তিকতার পথে নিয়ে গেছে।

৬) নাস্তিকেরা উগ্র

বিজ্ঞানীরা যখন কোনো বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান রাখেন না, তখন তারা সেটা সরাসরি স্বীকার করে নেন। যা জানি না তাকে জানি বলে ভাব দেখানোটা বিজ্ঞানে অপরাধ বলেই মনে করা হয়। অথচ এটাই ধর্মের মূলভিত্তি। এটা খুবই বিপরীতধর্মী দাবী যে ধার্মিকেরা একাধারে নম্র ও মিতভাষী অথচ তারা মহাকাশবিদ্যা, জীববিদ্যা বা রসায়নের এমন জ্ঞানও রাখেন বলে দাবী জানান যা একজন বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীও রাখেন না। নাস্তিকেরা বিজ্ঞান থেকেই নিজেদের জ্ঞান আহরণ করেন। এটা কোনোমতেই উগ্রতা নয় - এটা একরকম সততা।

) নাস্তিকেরা আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা বিমুখ

নাস্তিকদের কেউ ভালবাসা, বিস্ময় বা মুহূর্তের আনন্দ থেকে বঞ্চিত রাখে না। শুধু নাস্তিকেরা সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কোনো অবাস্তব বা অবৈজ্ঞানিক দাবী করে না। অনেক খ্রীষ্টান আছেন যারা বাইবেল পড়ে ও যীশুর কাছে প্রার্থনা করে আনন্দময় জীবনযাপন করছে। কিন্তু এতে কি প্রমাণিত হয়? এতে প্রমাণিত হয় কিছু কিছু কোড অব কনডাক্ট বা আচার-আচরণের নীতিমালা ও উপযুক্ত সুশৃঙ্খলতা মানুষের মনে প্রভাব ফেলে। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কি দাবী করা সম্ভব যে যীশুখ্রীষ্টই হলেন মানবজাতির একমাত্র রক্ষাকর্তা? সম্ভব নয় - কারণ সময়ে সময়ে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ এমনকি নাস্তিকেরাও এই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।

চলবে...

 

এপ্রিল ১৮, ২০০৭
[email protected]


দিগন্ত সরকার, কম্পিউটার প্রকৌশলী এবং বিজ্ঞান লেখক। লেখাটি আমাদের মুক্তমনার পরবর্তী বই -‘বিজ্ঞান ও ধর্ম – সংঘাত নাকি সমন্বয়?’– প্রকাশিতব্য সংকলন-গ্রন্থের জন্য নির্বাচিত হল - মুক্তমনা সম্পাদক।